20/06/2025
আম্মুর কাছে একটা আন্টি প্রায়ই কিছু টাকা রাখতো। দৈনন্দিন কেনাকাটা থেকে বাঁচিয়ে। খুব অল্প কিন্তু স্বামীকে না জানিয়ে। আমি তখন আঠারো পার করছি। ন্যায়/অন্যায় বোধ আমার মস্তিষ্কে আগুন হয়ে জ্বলজ্বল করে। তার ওপর মাত্রই দ্বীন শিখছি। স্বামীর টাকা, স্বামীকে না জানিয়ে রাখা তো আমার কাছে গুরুতর অন্যায়। আমার খুব রাগ লাগে। কিন্তু এরপর দেখি এই টাকা দিয়ে উনি মেয়ের জন্য বালা গড়ান, নুপুর বানান। রূপার নুপুর। আমার কাছে আজব লাগে। মেয়ের নুপুর বানাতে মায়ের চুপচুপ করে টাকা জমাতে হয়?
একটা একটা করে আরো দিন যায়, মাস যায়। আমি কখনো দেখি না উনার জমানো টাকায় নিজের শখ পূরণ করেন। শখ বলতে সেই ঘরের আসবাব কেনেন। সংসারের টানাপোড়নে খরচ করেন। মেয়ের মন খুশি করার হ্যাসেল টানেন। বড় হতে হতে আরো অনেকের গল্প শুনি যারা এভাবে সংসার গোছাচ্ছেন। আমার আর রাগ লাগে না। মায়া লাগে, কষ্ট হয়, ভয় লাগে।
যেই সংসার দুইজনের, তা সাজানোর স্বপ্নগুলো মনের মইধ্যে লুকিয়ে রাখতে হয় একা? মেয়ের নুপুর বানানোর জন্য বাবার সাথে রাতভোর ডিজাইন নিয়ে আলাপ করা যায় না! একসাথে টাকা জমানো যায় না! দুনিয়ার বুকে এরচেয়ে নিষ্ঠুর পরীক্ষা হয়!
যখন আমি বলি 'আমার কেউ নাই', অবচেতন মনে হোক, মজা করে হোক কিংবা সিরিয়াসলিই প্রায় সবাই বলে 'বিয়ে করো'।
করলাম বিয়ে, এরপর?
আমি যখন বলি 'আমার কেউ নাই' তখন তো আমি এটা বলি না যে আমার জীবনে কেউ নাই, আমার পাশে কেউ নাই। বরং দুনিয়া জুড়ে আমার তো যাবার কতো জায়গা-ই আছে। কেবল এমন কেউ নাই যে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হবে। সারাজীবন, সব বিষয়ে পাশে থাকবে, পায়ে পা মিলিয়ে একসাথে সামনে যাবে। যার কাছে আমি নির্দ্বিধায় সব বলতে পারবো। যার কাছে নিজেকে আদ্যোপান্ত জমা রাখতে পারবো। শুরু থেকে শেষ।
বিয়ের পর সেই কথাই যদি লুকাতে হয়, তবে!
বিয়ের পর সেই বন্ধুই যদি না পাই, তবে!
আমার একটা বাড়ি হইলো, সুন্দর ঘর হইলো, বিশাল বারান্দা হইলো, উঠান হইলো, আসবাব হইলো কিন্তু দেয়ালে কোন রঙ হবে, ঘরের কোন কোণায় জায়গা হবে বইয়ের, বারান্দার কোথায় রাখবো আমার হলুদ ফুলের টব, এরপর টাকা হলে আমরা কিনবো কোন রঙা কাপ প্লেট তা নিয়ে আলাপ করার মানুষটাই যদি না হয় তবে আর আমার আশ্রয় হইলো কইই!
©