
03/06/2025
#হৃদ_মাঝারে
#লেখনীতে_জান্নাতুল_ফিরদাউস_ফাতেমা
#পর্ব_২১
-ড্রয়িং রুমে বসে ৩ জা বসে আছে বিকেল বেলা গল্প করছেন। মেহেরীন চৌধুরী কোর্ট থেকে ফিরেছেন কিছুক্ষন আগে, বাকি কর্মজীবী রা এখনো বাড়ি ফিরেনি রাতেই ফিরবে। নূরজাহান চৌধুরী নিজের ঘরে আছে। নূরজাহান চৌধুরী আসরের নামাজ আদায় করে আর বাইরে বের হন না একেবারে মাগরিবের নামাজ শেষ করে বাইরে আসে। কলিং বেল এর শব্দে সবার মনোযোগ কলিং বেলের দিকে যাই। আসমা চৌধুরী গেইট খুলতে গেলে মেহেরীন চৌধুরী গেটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে
-তুমি বসো ভাবি আমি দেখছি কে এসেছে।
-মেহেরীন চৌধুরী গেইট খুলে মিতু কে দেখে অনেক খুশি হয়। মিতুকে জড়িয়ে ধরে বলে
-কি রে মা, কেমন আছিস?? এতো শুকিয়ে গিয়েছিস কেনো?? ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস না নাকি??
-হ্যাঁ ফুফু মনি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করি তো। আআলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি তোমরা কেমন আছো??
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, কিন্তু জামাই কই?? একা কেনো তুই??
-তোমাদের জামাই গাড়ি পার্ক করছে, আমি আগে আগে চলে এসেছি।
-আচ্ছা আই ভিতরে আই।
-মিতুর মা চাচিরা সবাই মিতুর কন্ঠ শুনে এগিয়ে আসে। মিতুর মা আগে এসে এসে মেয়েকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। মেয়ে কে কত দিন বাদে দেখছে।
-রাফি ২ হাত ভর্তি করে মিষ্টি ফল নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে। রাফির হাতে এতো কিছু দেখে আসমা চৌধুরী সেদিকে এগিয়ে যাই। বলে
-বাবা এতো কিছু আনার কি দরকার ছিলো??
-কই এতো কিছু সেজো আম্মু।
-আসমা চৌধুরি রাফির হাতে থেকে সব কিছু নিয়ে নিচে রাখতে রাখতে বলে...
-আচ্ছা,, কই এতো কিছু তাই না?? এক হাতে মিষ্টির ৩ টা প্যাকেট আরেক হাতে ফল ভার কত বলো ।
-না সেজো মা সমস্যা নেই।
-কারীমা চৌধুরী মেয়েকে ছেড়ে এগিয়ে আসে জামাই এর দিকে বলে
-আগে বাড়ি ভিতরে এসে বলতা কারোকে পাঠাতাম বাবা এতো কষ্ট করার কি দরকার??
-না আম্মা কোনো সমস্যা নেই, এতোটুকুই তো।
-বাবা দাঁড়িয়ে আছো কেনো আগে বসো তো।
-সেই যে মেয়ে জামাই গেছে তারপর আজকে আবার আসলো বাড়িতে। ৪ শাশুড়ী ব্যাস্ত হয়ে গেছে। মেহেরীন চৌধুরী ঠান্ডা ঠান্ডা লেবুর শরবত আর কমলার জুস নিয়ে আসে। মিতু আসার খবর শুনে সিনহা মিহিকা সিজান বসার ঘরে এসেছে। সুবহা আর সারাহ এখন টিউশন পড়তে গেছে। অয়ন ও বাড়ি নেই, ক্রিকেট খেলতে গেছে খেলার মাঠে। শায়ন শাফিন ও নেই।
-সিনহা আর মিহিকা এসেই মিতু কে ২ পাশ থেকে ধরেছে। সিনহা বলে।
-আপু শুনো, তোমাদের কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যাওয়া নেই বুঝেছো??
-মিতু বোন কে আদর করে বলে..
-ওলে বাবালে,, আচ্ছা ঠিক আছে যাবোনা আর সারাজীবন পারলে রেখে দে।
-হুহ, তুমি থাকতে চাইলে অবশ্যই রাখবো।
-আচ্ছা সারাজীবন রাখার হলে বিয়ে দিলি কেনো??
-তোমার বিয়ের মত না থাকলে তুমি ৪ বছর প্রেম করলা কেনো??
-কি রে কথা শুনাচ্ছিস মনে হচ্ছে,
- কি যে, বলো না আপু।
-সিনহা টেনে টেনে রাফি কে বলে
-আসসালামু আলাইকুম, দুলাভাই। কেমন আছেন??
