Boxcer

Boxcer যারা অন্তর দিয়ে দেখে, তাদের কাছে অন্ধকারও রহস্যময় সুন্দর💖
(ক্যাপশনওয়ালা)

 #হৃদ_মাঝারে  #লেখনীতে_জান্নাতুল_ফিরদাউস_ফাতেমা  #পর্ব_২১ -ড্রয়িং রুমে বসে ৩ জা বসে আছে বিকেল বেলা গল্প করছেন। মেহেরীন চ...
03/06/2025

#হৃদ_মাঝারে
#লেখনীতে_জান্নাতুল_ফিরদাউস_ফাতেমা
#পর্ব_২১

-ড্রয়িং রুমে বসে ৩ জা বসে আছে বিকেল বেলা গল্প করছেন। মেহেরীন চৌধুরী কোর্ট থেকে ফিরেছেন কিছুক্ষন আগে, বাকি কর্মজীবী রা এখনো বাড়ি ফিরেনি রাতেই ফিরবে। নূরজাহান চৌধুরী নিজের ঘরে আছে। নূরজাহান চৌধুরী আসরের নামাজ আদায় করে আর বাইরে বের হন না একেবারে মাগরিবের নামাজ শেষ করে বাইরে আসে। কলিং বেল এর শব্দে সবার মনোযোগ কলিং বেলের দিকে যাই। আসমা চৌধুরী গেইট খুলতে গেলে মেহেরীন চৌধুরী গেটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে

-তুমি বসো ভাবি আমি দেখছি কে এসেছে।

-মেহেরীন চৌধুরী গেইট খুলে মিতু কে দেখে অনেক খুশি হয়। মিতুকে জড়িয়ে ধরে বলে

-কি রে মা, কেমন আছিস?? এতো শুকিয়ে গিয়েছিস কেনো?? ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস না নাকি??

-হ্যাঁ ফুফু মনি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করি তো। আআলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি তোমরা কেমন আছো??

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, কিন্তু জামাই কই?? একা কেনো তুই??

-তোমাদের জামাই গাড়ি পার্ক করছে, আমি আগে আগে চলে এসেছি।

-আচ্ছা আই ভিতরে আই।

-মিতুর মা চাচিরা সবাই মিতুর কন্ঠ শুনে এগিয়ে আসে। মিতুর মা আগে এসে এসে মেয়েকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। মেয়ে কে কত দিন বাদে দেখছে।

-রাফি ২ হাত ভর্তি করে মিষ্টি ফল নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে। রাফির হাতে এতো কিছু দেখে আসমা চৌধুরী সেদিকে এগিয়ে যাই। বলে

-বাবা এতো কিছু আনার কি দরকার ছিলো??

-কই এতো কিছু সেজো আম্মু।

-আসমা চৌধুরি রাফির হাতে থেকে সব কিছু নিয়ে নিচে রাখতে রাখতে বলে...

-আচ্ছা,, কই এতো কিছু তাই না?? এক হাতে মিষ্টির ৩ টা প্যাকেট আরেক হাতে ফল ভার কত বলো ।

-না সেজো মা সমস্যা নেই।

-কারীমা চৌধুরী মেয়েকে ছেড়ে এগিয়ে আসে জামাই এর দিকে বলে

-আগে বাড়ি ভিতরে এসে বলতা কারোকে পাঠাতাম বাবা এতো কষ্ট করার কি দরকার??

-না আম্মা কোনো সমস্যা নেই, এতোটুকুই তো।

-বাবা দাঁড়িয়ে আছো কেনো আগে বসো তো।

-সেই যে মেয়ে জামাই গেছে তারপর আজকে আবার আসলো বাড়িতে। ৪ শাশুড়ী ব্যাস্ত হয়ে গেছে। মেহেরীন চৌধুরী ঠান্ডা ঠান্ডা লেবুর শরবত আর কমলার জুস নিয়ে আসে। মিতু আসার খবর শুনে সিনহা মিহিকা সিজান বসার ঘরে এসেছে। সুবহা আর সারাহ এখন টিউশন পড়তে গেছে। অয়ন ও বাড়ি নেই, ক্রিকেট খেলতে গেছে খেলার মাঠে। শায়ন শাফিন ও নেই।

-সিনহা আর মিহিকা এসেই মিতু কে ২ পাশ থেকে ধরেছে। সিনহা বলে।

-আপু শুনো, তোমাদের কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যাওয়া নেই বুঝেছো??

-মিতু বোন কে আদর করে বলে..

-ওলে বাবালে,, আচ্ছা ঠিক আছে যাবোনা আর সারাজীবন পারলে রেখে দে।

-হুহ, তুমি থাকতে চাইলে অবশ্যই রাখবো।

-আচ্ছা সারাজীবন রাখার হলে বিয়ে দিলি কেনো??

-তোমার বিয়ের মত না থাকলে তুমি ৪ বছর প্রেম করলা কেনো??

-কি রে কথা শুনাচ্ছিস মনে হচ্ছে,

- কি যে, বলো না আপু।

-সিনহা টেনে টেনে রাফি কে বলে

-আসসালামু আলাইকুম, দুলাভাই। কেমন আছেন??

-এইতো শালি সাহেবা ঝাক্কাস আছি আলহামদুলিল্লাহ, তুমি কেমন আছো??

-আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি দুলাভাই।

-রাফি মিহিকা কে বলে।

-তা কি খবর শালিকা??

-জ্বী দুলাভাই আলহামদুলিল্লাহ,, আপনার?

-আলহামদুলিল্লাহ,, প্রেম কত দূর গেলো ফুসকা খাওয়া, গিফট নেওয়া???

-রাফির কথা মিহিকা বেশ হকচকিয়ে যাই, ও আবার কার সাথে প্রেম করলো?? মিহিকা ফের জিগ্যাসা করেন..

-কিসের প্রেম, কিসের ফুসকা, কিসের গিফট দুলাভাই??

-সেদিন যে তুমি আর আমার শালা ২ জন প্রেমের চুক্তি করলা আমি তো সাক্ষি ছিলাম??

-মিহিকার সেদিনের অয়নের ফাজলামি করে বলা কথাটায় বেশ লজ্জিত করছে মিহিকা কে,, সিনহা লজ্জা বাড়িয়ে দিয়ে বলে।

-কি রে প্রেম ট্রেম আড়ালে করছিস নাকি?? একা ফুসকা খেতে যাস না প্লিজ পেট খারাপ করবে।

-রাফি সিনহার কথায় বাঁধ সেধে বলে

-ছিহ শালি সাহেবা তোমারও দেখি লজ্জা নেই, ছোট দের প্রেম তুমি দেখবা লজ্জা করে না তোমার?? যেখানে তোমার প্রেম সাগরে ডুব মারার কথা, তার থেকে বড় কথা অন্যের প্রেমে কাবাব মে হাড্ডি হওয়া ভালো কাজ নয় বুঝেছো??

-আজ সিংগেল বলে এভাবে অপমান করতে পারলেন দুলাভাই, ছ্যাহ!

-আমিরুল চৌধুরী বসার ঘরে আসায় গল্পে ব্যাঘাত ঘটে। তখনই মেহেরীন চৌধুরী আর আসমা চৌধুরী বিভিন্ন রকম নাস্তা ২ ট্রে ভর্তি করে নিয়ে এসে সোফার সামনে টি টেবিলের উপরে রাখে। আমিরুল চৌধুরী রাফির পাশে বসতে বসতে বলে..

-young man! কি নিয়ে এতো কথা হচ্ছিলো শুনি?? আমাকেও কি গল্পের মাঝে নেওয়া যাই নাকি দেখো।

-এইতো দাদাভাই তেমন কিছু না, শুধু আমরা গল্প করছিলাম যে এই বয়সেও আপনার আর দাদুর কি প্রেম আহা এতোক্ষন ২ জনই ঘরের মধ্যে ছিলেন, যেই আপনি বাইরে এসেছেন দাদুও আসছে দেখেন।

-রাফি দাদাভাই কে সালাম করে সোফা থেকে উঠে গিয়ে দাদু কে সালাম করে সোফা পর্যন্ত নিয়ে আসে। তারপর সেও বসে পড়ে। রাফি বলে

-আচ্ছা দাদাভাই আমি তো আপনার নাতনির রাগ ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতেই পাগল হয়ে যাই, তা আপনি এতো বছরে বিভাবে এতো সুন্দর প্রেম টিকিয়ে রেখেছেন??

-আমিরুল চৌধুরী গর্বের সাথে বলে..

-এইটা সিক্রেট বুঝেছো। একসময় একা দেখা করিও সব বলবো।

-সিনহার দাদু আমিরুল চৌধুরী কে ব্যাঙ্গ করে বলেন..

-বুড়ো বয়সে ভিমরুতি ধরেছে। সিক্রেট শেখাবে নাত জামাই কে উনি, যে সারাজীবন বউ এর রাগ অভিমান না বুঝে নিজেই মেয়ে মানুষের মতো অভিনয় করতেন।

-তারপর নূরজাহান চৌধুরী রাফি কে বলে।

-নাতজামাই কেমন আছো তুমি??

