14/09/2025
📝 জ্বিন ও শয়তান থেকে বাঁচার উপায় [কুরআন-হাদীসের আলোকে একটি প্রবন্ধ]...........✍️মুফতি সৈয়দ আল মুত্তাকী
🔳 ভূমিকা :
মানবজাতির মতোই জ্বিনের অস্তিত্ব রয়েছে। তারা আল্লাহর এক সৃষ্টিজাতি, যারা অদৃশ্য জগতে বাস করে। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আমি জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করিনি, তারা যেন শুধু আমার ইবাদত করে।”
— (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)
কিন্তু জ্বিনদের একটি অংশ অবাধ্য ও বিদ্রোহী, যাদেরকে শয়তান বলা হয়। তারা মানুষের ঈমান, আমল ও জীবনে ক্ষতি করার চেষ্টা করে। এজন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ জ্বিন-শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু আমল শিক্ষা দিয়েছেন।
🔳 বিড়াল ও জ্বিন প্রসঙ্গ :
লোকমুখে প্রচলিত আছে, “ঘরে বিড়াল থাকলে জ্বিন আসে না।”
কিন্তু সহিহ হাদীসে কেবল এতটুকুই এসেছে যে বিড়াল নাপাক নয়; তারা মানুষের ঘরে ঘুরে বেড়াতে পারে। রাসূল ﷺ বলেছেন,
“বিড়াল নাপাক নয়। তারা তোমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো প্রাণীদের অন্তর্ভুক্ত।”
— (আবু দাউদ: ৭৫, তিরমিযী: ৯২)
এখানে কোথাও বলা হয়নি যে, বিড়াল থাকলে জ্বিন প্রবেশ করতে পারে না। বরং এটি একটি ভিত্তিহীন কুসংস্কার।
🔳 কুরআন-হাদীসে বর্ণিত জ্বিন থেকে রক্ষার উপায় :
1. সূরা আল-বাকারাহ তিলাওয়াত করা :
রাসূল ﷺ বলেছেন,
“তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিও না। যে ঘরে সূরা আল-বাকারাহ তিলাওয়াত করা হয়, সেখানে শয়তান প্রবেশ করে না।”
— (সহিহ মুসলিম: ৭৮০)
2. আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
সহিহ বুখারীতে এসেছে, যে ব্যক্তি রাতে শোবার সময় আয়াতুল কুরসী পড়ে, আল্লাহ তার জন্য একজন প্রহরী নিয়োগ করেন এবং শয়তান তার কাছে আসতে পারে না।
— (বুখারী: ২৩১১)
3. সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়া :
রাসূল ﷺ ঘুমানোর আগে হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে এই তিন সূরা পড়তেন এবং শরীরে মাসাহ করতেন।
— (বুখারী: ৫০১৭, মুসলিম: ২১৯২)
4. বিসমিল্লাহ বলা :
খাবার খাওয়ার সময়, ঘরে প্রবেশের সময়, পানির পাত্র ঢাকার সময়, বাতি নেভানোর সময় “বিসমিল্লাহ” বলা।
হাদীসে এসেছে, যদি কেউ ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম নেয়, শয়তান বলে: “আজ রাতে আমাদের জন্য থাকার জায়গা নেই।”
— (মুসলিম: ২০১৮)
5. আযান দেওয়া :
হাদীসে আছে, আযান দিলে শয়তান পালিয়ে যায়।
— (বুখারী: ৬০৮, মুসলিম: ৩৮৮)
6. সকালে ও সন্ধ্যায় দোয়া পড়া :
রাসূল ﷺ সকাল-সন্ধ্যায় বিভিন্ন যিকির পড়তে বলেছেন, যেমন:
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
(যে আল্লাহর নামে এই দোয়া তিনবার পড়বে, তার কোনো ক্ষতি হবে না) — (আবু দাউদ: ৫০৮৮, তিরমিযী: ৩৩৮৮)
7. অশ্লীলতা, গান-বাজনা ও গুনাহ থেকে বাঁচা
গুনাহ ও অশ্লীল পরিবেশ শয়তানকে আকর্ষণ করে। কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয় শয়তান তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়।”
— (সূরা বাকারা: ২৬৯)
🔳 উপসংহার :
জ্বিন ও শয়তানের অস্তিত্ব বাস্তব। তবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য তাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষার উপায় শিখিয়েছেন। ঘরে বিড়াল থাকলে জ্বিন প্রবেশ করে না — এ ধারণা ইসলামি দলিলে প্রমাণিত নয়। বরং প্রকৃত প্রতিরক্ষা হলো কুরআন তিলাওয়াত, আয়াতুল কুরসী, সূরা বাকারাহ ও বিভিন্ন দোয়া-যিকির পড়া।
সুতরাং মুসলমানের উচিত কুসংস্কার এড়িয়ে চলা এবং কুরআন-সুন্নাহতে বর্ণিত আমলকে আঁকড়ে ধরা। এতে আল্লাহর হিফাযত লাভ করা যাবে এবং জ্বিন-শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব হবে।