03/09/2025
প্রথম যুগের মুসলমান দূরের কথা; জাহেলী যুগের আরবদের মাঝেও সমকামিতা ছিল না। ফলশ্রুতিতে আরবী ভাষায় এই অপরাধ বোঝাতে কোনো নিজস্ব শব্দ বা পরিভাষা নেই। কুরআন-সুন্নাহও এটাকে বোঝাতে কোনো শব্দ নির্দিষ্ট করেনি। 'পুরুষের কাছে আসা' কিংবা 'লূত সম্প্রদায়ের কাজ' বলে এর প্রতি ইঙ্গিত করেছে। কেবল আধুনিক যুগে এসে কিছু নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে স্পষ্ট, মক্কার কাফের-মুশরিকরাও এটা থেকে দূরে ছিল। বিপরীতে এটা বিভিন্ন অনারব জাতির মাঝে ব্যাপক ছিল। রাজমহল থেকে শুরু করে ভ্রষ্ট সূফীদের খানকাহ পর্যন্ত এর প্রাদুর্ভাব ছিল। কিশোর-প্রেম তুর্কি ও ফার্সি ভাষার 'আধ্যাত্মিক' কবিতার বিশেষ উপজীব্য ছিল। ফলে এসব ভাষায় এই বিষয়ক শব্দের বৈচিত্র্য ও প্রাচুর্য লক্ষণীয়। অনারবদের থেকেই এটা আরব মুসলমাদের মাঝে ব্যাপকতা লাভ করে।
মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত বিভিন্ন আকীদা ও আমলের অবস্থানও এমন ভাষাতত্ত্বের আলোকে বোঝা যায়। অর্থাৎ নাম দ্বারাই সেগুলোর বিধান জানা যায়। উদাহরণস্বরূপ আখেরী চাহার শোম্বাহ, নামাজে গাউসিয়্যাহ, দুআয়ে গাঞ্জুল আরশ, খতমে খাজেগান, গেয়ারভী শরীফ ইত্যাদি। নাম শুনলেই স্পষ্ট হয়, এগুলো অনারব বিশেষত ফারসী ও উর্দুভাষীদের হাতে উদ্ভাবিত প্রথা। এসব ইবাদত বা আমল বোঝাতে কোনো খাঁটি আরবী শব্দ নেই। ফলে কুরআন-সুন্নাহতে, সাহাবা ও সালাফের আমলে এগুলোর অস্তিত্ব থাকবে সেটা অকল্পনীয়।
মীলাদুন্নবীর অবস্থাও তদ্রুপ। কুরআন-সুন্নাহতে 'ঈদে মীলাদুন্নবী', 'জুলূসে মুহাম্মাদী', 'জশনে বেলাদত' এই জাতীয় কোনো শব্দ নেই। কেবল কুরআন-সুন্নাহ নয়; ইসলামের প্রথম অর্ধসহস্র বছরের ইতিহাসে, মুসলিম জাতির প্রথম ৫০০ বছরে লেখা সকল বই-পত্রের ছত্র ছত্র ধরে খুঁজলেও এমন শব্দ বা পরিভাষার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ জাহেলী কিংবা ইসলাম- কোনো কালেই আরব সংস্কৃতিতে বছরে একদিন জন্মদিন পালনের রীতি ছিল না। এটা পুরোদস্তুর অনারবীয় রীতি। যা আরবদের মাঝে ছিলই না, তা বোঝাতে তাদের কাছে কোনো শব্দ না থাকাই স্বাভাবিক। অনারবদের থেকে এক সময় এই প্রথা আরবদের মাঝে প্রবেশ করে। কেবল আরবদের মাঝে প্রবেশ নয়; ইসলামের অংশে, হুবে নববীর প্রতীকে পরিণত হয়। অথচ ইসলামের সঙ্গে, সুন্নাহর সঙ্গে এই গ্রিকো-রোমান ও পারস্য সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই।
মিযান হারুন