-এইতো দাদু আলহামদুলিল্লাহ আপনার শরীর ভালো তো??

-আমার আর শরীর আল্লাহর রহমতে ভালোই চলছে, তা তুমি খাচ্ছো না কেনো কিছু।

-জ্বী দাদু নেন সবাই এক সাথে খাওয়া শুরু করি।

-সবাই নাস্তা খাচ্ছে। মিতু নুডুলস এর বাটি হাতে নিয়ে যেই না মুখে তুলতে যাবে ওমনি নাক চেপে ধরে নুডুলস এর বাটি রেখে বেসিনের দিকে দৌড় লাগিয়েছে। মিতুর পিছে পিছে মিহিকাও গিয়েছে। মিতুর বমি করা দেখে চেচিয়ে বলে

-মেজো মামি, বড় মামি, এদিকে আসো তাড়াতাড়ি মিতু আপু বমি করছে।

-মিহিকার চিল্লা চিল্লি শুনে রাফি সোফা থেকে উঠে এসে মিহিকা কে বলে..

-আরেহ মিহিকা কিছু হয় নি বেশি উত্তেজিত হইয়ো না কারোকে ডাকা লাগবে না তুমি সরো তোমার আপু কে আমি দেখছি।

-রাফির কথা শুনে মিহিকা এদিকে চলে আসে। রাফি মিতুকে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে সোফায় নিয়ে আসে দাদুর পাশে মিতু বসে। ততক্ষণে মিতুর মা চাচীরা সবাই বসার ঘরে আসে রান্না ফেলে রেখে। মিতুর দাদু মিতুর চোখ মুখ দেখে বলে

-কি রে মিতু তোর চোখ মুখ তো সুস্থ ঠেকছে না তুই কি পোয়াতি নাকি?

-রাফি লাফিয়ে উঠে বলে

-হ্যাঁ হ্যাঁ দাদু ওইটাই,, আপনাদের যুগের পোয়াতি আর আমাদের যুগের প্রেগন্যান্ট। সবাই কে বলার জন্যই এখানে হুট করে আসা কিন্তু সবাই কে এক সাথে বলবো ভেবেছিলাম তাই কথা চেপে রেখেছিলাম পেটের মধ্যে কথা গুলা বাড়ি খাচ্ছিলো এতোক্ষন।

-রাগির একনাগাড়ে বলা কথা গুলো শুনে বসার ঘরের সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠে। চৌধুরী বাড়ির বড় মেয়ের বাচ্চা হবে বাড়ির প্রথম নাতি/নাতনি,, খুশি তো হওয়ার এই কথা। মুহূর্তেই পুরো বাড়ি জেনে গেছে মিতুর গর্ভবতী হওয়ার কথাটা, সিনহা আর মিহিকা আনন্দে উরাধুরা নাচতে শুরু করেছে। রাগির ও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে মন চাইছে কিন্তু শশুর বাড়ি হওয়াই লজ্জায় তা করতে পারছে না।

- অয়ন ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা হয়ে ফুটবল হাতে নিয়ে মেইন গেট দিয়ে মাত্র বাগানে পা রেখেছে। বাগানেই দেখা হয় বারিক চাচার সাথে। উনি বাগানের ঘাস কাটা ফুলগাছের যত্ন নেওয়া এসব কাজেই নিযুক্ত। গ্রামে তার পরিবার বউ বাচ্চা আছে গ্রামে। এই বাড়ি থেকে বেশ মোটা অংকের বেতন পান তিনি সাথে চৌধুরী বাড়ি থেকে বেশ সাহায্য সহযোগিতা পান। তিনি অয়ন কে বলেন

-অয়ন বাজান বাড়ি আসছো এহন মিতু মা আইছে দেখছো নি।

-অয়ন চাচা কে বলে

-না চাচা মাত্র বাড়ি আসছি। খেলতে গেছিলাম।

-যাও যাও বাবা তাড়াতাড়ি,, তুমি তো বাজান মামা হইতাছো।

-অয়ন আগা মাথা না বুঝে বলে চাচা কে বাবা কে মা হতে যাচ্ছে?? আর আমি মামা?? কাহিনি খুলে বলেন তো..

-আরে, আমাগো মিতু মা হেই তো মা হইতে যাইতাছে।

-অয়ন দৌড়ে বাড়ির ভিতরে যাই। গিয়ে দেখে সিনহা আর মিহিকা উড়া ধুড়া নাচতেছে। অয়ন সিনহার মাথায় টোকা দিয়ে বলে..

-কি রে পাগল, নাচতেছিস কেন??

-সিনহা নাচতে নাচতেই বলে

-তুই শুনলে তুইও নাচবি।

-তাহলে বল

-আরেহ, তুই মামা হচ্ছিস আমি খালামনি।

-অয়ন ব্যাপার টা শিউর হওয়ার জন্য জিগ্যাসা করছিলো। অয়ন ঘামা শরীর রাফি কে জড়িয়ে ধরে বলে।

-কনগ্রাচুলেশনস দুলাভাই, কখন আসলেন আপনারা??

-এইতো কিছুক্ষন আগেই আসলাম,, তুমি কই গিয়েছিলা??

-বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠে ছিলাম, দুলাভাই থাকেন আমি গোসল শেষ করে আসি। শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ।।

-অয়ন উপরে চলে যাই। মিতু আর রাফি ও কিছুক্ষন বাদে উপরে যাই। এক হাতে লাগেজ অন্য হাত রাফির হাতের মধ্যে। মিতু যেহেতু সখ করেছে বাবার বাড়ি আসার অনেক দূর পথ তাই এসেছে যখন কিছুদিন থেকেই যাক সেবলেই এসেছে। রাফি ভেবেছিলো মিতু কে রেখেই চলে যাবে। কিন্তু সে কথা বলাই শাশুড়ী রা বাঁধ সাধেন যে রাফির ও এখন যাওয়া নেই। ২/৪ দিন থেকে তারপর যাওয়া। আবার কিছুদিন বাদে এসে মিতু কে নিয়ে যাবে। রাফিও বাধ্য ছেলের মতো তাতেই সম্মতি জানাই।

____________________
-শায়ন আর শাফিন এক সাথে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার পর। মিতু আর রাফির সাথে দেখা হয়েছে তবে এখনো শোনা হয় নি মিতুর মা হওয়ার খবর টা। শায়ন এসে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে,, সিনহা ইদানীং খুব করে চাই শায়নের আসে পাশে থাকতে। কিন্তু শায়নের ব্যাস্ততা খুবই বেড়েছে। হয়তো হসপিটালের কাজ চলছে সে কারনেই। সিনহা এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে চুপি চুপি শায়নের রুমে এসেছে। শায়ন সিনহার উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে বলে,

-এইদিকে আই।

-সিনহা বেলকনির দিকে গুটি গুটি পায়ে গিয়ে বলে..

-শায়ন ভাই আপনার কফি,

-বলেছিলাম কফির কথা??

-না তা বলবেন কেনো?? তবে একই বাড়ির মানুষ হওয়াই আমারো তো দ্বায়িত্ব আছে নাকি?? আপনি তো কাজ থেকে আসলেন নিশ্চয়ই ক্লান্ত??

-বাহ অনেক তো বড় হয়ে গেছিস।

-হ্যাঁ

-শায়ন আবারো সিনহা কে শুধিয়ে বলে

-কিছু বলবি??

-হু

-বল তাহলে,,

-সিনহা জানে শায়ন ভাই তো কারো দিকে বিশেষ করে সিনহার দিকে দুচোখে ভালো মতো তাকাই ও না তবুও বেশ কৌতুহল নিয়ে বলে।

-আমাকে কেমন লাগছে শায়ন ভাই??

-মেয়েদের মতোই।

-আজব তো আমি তো মেয়েই exactly কেমন লাগছে সেটা জানতে চেয়েছি।

-শায়ন এক নজর সিনহা কে দেখে দৃষ্টি সরিয়ে নেই। ইদানীং শায়ন সিনহার দিকে ঠিক মতো তাকাতেও পারে না, চোখে চোখ রাখতে পারে না। শায়নের মনে হয় এই ডাগর ডাগর কাজল রাঙা আঁখি তে মাদকতা আছে তাকালেই কেমন নেশা লেগে যাই। গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট ২ টা নাড়িয়ে কথা বলার ধরনটাতে মনে হয় সাগরের মতো গভীরতা আছে তাকালেই অন্তরালে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। শায়ন ছোট করে সিনহা কে বলে,,

-হু সুন্দর লাগছে।

-ধন্যবাদ শায়ন ভাই।

-আর কিছু বলবি??

-হু

-তাড়াতাড়ি বল, আমার কাজ আছে অনেক।

-আপনি মামা হবেন শায়ন ভাই।

-শায়ন সিনহার পুরো কথা না শুনে শায়নের পুরো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। শায়ন হয়তো ভাবে সিনহা প্রেগন্যান্ট সেটা বলতে চাইছে। মূহুর্তেই শায়নের চোখ জ্বলে উঠলো ধপ করে। মেজাজ তুঙ্গে তুলে বাম হাত দিয়ে সিনহার গাল চেপে ধরে বলে..

