01/11/2022
ভালোবেসে ফেলেছি ফেনীকে! বিদায় লগ্নে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়ার facebook পেজই থেকে-
ভালোবেসে ফেলেছি ফেনীকে
প্রথমদিকে বক্তব্য দেয়ার সময় address করতে গেলে নাম বলতে পারতাম না, চিনতামইতো না তখন ঠিকমতো সবাইকে। এখন দূর থেকে দেখেও বলতে পারি অনুষ্ঠানে, মিটিং-এ কে কে প্রেজেন্ট আছে। অথচ আমার আর address করা লাগবে না।
রাস্তাগুলোও প্যাঁচ লেগে যেতো, এখন কোন রাস্তা কোথায় মিশেছে, কোথায় ট্রাফিক পুলিশকে তৎপর করতে হবে, সব মুখস্ত। কিন্তু আমাকে আর সকালে উঠেই বড় বাজারের কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, সিএনজি এগুলো সরানো নিয়ে ভাবতে হবে না। ব্যবসায়ী সমিতির একেকজনের একেক সমস্যা শুনতে হবে না।
কিশোর গ্যাং সব রাস্তায় নামা বন্ধ করে দিয়েছিল, কারণ বাধ্য হয়ে পিটাতে হয়েছে অনেককে। খারাপ লেগেছে আমারও। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না, ওরা নিজেরা কাটাকাটি করে মরে যাওয়ার চাইতে, আমার কঠোর আচরণ ওদের ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে পারবে এই ভেবেই করা, আর ওদের ঘুমন্ত অভিভাবকদের ঘুম ভাংগিয়েছে। ডিবি, থানার টীম ত্রাশ তৈরি করেছে গ্যাং কালচার এর বিরুদ্ধে। না, তার জন্য কোনো রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সাথে কোনো বৈরীতা তৈরি হয় নাই। কারণ এই একটা ইস্যুকে প্রশ্রয় দিলে কারো জনপ্রিয়তাই বাড়বে না বরং কমবে, রাজনৈতিক ব্যাক্তিরাও তা জানে। সবাই সহযোগিতা করেছে। আলোচনা হয়েছে সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে। আশা করি এই ধারাবাহিকতা থাকবে যদি সবাই আপনারা আন্তরিক হোন। নিজেদের সন্তানদের খোঁজ খবর রাখবেন। নামাজ পড়ার কথা বলে সন্ধ্যার পর কৈ যায়, দেখবেন। যারা পিটুনি খেয়েছো, ইচ্ছামতো আমাকে বকো, I don't mind. কিন্তু আমি যে কথাগুলো বলেছিলাম তা যদি মনে রাখো, you'll love yourself someday.
পুলিশের কাছে সব ইনফো আছে, তাও আমি কেন মাদকের তথ্য চেয়েছি, অনেকে অনেকরকম ভাবতেই পারেন, i don't mind. একেকজন একেকরকম ভাববেন তাইতো বারো রকমের মানুষ। একেক অফিসার একেক strategy তে কাজ করে। ঐটা আমার strategy. কারণটা তো বলবো না।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে রাজাঝির দীঘির উপর যখন কুয়াশাচ্ছন্ন দেখি, দীঘিতে ভাসমান কমলা রংএর ছোট্ট চাইনিজ ডিঙ্গিতে করে একজন মাছের খাবার ছিটাচ্ছে, আমার বাংলোর কাঠবিড়ালিগুলো ছুটোছুটি করছে সাথে দেয়ালের কোনায় কামিনী আর হাস্নাহেনা গাছের ঝরে পরা ফুলের মিষ্টি গন্ধ আর পাওয়া হবে না। কারণ আমার যাওয়ার সময় হলো।
ডিএমপির বাইরে বাংলাদেশে ফেনীই আমার প্রথম কর্মস্থল। ভালোবেসে ফেলেছি ফেনীকে।
[ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়ার ফারজানার ফেসবুক ওয়াল থেকে।]