-এইতো শালি সাহেবা ঝাক্কাস আছি আলহামদুলিল্লাহ, তুমি কেমন আছো??
-আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি দুলাভাই।
-রাফি মিহিকা কে বলে।
-তা কি খবর শালিকা??
-জ্বী দুলাভাই আলহামদুলিল্লাহ,, আপনার?
-আলহামদুলিল্লাহ,, প্রেম কত দূর গেলো ফুসকা খাওয়া, গিফট নেওয়া???
-রাফির কথা মিহিকা বেশ হকচকিয়ে যাই, ও আবার কার সাথে প্রেম করলো?? মিহিকা ফের জিগ্যাসা করেন..
-কিসের প্রেম, কিসের ফুসকা, কিসের গিফট দুলাভাই??
-সেদিন যে তুমি আর আমার শালা ২ জন প্রেমের চুক্তি করলা আমি তো সাক্ষি ছিলাম??
-মিহিকার সেদিনের অয়নের ফাজলামি করে বলা কথাটায় বেশ লজ্জিত করছে মিহিকা কে,, সিনহা লজ্জা বাড়িয়ে দিয়ে বলে।
-কি রে প্রেম ট্রেম আড়ালে করছিস নাকি?? একা ফুসকা খেতে যাস না প্লিজ পেট খারাপ করবে।
-রাফি সিনহার কথায় বাঁধ সেধে বলে
-ছিহ শালি সাহেবা তোমারও দেখি লজ্জা নেই, ছোট দের প্রেম তুমি দেখবা লজ্জা করে না তোমার?? যেখানে তোমার প্রেম সাগরে ডুব মারার কথা, তার থেকে বড় কথা অন্যের প্রেমে কাবাব মে হাড্ডি হওয়া ভালো কাজ নয় বুঝেছো??
-আজ সিংগেল বলে এভাবে অপমান করতে পারলেন দুলাভাই, ছ্যাহ!
-আমিরুল চৌধুরী বসার ঘরে আসায় গল্পে ব্যাঘাত ঘটে। তখনই মেহেরীন চৌধুরী আর আসমা চৌধুরী বিভিন্ন রকম নাস্তা ২ ট্রে ভর্তি করে নিয়ে এসে সোফার সামনে টি টেবিলের উপরে রাখে। আমিরুল চৌধুরী রাফির পাশে বসতে বসতে বলে..
-young man! কি নিয়ে এতো কথা হচ্ছিলো শুনি?? আমাকেও কি গল্পের মাঝে নেওয়া যাই নাকি দেখো।
-এইতো দাদাভাই তেমন কিছু না, শুধু আমরা গল্প করছিলাম যে এই বয়সেও আপনার আর দাদুর কি প্রেম আহা এতোক্ষন ২ জনই ঘরের মধ্যে ছিলেন, যেই আপনি বাইরে এসেছেন দাদুও আসছে দেখেন।
-রাফি দাদাভাই কে সালাম করে সোফা থেকে উঠে গিয়ে দাদু কে সালাম করে সোফা পর্যন্ত নিয়ে আসে। তারপর সেও বসে পড়ে। রাফি বলে
-আচ্ছা দাদাভাই আমি তো আপনার নাতনির রাগ ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতেই পাগল হয়ে যাই, তা আপনি এতো বছরে বিভাবে এতো সুন্দর প্রেম টিকিয়ে রেখেছেন??
-আমিরুল চৌধুরী গর্বের সাথে বলে..
-এইটা সিক্রেট বুঝেছো। একসময় একা দেখা করিও সব বলবো।
-সিনহার দাদু আমিরুল চৌধুরী কে ব্যাঙ্গ করে বলেন..
-বুড়ো বয়সে ভিমরুতি ধরেছে। সিক্রেট শেখাবে নাত জামাই কে উনি, যে সারাজীবন বউ এর রাগ অভিমান না বুঝে নিজেই মেয়ে মানুষের মতো অভিনয় করতেন।
-তারপর নূরজাহান চৌধুরী রাফি কে বলে।
-নাতজামাই কেমন আছো তুমি??
-এইতো দাদু আলহামদুলিল্লাহ আপনার শরীর ভালো তো??
