27/09/2025
জেল খানায় থাকতে পত্র পত্রিকার প্রায়ই বিভিন্ন টিন এইজ বয়সের ছেলেপুলেদের আত্মহত্যার খবর পেতাম। ঐ ক্লাসে পড়া পারেনি, টিচার বকুনি দিয়েছে, বাড়িতে তার গোপন প্রেমের কথা জেনে ফেলেছে এইসব silly ব্যাপার নিয়ে সাধারনত অল্প বয়সী ছেলে পুলে আত্মহত্যা করে। কারাগারে থাকতে এইসব সব খবর পড়ে কষ্টও হত আবার খুব অবাকও হতাম। জেলখানায় আমরা সবচেয়ে যে কষ্টটা বেশী করেছি তা হল যোগাযোগের অভাব। অর্থাৎ সরকারী ফোনে আমরা কথা বলতে পারতাম না। Militancy মামলার কারো নাম জড়িত থাকলে সে সরকারী ফোনে কথা বলার সুযোগ পায় না। তো সেই হিসাবে আমরা ৫ই August এর আগ পর্যন্ত সরকারী ফোনে কথা বলার কোন সুযোগ পাইনি।
কারাগারে অবৈধ মোবাইল ফোন চালানোর অপরাধে আমরা কত উত্তম মধ্যম খেয়েছি, কেইস টেবিল বিচার বৈঠকে যেয়ে জমাদার, কারারক্ষীদের সামনে কত অপমানের সম্মুখীন হয়েছি। এর পর সেল লকআপ, ডান্ডাবেড়ি এগুলিতো তো আছেই। ১টা মোবাইল পেলে ফ্যাসিবাদের সময়ে কমপক্ষে ৩ মাস ডান্ডাবেড়ি পরানো হত ২ পায়ে, এরপর ২২ ঘন্টা সেল লকআপ তো আছেই। আমি নিজেই তো একটানা ২১ দিন ২৪ ঘণ্টা সেল লকআপে ছিলাম। একটানা ৭ দিন আমাকে শুধু সরকারী কয়েদী পোশাক (চটের বস্তা) পরে থাকতে হয়েছে।
আর জামিন পাওয়ার জন্য আমরা কত তদবির করি, কত লোকের হাত পায়ে ধরি, জজ, উকিল, পিপি প্রভৃতি। বাইরের মুক্ত আলো বাতাস পাওয়ার জন্য আমাদের সে কি আকুতি! আর সেখানে এই টিন এইজ বয়সী ছেলে পুলেরা বাইরের মুক্ত স্বাধীন জীবন পেয়েও নিজেকে উর্ধাকাশে ঝুলিয়ে দেয়। কোন কোর্টে হাজিরা দিতে হয় না, মামলা মোকদ্দমা বিহীন জীবন পেয়েও এই মুক্ত, স্বাধীন জীবনের প্রতি তাদের কোন ভালবাসা দেখলাম না। নিজে নিজেকে হত্যা করে কি বিচিত্র এই মানব জাতি!
©️শাফিউর রহমান ফারাবী