10/07/2025
মৌলভীবাজারে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ, ক্ষোভ স্থানীয়দের।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরীণ আরসিসি সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঢালাইয়ের মিশ্রণে নির্ধারিত অনুপাতের চেয়ে বেশি বালু দিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকে প্রকল্পের কাজে অনিয়ম করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শিডিউল অনুযায়ী সড়কে ঢালাইয়ে প্রতি মিশ্রণে এক বস্তা সিমেন্ট, চার টুকরি বালু, আট টুকরি খোয়া দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক বস্তা সিমেন্টের বিপরীতে আট টুকরি বালু দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করছে। এ ছাড়া বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই দেওয়ায় সড়কের অনেক জায়গায় ইটের খোয়া ভেসে উঠেছে। এতে সড়কটি টেকসই না হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।জানা গেছে, নিচু হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সড়কটি তলিয়ে যায়। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভোগান্তি নিরসনে কুলাউড়া ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সহায়তায় গত তিন বছর ধরে প্রায় ২৫০ ফুট অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সড়কটি সংস্কারে সম্প্রতি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে সিলেটের শিবগঞ্জের মেসার্স রূপালী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে দেখা যায়, সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন শিডিউল অনুযায়ী ঢালাইয়ের মিশ্রণ তৈরি করছে না। মিশ্রণে সিমেন্টের অনুপাতের চেয়ে বেশি বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া মিশ্রণে ব্যবহার করা ইটের খোয়া ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের মানের বিষয়ে ক্ষোভ জানান স্থানীয়রা।স্থানীয় বাসিন্দা গাড়িচালক মোশাররফ হোসেন, রুবেল আহমদ, আহাদ মিয়া বলেন, সড়কটি সংস্কার কাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের মালাপত্র দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সিমেন্ট কম ও বালুর পরিমাণ বেশি দিয়ে ঢালাই দিচ্ছে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির মধ্যে ঢালাইয়ের কাজ করায় কংক্রিটের মিশ্রণ পাতলা হয়ে যাচ্ছে। পানিতে বালু-সিমেন্ট ধুয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় খোয়া ভেসে উঠেছে। এমনকি, রড বাঁধাই কাজও ঠিকমতো হচ্ছে না। তার দিয়ে রড না বেঁধে এমনিতে রড বিছিয়ে ঢালাই করা হচ্ছে। এতে ঢালাইয়ের স্থায়িত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রকৌশলীদের সঠিক তদারকির অভাবে ঠিকাদার ইচ্ছেমতো কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. রফিক মিয়া বলেন, সড়ক সংস্কার কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। ঢালাইয়ের মিশ্রণে সব নির্মাণ উপকরণ সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন ও প্রকল্প কর্মকর্তারা সবসময় কাজের তদারকি করছেন। নিম্নমানের কাজ করার কোনো সুযোগই নেই। বিভিন্ন জায়গায় খোয়া ভেসে ওঠা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে এটা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন বলেন, কাজ শুরুর দিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামাফিক কাজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের হস্তক্ষেপে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দু’জন প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে বর্তমানে কাজটি করা হচ্ছে। কাজে কোনো অনিয়ম থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মৌলভীবাজার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুল হক বলেন, প্রকৌশলীদের তদারকির মাধ্যমে শিডিউল অনুযায়ী কাজটি বুঝে নেওয়া হচ্ছে। ঢালাইয়ের মিশ্রণের সময় নির্মাণ কাজে জড়িতরা উপকরণ কমবেশি করে থাকতে পারে। এ বিষয়ে তাদের প্রকৌশলীরা সতর্ক রয়েছেন। সার্বিকভাবে কাজ সঠিকভাবেই হচ্ছে।
সুত্রঃ দৈনিক সমকাল