-আমার আর শরীর আল্লাহর রহমতে ভালোই চলছে, তা তুমি খাচ্ছো না কেনো কিছু।
-জ্বী দাদু নেন সবাই এক সাথে খাওয়া শুরু করি।
-সবাই নাস্তা খাচ্ছে। মিতু নুডুলস এর বাটি হাতে নিয়ে যেই না মুখে তুলতে যাবে ওমনি নাক চেপে ধরে নুডুলস এর বাটি রেখে বেসিনের দিকে দৌড় লাগিয়েছে। মিতুর পিছে পিছে মিহিকাও গিয়েছে। মিতুর বমি করা দেখে চেচিয়ে বলে
-মেজো মামি, বড় মামি, এদিকে আসো তাড়াতাড়ি মিতু আপু বমি করছে।
-মিহিকার চিল্লা চিল্লি শুনে রাফি সোফা থেকে উঠে এসে মিহিকা কে বলে..
-আরেহ মিহিকা কিছু হয় নি বেশি উত্তেজিত হইয়ো না কারোকে ডাকা লাগবে না তুমি সরো তোমার আপু কে আমি দেখছি।
-রাফির কথা শুনে মিহিকা এদিকে চলে আসে। রাফি মিতুকে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে সোফায় নিয়ে আসে দাদুর পাশে মিতু বসে। ততক্ষণে মিতুর মা চাচীরা সবাই বসার ঘরে আসে রান্না ফেলে রেখে। মিতুর দাদু মিতুর চোখ মুখ দেখে বলে
-কি রে মিতু তোর চোখ মুখ তো সুস্থ ঠেকছে না তুই কি পোয়াতি নাকি?
-রাফি লাফিয়ে উঠে বলে
-হ্যাঁ হ্যাঁ দাদু ওইটাই,, আপনাদের যুগের পোয়াতি আর আমাদের যুগের প্রেগন্যান্ট। সবাই কে বলার জন্যই এখানে হুট করে আসা কিন্তু সবাই কে এক সাথে বলবো ভেবেছিলাম তাই কথা চেপে রেখেছিলাম পেটের মধ্যে কথা গুলা বাড়ি খাচ্ছিলো এতোক্ষন।
-রাগির একনাগাড়ে বলা কথা গুলো শুনে বসার ঘরের সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠে। চৌধুরী বাড়ির বড় মেয়ের বাচ্চা হবে বাড়ির প্রথম নাতি/নাতনি,, খুশি তো হওয়ার এই কথা। মুহূর্তেই পুরো বাড়ি জেনে গেছে মিতুর গর্ভবতী হওয়ার কথাটা, সিনহা আর মিহিকা আনন্দে উরাধুরা নাচতে শুরু করেছে। রাগির ও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে মন চাইছে কিন্তু শশুর বাড়ি হওয়াই লজ্জায় তা করতে পারছে না।
- অয়ন ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা হয়ে ফুটবল হাতে নিয়ে মেইন গেট দিয়ে মাত্র বাগানে পা রেখেছে। বাগানেই দেখা হয় বারিক চাচার সাথে। উনি বাগানের ঘাস কাটা ফুলগাছের যত্ন নেওয়া এসব কাজেই নিযুক্ত। গ্রামে তার পরিবার বউ বাচ্চা আছে গ্রামে। এই বাড়ি থেকে বেশ মোটা অংকের বেতন পান তিনি সাথে চৌধুরী বাড়ি থেকে বেশ সাহায্য সহযোগিতা পান। তিনি অয়ন কে বলেন
-অয়ন বাজান বাড়ি আসছো এহন মিতু মা আইছে দেখছো নি।
-অয়ন চাচা কে বলে
-না চাচা মাত্র বাড়ি আসছি। খেলতে গেছিলাম।
-যাও যাও বাবা তাড়াতাড়ি,, তুমি তো বাজান মামা হইতাছো।
-অয়ন আগা মাথা না বুঝে বলে চাচা কে বাবা কে মা হতে যাচ্ছে?? আর আমি মামা?? কাহিনি খুলে বলেন তো..
-আরে, আমাগো মিতু মা হেই তো মা হইতে যাইতাছে।
-অয়ন দৌড়ে বাড়ির ভিতরে যাই। গিয়ে দেখে সিনহা আর মিহিকা উড়া ধুড়া নাচতেছে। অয়ন সিনহার মাথায় টোকা দিয়ে বলে..
-কি রে পাগল, নাচতেছিস কেন??
-সিনহা নাচতে নাচতেই বলে
-তুই শুনলে তুইও নাচবি।
-তাহলে বল
-আরেহ, তুই মামা হচ্ছিস আমি খালামনি।
-অয়ন ব্যাপার টা শিউর হওয়ার জন্য জিগ্যাসা করছিলো। অয়ন ঘামা শরীর রাফি কে জড়িয়ে ধরে বলে।
-কনগ্রাচুলেশনস দুলাভাই, কখন আসলেন আপনারা??
