31/07/2025
আপনি আসলে কাকে দেখাচ্ছেন—নিজেকে, না অন্যদের?
সকাল হতেই চোখ খুলে মোবাইলটা হাতে নিলেন। চোখ যাচ্ছে সরাসরি নোটিফিকেশন প্যানেলে—
কে কোথায় ঘুরছে, কার নতুন ছবি এসেছে, কে কয়টা লাইক পেলো, ক্যাপশনটা কী দারুণ দিয়েছে!
এইভাবে দেখতে দেখতে সকাল শেষ। অথচ, নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়ই হয়ে ওঠে না।
জীবনটা যেন শুধু অন্যের খবরে আটকে আছে।
একদিন একটা মোটিভেশনাল ভিডিও দেখে ভাবলেন—
"এইবার সব বদলে ফেলবো!"
বায়ো পাল্টালেন, কভার ফটো দিলেন “Work in silence” টাইপ কিছু।
মনে মনে ভাবলেন, “আজ থেকে নতুন আমি।”
কিন্তু পরদিন সকালে আবার সেই পুরনো অভ্যাস…
রিল, ট্রেন্ডিং মিউজিক, ভাইরাল মিম—ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে।
তাহলে আসল সমস্যাটা কোথায়?
১. ফিল্টারড রিয়ালিটি:
সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই যেন স্বপ্নের জীবন যাপন করছে।
ভ্রমণ, দামি কেনাকাটা, পার্টি, সাফল্য—সবই ঝকঝকে।
দেখতে ভালো লাগে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে মনে হয়,
“আমি কি পিছিয়ে পড়ছি?”
বাস্তবটা কেউই দেখায় না। হয়ত যার পোস্ট দেখে আপনি হিংসা করছেন,
সে-ও মানসিক চাপে আছে, শুধু তা ক্যামেরায় ধরা পড়ে না।
২. স্ক্রলিং প্যারাডক্স:
ভাবলেন একটু সময় নিয়ে কাজের কন্টেন্ট দেখবেন।
কিন্তু কখন যে ৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা হয়ে গেল, বুঝতেই পারলেন না।
শেষে শুধু আফসোস—
"আজও কিছুই করলাম না!"
৩. সেলফ-ইমেজ ইলিউশন:
একটা হাসিমুখের ছবি দিলেন, ক্যাপশন “Blessed & Happy”
কিন্তু ভিতরে হতাশা, একাকিত্ব আর সময় নষ্টের দুঃখ।
নিজের চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান না করেই,
শুধু বাহিরে সব পারফেক্ট দেখানোর একটা প্রয়াস।
তাহলে মুক্তির উপায় কী?
১. সময় ট্র্যাক করুন:
প্রতিদিন কত সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছেন, তা খেয়াল করুন।
সেই সময়টা দিয়ে আপনি নিজেকে আরও ভালো বানাতে পারতেন কি না, ভেবে দেখুন।
২. কন্টেন্ট ফিল্টার করুন:
যে কনটেন্ট আপনার মুড খারাপ করে, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন।
শিক্ষামূলক বা প্রোডাক্টিভ কিছু দেখুন—যা আপনাকে কিছু শেখায়।
৩. প্রোফাইল ক্লিনআপ করুন:
যারা ড্রামা তৈরি করে, নেগেটিভিটি ছড়ায়—
তাদের আনফলো করুন।
আপনার ফিডে যা দেখেন, সেটাই আপনার মনকে প্রভাবিত করে।
৪. লক্ষ্য ঠিক করুন:
সোশ্যাল মিডিয়া মজা করার জন্যই, কিন্তু সবকিছুর একটা সীমা থাকা জরুরি।
সোশ্যাল মিডিয়া যেন আপনার লক্ষ্যপথের বাধা না হয়।
৫. সীমা নির্ধারণ করুন:
প্রতিদিন কতটুকু সময় স্ক্রল করবেন, তা নির্দিষ্ট করে দিন।
সময় পেরিয়ে গেলে নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন।
শেষ কথা:
সোশ্যাল মিডিয়া আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি হতে পারে,
আবার সবচেয়ে বড় সময়নষ্টকারীও।
সবকিছু নির্ভর করছে—আপনি কীভাবে ব্যবহার করছেন!