আমার আমি By Fatema Haque

আমার আমি By Fatema Haque Daily life basis page blog

20/08/2025

#আত্মীয়_সমাচার_৩

সবসময় তো খারাপ কথা লিখি। আজ ভালো কিছু লিখবো একজনকে নিয়ে।

ছোটোবেলার বেশ কিছুটা সময় আমি আমার ছোট ফুপুর বাসায় কাটিয়েছি।
না, আমি ফুপুকে নিয়ে কিছু লিখবো না।
আমি আজ লিখবো আমার ফুপাকে নিয়ে। আমার দেখা সেরা একটা মানুষ, এক অসাধারণ ভালো মানুষ আমার ছোটো ফুপা। আমার ভিতরে সামান্য কিছু প্রতিভা লুকায়িত ছিলো,যেগুলো প্রথম সেই মানুষ টাই আবিস্কার করেন।
আমি ক্লাস ফোর ফাইভ থেকে ছন্দ মিলিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করতাম,সেগুলো কবিতা হতো নাকি জানিনা।
ফুপা খুবই প্রশংসা করতেন। একই জিনিস যখন আমার বাড়িতে দেখলো, যে আমি লিখালিখি করি,আমার বাবা মা পছন্দ করলো না। তাদের ধারণা এতো লিখালিখি করে লাভ নেই,কবি,সাহিত্যিক হওয়ার বয়স না তোমার এখন।পড়াশোনায় মন দাও।
বাড়িতে থাকাকালীন বাইরে খেলতে গেলে অনেক বকাবকি শুনতাম,কিন্তু ফুপু বাড়ি থাকাকালীন ফুপা আমাকে জোর করে রোজ বাইরে খেলতে পাঠাতেন।
পড়াশোনার প্রতি আমার কোনোদিন আগ্রহ কাজ করেনা,আজও না।
অথচ তিনিই প্রথম আবিস্কার করেছিলেন যে আমার মধ্যে সামান্য হলেও মেধা রয়েছে।
সবসময়ই উৎসাহ দিতেন,বলতেন চেষ্টা করো পারবা।
আমি ছবি আঁকতাম, যাই আকঁতাম উনি তাই দেখেই প্রশংসা করতেন।
আমি মিষ্টি পছন্দ করতাম,উনি প্রায়ই রসমালাইন এনে বলতেন মিষ্টি খাও,মিষ্টি খাইলে ব্রেন পরিস্কার হয়।
আমার জন্য আলাদা করে মাছের বড় মাথা কিনে আনতেন।কারণ আমি মাছের মাথা খেতে ভালোবাসি।

নামাজ পড়তে উৎসাহিত করতেন,রোজ ভোরে ফজরের নামাজের সময় মসজিদে যাওয়ার আগে উনি বাসার সবাইকে ডেকে উঠিয়ে তারপর মসজিদে যেতেন।

নামাজ থেকে ফিরে এসে কুরআন শরীফ তেলওয়াত করতেন নিজে,আর বাকিদেরও কুরআন শিক্ষা দিতেন।

এতো গোছানো পরিপাটি স্বল্পভাষী একজন মানুষ ছিলেন তিনি,আস্তে আস্তে কথা বলতেন,মানুষ জন নিয়ে থাকতে ভালোবাসতেন,আমাকে দেখলেই খুশি হয়ে যেতেন।

সবসময় মানুষের উপকার করতেন,আর পজিটিভ পরামর্শ দিতেন।

আজকে আমার পড়াশোনা, যতটুকু ধর্মজ্ঞান,আমার নিজের প্রতি যতটুকু কনফিডেন্স,আমার সংসার,আমার বিয়ে,জীবনে যতটুকু এগোতে পেরেছি তার পিছনে তার অনেকটাই অবদান আছে।

এতো ভালো একটা মানুষকে আল্লাহ তায়ালা খুব তাড়াতাড়িই তার কাছে ডেকে নিয়েছেন।তার ভাগ্যে হয়েছে আমার মেয়েটাকে চোখে দেখার,কোলে নেওয়ার।
আমার ভাগ্য হয়েছে শেষবার একদম তার নিজের আপ্যায়নে তার বাসায় খাওয়ার।

আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ফুপা আর নেই,তার হাসিমাখা মুখটাই শুধু চোখে পরে।

আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের মেহমান করে নিক। আমিন!

