12/07/2021
সময়মতো চিকিৎসা না নেয়ায় মৃত্যু বাড়ছে
একদিনে ৯ জেলায় মৃত্যু ৬০, এ পর্যন্ত মৃত্যু ১৫৯৩
নগরীর ৩ হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গে মৃত্যু ১৪
খুলনায় একদিকে যেমন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, অন্যদিনে মৃত্যুর মিছিলও লম্বা হচ্ছে। মূলত ভাইরাসের নতুন নতুন ভেরিয়েন্টের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানো, আক্রান্ত হওয়ার পর সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়া ইত্যাদি কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। তারা বলছেন, সঠিক সময়ে করোনার চিকিৎসা শুরু করতে পারলেই মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় অক্স্রিজেন না পাওয়া এবং নানা ধরনের রোগে আক্রান্তদের মৃত্যু ঘটছে স্বল্প সময়ে। গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগের ৯ জেলায় নতুন করে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের। এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৯১ জনের। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে খুলনা শীর্ষে রয়েছে। করোনা শুরু থেকে এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগের করোনায় মৃত্যু হয় ১ হাজার ৫৯৩ জন এবং শনাক্ত হয়েছে ৭১ হাজার ৫৫০ জন। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নগরীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।
খুলনা পরিচালক বিভাগ (স্বাস্থ্য) অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: ফেরদৌসী আক্তার বলেন,
শরীরে উপসর্গ দেখা দিলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। কারণ অনেক রোগীরই অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় সেটি দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে অক্সিজেনের ঘাটতিজনিত কারণে তাদের মৃত্যু ঘটে। এছাড়া অনেকের ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ হয়। এমনকি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমণ ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে দ্রুতই রোগীর মৃত্যু হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আরএমও এবং করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, খুলনাতে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত সংক্রমণশীল করোনার এই ভেরিয়েন্টি। সাধারণত এখন সর্দি-কাশি-জ্বরের সিজেন। আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে অনেকেই মনে করছেন তার এমনি সাধারণত সর্দি-কাশি জ্বর হচ্ছে। যারা প্রথম থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে থাকে তাদের কিন্তু সমস্যা কম হচ্ছে। যারা বিশ্বাস করে তার করোনা নাই, হয়তো শেষ মূহুর্তে অবস্থা খারাপ হয়। তখন হয়তো হাসপাতালে আসে। সে সমস্ত রোগী ম্যানেজ করা টাফ হচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই মারা যাচ্ছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারলেই মৃতের সংখ্যা কমে আসবে। আরএমও বলেন, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি হওয়ায় ২০০ শয্যা চালু করেছি, অনেক আগেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়েও করোনা মোকাবিলা সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে খুলনা পরিচালক বিভাগ (স্বাস্থ্য) এর দপ্তরের সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগের ৯ জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের। এ সময়ে বিভাগে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৫৯১ জনের। এর মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু ও ৪৩১ জন শনাক্তে শীর্ষে রয়েছে খুলনা। এছাড়া করোনায় বাগেরহাটে মৃত্যু হয় ২ জন, চুয়াডাঙ্গায় ও যশোরে ৬ জন করে, ঝিনাইদহে ৩ জন, কুষ্টিয়ায় ১৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, মেহেরপুরে ৫ জন এবং নড়াইলে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন বাগেরহাটে ১৪৪ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৪৩ জন, যশোরে ১৩৯ জন, ঝিনাইদহে ১৪৭ জন, কুষ্টিয়ায় ২৪৫ জন, মাগুরা ৮১ জন, মেহেরপুর ৫৩ জন, নড়াইলে ৫১ জন এবং সাতক্ষীরায় করোনায় শনাক্ত হয় ১৫৭ জন।
বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ( ১১ জুলাই) খুলনা বিভাগে মোট শনাক্ত হয়েছে ৭১ হাজার ৫৫০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫৯৩ জনের।
এদিকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় নগরীর সরকারি ও বেসরকারি মিলে তিন হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। খুমেক হাসপাতালে সংলগ্ন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আটজন, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন ও জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চারজনের মৃত্যু হয়।
খুমেক হাসপাতালের আরএমও এবং করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় ছয়জন ও উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিরা হচ্ছেন, রূপসার সুফিয়া (৪৫), নগরীর সোনাডাঙ্গার আসাদুল হক (৭৫), খালিশপুরের শাহারা বেগম (৬৫), আফিলগেটের নাজির আহমেদ (৭০), খুলনার রাজিয়া (৫০) ও যশোরের এমএ খলিল (৮০)। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা যায়। হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৯৩ জন। যার মধ্যে রেডজোনে ১২১ জন, ইয়ালোজোনে ৩৬ জন, আইসিইউতে ১৯ জন এবং এইচডিইউতে ১৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৩৭ জন আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩২ জন।
নগরীর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন- নগরীর ডালমিল মোড় এলাকার গোলাম কিবরিয়া (৬৮), রূপসার জীবন কৃষ্ণ পাল (৫৭), তেরখাদার মফিজুল ইসলাম (৫৫) ও অভয়নগরের জেসমিন বেগম (৪৫)। এ ছাড়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭১ জন। তার মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ ও ৩৭ জন নারী। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ২০ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১ জন।
নগরীর শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের আরএমও এবং করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের ভর্তি রয়েছেন ৪৩ জন রোগী। যার মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ১০ জন। ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন দুজন ও বাড়ি ফিরেছেন তিনজন।
নগরীর বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা: গাজী মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিরা হচ্ছেন, নগরীর সোনাডাঙ্গা মেইন রোড এলাকার আরোয়া ফকরুদ্দীন (৪৪) ও যশোর কেশবপুরের মঞ্জুয়ারা বেগম (৫০)। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ১৩৪ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন আটজন ও এইচডিইউতে আছেন ১১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৩৩ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৭ জন।
Copy The daily probho