-এইতো কিছুক্ষন আগেই আসলাম,, তুমি কই গিয়েছিলা??
-বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠে ছিলাম, দুলাভাই থাকেন আমি গোসল শেষ করে আসি। শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ।।
-অয়ন উপরে চলে যাই। মিতু আর রাফি ও কিছুক্ষন বাদে উপরে যাই। এক হাতে লাগেজ অন্য হাত রাফির হাতের মধ্যে। মিতু যেহেতু সখ করেছে বাবার বাড়ি আসার অনেক দূর পথ তাই এসেছে যখন কিছুদিন থেকেই যাক সেবলেই এসেছে। রাফি ভেবেছিলো মিতু কে রেখেই চলে যাবে। কিন্তু সে কথা বলাই শাশুড়ী রা বাঁধ সাধেন যে রাফির ও এখন যাওয়া নেই। ২/৪ দিন থেকে তারপর যাওয়া। আবার কিছুদিন বাদে এসে মিতু কে নিয়ে যাবে। রাফিও বাধ্য ছেলের মতো তাতেই সম্মতি জানাই।
____________________
-শায়ন আর শাফিন এক সাথে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার পর। মিতু আর রাফির সাথে দেখা হয়েছে তবে এখনো শোনা হয় নি মিতুর মা হওয়ার খবর টা। শায়ন এসে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে,, সিনহা ইদানীং খুব করে চাই শায়নের আসে পাশে থাকতে। কিন্তু শায়নের ব্যাস্ততা খুবই বেড়েছে। হয়তো হসপিটালের কাজ চলছে সে কারনেই। সিনহা এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে চুপি চুপি শায়নের রুমে এসেছে। শায়ন সিনহার উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে বলে,
-এইদিকে আই।
-সিনহা বেলকনির দিকে গুটি গুটি পায়ে গিয়ে বলে..
-শায়ন ভাই আপনার কফি,
-বলেছিলাম কফির কথা??
-না তা বলবেন কেনো?? তবে একই বাড়ির মানুষ হওয়াই আমারো তো দ্বায়িত্ব আছে নাকি?? আপনি তো কাজ থেকে আসলেন নিশ্চয়ই ক্লান্ত??
-বাহ অনেক তো বড় হয়ে গেছিস।
-হ্যাঁ
-শায়ন আবারো সিনহা কে শুধিয়ে বলে
-কিছু বলবি??
-হু
-বল তাহলে,,
-সিনহা জানে শায়ন ভাই তো কারো দিকে বিশেষ করে সিনহার দিকে দুচোখে ভালো মতো তাকাই ও না তবুও বেশ কৌতুহল নিয়ে বলে।
-আমাকে কেমন লাগছে শায়ন ভাই??
-মেয়েদের মতোই।
-আজব তো আমি তো মেয়েই exactly কেমন লাগছে সেটা জানতে চেয়েছি।
-শায়ন এক নজর সিনহা কে দেখে দৃষ্টি সরিয়ে নেই। ইদানীং শায়ন সিনহার দিকে ঠিক মতো তাকাতেও পারে না, চোখে চোখ রাখতে পারে না। শায়নের মনে হয় এই ডাগর ডাগর কাজল রাঙা আঁখি তে মাদকতা আছে তাকালেই কেমন নেশা লেগে যাই। গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট ২ টা নাড়িয়ে কথা বলার ধরনটাতে মনে হয় সাগরের মতো গভীরতা আছে তাকালেই অন্তরালে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। শায়ন ছোট করে সিনহা কে বলে,,
-হু সুন্দর লাগছে।
-ধন্যবাদ শায়ন ভাই।
-আর কিছু বলবি??
-হু
-তাড়াতাড়ি বল, আমার কাজ আছে অনেক।
-আপনি মামা হবেন শায়ন ভাই।
-শায়ন সিনহার পুরো কথা না শুনে শায়নের পুরো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। শায়ন হয়তো ভাবে সিনহা প্রেগন্যান্ট সেটা বলতে চাইছে। মূহুর্তেই শায়নের চোখ জ্বলে উঠলো ধপ করে। মেজাজ তুঙ্গে তুলে বাম হাত দিয়ে সিনহার গাল চেপে ধরে বলে..
