05/07/2025
#কাজল_৩
#ছোটোগল্প
আপার বিয়ের বরযাত্রী এসে গেছে,বিন্নি আপার বরের ফুপাতো বোন। সেই হিসাবে আপার ননদ,আর আমার বিয়াইন।
প্রথম পলকে বরযাত্রীর মধ্যে বিন্নিকে দেখে আমার মধ্যে যে বিদ্যুৎ এর ঝটকা লাগার মতো অনুভুতি হলো,তা আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না।
এতো সুন্দর কোনো মানুষ হয়? এ তো সত্যিই পরী।
ছোটোবেলায় দাদীর বলা কথা মনে পরলো,দাদী বলেছিলো,বড় হলে এই পরী তোর। আমি তো বড় হয়েছি,বিন্নি তো বড় হয়নি এখনো।
মাত্র দশ বছর বয়স ওর,তাই এতো সুন্দর, আরও বড় হলে কি এমন থাকবে,যেমনই থাকুক,বড় হলে এই পরী কি আমার থাকবে?
কত আজগুবি চিন্তাভাবনা মাথায় জট পাকিয়ে যাচ্ছে, হাত পা চলছে না বিন্নিকে দেখার পর থেকে।
এমন সময় দাদী এসে দাড়ালো পাশে, "দাদাভাই,মন দিয়ে কিছু চাইলে তা পাওয়া যায়,কিন্তু অনেক কষ্ট করলে তবেই কেষ্ট মেলে,সবুর করো,খালি বয়সে বড় হইলে হবেনা,কাজে কম্মে বড় হওন চাই,তুমি আগে নিজেরে কম্মে বড় করো।"
দাদীর কথা কিছু টা বুঝলাম,কিছু টা বুঝলাম না।
আপার বিয়ে হয়ে গেলো ভালো ভাবে। খাবার দাবাড় সেড়ে সবাই রওনা দেবে,গুমোট পরিবেশ,দাদী,মা আর সেই সাথে আপা,গলায় গলা মিলিয়ে কাদছে,আব্বা দূরে দাড়িয়ে আছে,কাদছে না। বিয়ে বাড়ির এই পর্বটাই কষ্টের বাকিসব আনন্দের,যদিও আমি কোনো আনন্দেই শরিক হতে পারিনি কাজের জন্য।
বিদায়ের সময় আব্বা এগিয়ে আসলেন,চোখে পানি নেই,কেমন গলা চেপে চেপে বললেন দুলাভাই কে,"বাজান,আমি গরীব মানুষ, কিন্তু পোলামাইয়্যা গুলান অনেক যত্নে মানুষ করছি,নিজে কষ্ট করছি,ওদের কোনো কষ্ট দিই নাই,আপনার হাতে তুলে দিলাম মাইয়া ডা,যদি কোনোদিন মনে হয় এই মাইয়্যা আপনার গলায় বোঝার মতো লাগতাছে,আপনি রাখতে পারতেছেন না,আমার মেয়ে ফিরায় দিয়েন,কিন্তু যতদিন রাখবেন,যত্নে রাইখেন।আপনার কাছে এইডা আমার আমানত,আমার জান্নাতের বাগান,আপনারে দিলাম,তার খেয়াল রাইখেন।"
সবাই বলতে লাগলো,"ছি! ছি! ঘরে যাওয়ার আগেই ঘর ভাঙার কথা কও কেমনে মিয়া?"
আব্বা বলেন,",আমি ঘর ভাঙা কথা কইনাই,শুধু কইছি আমার মাইয়্যা আজীবন আমার দায়িত্ব, তার জন্য আমার ঘরের দরজা খোলা"
দুলাভাই খুব শান্তশিষ্ট ভাবে বললেন,"আপনি চিন্তা করবেন না,নিয়ে যাচ্ছি ফিরিয়ে দিতে নয়,আমি আপনার আমানত মাথায় তুলে রাখবো, এবার অনুমতি দেন,এগোয় আমরা"।
আব্বা জোরে নিশ্বাস ছাড়লেন,কথা বললেন না,আপা দুলাভাই দুজনকে একসাথে বুকে টেনে নিলেন।
এবার আব্বার চোখের নদী বাধ ভাংলো, দুকুল ছাপিয়ে উপচে পরলো।
আব্বার কান্না আমার সহ্য হলোনা,খেয়াল করলাম আমার চোখেও পানি।
আপারা বিদায় নিলো,গাড়ি একে একে ছাড়লো।আপার গাড়ি আগে ছাড়লো।
সবাই কাদছে,মা কাদতে কাদতে বেহুশ হওয়ার অবস্থা । বিন্নির মা এসে সান্ত্বনা দিচ্ছে,"আমরা তো ওখানে আছি ভাবি,আপনি এতো চিন্তা করবেন না,আমরা দেখে রাখবো কহিলা কে,আর কিরণও চলুক আমাদের সাথে শহরে, একটু দেখে আসবে."
আমার মনে ফুর্তি আবার মা বাবার কষ্টে কান্নাও পাচ্ছে।
মা বললো ঘুরে আয়।
বিন্নিরা যে গাড়িতে উঠেছে ওটাই উঠলাম,খেয়াল করলাম সবার কান্না দেখে বিন্নিও কাদছে,আর ওর চোখের কাজল ধুয়ে ধুয়ে মুখে লেপ্টে যাচ্ছে।
কাজল৩
ফাতেমা হক