- কি বললি তুই?? মামা হতে যাচ্ছি মানে?? বিয়ের আগেই এসব নষ্টামি কই করেছিস?? ছেলেটার নাম তাড়াতাড়ি বল একদম জানে মেরে দিবো।

-সিনহা ব্যাথায় গোঙ্গাচ্ছে। কথাও বলতে পারছে না। চোখ দিয়ে মুহূর্তেই পানি চলে আসে। সিনহা কোনো মতে বলে।

-শায়ন ভাই ব্যাথা পাচ্ছি প্লিইজ।

-শায়ন মুহূর্তেই সিনহা কে এক ঝটকায় ছেড়ে দেই। সিনহার ২ চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,

-মিতু আপু প্রেগন্যান্ট আমি এটাই বলতে চেয়েছিলাম আপনাকে,, কিন্তু আপনি বরাবরই আমাকে কষ্ট দেন ব্যাথা দেন।

-সিনহা কান্না করতে দৌড়ে চলে যাই সেখান থেকে৷ শয়নের হুশে আসে। আসলেই পুরো কথা না শুনে সিনহা কে আঘাত করা মোটেও উচিৎ হয় নি। শায়ন জোরে জোরে ৩ বার বাম হাত দিয়ে দেওয়ালে ঘুষি মারে আর বিড়বিড়িয়ে বলে

-Damn it! না না কি করলাম এটা।

-রাতের বেলা খাওয়ার সময় সকলেই উপস্থিত ছিলো। কাশফিয়া চৌধুরী এসেই শুনেছেন মিতুর প্রেগন্যান্ট এর নিউজ টা। এসেই একটা রুটিন চার্ট বানিয়ে দিয়েছে মিতুকে। কাশফিয়া গাইনোকোলজিস্ট। এবং মিতুকে বলে এখন থেকে ডেলিভারি পর্যন্ত তোকে সব রকম ট্রিট করবো আমার পেসেন্ট হিসেবে। একদম নিয়মের বাইরে যাওয়া যাবে না। মিতুও বেশ হেসেছেন সেই কাহিনি নিয়ে। বাড়ির প্রতিটি মানুষের কাজ কর্মে মিতু আর রাফি আহাম্মক এর মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।

- সিনহা শায়নের ঘর থেকে যাওয়ার পর ওয়াশরুমে ঢুকে বেশ কিছুক্ষন শাওয়ার নিয়েছেন। কেদেছেন ও অনেক্ষন। সিনহা মনে মনে নিজেকে বেশ গাল মন্দ দিয়েছে। সে জানে শায়ন ওকে কোনো সময় পছন্দ করে না সব সময় আঘাত করে তার পরেও কেনো ও বেহায়ার মতো বার বার ওর কাছে যাই বুঝে না। মিহিকা গিয়ে ডেকে এনেছে খাওয়ার জন্য। সিনহা নিচে আসতেই চুল ভেজা দেখে সিনহার মা বলে

-কি রে সিনহা এই অবেলায় শাওয়ার নিয়েছিস কেনো??

-সিনহা চুপচাপ আছে,, মায়ের কথায় ছোট করে জবাব দেই।

-গরম লাগছিলো তাই।

-সিনহার মা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ ২ টা অসম্ভব লাল আসমা চৌধুরী আবার বলেন।

-কিহ হয়েছে শরীর খারাপ তোর?? চোখ লাল কেনো??

-সিনহা বেশ উচু গলায় চেচিয়ে বলে

-সমস্যা কি তোমাদের?? অবেলায় শাওয়ার নেওয়া যাবে না,, চোখ লাল কেনো সেই প্রশ্ন। এটা করা যাবে না ওটা বললে দোষ না জেনে না শুনে নিজেদের মতো বুঝো সবাই সমস্যা কি তোমাদের?? নাকি আমি এই সবার সমস্যা কোনটা??

-সিনহার চিৎকারে সবাই নতুন জামাইয়ের সামনে অসস্তিতে পড়ে যাই। রাফি ব্যাপার টা বুঝে হেসে বলে

-থাক না সেজো মা হয়তো শরীর ভালো না তার থেকে বরং সবাই খাওয়া শুরু করি।

-সিনহার বাবা নিজের পাশের চেয়ার টা থেকে সিজান এর কে অন্যপাশে বসতে বলে চেয়াল টা খালি করে সিনহা কে ডেকে নেই

-সিনহা মামনি এপাশে এসে বসো। আজকে আমরা বাপ বেটি পাশাপাশি বসে খাবো।

-সিনহা বাধ্য মেয়ের মতো সেখানটাই গেলো। চুপচাপ প্লেটে হালকা খাবার তুলে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।

-শায়ন সিনহার মুখের দিকে বেশ লক্ষ্য করেছে গালে হালকা দাগ রয়েছে। চোখ মুখের অবস্থাও বেশ খারাপ। শায়নের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। সিনহা এসে থেকে একবারো এদিক সেদিক তাকাই নি। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে ঘুম আসছে বলে সেখান থেকে চলে গেলো।

চলবে....

 #হৃদ_মাঝারে  #লেখনীতে_জান্নাতুল_ফিরদাউস_ফাতেমা  #পর্ব_২০ -মিতু শশুর বাড়ি ফিরেছে কক্সবাজার থেকে আসার ৩ দিন পরেই। রাফির ব...
02/06/2025

#হৃদ_মাঝারে
#লেখনীতে_জান্নাতুল_ফিরদাউস_ফাতেমা
#পর্ব_২০

-মিতু শশুর বাড়ি ফিরেছে কক্সবাজার থেকে আসার ৩ দিন পরেই। রাফির বোন দুলাভাই লন্ডনে চলে গেছে। এখন আর মিতুর মা আগের মতো মন খারাপ করে বসে থাকে না। অভ্যাস হয়ে গেছে,, মানুষ নিতান্তই অভ্যাসের দাস মাত্র। শায়ন কে ইদানীং বাড়িতে খুব কম এই পাওয়া যাই। নিয়ম করে খাওয়ার সময় সকালে নাস্তা করে বের হয়। এবং দুপুরে এসে খেয়ে আবার বের হয়ে যাই। ফিরে সন্ধ্যার সময়। আজকে দিন ছিলো শুক্রবার। সকলেই বাড়িতে উপস্থিত শায়ন ও আজ বাসায় ছিলো। বাড়ির সকলে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত। সন্ধ্যার নাস্তা করছে সকলে। শায়নের বাবা মুক্তিয়ার চৌধুরী বলেন।

-কি ব্যাপার শায়ন বাড়ি এসেছো তো বেশ সময় হয়েছে। তো হসপিটালেও জয়েন করছো না আবার অফিসেও তো জয়েন করছো না।

-শায়ন কফি তে চুমুক দিয়ে বাবার দিকে তাকাই। এবং বলে।

-জ্বী আব্বু, খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু শুরু করবো একটু গুছিয়ে নিতে সময় লাগছে।

-সেটা বুঝলাম, কিন্তু সব তো গুছানোই আছে।

-আসলে বাবা, আমি বন্ধুদের সাথে শেয়ারে হসপিটাল দাঁড় করাতে চাই। তোমরা যা করছো তোমাদের ছেলে মেয়েদের জন্যই সেটা ঠিক আছে কিন্তু আমি চাই আমি নিজে, নিজের যোগ্যতায় কোনো কিছু করার জন্য।

-বাবা হিসেবে ছেলের কথা খুবই পছন্দ হয়েছে মুক্তিয়ার চৌধুরীর।

-আচ্ছা, বুঝেছি বাবা এবং তোমার কথায় বেশ খুশি হয়েছি। তবে যতদিন না পর্যন্ত তোমাদের হসপিটালের কাজ শুরু না হচ্ছে ততদিন কি করবে ভাবলে?

-আসলে আব্বু হসপিটালের কাজ শেষের দিকে ১০-১৫ দিনের মধ্যে ওপেনিং হবে। আপনাদের জানাই নি। সারপ্রাইস দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি জানতে চাইলেন।

-কিন্তু তুমি এতো টাকা কোথায় পেলে?? সেটা অন্তত জানতে পারি বাবা হিসেবে??