18/08/2025

#হিজিবিজি
#আত্মীয়_সমাচার_২

ছোটো বেলায় স্কুলের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আব্বুর সাথে এক আত্মীয়ার বাড়িতে গেলাম। সম্পর্কে তিনি বোন হন।
মেয়ে জামাই বাড়িতে যাবে আব্বু,সেই হিসেবে আম্মু বিভিন্ন প্রকারের পিঠা বানিয়ে দিলো। রুটি,গরুর গোশ খেতে পছন্দ করে সেই বোন,দেশি চিনা হাস, পাকান, কাটাপাকান,পুলি পিঠা,তাল পিঠা,ডিমের ফুল পিঠা অনেক কিছু।

তারা জানতো আমরা যাবো।
তখন রাস্তায় এতো গাড়ি চলতো না,যোগাযোগ ব্যবস্থাও এতো বেশি উন্নত ছিলোনা।

আমি আর আব্বু গিয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেলো। ঠিকানা খুজে বের করে বাসার সামনে গিয়ে দেখি তারা নেই।
যোগাযোগ করা হলো,এমন ভাব দেখালো যেনো অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমরা সেখানে গেছি।
তারা স্বামী স্ত্রী বাচ্চাসহ ঘুরতে গিয়েছিলো।
আমরা এতো পথ জার্নি করে গিয়ে সিড়ি ভেঙে উপরে উঠে ব্যাগপত্র নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে আছি তো আছিই। আমি আব্বুকে বলছি, "চলো বাড়ি চলে যাই,আব্বু বলে দাড়া আরেকবার ফোন দিয়ে দেখি,কারণ এখন বাড়ি ফিরতে গেলে তো গাড়ি পাবোনা" । আরেকবার তাদের ফোন দিলে তারা আসলো। আসার পর সেই বোনের হাজবেন্ড আবার খুবই আন্তরিকতা দেখালো,আপুকে নামিয়ে রেখে বললো চলো তোমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।যেতে চাচ্ছিলাম না।
আব্বুর দিক তাকালাম,আব্বুও প্রথমে কিছু বললো না,পরে বললো যাও।
সেই দুলাভাই আমাকে নিয়ে একটা খাবারের দোকান থেকে সমুচা,আর মোগলাই পরোটা কিনলেন।
রাতে মোগলাই খেয়েই আমি ঘুমিয়ে পরলাম।
আব্বু, আপু,দুলাভাই গল্পগুজব করে কখন ঘুমাইছে জানিনা।
পরের দিন সকালে মুড়ি না চিড়ে ধুয়ে আম দিয়ে খেতে দিলো।
আব্বু যেনো কই একটা গেছে।
আমাকে আপু বললো নিচে কল আছে গোসল করে আয়।
আর আসার সময় এক বালতি পানি নিয়ে আসিস।
আমি তখন খুব ছোটো না হলেও এক বালতি পানি নিয়ে উপরে তিনতলায় উঠার মতো বড় না।
তারপরও গোসল করে যতটুকু পারলাম পানি আনলাম।
দুপুরে খাওয়াদাওয়া করলাম।
তারপর আসার আগে আমাকে একটা তার ব্যবহৃত পুরনো জামা ধরিয়ে দিলো,আর ১০ টাকা দিলো।
বললো একটা দর্জি কে দিয়ে কাটিয়ে নিস সাইজমতো।
আমি পরি হাফপ্যান্ট, ফ্রক,স্কার্ট। আমাকে দিলো বিশাল সাইজের এক থ্রিপিস। তখন আমার ভালো লাগা,মন্দ লাগা কোনো অনুভূতিই কাজ করছিলো না,ছোটো ছিলাম,একটু বোকা ও ছিলাম।
বাড়ি আসলাম,আম্মু তো সবকিছু শুনে দেখে বিশাল রেগে গেলো যে," দিলো আর নিয়ে নিলি,তোর জামা কাপড় নেই?
। আমার কাছে আসলে আমি এতো জান প্রাণ দিয়ে আপ্যায়ন করি,আর আমার মেয়ে গেছে এরকম করছে। "

