
28/06/2025
স্ত্রীর মন—যে জায়গাটাতে যত্ন নয়, সবচেয়ে বেশি অবহেলা হয়:
একজন পুরুষ জীবনের অনেক কিছু গুছিয়ে রাখে। সংসার চালায়, দায়িত্ব নেয়, কাজ করে, বিল মেটায়—সবই ঠিকঠাক থাকে। কিন্তু যে জায়গাটাতে তার সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত, সবচেয়ে বেশি যত্ন দেখানো দরকার, সেটা অনেক সময় অবহেলার ছায়ায় ঢেকে যায়।
সেই জায়গাটা হলো—তার স্ত্রীর মন।
একটা মেয়ে যখন কাউকে ভালোবেসে নিজের জীবন সঁপে দেয়, সে শুধু একটা ছাদ চায় না। সে চায় ভালোবাসার ছায়া, বোঝার কোমলতা, অনুভবের সঙ্গ।
সে চায়, কেউ তাকে মন দিয়ে শুনুক। তার না বলা কথাগুলো পড়তে শিখুক। ক্লান্ত দুপুরগুলোতে কেউ বলুক, "তুমি কেমন আছো?" — এটুকু স্নেহই অনেক মেয়ের কাছে বিশ্রামের মতো।
কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন।
কিছু না বললেই বুঝে নেওয়ার কথা বলা হয়, অথচ কেউ বোঝে না।
দুঃখের কথা বললে বলা হয়, “তুমি অতিরিক্ত ভাবো”, “সবসময় অভিযোগ করো”।
আর এইরকম দিনে দিনে স্ত্রী নিঃশব্দ হয়ে যায়।
সে আর প্রশ্ন করে না, অভিযোগ তো দূরের কথা—দেখে না, বলে না, শুধু চুপ থাকে। কারণ সে জানে, তার অনুভূতির দাম নেই এখানে।
এই নীরবতা থেকেই জন্ম নেয় ভিতরগত এক ভাঙন, যা অনেক সংসারে টেরও পাওয়া যায় না—তবু প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যায় সম্পর্ক।
একটা সংসার টিকে থাকে শুধু খরচ চালিয়ে নয়, টিকে থাকে ভালোবাসা দিয়ে, বোঝাপড়া দিয়ে, একে অপরের অনুভবকে গুরুত্ব দিয়ে।
একজন স্ত্রী কি চায়?
সে চায়, তার কষ্টগুলো কেউ নিজের মতো করে বুঝে নিক।
সে চায়, তার হাসিমুখের পেছনের ক্লান্তিটা কেউ খেয়াল করুক।
সে চায়, যখন সে ভেঙে পড়ে তখন কেউ তাকে বলে, "আমি আছি।"
একটা মেয়ে যখন সংসার করে, সে রান্না বা কাপড় ধোয়ার জন্য করে না—সে করে ভালোবাসা দিয়ে। কিন্তু যদি সেই ভালোবাসার কোনো প্রতিধ্বনি না থাকে, তাহলে একটা সময় সে শূন্য হয়ে পড়ে।
তখন সে শুধু কাজ করে যায়—ভিতরে কিছুই থাকে না।
এই অবস্থাটাই সবচেয়ে ভয়ংকর, কারণ তখন সে আর কিছু আশা করে না।
তাহলে কী করণীয়?
পুরুষের কাছে সব সমাধান টাকা নয়, সিদ্ধান্ত নয়।
একটু সময় দিন, একটু মনোযোগ দিন।
চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করুন, "তুমি সত্যিই ভালো আছো তো?"
তার ছোট ছোট কাজগুলোকে কৃতজ্ঞতা দিয়ে মূল্য দিন।
আর যেকোনো তুলনা এড়িয়ে চলুন—স্ত্রী আপনার সঙ্গী, প্রতিযোগী নয়।
অনেক সময় পুরুষরা ভাবে, “আমি তো সব দায়িত্ব পালন করছি!”
হ্যাঁ, দিচ্ছেন। কিন্তু দায়িত্ব পালন আর হৃদয় বোঝা এক জিনিস নয়।
স্ত্রীর মনটা নিছক দায়িত্বের জায়গা নয়—ওটা যত্নের, মমতার জায়গা।
একজন স্ত্রী যখন অনুভব করে যে, তার মনটাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়—সে নিজের সমস্তটা দিয়ে পরিবারকে আঁকড়ে ধরে রাখে।
আর যদি সেই মনটাই ভেঙে পড়ে, তবে সংসারের ভিতরে ভিতরে এক অদৃশ্য অন্ধকার জন্ম নেয়।
শেষ কথায় শুধু এটুকু বলা যায়:
একজন পুরুষ যদি একটিবার স্ত্রীর চোখে গভীরভাবে তাকায়, তাহলে সে বুঝবে—সেই চোখে লুকিয়ে আছে অনেক প্রশ্ন, অনেক আশা, আর ভীষণরকম এক ভালোবাসা।
যেটা শুধু একটু যত্ন, একটু বোঝার অপেক্ষায় থাকে… প্রতিদিন।