-শায়ন দ্বিধায় পড়ে যাই। আসলে তার কৈফিয়ত দেওয়া পছন্দ না। তবুও না বললে বাবা কষ্ট পাবে ভেবেই মুখ খুললো।

-আব্বু আমি লন্ডনে টিউশনি করাতাম+পার্টটাইম জব করতাম, সেখান থেকে নিজের খরচ চালাতাম+ ইনভেস্ট করতাম, আপনি গত ৫ বছরে আমার একাউন্ট এ যত টাকা পাঠিয়েছেন তার সিংহভাগই এখনো একাউন্ট এ রয়েছে। even রেগুলার সকাল ৮-১২ টা পর্যন্ত ভার্সিটি করতাম এবং ২ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত পার্টটাইম জব,, সন্ধ্যা ৮-৯ পর্যন্ত টিউশনি,, এবং টুকটাক ফ্রিল্যান্সিং করতাম। সব মিলিয়ে। Regular hard work করে আজ এই পর্যায়ে এসেছি। এবং আমি বাংলাদেশ থাকা অবস্থায় ও নিজের জন্য টাকা জমাতাম,, আপনাদের সকলকে লুকিয়ে টিউশনি পর্যন্ত করাতাম। সেসব আপনাদের অজানা। কখনো বলতে চাই নি। আজ বললাম।

-শায়নের কথা সবাই এতোক্ষন মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। সবাই নির্বিকার। এসব শাফিন বরাবরই অবগত। মুক্তিয়ার চৌধুরী বেশ খুশি হয়েছে। তবে কষ্ট ও পেয়েছেন। ছেল্ব এতো দূর এগিয়ে গিয়েছে। বাবা হিসেবে কি তার জানার অধিকার ছিলো না?? সে কি ব্যার্থ বাবা নাকি স্বার্থক বাবা?? সবার সামনে ছেলেকে নিয়ে গর্ব করার মতো ছেলে তার। তবুও কোনো এক অজানা কারনে খারাপ লাগছে তার। ছোট করে জবাব দেই।

-ওহ।

-আমিরুল চৌধুরী সব টা শুনে মুখ খুললেন..

-সব মেনে নিলাম দাদু ভাই। কিন্তু বাড়ি থেকে যে পরিমান টাকা পাঠানো হতো সেখানে তুমি এতো কষ্ট না করলেও পারতে। আর আলাদা ভাবে হসপিটাল করতে চাইলে আমরাই তোমাকে সে ব্যাবস্থা করে দিলাম।

-সরি দাদু ভাই। আমার যদি তোমাদের থেকেই টাকা নিয়ে হসপিটাল করার হতো তাহলে আমাদের ওই হসপিটালেই জয়েন হতে পারতাম। এখন বর্তমানে যেগুলো আছে সেগুলো তোমার এবং আমার বাবা- চাচাদের অর্জন। বাবারা যেগুলো করেছেন সেগুলো অবশ্যই আমাদের জন্য। কিন্তু আমাদের কি উচিৎ না নিজেদের কিছু করা?? বাবা দাদার আছে বলেই কি আমাদের সেগুলো শুয়ে বসে উড়ানো উচিৎ??

-মুস্তাকিম চৌধুরী বলেন।

-শুনে খুশি হলাম বাবা, কিন্তু হসপিটালের ওপেনিং কবে??

-সেজো আব্বু এখনো ডেট ফিক্সড হয় নি। তবে অনুষ্ঠান করা হবে সেখানে ইনশাআল্লাহ বাড়ির সকলে উপস্থিত থাকবে।

-মাসুদ চৌধুরী মজার ছলে শায়ন কে বলে..

-কিন্তু শায়ন আমাদের পুরো হসপিটাল তো তোর দিকে তাকিয়ে ছিলো যে লন্ডন ফেরত এমবিবিএস এবং সার্জন একজন ডাক্তার পাবে। তাহলে আমাদের কি হবে??

-আমি তো লন্ডলে ফেরত যাচ্ছি না কাকাই বিডি তেই আছি।

_____________________

-তালুকদার বাড়িতে মিতু শুয়ে আছে নিজের রুমে। রাফি এক পাশে বসে আছে ওপর পাশে রাফির মা বসে আছে। রাফির বাবা সোফায় বসে আছে আর ঈশিতা পুরো ঘর পাইচারি করছে। কিছুক্ষন আগে হসপিটাল থেকে ফিরেছে রাফি এবং মিতু। মিতুদের ২ মাস পার হয়েছে। কয়েকদিন ধরে মিতুর শরীর বেশ খারাপ করে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে পারে না শরীর খুব ভার লাগে। খারারে অনীহা প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকে। আজকে রাফি ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলো। এসেই ২ জনে একত্রে ঘরে এসেছে। পিছে পিছে রাফির বাবা মাও রুমে এসেছে। রাফির মা বলে

-কি রে, কি সমস্যা তোদের?? কখন থেকে এসে এভাবেই চুপ করে আছিস কেনো??

-তাও নিশ্চুপ রাফি। মিতুও বেশ অধৈর্য হয়ে বলে।

-রাফি তুমি কি নিরবতায় পালন করবা নাকি আমি মুখ খুলবো কোনটা??

-আরেহ থামো থামো একটু থামো আমাকে আগে বিষয় টা উপভোগ করতে দাও।

-রাফির বাবা রেগে গিয়ে বলে

-থাক তোরা তোদের সময় হলে আমাদের বলিস। তার থেকে বড় কথা মিতু মা অসুস্থ সেখানে তোর উপভোগের কি আছে??

-রাফির মা রেগে রাফির বাবাকে ধমকে বলে

-থামো তো তুমি চুপ চাপ বসো।

-তারপর রাফির মা মিতুকে বলে

-আমরা কি দাদা-দাদু হতে চলেছি বউমা??

-রাফি চিল্লিয়ে বলে উঠে।।

-আরেহ মা great genius! বুঝলে কি করে??

-তোর মাথা দেখে মাথা মোটা ছেলে আমি এটাই সন্দেহ করেছিলাম শিউর হওয়ার জন্য ডাক্তারের কাছে পাঠালাম।

-রাফির বাবা মা খুশি হয় ভীষণ। তারা দাদা-দাদু হবে বলে কথা। মিনারা তালুকদার তাড়াহুড়ো করে কিচেনে যাই এখন তো মিতুর বেশি বেশি করে ফল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিৎ। রিপন তালুকদার যাই মিষ্টির দোকানে। ঈশিতা দৌড়ে এসে মিতু কে জড়িয়ে ধরে বলে।

-আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ ভাবিজান আমি সত্যিই ফুফি হতে যাচ্ছি??

-মিতু একটু লাজুক হাসে।

-রাফি এবং ঈশিতা ২ ভাইবোনে ফোনে বাচ্চাদের ড্রেস খেলনা দোলনা টেডি আরো বিভিন্ন জিনিস দেখছে আর অর্ডার করছে। ওদের পাগলামি দেখছে আর হাসছে মিতু।

- ঈশিতা রাফির কাজিন। রাফির ছোট খালার মেয়ে ঈশিতা। ঈশিতার মায়ের প্রেমের বিয়ে ছিলো পালিয়ে বিয়ে করেছিলো। ঈশিতার বাবা ঈশিতার মাকে খুব ভালোবাসতেন। ঈশিতার নানা নানি মেনে নেন নি ঈশিতার মাকে। ঈশিতার জন্মের ৮ বছর পর ঈশিতার মা আবারো গর্ভবতী হয়। পরিবারে তখন সুখের সীমা নেই। কিন্তু ওইযে অতিরিক্ত সুখ কখনো সহে না। ঈশিতার বাবার আয় রোজগার খুব সামান্য ছিলো। ঈশিতার পরে ভাই হয় কিন্তু আফসোস ঈশিতার মা সন্তান প্রসবের সময় মারা যান ঈশিতার ভাইও জন্মের পর ঘন্টা কয়েক বেঁচে ছিলো তারপর সেও মারা যাই। মা থাকতে ঈশিতার বাবা ঈশিতাকে খুব ভালোবাসতেন আদর করতেন। কিন্তু ঈশিতার মায়ের মরার পর ঈশিতার বাবা আর ঈশিতা কে আগের মতো ভালোবাসতেন না আদর করতেন না স্ত্রীর মৃত্যু তিনি কখনো স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেন না। ঈশিতার বাবাও একসময় বিয়ে করে। কিন্তু সৎ মা ঈশিতা কে মেনে নিতে পারে না। মিনারা তালুকদার বরাবরই বোনের মেয়ের খোঁজ নিতেন। ঈশিতা যখন ক্লাস থ্রি তে পড়ে। একদিন বড় খালামনিকে কল করে কান্না করতে করতে সব কিছু খুলে বলে। এক সময় মিনারা তালুকদার ঈশিতা কে গাজীপুর নিয়ে আসে। এবং স্কুলে ভর্তি করাই। ঈশিতার বাবাও কখনো ঈশিতার খোঁজ নেন না। এখন ঈশিতা খালামনি আর খালু জান কেই বাবা মা মেনে চলে। ঈশিতাও তার জন্মদাতা কে ভুলতে বসেছে।

-মিনারা তালুকদার ট্রে তে করে বেশ কয়েক রকমের ফল দুধ নিয়ে আসে রাফির রুমে। রাফি আর ঈশিতা খুশিতে ভাইবোন বক্সে গান লাফিয়ে উড়াধুরা ডান্স করছে, মিতু খাটের উপর পা তুলে বসে তা দেখতে আর হেসে কুটি কুটি হচ্ছে। মিনারা তালুকদার রাফি কে ধমকে বলে..

