
23/06/2025
তাবিজ কবজের কবলে ধ্বংস একটি সুখি পরিবার।
আজ থেকে বহু বছর আগের কথা। ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার কোনো এক গ্রামে আমার ছোট খালামনির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা। সালটা ২০১২।
বড় মামার বিয়ে নিয়ে সবার মনে অনেক আশা ছিলো। বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা! নানু ও খালামনিরা অনেক জায়গায় বউ দেখতে শুরু করে। এরপর একদিন পাশের এলাকার একটা মেয়েকে পছন্দ হয়ে যায়। সেদিন আমি আর নানু বউ দেখতে গেছিলাম। আমাদের তাদের বাসায় রেখে তারা চলে গেছিলো আমাদের বাসায়। মানে নানু বাড়িতে। মামাকেও গিয়ে তারা দেখে আসে। একদিন এর মধ্যে কিভাবে জানি সব ঠিক হয়ে যায়। এক সাপ্তাহ পরেই বিয়ের তারিখ পরে। সবাই বউ পছন্দ হলেও মেঝো মামার বউ পছন্দ হয়নি। কিন্তু কেউ আর ঐ বিষয়ে পাত্তা না দিয়ে বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।
এক সাপ্তাহ পরেই বড় মামা বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে মামির কেমন একটা ব্যবহার অনুভব করা যায়। ছোট খালামনিকেও মামি কেন জানি দেখতে পারে না। বড় মামার সবচেয়ে আদরের ছিলো ছোট খালা মনি। কারণ হয়তো এটাই। এরপর ধীরে ধীরে মামি সবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। মামার উপর জাদু প্রয়োগ করা শুধু করে দেয়। কিছুদিন এর মধ্যে মামার ভিতরে অনেক পরিবর্তন লক্ষ করি আমরা। মামা আমাদের কাওকে সহ্য করতে পারতো না। এভাবে মামা আমাদের ছেড়ে আলাদা হয়ে যায়। সেসময় এক বাড়িতে থেকেও পুরো ৪ বছর মামা আমাদের কারো সাথে কথা বলেনি। তাও নানু বলতেন মামা যদি এভাবে সুখে থাকে তাহলে কথা না বলুক! তাও নানুর কষ্ট নাই। আরে কেটে যায় ৫ বছর।
কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার ছোট খালা মনির কোমরে পছন্দ ব্যাথা অনুভব করতে শুরু করে। আমরা সবাই ভেবেছিলাম, হয়তো এমনেই এমন ব্যাথা। ঔষধ খেলে আর ডক্টর দেখালে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দিনদিন খালামনির অবস্থা আরো খারাপ হতে শুধু করে। আমার তখন বয়স ছিলো ১৩, ১৪ বছর। আমাকে খালামনির ব্যাথার যন্ত্রণায় তার কোমরের উপর দাড় করিয়ে রাখতো, যাতে একটু আরাম পায়। এভাবে আরো দিন যেতে শুরু করলো। খালামনি যেনো মৃত্যুর দিন গুনতে শুরু করলো। কতো ডক্টর দেখালো নানু - অন্য খালামনিরা, তাও যেনো একটুও উন্নতির নাম নেই।
একদিন নানু খালামনিকে নিয়ে আমার বড় খালামনির বাড়িতে গেলো। সেখানে বড় খালামনির একজন চাচাশ্বশুর ছোট খালামনিকে দেখে বললো, "মেয়েটা তো শেষ হয়ে যাইতাছে! এখনি যদি ভালো কবিরাজ না দেখাও তোমরা, তাহলে ওরে বাঁচাইতে পারবা না!" সঙ্গে সঙ্গে বড় খালু কবিরাজ দেখা শুরু করলো। ২ দিন পরে একজন কবিরাজকে অনেক খোঁজা-খুঁজির পর পেলো। সে বড় খালামনিদের বাড়িতে আসলো। এসে ছোট খালামনিকে দেখেই তার মাথায় আসমান ভেঙে পরলো। আর বলতে লাগলো, খুব তারা তারি ছোট খালামনির চিকিৎসা শুধু করতে হবে। পরে দিন এ ছোট খালা মনি আর ঔ কবিরাজকে নিয়ে নানু আর বড় খালামনি নানু বাড়িতে চলে আসলো। সেদিন রাতেই কবিরাজ বতী বসালো। তারপর সে জানতে পারলো বড় মামি ছোট খালামনিকে বেদ (/বান) মারছে। আর বড় মামাকে নিজের বসে ঘোর করে রেখেছে।