আম্মু সেই জামা অনেক দিন রেখে দিছিলো,যে একদিন ওই বোনের মেয়ে বড় হবে,তাকে গিফট করবে,কিন্তু পরে কই জানি হারিয়ে গিয়েছে।
এখানে আমার একটা বিষয় বলার আছে,
বোনের জিনিস বোন ব্যবহার করবে,এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়, এখানে কোনো লজ্জা নেই,কিন্তু সেই বোনেদের মধ্যে একটা আন্তরিকতা, ভালোবাসা থাকতে হবে।
বোনেদের মধ্যে সেই বোঝাপড়া থাকতে হবে।
সেই অধিকারবোধ থাকলে চেয়ে,এমনকি জোর করে কেড়েও নেওয়া যায় বোনদের থেকে।বন্ধু বান্ধবীর সাথেও এমন সম্পর্ক থাকতে পারে।
কিন্তু এরকম কোনো সম্পর্ক না থাকলে কেউ কিভাবে কাউকে পুরনো ব্যবহার করা জিনিস দিতে পারে আমার বোধগম্য নয়।
যাইহোক, আল্লাহ তায়ালা তাদের আরও সম্পদ দান করুক।

আমাদের কেও এমন সামর্থ্য দান করুক যাতে মানুষের
পাশে দাড়াতে পারি,আত্মীয়তা বজায় রাখতে পারি,সমাজে সম্মান নিয়ে চলাফেরা করতে পারি।
কারণ, সামর্থ্য অনুযায়ী মান সম্মানের পারদ উঠানামা করে সমাজে এবং পরিবারে।

13/08/2025

#হিজিবিজি
#আত্মীয়_সমাচার_১

আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা গ্রামে।
নব্বইয়ের দশকের ছেলেমেয়েরা জানে গ্রামে খুব সচ্ছল মানুষের ঘরবাড়ি ও পরিবেশের কি অবস্থা ছিলো তখন।
পাকা ঘরবাড়ি থাকলেও পাকা টয়লেট বেশিরভাগ মানুষের বাড়িতেই ছিলোনা তখন।
বেশিরভাগ বাড়িতে বাথরুমই ছিলোনা,কারোর কারোর ছিলো বাশের চাং পাতা ঝুলন্ত টয়লেট, কারোর কারোর বাড়িতে ছিলো সিমেন্টের চাড়িপাতা টয়লেট।
আমাদের বাড়িতে ছিলো পাটকাঠির বেড়া দেয়া সিমেন্টের চাড়ি দিয়ে বানানো টয়লেট।
তখনও স্কুলে ভর্তি হইনি,আমার ছোটো বোনেরও জন্ম হয়নি এরকম একটা সময়ের গল্প করছি।
ঢাকা গেলাম আম্মু আর আমি, সাথে বোধহয় আমার ফুপু আর তার ছেলে ছিলো।মনে নেই সঠিক।
যে আত্মীয়ের বাড়িতে উঠলাম,তার বিশাল অট্টালিকা ঢাকা শহরে। আমি অনেক ছোটো ছিলাম,কিন্তু অন্য বাচ্চাদের তুলনায় অনেক ভদ্র ছিলাম। কারোর বাসায় গিয়ে তাদের জিনিস পত্র ধরতাম না,ভয়ে ভয়ে থাকতাম।
একদিন আম্মু গেলো ডাক্তার দেখাতে,বাসায় আমি একা আর কিছু লোকজন আছে।
সেই আত্মীয়ের বাসায় একরুমে ছিলো কমোড,আরেক রুমে ছিলো নরমাল টয়লেট।
প্রাকৃতিক প্রয়োজনে নরমাল টয়লেট এই গেলাম,কারণ বাবার জন্মে কমোড চোখে দেখিনি,ও জিনিসের ব্যবহার জানিনা।
সেইদিন সেই আত্মীয়ের অফিসের বস তার বাসায় অবস্থান করছিলেন। সেই বস আবার টয়লেটে গিয়ে ফিরে এসেছেন কারণ সেখানে আমি বসে আছি,আর দরজা লক করা নাই(আমি দরজা লক করতেও জানতাম না)। যার কারণে তিনি কমপ্লেইন জানান যে একটা বাচ্চা ওয়াশরুমে বসে আছে, বেরোচ্ছে না।
আমি সেদিন নরমাল টয়লেট এও কিভাবে ট্যাপ ছাড়ে,কিভাবে পানি ব্যবহার করে জানতাম না।
বাসার কাজের মেয়ে এসে আমাকে পরে সব দেখিয়ে দিলে আমি ক্লিন হয়ে বের হই।
তারপর সেই আত্মীয়টি আমার বাবা কে ফোন দিয়ে ডেকে পাঠান,বাসায় ডেকে অপমান করেন কেনো তার মেয়েকে ম্যানারস শেখানো হয়নি। কেনো বাথরুমে গিয়ে বসে ছিলো। বাপের জন্মে এমন একটা বাথরুম কোনোদিন বানাতে পারবে কি না আরও নানারকম অপমান করে আমার দরিদ্র পিতা কে কাঁদিয়ে ছেড়েছিলেন।
তিনি জানেন শুধু টাকা পয়সা উপার্জন করলে,মানুষ হুজুর হুজুর করলে, দালান কোঠা বানালেই মানসম্মান বাড়ে,মধ্যবিত্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা মানুষের মান সম্মান থাকতে পারে তিনি বিশ্বাস করেন না।