-বন্ধ কর রাফি বউমার অতিরিক্ত শব্দে সমস্যা হবে। নাচার ইচ্ছে হলে বাড়ির বাইরে গিয়ে নাচ আমার বউ মাকে বিন্দু পরিমান জ্বালাবি না।

-ওহে আম্মা জান আপনার ছেলের বউ হলেও সে কিন্তু আমার একমাত্র বউ এবং আমার সন্তানের জননী।

-চুপ কর বিয়াদব ছেলে কোথাকার। মিতু তুমি এখান কার সব ফল আর দুধ এখনই শেষ করো।

-মিতু অসহায় ফেইস করে বলে..

-কিন্তু আম্মা আমি এক সাথে এতোগুলো খেতে পারবো??

-পারবা কি পারবা না সে সব হিসেব আমার না শেষ করবা সেটাই বড় কথা।

-মিতু বাধ্য মেয়ের মতো খেতে শুরু করেন। মিনারা তালুকদার একা একাই বকবক করেন

-শুনো মিতু আজ থেকে তোমার ২ মিনিট পর পর নিচে যাওয়া চলবে না। বাড়ির কাজ কাম শেষে আমি এই উপরে এসে তোমার সাথে বসে থাকবো আর ঈশিতা তো তোমার সাথে সব সময় থাকবেই এখন এটা ওর ডিউটি। আর কোনো কাজ ভুলেও ধরবা না। কাপড় ধুবা না তুমি রেখে দিবা রাফি এসে ধুঁয়ে দিবে নাহলে আমি আছি। একটাও কাজে হাত দিবা না।

-মিতু মনোযোগ দিয়ে শাশুড়ীর কথা শুনে। বেশ ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে নিজেকে। খাওয়া রেখে শাশুড়ী কে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠে।মিনারা তালুকদার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

- এই পাগলি মেয়ে কান্না করছো কেনো??

-আম্মা আমি আসলেই ভাগ্যবতী, মা রেখে এসে মা পেয়েছি, বাবা রেখে এসে বাবা পেয়েছি বোন রেখে এসে বোন পেয়েছি। অনেক শুনতাম লোকের শাশুড়ী নাকি খারাপ হয় শুনি ঠিক মতো খেতেও দেই না কিন্তু আমি কখনো বুঝি এই না আপনারা আমার শশুর শাশুড়ী। মিনারা তালুকদার মিতুর চোখের পানি মুছিয়ে বলে..

-ছিহ মা কান্না করিস কেনো?? আমরা তো তোর বাবা মাই। আমাদের তোরা ছাড়া আর আছে কে??

-রাফি মন ভার করে রুম থেকে বের হতে যাই, পিছে
থেকে তার মা বলে উঠে..

-কি রে কই যাচ্ছিস তুই??

-যেখানে ইচ্ছে সেখানে তাতে তোমার কি??

-ঢং করিস কেনো কি সমস্যা তোর??

-কিসের ঢং হ্যাঁ?? তোমাদের আদরের বউমার কাছে সবাই খুবই প্রিয় কিন্তু আমি যে তার স্বামী আমি যে এতো ভালোবাসি এটা সে কই বললো না তো??

-রাফির কথা শুনে একত্রে সবাই হেসে উঠে। রাফির মা মিতুকে বলে...

-মিতু তোমার বাবা মাকে জানিয়েছো??

-না আম্মা এখনো জানাই নি।

-তো জানিয়ে দাও।

-আসলে আম্মা ভাবছিলাম যে ফোনে জানানোর থেকে বাড়ি গিয়ে সবাই কে সারপ্রাইজ টা দিবো,, কিন্তু??

-কি কিন্তু??

-যদি যেতে অনুমতি দেন তাহলে যাবো।

-আর যদি অনুমতি না দেই??

-তাহলে, ফোনেই জানিয়ে দিবো।

-মিতুর সোজাসাপ্টা জবাবে মিনারা তালুকদার বেশ খুশি হয়। বলেন

-কবে যাবে বলো?? সমস্যা নেই রাফি নিয়ে যাবে তোমাকে।

-আচ্ছা আম্মা।

-রিপন তালুকদার ২ হাতে ২ টা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে রাফির রুমে ঢুকছে। মিতুর প্রিয় প্রিয় ছানার মিষ্টি আর আপর টাই কালোজাম এনেছেন। ২ টাই মিতুর খুব প্রিয়।

____________________

-শাফিন শুয়ে আছে। ঘড়িতে রাত ১২ টার কাটা ছুই ছুই। শাফিন খুব করে মিস করে কারোকে আনমনে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে...

-আমি তো তাকে এখনো ভুলতে পারলাম না। কিন্তু সে কি আমাকে ভুলে গেছে?? মনে পড়ে না একটুও ভীষণ আফসোস লাগে সেদিন যদি কন্টাক্ট নাম্বার বা ফেইসবুক আইডি নেওয়া হতো তাহলে অন্তত মাঝে সাঝে যেকোনো বাহানায় খোঁজ তো নেওয়া হতো নাকি?? শাফিন ভাবে যেকোনো ভাবে জিনিয়ার সাথে শাফিনের কথা বলতেই হবে।।

||

-শায়নের হাতে ফোন, স্ক্রিনে জল জল করছে সিনহার সেদিনের ছবি। কাঁঠগোলাপ কানের পাশে গোজা সকাল বেলা কফি হাতে বাগানে বসে ছিলো আনমনে তোলা ছবি। এখন শায়ন এখন উপলব্ধি করে যে সেও প্রেমে পড়েছে। ভালোবেসেছে তাকে। কিন্তু সে কি আজো তাকে ভালোবাসে?? নাকি সেদিনের তিক্ত ব্যাবহারের কারনে আজো এয়াগ করে আছে তার মায়াবীনি?? বুঝবে কি এখন তার ভালোবাসা??

-শায়ন গলা ছেড়ে গান ধরে..

আমার শ্যাম কালিয়া রাধা রানী
কৃষ্ণ প্রেমে পাগলিনী
আমার শ্যাম কালিয়া রাধা রানী
কৃষ্ণ প্রেমে পাগলিনী
দেখ বৃন্দাবনে মায়াবিনী
বাসির সুর বাজে গো
নাচে রাধা নাচে গো রমনী
আমার নাচে রাধা নাচে গো রমনী
শ্যাম কালিয়া রাধা রানী
কৃষ্ণ প্রেমে পাগলিনী
যখন মা জসদার মন উদাসী
কানাই দেখে আড়ি আড়ি
যখন মা জসদার মন উদাসী
কানাই দেখে আড়ি আড়ি

-আসলেই তার মায়াবিনী কি তার জন্য বাশির সুর বাজাবে?? তাকে কি আবারো গ্রহন করবে নাকি তার মতো করেই ফিরিয়ে দিবে কোনটা?? শায়ন মনে মনে বলে

-মেনে না নিলে মানিয়ে নিবো মানতে না চাইলে ছিনিয়ে নিবো কিন্তু তাকে আমি আমার করে নিবোই।

______________

-শুয়ে শুয়ে সিনহা ফেসবুক স্ক্রল করছে। সিনহা সোস্যাল মিডিয়া তে খুব বেশি একটিভ থাকে,, সারাদিন এটা ওটার পিক উঠাবে আর ফেসবুকে পোস্ট করবে। হঠাৎ সামনে শায়নের আইডি আসলো। মিচুয়াল ফ্রেন্ড এ শাফিন অয়ন বাড়ির প্রায় অনেকেই আছে। সাথে সাথে একটা ফেইক একাউন্ট করে শায়ন কে মেসেজ দেই

-হাই হ্যান্ডসাম।

-...........

-হেই মিস্টার শুনছেন??

-তাও নো রিপলাই??

-প্রেম করছেন বুঝি??

-শায়ন ফোনে সিনহার ছবি দেখতে মগ্ন ছিলো, বার বার মেসেঞ্জারে নোটিফিকেশন আসায় বিরক্ত হয়ে নোটিফিকেশন এ ক্লিক করতেই স্ক্রিনে কিছু মেসেজ ভেসে উঠলো। আইডির ভিতরে গিয়ে তেমন কোনো ডিটেইলস পাই না। মুহুর্তেই বুঝে যাই এটা একটা ফেইক আইডি। রিপলাই করে..

-কি চাই??

-অপর পাশ থেকে দ্রুত আবারো মেসেজ আসে।

-আপনাকে চাই,

-আমাকে দিয়ে কি করবেন আপনি??

-আসলে, আমি অসুস্থ চোখে কম দেখি যতটুক দেখি সারাক্ষন আপনাকেই দেখি, বুকের মাঝে খুব আওয়াজ হয় সব সময় এবং আপনার নামেই জপে। ডাক্তার বলেছে সারাক্ষন আপনার সাথে প্রেম করতে তাহলে নাকি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবো।

-আপনাকে ট্রিটমেন্ট করা ডাক্তার কে আমার সালাম দিবেন। আমাদের দেশে এই রকম ডাক্তার খুবই প্রয়োজন।

-জ্বী অবশ্যই। তবে আরেক সমস্যা হয়েছে ইদানীং..

-কি

-ঘুমালে অন্ধকার দেখি,, আর ওই অন্ধকারের মধ্যে আপনাকেও দেখি।

-শেষ??

-কি শেষ??