তখন মামাকে এসব বললে মামা মোটেও বিশ্বাস করতেন না। কারণ মামাও অলরেডি তার বউ এর বসে। তখন কবিরাজ বলে যে মামি তার ভাইয়ের মাধ্যমেই নাকি জাদুটা করিয়েছে। তবে মামাকে বসে আনা ছাড়া মারাত্মক ক্ষতিকর কিছু করেনি। তখন কবিরাজ নানুকে জানায় যে খালামনিকে বেদ মারা হয়েছে। যেনো মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। সাথে যেনো কোনো বিয়ের সম্বন্ধ না আসে। ভয়ের ব্যাপার এই যে, তখন খালামনির বেদ/জাদুর মেয়ার আর এক মাসের মতো অবশিষ্ট ছিলো। অর্থাৎ ঐ এক মাস পরে হয়তো তিনি শেষ হয়ে যেতেন! কবিরাজ তখন নানুকে জানায় জাদু কাটাতে কিছু উপকরণ লাগবে। যেমন সাত গাছের সাতটা ফুল, তিনটা সিংহ মাছ আর ১০০ হাত দড়ি। এরপর নানু কথামতো সব এনে দেয়।
পরদিন সন্ধ্যায় খালামনিকে নানুর বড় ঘরে জায়নামাজ বিছিয়ে বসিয়ে দেয় আর সাথে অনেক গুলো সূরা পরতে বলে দেয়,। আর সাথে বড় খালামনিকে বসিয়ে রাখে। কারণ সে যখন কাজ গুলো করবে তখন খালা মনির অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যাবে। তাই সাথে একজন থাকতে হবে।
তারপর কবিরাজ নিজের কাজ করা শুরু করে দেয়। এরপর কবিরাজ তুলা রাশির একজনের উপর জ্বীন হাজির করে। তারপর লোকটা নানুর রান্নার চুলার দুই হাত নিচ থেকে একটা তাবিজ তুলে আনে। তাবিজটা দেখে আমরা সবাই অবাক হই, কারণ ওটা বানোয়াট হবার কোনো সম্ভাবনাই ছিলোনা। আশেপাশের অনেক মানুষ জড় হয়। এরপর লোকটা চলে যায় নানুবাড়ির পেছনে বাথরুম এর কাছে। সেখানে ময়লার স্তপে নেমে পড়ে। সেখান থেকে আরেকটা তাবিজ ও তারপর পুকুর এর মাঝের দিক থেকে একটা পুতুল নিয়ে আসে। সাদা কাপড়ে মোড়ানো পুতুল। তবে পুতুলটা হাতে নেয়ার পর লোকটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর পানি থেকে তাকে তুলে আনা হয়।
এরপর তাবিজ খুললে দেখা যায় সেখানে খালামনির এক টুকরো কাপড় আর হাতের লখ পাওয়া যায়। এরপরের তাবিজ থেকে পাওয়া যায় খালামনি রচুল আর কাগজে আকা একটা মেয়ের অবয়ব। আর শেষে পুতুলটা দেখা যায় একটা মেয়ে মারা গেলে যেভাবে কাফন এর কাপড় দিয়ে লাশটাকে দাফন করে, ঠিক এ ভাবেই পুতুল টাকে তৈরি করা হয়েছিলো। পুতুল ছিলো খালামনি। খালামনির চুল, নখ , বেলের কাটা, সুই, লং দিয়ে পুতুলটাকে একটা সুতো দিয়ে বেধে রাখা হয়েছিলো। সাথে কোমরে একটা বেলের কাটা গেঁথে রাখা হয়েছিলো, যার ফলস্বরূপ খালামনির কোমরে ব্যাথা করতো। এরপর কবিরাজ সব আগুনে পুরিয়ে ফেলে। সাথে সাথে খালামনি জ্ঞান হারায়। এরপর শেষে কবিরাজ খালামনির শরীর বন্ধ করে রেখে যায়। সাথে বলে যায় বেশকিছু নিয়ম মানতে। এর কিছুদিনের মাঝেই খালামনি অনেকটা সুস্থ হয়ে যায় ও তার কিছুদিন পর খালামনির বিয়ে হয় ও সুন্দরভাবে সংসারজীবন চলতে থাকে।
তবে দুঃখজনক ব্যাপারটা হচ্ছে ঠিক ২ বছর পরে বড় মামা গলায় ফা স দিয়ে মারা য়ায়। কারণটা অজানাই থেকে গেছে।
গল্পটি নেয়া একজনের জীবনি থেকে। তবে আমাদের দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে রাজনীতি নামক ভাইরাসে আর সমাজ ধ্বংস হয়ে গেছে কিছু গন্ড মুর্খ নেতাদের চামচাদের কারণে আর পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে কিছু অসাধু তাবিজ পাটিদের কারণে। আল্লাহ এদের হেদায়েত দান করুন। নতুবা এদের ধ্বংস করে দেন। আমিন ছুম্মা আমিন
নজরুল ইবনে হাবীব মাগুরা সদর মাগুরা।