04/02/2024
"একবার গোবরে পদ্মফুল ফুটলো; কিন্তু গোবরবাসী কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না যে এটি পদ্মফুল। কেউ বললো— এ কাগজের ফুল। বৃষ্টি এলেই মিলিয়ে যাবে। কেউ বললো— এটি ছত্রাক। রূপ ধরেছে পদ্মফুলের। আগামী মাসেই মরে যাবে।
কিন্তু অনেক বৃষ্টিতেও যখন ফুলটি মিলিয়ে গেলো না, অনেক মাসেও যখন এর আয়ু ফুরোলো না, তখন গোবরবাসী বললো— এটি অশ্লীল ফুল। একে শেষ করে দিতে হবে। এটি গোবরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে।
কয়েকটি পোকা গোবরবাসীর এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালো। তারা বললো— ফুলটি তো আমাদের কোনো ক্ষতি করছে না। বরং উপকারই করছে। তাকে দেখে আমরা আমাদের কদর্যগুলো সারাতে পারছি।
একটি বয়স্ক পোকা বললো— গোবরস্তানে ফুল ফোটার নিয়ম নেই। আমাদের প্রধান দেবতা ফুল পছন্দ করেন না। ফুল দেখলেই সন্দেহের চোখে তাকাতে হবে। ফুল যেন তার ঘ্রাণ ছড়িয়ে গোবরের দুর্গন্ধ নষ্ট না করতে পারে, এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। ফুল নিধনের জন্য প্রধান দেবতার পক্ষ থেকে রয়েছে আকর্ষণীয় পুরস্কার।
দুটি তরুণ পোকা বললো— যিনি সামান্য ফুলের ঘ্রাণ সহ্য করতে পারেন না, তিনি দেবতা হন কী করে? সুগন্ধি ফুলের চেয়ে দুর্গন্ধি গোবর তার এতো পছন্দ কেন? ফুলটিকে কি অন্য কোনো দেবতা সৃষ্টি করেছে?
গোবরস্তানের সর্দার বললো— ফুলটি দেখতে আমার চেয়ে উজ্জ্বল। আমার চেয়ে উজ্জ্বল কোনো বাতি গোবরস্তানে থাকতে পারবে না। সবাইকে থাকতে হবে মলিন হয়ে। কারণ উজ্জ্বলতা পাপ, মলিনতা পুণ্য। ফুলটি গোবরস্তানের এ নিয়ম ভঙ্গ করেছে।
দেখতে দেখতে গোবরস্তানে দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে গেলো। এক পক্ষ চায়— ফুলটি থাকুক, আরেক পক্ষ চায়— ফুলটিকে উপড়ে ফেলা হোক। কিন্তু ফুলটি কী চায় তা কেউই জানার চেষ্টা করলো না।"
—মহিউদ্দিন মোহাম্মদ