-আপনার সাথে চ্যাটিং করতে করতে আপনার একাউন্ট হ্যাক করা শেষ ম্যাডাম।

-এ্যা??

-এ্যা নয় হ্যাঁ ম্যাডাম। ফেইক একাউন্ট না করে রুমে এসে ফ্লার্টিং করলেও তো হয় ২/১ টা নোবেল দেওয়া হবে।

-সরি।

-কিসের সরি?? থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিবো বেয়াদব মেয়ে ঘুমা তাড়াতাড়ি।

-সিনহার একাউন্ট থেকে মূহুর্তেই লাত্থি মেরে বের করে দেই। বুঝে যাই সিনহা শায়ন পাসওয়ার্ড চেন্স করে তার একটিভ লগ আউট করে দিয়েছে। তাতে ওর কি?? সিনহা আবারো মেইন আইডি তে গিয়ে শায়নের আইডি সার্চ করে একে একে সব পিক গুলো দেখছে। মিতুর বিয়ের বেশ কয়েকটি পিকও পোস্ট করা আছে।

চলবে......

 #হৃদ_মাঝারে  #লেখনীতে_জান্নাতুল_ফিরদাউস_ফাতেমা  #পর্ব_১৯ -সন্ধ্যার আড্ডায় সকলে বসে আছেন বসার ঘরে। বাসায় মেহমান এখন নেই ...
01/06/2025

#হৃদ_মাঝারে
#লেখনীতে_জান্নাতুল_ফিরদাউস_ফাতেমা
#পর্ব_১৯

-সন্ধ্যার আড্ডায় সকলে বসে আছেন বসার ঘরে। বাসায় মেহমান এখন নেই বললেই চলে। আজকে বাড়ির বউ রা বেশ ক্লান্ত সারাটা দিন জুড়ে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করা কম কথা। কইদিন যাবৎ মেহমান ছিলো বাড়ি বেশ এলোমেলো হয়ে ছিলো। এখন মেহমান নেই। শুধু রয়েছে মেহেনাজ সিকদার এবং তার পরিবার আর মিতু এবং রাফি। রাফি কে ঘিরে সিনহা দের সকল কাজিন রা বসে আছে। সাথে ঈশিতাও আছে। সিনহা রাফি কে প্রশ্ন করে।

-আচ্ছা দুলাভাই আপনারা প্রেম করার সময় কোথায় কোথায় ঘুরতেন??

-কেনো শালি সাহেবা তুমি কি প্রেম ট্রেম করছো নাকি??

-আরেহ দুলাভাই কি যে বলেন না সে সব সময় এখনো হয়েছে নাকি আমার??

-অয়ন মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছিলো টিভি তে হিন্দি মুভি কাভি খুশি কাভি গাম চলছে। মনোযোগ সরিয়ে সিনহার মাথায় গাট্টা মেরে বলে।

-সঠিক সময় বিয়ে দিলে এখন ২ বাচ্চার না হতি। গ্রামে গিয়ে দেখ তোর সমবয়সী রা ২-৩ বাচ্চার মা হয়ে ঘর সংসার বাচ্চা কাচ্চা সামলাচ্ছে আর তুই বলিস তোর নাকি প্রেমের বয়স হয় নি।

-মিহিকা অয়নের কথায় বলে।

-তাহলে তো অয়ন ভাই তোমারও প্রেমের বয়স হয়েছে। তা তুমি প্রেম করো না কেন?? নাকি মেয়ে পাত্তা দেই না কোনটা??

-মিহি শুন লোকের সাথে প্রেম করে হাজার হাজার টাকার গিফট, ফুসকা, রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর চেয়ে চল তুই আর আমি প্রেম করি তাহলে লোকের পিছে আর টাকা খরচ করতে হবে না তোকেই সব দিবো।

-অয়নের কথা শুনে মিহির কাশি শুরু হলো। স্ন্যাক্স খাচ্ছিলো গলায় আটকে গেছে। অয়নের মজা করে বলা কথা টাও যদি সত্যি হয় তাও কত। কিন্তু সকলে অয়নের কথার ২ টাকার ও দাম না দিয়ে হেসে উড়িয়ে দেই।

-শায়ন এতোক্ষন নিজের রুমেই ছিলো নিচে নেমে মিতু আর রাফির কাছে আসে। রাফির হাতে ২ টা প্লেনের টিকেট দিয়ে বলে...

-রাফি তোমাদের বিয়েতে আমার উপহার এখনো দেওয়া বাকি। এখানে ২ টা টিকেট আছে,, আমার পক্ষ থেকে সামান্য উপহার। কক্সবাজার ট্রিপ।

-না ভাইয়া এটার দরকার ছিলো না আমরা তো এমনেই ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম।

-ধরো তো আগে এটা, আমার তরফ থেকে উপহার বললাম তো আর গিফটের জিনিস ফিরত দিতে হয় না।

-প্লিজ ভাইয়া এভাবে বলবেন না,, তার থেকে এক কাজ করি টিকেট যখন করেছেন এই তাহলে আরো কয়েক টা আমি করে নিচ্ছি পরে সকলে এক সাথে ঘুরে আসি।

-শাফিন রাফি কে বলে..

-কথা বাড়াইয়ো না রাফি বড় সমন্ধি দিচ্ছে নিয়ে নাও,, আর এটা তোমাদের হানিমুন ট্রিপ। সবার ট্যুর না তো।

-মিতু ভীষণ আনন্দ হয় আর শায়ন কে বলে।

-Thank you vaiya! Thank you so much.. আর রাফি তুমি ভাইয়াকে টিকেট ফিরিয়ে দিয়ো না। ভাইয়া তো আমাদের আপন জন আর আপন জন কোনো কিছু ভালোবেসে দিলে সেটা ফেরত দিলে তারা কষ্ট পাবে।

-মিতুর কথায় সবাই বেশ খুশি হয়,, রাফিও টিকেট ২ টা ধরে। শায়ন মিতুর মাথায় হাত রাখে। তারপর শায়ন রাফিকে বলে।

-রাফি এই ২ টা টিকেট আগেই করে রেখেছিলাম ,, ঈশিতার জন্য তো টিকেট করা হয় নি। তবে আজকে রাতে আমি আনলাইনে টিকেট বুক করে রাখবো কোনো সমস্যা নেই। তোমরা রেডি হয়ে নিয়ো কাল সন্ধ্যায় ফ্লাইট।

-ঈশিতা বাঁধ সেধে বলে

-আরেহ নাহ ভাইয়া, এটা তো রাফি ভাইয়াদের হানিমুন ট্রিপ সেখানে আমি সিংগেল মানুষ গিয়ে কি করবো?? তবে ফ্যামিলি ট্যুর হলে অন্য বিষয়। আমি আবো না কাবাব মে হাড্ডি হতে প্লিজ ভাইয়া টিকেট বুক করার দরকার নেই।

-আসলেই তো ব্যাপার টা সেরকমই, ঈশিতা সেখানে যাওয়া বোকামি হয়। গিয়ে তো কোনো কাজ নেই। তার থেকে বরং অন্য সময় গেলেই হবে।

-শায়ন আর শাফিন বেরিয়ে যাই। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে কইদিন হলো বন্ধুদের সাথে আড্ডা হয় না তেমন। বাইক নিয়ে বের হয় ২ ভাই একটা বাইক নিয়েই গিয়েছে। আগে থেকেই কল করে সারাফাত, আরিফ এবং শুভ এসেছে। শুভ নিজের কিছু পার্সোনাল কাজে দেশের বাইরে ছিলো শায়ন আসার পরে শুধু ২-১ বার দেখা হয়েছে। তবুও মিতুর বিয়েতে। তার আগে শুভ বিসনেসের কাজে বাইরে ছিলো। শুভ শায়নের সব থেকে কাছে এবং বেস্ট ফ্রেন্ড।

-শায়ন শাফিন কিছুক্ষন বাদে তাদের চিরপরিচিত আড্ডা স্থানে হাজির হয়। শুভ শুরুতেই শায়ন কে টাইট একটা হাগ দেই৷ কতদিন পর বন্ধুর সাথে আন্তরিক ভাবে সাক্ষাৎ। মিতুর বিয়েতে তো সেভাবে কথা হয় নি শায়ন বেশ ব্যাস্ত ছিলো। শুভ শায়ন কে বলে।

-মামা কিহ অবস্থা দিন কাম যাচ্ছে কেমন??

-এইতো মামা তোর কিহ অবস্থা তাই বল??

-এইতো মানা চলতেছে। লাইফ টা প্যারাময় হয়ে গেছে ব্যাস্ততা অনেক।

- তো বিয়ে সাদি করবি কবে?? প্রেম তো আজ থেকে করিস না।

-করবো করবো তোর আগেই করবো।

-বন্ধু দের মধ্যে শায়ন স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডন থেকে ডাক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে এসেছে। সারাফাত, আরিফ এবং শাফিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে। এবং শুভ ঢাকা মেডিকেল থেকে থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে। এবং শুভর ইন্টার্নি চলছে। শাফিন সবাই কে বলে..

