30/09/2025
একটা গ্রামীণ অজপাড়াগাঁয়ে ছিল ভাঙাচোরা একটা মাটির ঘর। চারপাশে আগাছায় ঢাকা উঠান, ছাদে ফাটল, দেয়ালের মাটি খসে পড়া—সব মিলিয়ে ঘরটা যেন কেবল দাঁড়িয়ে আছে ভরসার উপর। সেই ঘরেই থাকতেন এক শতবর্ষী বৃদ্ধ দাদু। বয়স একশো পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই, কিন্তু তার মুখে ছিল শান্তির ছাপ, চোখে ছিল আলোর ঝিলিক।
দাদুর জীবনের সব অভ্যাসই ছিল অদ্ভুত। তিনি কোনোদিন খেতেন, কোনোদিন আবার না খেয়েই দিন পার করতেন। ক্ষুধা থাকুক বা না থাকুক, তার আসল আহার ছিল আল্লাহর বাণী। ভোরের আলো ফোটার আগেই বসে যেতেন কোরআন শরীফ খুলে। দিন-রাত তিনি তেলাওয়াত করতেন, কখনও আস্তে আস্তে, কখনও চোখ বুজে আবেগভরা সুরে। আশেপাশের লোকজন বলত—“দাদুর কণ্ঠে কোরআনের সুরে এক ধরনের শান্তি আছে, যেটা শুনলে মন থেকে সব দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যায়।”
অনেকে অবাক হয়ে দেখত, এত বয়সেও দাদুর চোখে কোনো চশমার দরকার হতো না। পাতার অক্ষরগুলো তিনি স্পষ্ট দেখতে পেতেন। গ্রামের মানুষজন বিশ্বাস করত, আল্লাহর কালামের বরকতেই তার দৃষ্টিশক্তি এত পরিষ্কার।
শীতের রাত হোক বা গরমের দুপুর, দাদুর কণ্ঠে অবিরাম বেজে উঠত কোরআনের আয়াত। তার ভাঙাচোরা ঘরে আলো জ্বলত না, কিন্তু আয়াতের সুরে পুরো পাড়া আলোকিত মনে হতো। শিশুরা খেলতে খেলতে থেমে যেত, তরুণেরা থমকে দাঁড়াত, আর বয়স্করা বলত—“দাদুর ঘরে যেন রহমতের নূর নেমে আসে।”
এভাবে দিন চলতে থাকল। দাদুর জন্য গ্রামের মানুষ শিখল—আসল শান্তি খাবার বা ধনে নয়, আসল শান্তি আসে আল্লাহর বাণীতে। দাদুর ভাঙাচোরা ঘর একসময় হয়ে উঠল গ্রামের সবচেয়ে শান্তির জায়গা, যেখানে ঢুকলেই মানুষের মনে প্রশান্তি নেমে আসত।
একশো বছরেরও বেশি বয়সী সেই দাদু প্রমাণ করে গেলেন—যে হৃদয় কোরআনের আলোয় ভরে যায়, তার জন্য দুনিয়ার দুঃখ-দারিদ্র্য কোনো ব্যাপার নয়।