13/07/2025
🇧🇩 নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন: আমাদেরই আয়নায় মুখোমুখি হওয়া দরকার
১৭৫৭ সালের পলাশীর প্রান্তরে শুধু একজন তরুণ নবাবের পরাজয় ঘটেনি, পরাজিত হয়েছিল একটি জাতির আত্মমর্যাদাবোধ। সিরাজউদ্দৌলাকে যখন বন্দি করে টেনে হিচঁড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, হাজার হাজার মানুষ নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে ছিল—কেউ একটাও ঢিল ছুঁড়েনি, কেউ প্রতিবাদ করেনি।
বরং অপমানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে—ছেঁড়া জুতা দিয়ে পেটানো আর কাঁটাওয়ালা সিংহাসনে বসিয়ে অপমানের মধ্যেও—অনেকে বিনোদন খুঁজে পেয়েছিল।
🔖 লর্ড ক্লাইভ তার ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখেছিলেন:
> "যদি সিরাজকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেকেই একটি করে ঢিল ছুঁড়ে মারতো, ইংরেজদের জন্য সেদিন পরাজয় অনিবার্য ছিল।"
সত্যিই তো! নবাব এসেছিলেন বিশাল এক সেনাবাহিনী নিয়ে—১০ হাজার অশ্বারোহী, ৩০ হাজার পদাতিক, প্রচুর কামান ও গোলাবারুদ সহ। তার বিপরীতে ক্লাইভের সৈন্য ছিল মাত্র ৩ হাজার, তাও অধিকাংশ ছিল সৌখিন, যুদ্ধঅভিজ্ঞতাহীন ব্রিটিশ অফিসার।
তবুও রবার্ট ক্লাইভ জিতেছিলেন। কারণ যুদ্ধটা কেবল অস্ত্রের ছিল না, ছিল মনস্তত্ত্বের। তিনি জানতেন,
👉 একটা বিভক্ত, হীনমন্য, আত্মস্বার্থে লিপ্ত জাতিকে জয় করতে হাজার সৈন্য দরকার হয় না।
👉 যারা নিজের নবাবের অপমানে রাস্তায় ঢিল ছুঁড়তে সাহস পায় না, তাদের জন্য "মীরজাফর" যথেষ্ট।
👉 আর যখন সেই জাতির ভেতরকার বিশ্বাসঘাতকরাই নবাব হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তখন বিজয় তো নিশ্চিত।
📌 ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—মীরজাফর, উমিচাঁদ, রায়বল্লভ, ঘষেটি বেগম—সবাই শেষ পর্যন্ত করুণ পরিণতির শিকার হয়।
কিন্তু রবার্ট ক্লাইভ যুদ্ধজয়ের কৃতিত্ব তাদের গদ্দারি নয়, বরং এই জাতির মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণের জাদুকরী ক্ষমতাকে দিয়েছিলেন।
আজও কি আমরা বদলেছি?
আজও কি আমরা অন্যায় দেখে দাঁড়িয়ে থাকি, নাকি প্রশ্ন করি?
আজও কি আমরা নিজেদের স্বার্থে সত্য বিকিয়ে দেই, নাকি প্রতিরোধ গড়ি?
রবার্ট ক্লাইভ ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি বাঙালি মানসিকতার গভীরতম স্তর পর্যন্ত বুঝতে পেরেছিলেন।
তাই প্রশ্ন রয়ে যায়—
🔍 আমরা কি এখনো সেই জাতি, যারা অন্যায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বিনোদিত হই? নাকি জেগে উঠেছি?
#সিরাজউদ্দৌলা #পলাশীরযুদ্ধ #বাংলারইতিহাস #বাঙালিরমনস্তত্ত্ব #গদ্দার #ঐতিহাসিকচিন্তা