
23/05/2025
স্প্রাউটস- সাধারণ খাদ্যকে অসাধারণে রূপান্তর!
স্প্রাউট করা খাদ্য খাওয়ার প্রচলন হাজার বছরের পুরনো। এর প্রচলন চীনে প্রথম হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রাচীন চীনা চিকিৎসাশাস্ত্রে স্প্রাউটস ঔষধি গুণসম্পন্ন খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হতো এবং বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো।
আধুনিক যুগে, বিশেষ করে ১৯ ও ২০ শতকে পশ্চিমা বিশ্বে স্প্রাউটস খাওয়ার ট্রেন্ড চালু হয়। এরপর এটা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়েছে।
বর্তমানে স্প্রাউট করা খাদ্য সুপারফুড হিসেবে বিবেচিত হয়।
স্প্রাউটস হলো- অংকুরিত বীজ, ডাল, শস্য ইত্যাদি।
স্প্রাউট করলে বীজ, ডাল ও শস্যের পুষ্টি ২-৩ গুণ বৃদ্ধি পায়। কিছু ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি হতে পারে।
বীজ, লিগিউম, ডাল, শস্য, বাদাম ইত্যাদি সরাসরি না খেয়ে স্প্রাউট করে খাওয়ার যেসব সুবিধা রয়েছে:
১। স্প্রাউট করলে বীজ, শস্য এবং ডালে ভিটামিন, খনিজ, এনজাইম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি এবং কারটেনয়েডের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
স্প্রাউট করার ফলে অনেক ক্ষেত্রে ভিটামিন সি ৫০০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়! স্প্রাউটে ভিটামিন বি (ভিটামিন বি৯) ২-১০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে!
২। উদ্ভিজ্জ খাবারে ফাইটেট থাকে, যা জিংক, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি খনিজ আবদ্ধ করে রাখে। মানবদেহে ফাইটেট ভেঙে ফেলার জন্য খুব ভালো এনজাইম নেই। স্প্রাউট করার মাধ্যমে বীজ, ডাল এবং শস্যর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস (যেমন, ফাইটিক অ্যাসিড) ভেঙে যায়।
স্প্রাউটিং প্রক্রিয়া উদ্ভিজ্জ খাদ্যের অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টের পরিমাণ 87% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। এতে স্প্রাউটেড খাবার থেকে শরীর খুব সহজে পুষ্টি শোষণ করতে পারে।
৩। স্প্রাউটিং উদ্ভিজ্জ খাদ্যের প্রোটিনের গুণমান বাড়ায় এবং সহজে হজমযোগ্য করে। এতে প্ল্যান্ট বেসড ফুড থেকে বেশি কার্যকরভাবে প্রোটিন গ্রহণ করতে পারে শরীর।
স্প্রাউটসে কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড 30% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এজন্য উদ্ভিদ থেকে প্রোটিন পেতে চাইলে স্প্রাউটসই বেস্ট।
স্প্রাউটস খাওয়ার কিছু উপকারিতা:
১। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা খেতে পারেন। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অঙ্কুরিত না হওয়া বীজ ও শস্যের তুলনায় স্প্রাউটসে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কম থাকে।
২। স্প্রাউটস হজমশক্তি উন্নত করে। বীজ অঙ্কুরিত করলে এতে ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই ফাইবারের বেশিরভাগই পেটে দ্রবীভূত হয় না। যা প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে এবং অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়াদের খাদ্য যোগায়। পেটে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো বাড়লে পেট ফোলাভাব ও গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।
৩। শীতকালে, সর্দি-কাশি ও অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। স্প্রাউটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে।
৪। প্রতিদিন স্প্রাউট খেলে দেহে বল পাওয়া যায়। স্প্রাউটেড খাবার মাসল ম্যাস বাড়াতে সাহায্য করে। যারা জিম করেন এটাকে ডায়েটে রাখুন।
অঙ্কুরিত বীজে প্রচুর পরিমাণে অর্গ্যানিক কম্পাউন্ড থাকে। অঙ্কুরোদগমের দ্বারা খাদ্যে এনজাইমস সক্রিয় হয় ফলে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন দেহে ভালভাবে শোষিত হয়।
বিশ্বের বহু অঞ্চলে অঙ্কুরিত বীজ রান্না করার প্রচলন আছে।
তবে অঙ্কুরিত বীজ রান্না বা ফ্রাই করলে তাতে আর কোনও গুণ থাকে না।
কাঁচা স্প্রাউটস হলো পুষ্টির পাওয়ার হাউস। এটা কাঁচা বা আধা সিদ্ধ করে খেতে হয়।
স্প্রাউটসের সাথে টমেটো, শসা, গাজর, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা ইত্যাদি কেটে যোগ করা যায়। উপরে সামান্য রক সল্ট ও লেবুর রস দিলে স্বাদ বাড়ে।
একধরনের স্প্রাউট প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে খাওয়া অস্বাস্থ্যকর।
প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের স্প্রাউট একত্রে মিশিয়ে খাওয়া কিংবা একেকদিন একেকটা খাওয়া স্বাস্থ্যকর।
আর, স্প্রাউটের বাইরের আবরণ ছাড়াবেন না কারণ এতে অনেক পুষ্টি থাকে।
শস্য বা বীজ জলে ভিজিয়ে রাখার পর তার ভিতর থেকে সাদা সুতার মতো অংকুর বের হলে তাকে বলা হয় স্প্রাউট।
শিম, মসুর, সয়াবিন, মুগ, মটরশুটি, বিন, মটর, বাকহুইট, যব, আমরান্থ, ওট, কুইনো, মূলা, ব্রকলি, বীট, সরিষা, মেথি, বাদাম, আলফালফা, কুমড়া, তিল, সূর্যমুখী, মাষকলাই ইত্যাদি দিয়ে স্প্রাউটিং করা হয়।
বাংলাদেশে সুপার মার্কেটে স্প্রাউটস পাওয়া যায়। ইদানীং স্প্রাউট তৈরির মেশিনও পাওয়া যায়। তবে একটু চেষ্টা করলে DIY প্রক্রিয়ায় ঘরেই যেকোনো শস্যের স্প্রাউট করতে পারবেন।
স্প্রাউটিংয়ের জন্য সিলেক্টেড শস্যকে ১২-২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পানি ঝরিয়ে নিবেন। এরপর তা ঝুড়িতে বা তলায় ছিদ্র আছে এমন পাত্রে পাতলা সুতি কাপড় বিছিয়ে তার উপর ছিটিয়ে দিবেন এবং উপরে আর একটি পাতলা কাপড় দিয়ে আটকে দিবেন। এই সেটআপটি ঘরের উষ্ণ অন্ধকার কোণে রাখবেন। দিনে কাপড়ের উপর মিনিমাম ২/৩ বার পানি ছিটাবেন। দুই/তিন দিন পর শস্যের অংকুর বড় হলেই খেতে পারবেন।
ছোটবেলায় সবাই বইয়ে পড়েছি যে, অংকুরিত খাদ্য শরীরের জন্য খুব ভাল। যারা অঙ্কুরিত খাদ্য খায় তারা সবাই বলবান হয়।
এরপর আমরা বড় হতে থাকি আর এইসব বুঝ বিলীন হতে থাকে মাথা থেকে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হয় পুষ্টিহীন চা, বিস্কুট, চানাচুর, নুডলস, জাংকস ইত্যাদি।
তবে যা-ই হোক এখন থেকে আমরা আবার হেলথ কনশাস্ হয়ে উঠব, ইনশাআল্লাহ।
Muhammad Rahat Khan