-Shayon seems to have fallen in love.. তাই না শায়ন ব্রো??

-কেন আমার থেকে তুই আমার ব্যাপারে বেশি জানোস তো তুই এই বল।

-সারাফাত বলে..

-বাহ বাহ বন্ধু তলে তলে টেমপু চালাও আমরা উঠলেই দোষ।

-শুভ কিছুক্ষন ধরে শায়নের প্রেমে পড়ার কাহিনি ভাবলো তারপর বললো..

-কিন্তু প্রশ্ন হলো শায়ন যে প্রেমে পড়েছে, এটা কি শাফিন তোর বোন সিনহা জানে??

-আরেহ দোস্ত টুইস্ট তো সেখানেই।

-কি বলিস মামা কাহিনি কি??

-শায়ন তো...

-শাফিন কে বলতে না দিয়ে শায়ন ধমকে উঠে বলে..

-শাফিন চুপ করবি নাকি তোর কিছুদিনের মধ্যেই প্রেমে পড়ার আভাসের সোর্স আমি বের করবো কোনটা??

-শাফিন বিষম খাই৷ সেদিনের কথা মনে পড়তেই শাফিনের মনে পড়ে জিনিয়ার কথা। জিনিয়ার কন্টাক্ট নাম্বার বা ফেসবুক একাউন্ট কিছুই রাখা হয় কি চাইলেই অয়ন সিনহার থেকে নিতে পারে কিন্তু ছোট ভাই বোনের কাছে চাইতেও লজ্জা লাগছে।

-আমার আর প্রেম এ জীবনে হলে তখন সোর্স বের করিস ব্রো।

-সারাফাত বলে..

-তোর প্রেমের কলি কার ছাগলে খেয়ে নিলো??

-ছাগলের মালকিনের নাম্বার ফেসবুক আইডি কিছুই রাখা হয় নি যে তোদের বলবো।

-বুঝলাম প্রেমের আগেই ছ্যাকা খেয়েছিস??

-অনেকক্ষন আড্ডা শেষ করে রাত ৮ টাই বাড়ি ফিরে। তখন বাড়ির সকলে প্রায় নিজেদের কাজে ব্যাস্ত। শায়নের মা চাচীরা সাথে ফুফুরা রাতের রান্না করছে। বাবা চাচারা অফিসে গেছেন অফিস শেষ হয় ৯ টার দিকে। মাসুদ চৌধুরীও গত কয়েকদিন হসপিটালে যেতে পারেন নি। আজকে হসপিটালে গিয়েছে। কিছুক্ষন বাদেই সবাই ফিরবেন। সিনহা সোফায় শুয়ে আছেন দাদির কোলে মাথা রেখে। নূরজাহান চৌধুরী সিনহার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন আর গল্প শুনাচ্ছেন। সিনহা শুয়ে শুয়ে গল্প শুনছেন তবে সিনহার বুকের উপরে সিনহার প্রিয় নিমো আছে। নিমো কয়েকদিন অতিরিক্ত মানুষের ভীড়ে সিনহার আদর খুব বেশি পাই নি। সেজন্য নিমোর বেশ অভিমান হয়েছে। সিনহার সাথে খুব বেশি কথা বলছেন না,, আচমকা নিমো সিনহার বাম হাতে আচর কাটে। সিনিহা ব্যাথা পেয়ে নিমো কে ছেড়ে দিয়ে দাদির কোল থেকে উঠে পড়ে মৃদু শব্দ করে ব্যাথাতুর হয়ে। শায়ন তখন গেইট দিয়ে ঢুকছিলো,, লম্বা লম্বা পায়ে সিনহার হাত ধরে দেখে বেশ ভালোই আচর পড়েছে। শায়ন ধমকে বলে..

-তোকে এইসব বিড়াল পালতে কে বলে??

-সিনহা অনর্গল কান্না করেই যাচ্ছে হাতটা জ্বলে যাচ্ছে। বজ্জাত নিমোকে সিনহা কত ভালোবাসে আর নিমো কাজটা করলো কি?? নিমো বুঝেছে সিনহা আঘাত পেয়েছে,, নিমো মিউ মিউ করে সিনহার পায়ের কাছে যাচ্ছে বার বার। শায়ন বিরক্ত হয়ে নিমো কে তুলে বাইরে ফেলে আসতে যাই। সিনহা কান্না জড়িত কন্ঠে বলে

-শায়ন ভাই প্লিজ নিমো কে বাইরে রেখে আসবেন না..

-কেনো কি সমস্যা তোর??

-পরে সারাগায়ে আবার নোংরা করবে কষ্ট করে আমাকে পরিষ্কার করা লাগবে।

-থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো বেয়াদব, এসব আর পুষতে পারবি না এই বাড়িতে। আচড় খেয়েছিস তাও ফেলতে চাচ্ছিস না।

-নিমো বুঝেনি আচড় লাগবে। প্লিজ ফেলবেন না।

-শায়ন রাগে নিমো কে ছুড়ে ফেলে দেই হাত থেকে। নিমো ছাড়া পেয়ে দৌড়ে সিড়ির পাশে গিয়ে জায়গা করে নেই নিজের জন্য।

-মিহিকা তাড়াতাড়ি করে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসে। সিনহা ততক্ষনে কান্না করে সারা বাড়ি শুদ্ধ লোক মাথাহ তুলে ফেলেছে। মেয়ের কান্না দেখে রান্না ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে এসেছে। সিনহা কোনো মতেই ওষুধ লাগাবে না। কাশফিয়া চৌধুরী কোনো মতেই সিনহাকে ধরেও ওষুধ লাগাতে পারলো না। তারপর শায়ন কাকিয়া কে সিনহার সামনে থেকে উঠিয়ে দিয়ে সিনহার সামনে বসলো শায়ন তারপর ধমকে বললো..

-চুপ! একদম কান্না কাটি বন্ধ চুপ করে বস। বিড়াল পাললে এমন কত ওষুধ লাগাতে হবে তার থেকে বড় কথা এখন তো তোকে ভ্যাক্সিন ও নিতে হবে।

-সিনহা ভ্যাক্সিন এর কথা শুনে আরো জোরে কেঁদে দেই। সিনহা এর পাশে দাঁড়িয়ে আছে শাহানাজ চৌধুরী, সিনহা শাহানাজ চৌধুরী কে বলে..

-বড় আম্মু আমি প্লিজ ভ্যাক্সিন দিবো না তোমার ছেলে কে মানা করো প্লিজ।

-এভাবে কান্না কাটি করলে হয় না মা, ভ্যাক্সিন না দিলে তো বিষ হয়ে যাবে। কান্না কাটি করিস না মা শান্ত হয়ে বস, শায়ন ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে তাহলে দেখবি জ্বালা কমে যাবে।

-শায়ন সিনহার হাত ধরে ক্ষত জায়গা পরিষ্কার করে মলম লাগাতে লাগাতে কাকিয়া কে বলে..

-কাকিয়া কাকাই কে একটা ভ্যাক্সিন নিয়ে আসতে বলো তো হসপিটাল থেকে আসার সময়।

-কাশফিয়া চৌধুরী শায়নের কথা মতো মাসুদ চৌধুরী কে কল করে ভ্যাক্সিন আনতে বলে। তবে ভ্যাক্সিনের নাম শুনে সিনহা কান্না করেই যাচ্ছে সে কোনো মতেও ইনজেকশন পুশ করবে না। ব্যাথা লাগবে ওর। শায়ন ক্ষত জায়গা ড্রেসিং করে বান্ডেজ করে দিলো। ক্ষত বেশ গভীর হয়েছে। ভ্যাক্সিন না দিলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

-সিনহার গড়াগড়ি করে কান্না করার আওয়াজ শুনে বাড়ির প্রতিটা সদস্য বসার ঘরে উপস্থিত হয়। তখন কাজের মেয়ে নিলুফা সিনহা কে বলে।

-আফা মনি কাইন্দেন বেশি লাগবো না ব্যাথা। আমাকে ছোট কালে কুকুরে কামড়াইছালো আমিও ৭ টা টিকা দিইছিলাম একটু ব্যাথা লাগছিলো পরে আর কিছুই হয় নাই আফামনি।

-কি ৭ টা ভ্যাক্সিন দেওয়া লাগবে??

-হ্যাঁ আফামনি আমি তো তাই দিইছিলাম। বেশ বড় বড় সুচ আমিও শুরু তে ভয় পাইছিলাম

-কিহ বড় বড় সুই??

-নিলুফার কথা শুনে সিনহা আরো কান্না শুরু করে।রাফি সিনহা কে বাচ্চাদের মতো এটা সেটা দিয়ে বুঝাচ্ছে কিন্তু কে শুনে কার কথা। আসমা চৌধুরী শায়ন কে বলে

-শায়ন বাবা শুন, নিলুফার তো ৭ টা ভ্যাক্সিন দিয়েছিলো সিনহার যেনো ১৪ টা দেওয়া লাগে,, সে ব্যাবস্থা কর।

-আচ্ছা মামনি তুমি যখন বলেছো তাই হবে।

-হ্যাঁ ওই মেয়ের বিড়াল পোষার স্বাধ মিটে দে

-সিনহা কান্না করতে করতে বলে..

