09/12/2024
মানুষ মানুষের জন্য!
পথঘাটে চলতে গিয়ে কত পরিস্থিতিরই তো শিকার হতে হয় ৷ কত রকম সমস্যাও পোহাতে হয় ৷ অনেক বিপদ-আপদও ঘটে ৷ কিন্তু আমরা এমন একটা সমাজে বাস করি, যেখানে মানুষের বিপদ দেখে মানুষ এগিযে আসে না বা আসার সাহস পায় না ৷ প্রতিদিন পথে ঘাটে কত প্রাণ যে ঝরে যাচ্ছে, যাদেরকে রক্ষায় অন্যরা এগিয়ে গেলে আল্লাহর রহমতে হয়ত তাদের অনেকেই বেঁচে যেত ৷ কিন্তু মুমুর্ষ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ফেলে অন্যরা দিব্যি চলে যায় নিজেদের পথ ধরে ৷ বিশেষত রাতের মহাসড়কগুলো আমাদের দেশে ভয়াল অমানবিকতার রূদ্ররূপ দেখে ৷ শোনে মানবতার করুণ আর্তণাদ ৷
গতরাতে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা ফেরার পথে ভালুকার দুই তিন কিলোমিটার আগে দেখলাম এমনই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য ৷ একটি প্রাইভেটকার এক্সিডেন্ট করে বিদ্ধস্থ অবস্থায় পড়ে আছে ৷ কয়েকজন মানুষ রাস্তার পাশে দাড়িয়ে দূরন্ত গতিতে ছুটে চলা গাড়ীগুলোকে একটু দাড়াতে বলছে ৷ একটু সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে ৷ কিন্তু গাড়ীগুলো এ দৃশ্য দেখে দানবের মত ছুটে চলে যাচ্ছে ৷ দাড়ালেই যেন বিপদ! মানুষের আহাজারীতে কান পাতলেই যেন ফেঁসে যাওয়া ৷ আহা মানবতার কী ভয়াল বিপর্যয়! কিন্তু যারা চলে যাচ্ছে, দুর্ঘটনাকবলিত মানুষগুলো তো তাদেরও আপনজন হতে পারত!
আমরা দাড়ালাম ৷ এগিয়ে দেখলাম, কয়েকজনের ছোটোখাটো ইন্জুরি হলেও একজনের অবস্থা আশংকাজনক ৷ রাস্তার মধ্যবর্তি জিভাইডারের উপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে ৷ প্রথমে তো মনে হয়েছিল, মারাই গিয়েছে ৷ গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম, না মরেনি ৷ কিন্তু সারা শরীর নিথর নিস্তেজ ৷ দ্রূত আমরা চারজন মিলে ধরাধরি করে আমাদের গাড়িতে তুললাম ৷ লোকটি কুকিয়ে উঠল ৷ অস্ফুট কণ্ঠে বলল, আমাকে একটু শোয়ায়ে দেন ৷আমরা গাড়ীর সিট যতটা নোয়ানো যায়, নোয়ায়ে দিলাম ৷ লোকটির ঘার স্থির থাকছিল না, কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিল ৷ যন্ত্রণায় আবার কাতর কণ্ঠে বলল, আমার ঘারটা একটু সোজা করে দেন, আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছে ৷ তাই করলাম ৷ আমরা তাকে নিয়ে ভালুকা সরকারী হাসপাতালে গেলাম ৷ লোকটা ততক্ষনে কিছু কথা বলতে পারছে ৷ জেনে নিলাম তার নাম বাবুল ৷ আরেকজন আহতকেও গাড়ীতে নিয়েছিলাম, যে আমাকে দেখেই বলেছিল হুজুর আপনার মাহফিল শুনে ঢাকা যাচ্ছিলাম ৷ সে সামান্য আহত ৷ নাক মুখ দিয়ে কিছু রক্ত ঝরছিল তার ৷ তার কাছ থেকে দুর্ঘটনার বিহরণ শুনলাম-
বিপরিত দিক থেকে রংসাইটে আসা একটি গাড়ীর সাথে তাদের প্রাইভেটকারটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় ৷ কিন্তু সেই গাড়ীটি এরপরও দ্রূত চলে যায় ৷ আর তাদের বহনকারী প্রাইভেটকরাটিই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে থাকে ৷ ইতিমধ্যে একটি সিএনজি অটোরিক্সা সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা দেখে দাড়ায় ৷ ঐ বাবুল ভাই সেই সিএনজির যাত্রী ৷ তিনি নেমে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন ৷ ইত্যবসরে আরেকটি গাড়ী দ্রূতগতিতে এসে তাকে সজোরে আঘাত করে ৷ আঘাতটা এত জোরে ছিল যে, তিনি রাস্তার এপাড় থেকে ছিটকে মধ্যখানের ডিভাইডারের ওপর গিয়ে পড়েন ৷
হাসপাতালে প্রাথমিক চিরিৎসার ব্যবস্থা হল ৷ আমাদের গাড়ীর চালক আব্দুল আওয়াল দ্রূত ফার্মেসী থেকে ব্যথানাশক ইন্জেকশন ও ঔষধ নিয়ে এল ৷ আমাদের যুব মজলিসের দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে অবগত হয়ে হাসপাতালে এসে পৌছল আমাদের কর্মী সায়েম ! লোকটির মোবাইল দিয়ে তার বাড়ীতেও সংবাদ জানালাম ৷ তাদের বাড়ী আশেপাশেই ৷ তখনই মনে হয়েছিল, ঘারে প্রতন্ড আঘাত পেয়েছেন তিনি ৷ আপনজন এলেই ময়মনসিংহ পাঠাতে হবে বলে জানালেন ঐ হাসপাতালের লোক ৷ আমরা সায়েমকে রেখে অবশিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে রওয়ানা করলাম ঢাকার পথে ৷ ফিরলাম একটা অনুভূতি নিয়ে, অন্যের বিপদে এগিয়ে এসে দুর্ঘটনায় পড়লেন যে বাবুল ভাই, তার বিপদে যদি আমরা এগিয়ে না যেতাম, তাহলে সে অপরাধের কি কোনো প্রায়শ্চিত্ত ছিল?
কিছুক্ষণ আগে ফোন করে বাবুল ভাইয়ের ছোট ভাই শাহআলমের কাছ থেকে জানলাম, আমাদের আশংকাই সত্য ছিল ৷ বাবুল ভাইয়ের আঘাত লেগেছে ঘারে ৷ ফলে সারা শরীরই অবশ হয়ে আছে ৷ ময়মৱসিংহ মেডিকেল তাকে রাখেনি, পাঠিয়ে দিয়েছে ঢাকা মেডিকেলে ৷ অবস্থা সংকটাপন্ন ৷
জানি না, কী হবে বাবুল ভাইয়ের ৷ পরোপকারের পরাকাষ্ঠা দেখানো এই মানুষটি আবার সুস্থ হয়ে ফিরতে পারবে কি? রাব্বুল আলামীনের দরবারে ফরিয়াদ, মাবুদ মানুষের বিপদে এগিয়ে আসা তোমার এই বান্দাকে তুমি সুস্থ করে দাও! তাকে ফিরিয়ে দাও আবার সেই সাভাবিক জীবন!!