এই ভদ্রলোক একবার আমি জন্মের পর আমি ভীষণ অসুস্থ থাকাকালীন আমার বাবা কে ডেকে বলেছিলেন,"তোর সন্তান মারা গেলে আমরা কিই বা বলতে পারি,শুধু বলতে পারি,আহা হা হা রে, কি সুন্দর বাচ্চাটা মারা গেলো"। অন্যের অসুস্থ বাচ্চার মুখ দেখে তার মায়া হয়নি।

আরও একবার আমার একসিডেন্ট এ হাত ভেঙে গেলে তিনি বলেছিলেন,কি আর করার হাত ভেঙে গেলে,এখন লুলা হয়ে পরে থাকবি,নয়তো তোর বাপের ভাগের জমিটুকু বেচে চিকিৎসা করবি।
কখনোই আমার কোনো ব্যাপারে তার কাছে সাহায্যের জন্য আমরা যাইনি,অথচ যেচে পরে অপমান করতে তিনি ছাড়েন নি।
সেই ভদ্রলোক কে আমি ভীষণ ঘৃণা করি,অথচ তিনি আমার রক্তের,আমার আত্মার আত্মীয়।
তাকে দেখে আমার ভীষণ করুনা হয়।
তার অহংকার দেখে আমার হাসি পায়।

তিনি ধার্মিক মানুষকে বলতেন এতো নামাজ কালাম পড়ে সময় নষ্ট করে কি হবে,এখন টাকা ইনকাম করি,শেষ বয়সে এসে হজ্ব করে নিলে সব মাফ হয়ে যাবে।
আল্লাহর রহমতে হোক,আর টাকার জোরে হোক তিনি হজ্ব করেছেন।
দোয়া করি সেই মানুষ টার শেষ জীবন যেনো সুন্দর হয়।
অনেকের জীবনেই তার টাকাপয়সার অনেক অবদান থাকলেও আমার জীবনে তার কোনো অবদান নেই।
তাই আমি তাকে বাকি সবার মতো জ্বি হুজুর জ্বি স্যার কর‍তে পারি না।
আল্লাহ যেনো আমাকে আর আমার বাবাকে অপমানের জবাব দেয়ার ক্ষমতা আমাকে দেন। আমিন!

এমনি🙂
31/07/2025

এমনি🙂

Address

Magura
Khulna

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when আমার আমি By Fatema Haque posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share