- কি বললি তুই?? মামা হতে যাচ্ছি মানে?? বিয়ের আগেই এসব নষ্টামি কই করেছিস?? ছেলেটার নাম তাড়াতাড়ি বল একদম জানে মেরে দিবো।
-সিনহা ব্যাথায় গোঙ্গাচ্ছে। কথাও বলতে পারছে না। চোখ দিয়ে মুহূর্তেই পানি চলে আসে। সিনহা কোনো মতে বলে।
-শায়ন ভাই ব্যাথা পাচ্ছি প্লিইজ।
-শায়ন মুহূর্তেই সিনহা কে এক ঝটকায় ছেড়ে দেই। সিনহার ২ চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
-মিতু আপু প্রেগন্যান্ট আমি এটাই বলতে চেয়েছিলাম আপনাকে,, কিন্তু আপনি বরাবরই আমাকে কষ্ট দেন ব্যাথা দেন।
-সিনহা কান্না করতে দৌড়ে চলে যাই সেখান থেকে৷ শয়নের হুশে আসে। আসলেই পুরো কথা না শুনে সিনহা কে আঘাত করা মোটেও উচিৎ হয় নি। শায়ন জোরে জোরে ৩ বার বাম হাত দিয়ে দেওয়ালে ঘুষি মারে আর বিড়বিড়িয়ে বলে
-Damn it! না না কি করলাম এটা।
-রাতের বেলা খাওয়ার সময় সকলেই উপস্থিত ছিলো। কাশফিয়া চৌধুরী এসেই শুনেছেন মিতুর প্রেগন্যান্ট এর নিউজ টা। এসেই একটা রুটিন চার্ট বানিয়ে দিয়েছে মিতুকে। কাশফিয়া গাইনোকোলজিস্ট। এবং মিতুকে বলে এখন থেকে ডেলিভারি পর্যন্ত তোকে সব রকম ট্রিট করবো আমার পেসেন্ট হিসেবে। একদম নিয়মের বাইরে যাওয়া যাবে না। মিতুও বেশ হেসেছেন সেই কাহিনি নিয়ে। বাড়ির প্রতিটি মানুষের কাজ কর্মে মিতু আর রাফি আহাম্মক এর মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
- সিনহা শায়নের ঘর থেকে যাওয়ার পর ওয়াশরুমে ঢুকে বেশ কিছুক্ষন শাওয়ার নিয়েছেন। কেদেছেন ও অনেক্ষন। সিনহা মনে মনে নিজেকে বেশ গাল মন্দ দিয়েছে। সে জানে শায়ন ওকে কোনো সময় পছন্দ করে না সব সময় আঘাত করে তার পরেও কেনো ও বেহায়ার মতো বার বার ওর কাছে যাই বুঝে না। মিহিকা গিয়ে ডেকে এনেছে খাওয়ার জন্য। সিনহা নিচে আসতেই চুল ভেজা দেখে সিনহার মা বলে
-কি রে সিনহা এই অবেলায় শাওয়ার নিয়েছিস কেনো??
-সিনহা চুপচাপ আছে,, মায়ের কথায় ছোট করে জবাব দেই।
-গরম লাগছিলো তাই।
-সিনহার মা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ ২ টা অসম্ভব লাল আসমা চৌধুরী আবার বলেন।
-কিহ হয়েছে শরীর খারাপ তোর?? চোখ লাল কেনো??
-সিনহা বেশ উচু গলায় চেচিয়ে বলে
-সমস্যা কি তোমাদের?? অবেলায় শাওয়ার নেওয়া যাবে না,, চোখ লাল কেনো সেই প্রশ্ন। এটা করা যাবে না ওটা বললে দোষ না জেনে না শুনে নিজেদের মতো বুঝো সবাই সমস্যা কি তোমাদের?? নাকি আমি এই সবার সমস্যা কোনটা??
-সিনহার চিৎকারে সবাই নতুন জামাইয়ের সামনে অসস্তিতে পড়ে যাই। রাফি ব্যাপার টা বুঝে হেসে বলে
-থাক না সেজো মা হয়তো শরীর ভালো না তার থেকে বরং সবাই খাওয়া শুরু করি।
-সিনহার বাবা নিজের পাশের চেয়ার টা থেকে সিজান এর কে অন্যপাশে বসতে বলে চেয়াল টা খালি করে সিনহা কে ডেকে নেই
-সিনহা মামনি এপাশে এসে বসো। আজকে আমরা বাপ বেটি পাশাপাশি বসে খাবো।
-সিনহা বাধ্য মেয়ের মতো সেখানটাই গেলো। চুপচাপ প্লেটে হালকা খাবার তুলে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
-শায়ন সিনহার মুখের দিকে বেশ লক্ষ্য করেছে গালে হালকা দাগ রয়েছে। চোখ মুখের অবস্থাও বেশ খারাপ। শায়নের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। সিনহা এসে থেকে একবারো এদিক সেদিক তাকাই নি। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে ঘুম আসছে বলে সেখান থেকে চলে গেলো।
চলবে....