
02/09/2025
এক ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে বন্ধুর বাসায় বসে আছি। খালাম্মা জানে এমনি এসেছি। কিন্তু আমার এখানে আসার আসল কারন অন্য। আমি এসেছি খাওয়ার লোভে।
আজ দুদিন হল পেটে পানি আর বাড়িতে থাকা সিটানো মুড়ি ছাড়া কিছু পড়েনি। হাতে কিছু খুচরা টাকা আছে যা দিয়ে খাবার কেনা যায়না এ বাজারে।
এই বাড়িতে যতবার এসেছি খালাম্মা টেবিল ভর্তি খাবার দিয়েছে। সেজন্যই এসেছি। নিজেকে ছ্যাচড়া মনে হচ্ছে খুব। কিন্তু আজ বোধহয় এবাড়িতে রান্না হয়নি। এতক্ষন এসেছি কোন খাবার এলোনা। আমার চোখ শুধু খাবার খুঁজছে। আর কিছুই না।
অনেক পরে খালাম্মা এলো।
-"তোমাকে এক কাপ চা দিব?? তুমিতো চা খুব পছন্দ কর।
মুখ শুকিয়ে গেল আমার। চা!! আজও তবে পেটে ভাত যাবেনা আমার।
মনে মনে যাই বলি মুখে শুকনা হাসি টেনে বললাম
- "না খালাম্মা দুপুর বেলা আর চা খাবোনা। অনেকক্ষন এসেছি। এখন যাই।
খালাম্মা আর কিছু বললনা। আমি বের হয়ে এলাম। পেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা উঠেছে। ক্ষুধার ব্যথা। সে খাবার চায়। প্লেট ভর্তি ভাত চায়। আমি রাস্তায় হাঁটছি।
গত মাসে আমার মা মারা গেছে। বাবা তো সেই ছোটবেলাতেই হারিয়ে গেছে। কি জানি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। মাত্র অনার্সে ভর্তি হওয়া আমি কি করব কোথায় টাকা পাবো কিছুই জানিনা এখনো।
আম্মার কবর হওয়ার পরপরই চাচা ফুফু মামা খালা সবাই নিখোঁজ হয়ে গেছে। একদিন বিকালে শুধু চাচী এসে আস্তে করে বলে গেলেন
-"তোর মায়ের কবর আর কুলখানি করতে তোর চাচার হাজার খানেক খরচ হয়েছে। সময় করে শোধ করে দিস। তোর ছোট চাচা আর ফুফুদেরও কিছু টাকা খরচ হয়েছে। তাদেরটাও দিয়ে দিস। আমি হিসাব পাঠিয়ে দিবো পরে"
সেদিনও আমি সকাল থেকে শুধু লাল চা খেয়ে আছি। খুব বলতে ইচ্ছা করছিল "চাচী আমাকে ভাত খাওয়াতে পারবেন এক প্লেট?" কিন্তু বলতে পারিনি। কেমন আছি কি খাচ্ছি জিজ্ঞাসা না করে যিনি টাকা ফেরত চাচ্ছেন তার কাছে ভাত চাইবো কিভাবে। শুধু মাথা নাড়িয়ে বললাম
-"ঠিক আছে চাচী"।
এই এক মাস আম্মুর ব্যাগে, বিছানার তোশকের নিচে আমার মাটির ব্যাংকে যা কিছু ছিল তাই দিয়ে যা হোক একটা কিছু বাজার করে নিজেই রান্না করে খেয়েছি, কলেজে গিয়েছি, বাড়ির বিদ্যুত বিল দিয়েছি। কিন্তু এখন আর কিছুই নেই। রান্নাঘরের শুকনা খাবারের কৌটা গুলো খালি।
বাবা এই বাড়িটা করেছিল বলে মাথার গোঁজার মত জায়গা অবশ্য আছে। টিউবওয়েলের পানিও আছে।
আহ! পেট টা আবার মোচড় দিয়ে উঠল। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। দুপুরের কড়া রোদে আমি হাঁটছি।