01/03/2025
রমজান মাসের শুভাগমন:
পবিত্র রমজান: সংযম, ইবাদত ও রহমতের মাস
আজকের প্রথম তারাবির নামাজের মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস—পবিত্র রমজান। এ মাস প্রতিটি মুসলমানের জন্য আল্লাহর রহমত লাভের অপূর্ব সুযোগ এনে দেয়। রমজান শুধু উপবাস থাকার সময় নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সংযম ও ইবাদতের মাস।
রমজানের মাহাত্ম্য ও ফজিলত
রমজান মাসের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো, এ মাসেই মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কুরআন নাজিল হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ বলেন—
"রমজান হল সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও ন্যায়নীতি।" (সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
এই মাসে প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন
"যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।" (বুখারি ও মুসলিম)
এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। তাই এটি আত্মশুদ্ধির এবং পাপমুক্ত জীবনের সুযোগ এনে দেয়।
রমজান: সংযম ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা
রমজানের অন্যতম প্রধান শিক্ষা হলো সংযম। রোজা শুধু খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকার নাম নয়, বরং এটি সমস্ত ধরনের অন্যায়, মিথ্যা, গিবত, ক্রোধ ও খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকার প্রশিক্ষণ।
রোজার মাধ্যমে আমরা ধৈর্য ও সহনশীলতা অর্জন করি, যা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই মাসে গরিব-দুঃখীদের কষ্ট অনুভব করার সুযোগ হয়, যা আমাদের দানশীল ও উদার হতে শেখায়।
রাসুল (সা.) বলেছেন—
"যে ব্যক্তি রোজা রেখেও মিথ্যা কথা বলা ও খারাপ কাজ পরিত্যাগ করে না, তার শুধু না খেয়ে থাকা আল্লাহর কাছে মূল্যহীন।" (বুখারি)
রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল
এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল দেওয়া হলো—
✅ নামাজের প্রতি যত্নশীল হওয়া: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া।
✅ কুরআন তিলাওয়াত: কুরআন বেশি বেশি পড়া ও এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করা।
✅ ইস্তিগফার ও দোয়া: গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
✅ দান-সদকা: অভাবীদের সাহায্য করা ও দানশীলতা বাড়ানো।
✅ শিষ্টাচার চর্চা: ধৈর্যশীল ও সদাচারী হওয়া, সকল খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।
লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব
রমজানের শেষ দশকের এক রাত, লাইলাতুল কদর, হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। কুরআনে বলা হয়েছে—
"লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।" (সূরা আল-কদর: ৩)
এই রাতে ইবাদত করলে ৮৩ বছরের ইবাদতের সওয়াব লাভ করা যায়। তাই শেষ দশকে বেশি বেশি ইবাদতে মগ্ন থাকা উচিত।
রমজানের পরিপূর্ণতা আনতে করণীয়
✔️ রোজার উদ্দেশ্য হৃদয়ে ধারণ করা: শুধুমাত্র না খেয়ে থাকা নয়, বরং অন্তরকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করা।
✔️ ধৈর্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা: সংযমের মাধ্যমে নিজের চরিত্র গঠন করা।
✔️ গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা: রমজান দানের মাস, তাই যাদের প্রয়োজন, তাদের পাশে দাঁড়ানো।
✔️ আত্মউন্নয়নের সংকল্প নেওয়া: রমজান পরবর্তী জীবনেও সৎ ও ধার্মিক থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা।
রমজান আমাদের জন্য এক মহান নিয়ামত ও অফুরন্ত সুযোগের মাস। এই মাসকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভ করা আমাদের দায়িত্ব। আসুন, আমরা সবাই নিজেদের সংশোধন করি, বেশি বেশি ইবাদত করি এবং আমাদের জীবনকে সত্যিকারের ইসলামের পথে পরিচালিত করি।
আল্লাহ আমাদের সকলের রোজা ও ইবাদত কবুল করুন।
রমজান মোবারক!