-আচ্ছা আম্মু আমি তোমার নিজের মেয়ে তো?? সন্দেহ হয় মাঝে মাঝে।

-না তোকে আমি ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে এনেছিলাম নাহলে তোর মতো নোংরা মেয়ে আমার পেটে জন্ম নেই?? যে কুকুর বিড়াল দেখলে ঘরে তুলে আনে।

-আম্মু ওরা তো অসহায় প্রানী ওদের কি দোষ।

-তাই তো বিড়ালের আচড় খেলি বিড়ালের কি দোষ?? দোষ তো তোর তুই বিড়াল ধরেছিস বলে তোকে আচড দিয়েছে। ঠিকই আছে এখন ১৪ তা ইনজেকশন পুশ কর।

-রাফির গড়াগড়ি দিয়ে হাসি পাচ্ছে সবার কাহিনি দেখে তাও দুঃখি দুঃখি ফেইস নিয়ে করে বলে।

-সেজো আম্মু সিনহা তো এমনেই ভয় পেয়েছে আবার ভয় দেখাচ্ছেন ওকে।

-জানো না বাবা তুমি,, ওই মেয়ের মানুষের থেকে কুকুর বিড়ালের সাথে সম্পর্ক ভালো।

-মাঝে মাঝে আমার মনে হয় ও কি কুত্তার বাচ্চা নাকি।

-সিনহা নাক টেনে বলে..

-তুমি আমার আব্বু কে গালি দিয়েছিলো আজ আব্বু আসুক বলে দিবো।

-সয়তান পাজি মেয়ে কখন গালি দিলাম??

-ওইযে কুত্তার বাচ্চা বললে,, আমি তো বাচ্চা তাহলে কুত্তা তো আমার আব্বু কেই বললা।

-সিনহার কথা শুনে উপস্থিত সকলে হাসতে শুরু করে। ঈশিতার বেশ খারাপ লাগে আহারে মেয়েটা কেঁদে কেটে কি অবস্থা করেছে। এই কইদিনে ঈশিতার খুব ভালো লেগেছে সিনহা কে, ভালো একটা ভাব জমেছে।
ঈশিতা সিনহার পাশে বসতে বসতে বলে।

-কান্না করো না সিনহা আমিও একবার ভ্যাক্সিন নিয়েছিলাম সুই একদম ছোট তুমি বুঝতেই পারবে না।

-শায়ন ঈশিতা কে বলে।

-মিথ্যা শান্তনা দিচ্ছো কেনো অযথা ঈশিতা।

-কই ভাইয়া কিসের মিথ্যা শান্তনা।

-ডাক্তার তুমি না আমি?? আমি বেশ ভালোই চিনি ভ্যাক্সিন এর সুই কেমন হয়।

-সিনহা বুঝে যাই সবাই ওর সাথে মজা করছে। মাসুদ চৌধুরী হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতরে ছুটে। হাপিয়ে গেছে। দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি এসেছে কার কিসের জন্য ভ্যাক্সিন দরকার সে জানে না, মাসুদ চৌধুরী চিল্লিয়ে বলে

-কাশফিয়া কার কি হয়েছে ভ্যাক্সিন কার দরকার?

-শায়ন মাসুদ চৌধুরী কে বলে।

-কাকাই ভ্যাক্সিন টা আমার কাছে দাও,, তোমাদের আদরের সিনহা বিড়ালের আচড় খাইছে। আর কি, তেমন কিছু না তুমি রিল্যাক্স এ বসো ফ্রেশ হও।

-মাসুদ চৌধুরী শায়নের হাতে ভ্যাক্সিন দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে। শায়ন হাতে ভ্যাক্সিন নিয়ে ইনজেকশন রেডি করতেই সিনহার তা দেখে পিলি চককে যাই। এই প্রথন ইনজেকশন পুশ করা হবে শরীরে তার।

-সিনহা মিতুর কোমর জড়িয়ে ধিরে আছে ইনজেকশন দিবে না পন করেছে। কান্না করেই যাচ্ছে। শায়ন সিনহার কান্না দেখে ধমকে বলে

-চুপচাপ বসবি, নাহলে এমন ভাবে পুশ করবো জীবনেও ভুলবি না। লজ্জা করে না এত বড় মেয়ে ইনজেকশন দেখে কান্না করিস??

-শায়নের ধমক খেয়ে সিনহা চুপসে গেছে। মিতু সিনহার টপসের হাতা গুটিয়ে কাঁধ বের করে দেই। ভ্যাক্সিন দেওয়ার জন্য। শায়ন আলতো হাতে ইনজেকশন পুশ করে সিনহা চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে। শক্ত হাতে মিতুর কোমড় ধরে আছে। ইনজেকশন দেওয়া শেষে শায়ন মিহিকা কে বলে..

-মিহি এক গ্লাস পানি নিয়ে আই তো।

-মিহিকা পানি এনে শায়নের হাতে দিলে শায়ন একটা জ্বরেএ ট্যাবলেট বের করে সিনহা কে দিয়ে বলে..

-খেয়ে নে।

-কেনো খাবো?? আমার নিমোর আচড় লেগেছে জ্বর কি আসছে নাকি আজব। এসব কি যাতা চিকিৎসা দিয়ে পেসেন্ট মারার প্ল্যান??

-থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিবো আমার প্রফেশন নিয়ে প্রশ্ন তুললে।

-তো কি বলবো?? সব রোগের ট্রিটমেন্ট কি নাপা নাকি আজব??

-ওরে মাথা মোটা, ইনজেকশন এর ব্যাথায় জেনো জ্বর না আসে সেজন্য দিলাম খেয়ে নে। আর কাল আবার ব্যান্ডেজ খুলে ড্রেসিং করে নিবি?

-সিনহা মনে মনে বলে

-আজকের মতো যত্ন নিয়ে কালকেও আপনি ড্রেসিং করিয়ে দিয়েন। বেশ ভালোই লাগছিলো আপনার ছোঁয়া। ভাগ্যিস নিমো আচড় দিয়েছিলো নাহলে আপনার ছোঁয়া মিস হয়ে যেতো। কত যত্ন করে ড্রেসিং করলেন বাহ।

-সিনহা মুখে আস্তে করে অসহায় এর মতো বলে

-ঠিক আছে। আবার ভ্যাক্সিন লাগবে শায়ন ভাই??

-হু,

-কইটা??

-১ টা

-নিলুফা বললো যে ৭ টা।

-গর্দভ তোর কি কুকুরে কামড়িয়েছে নাকি বিড়ালে কামড়িয়েছে?? তোর শুধু আচড় লেগেছে ওতো লাগবে না।

___________________

-আজকে মিতু আর রাফি কক্সবাজার যাবে। সন্ধ্যায় ফ্লাইট। সকাল বেলে তিহান এসেছিলো ঈশিতা কে নিতে। রাফি ফোন করেছিলো ঈশিতা কে নিয়ে যাওর জন্য। মিতু আর রাফির গাজিপুর ফিরতে এখনো ৫-৬ দিন লেট হবে। কক্সবাজার ৩-৪ দিন থাকবে ওখান থেকে ফিরে সোজা চৌধুরী বাড়ি আসবে তারপর গাজীপুর যাবে। চৌধুরী বাড়ি থেকে এয়ারপোর্ট খুব বেশি দূরে না। শাফিন আর শায়ন গেছে রাফি আর মিতু কে এয়ারপোর্টে পোছে দিতে। ইমিগ্রেশন শেষ করে এয়ারপোর্টের সকল কাজ শেষ করে মিতু আর রাফি প্লেনে গিয়ে বসেছে।

-রাফি বেশ কয়েকবার বিসনেসের কাজে দেশের বাইরে গেছে এবং বিশ্বভ্রমন এর জন্য বেশ কয়েকবার বিভিন্ন দেশে ট্যুর দিয়েছে। তাই প্লেনে রাফির যাতায়াত বেশ ভালো। তবে মিতুর এই প্রথম প্লেন জার্নি। এক্সাইটেড তবে ভয় ও পাচ্ছে। রাফি খুব সুন্দর করে সিট বেল্ট আটকে দেই।

-প্লেন আকাশে উড়াল দিতেই মিতু কেঁপে উঠে। রাফি বলে

-কি হলো ভয় করছে??

-মিতু ছোট করে জবাব দেই।

-হু, ভয় করছে।

-শুর তে একটু ভয় করবেই। চোখ বন্ধ করে আমার ঘাড়ে মাথা রাখো।

-মিতু রাফির কথা মতো তাই করলো। কিন্তু রাফি মিতুর মাথার নিচে হাত রেখে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো মিতুর মাথাটা।

-প্লেন আকাশের মেঘ ছুঁতেই আস্তে আস্তে মিতুর ভয় কেটে গেলো। এই প্রথম প্লেন জার্নি বেশ ভালো লেগেছে মিতু।

চলবে...

Address

Kushtia

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Boxcer posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share