02/08/2025
বাবা-মা নেই কিন্তু বাচ্চাদের সিসি-টিভিতে খেয়াল রাখছেন আরেক ফ্ল্যাটের আরেক জন মা !
আমাদের বাড়িতে নিচ তলায় একজন ভাড়াটিয়া আছে যারা নাকি হাসবেন্ড ওয়াইফ দুজনেই চাকরি করে। তাদের দুজন বাচ্চা একজন ছেলে আরেকজন মেয়ে। ওরা দুই ভাই বোন বাসায় একা থাকে সারাদিন।আমি প্রতিদিন ক্যামেরায় ওদের দেখি মূলত ওদের আমি ফলো করি। গেইট দিয়ে আবার বের হয়ে যায় নাকি। ওরা সারাদিন আমাদের বাসার এই গ্যারেজেই বেশিরভাগ সময় থাকে। দুই ভাইবোন খেলে আবার গেইট ধরে অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকে ,আবার সিড়িতে বসে থাকে আবার রুমে যায় আবার আসে। এমন করে ওদের সারাটা দিন কাটে। আমি সারাদিন কাজ করি আর একটু পর পর ওদের দেখি মনিটরে। আমার খুব খারাপ লাগে ওদের জন্য সারাটাদিন কিভাবে একা পাড় করে দুটো বাচ্চা। বোনটা ছোট মাঝে মধ্যে কান্না করে তখন আবার ভাইটা কোলে নেয় বোনকে। হয়তো এই শহরে টিকে থাকার জন্য বাবা মায়ের দুজনের কাজ করতে হয়। এই শহরে আসলে টিকে থাকাও একটা লড়াই।এই জন্য চাইলেও হয়তো মা টা বাসায় বাচ্চা নিয়ে থাকতে পারছে না।
ঠিক এই কারনের জন্য নিজের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা না করে আমি ফুল টাইম মাদার হওয়ার ডিসিশন নিয়েছিলাম। পড়াশোনা শেষ করে যখন দেখলাম আমার সাথের প্রায় সব বান্ধবীরা চাকরি ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে।ঠিক তখন আমি হয়ে গেলাম একজন ফুল টাইম মাদার। আমার মনে হয়েছিল ক্যারিয়ারের চাইতে আমার জীবনে এখন আমার বাচ্চা বেশি জরুরি।সবাই আমাকে বলেছে এত পড়াশোনা করলা এখন কিছু একটা করো। হাসবেন্ড এর থেকে টাকা চেয়ে নিয়ে শখ পুরন করার চাইতে নিজে কিছু করা ভালো না। আমি সবাইকে একটাই উত্তর দিয়েছি না আমি মা হতে চাই আমার ক্যারিয়ার লাগবে না। এই যে আমার বাচ্চার ছোটবেলার সময়টা আর জীবনে ফিরে আসবে না। বড় হলে ওর আলাদা জগৎ হবে তখন ওর এতটা মায়ের দরকার হবে না। কিন্তু এখন ও এক সেকেন্ড মা ছাড়া থাকতে পারবে না। কয়েক মাস আগেও আমার শ্বশুর বেশ অপমান জনক ভাবে আমাকে বলেছিল পড়াশোনা করে জীবনে কি করছো কয়েক টাকাতো ইনকাম করতে পারো নাই। আমি চুপ হয়ে কোনো উত্তর দেইনি কারন সে আমার স্বামীর বাবা আর আমার শিক্ষায় তাকে উওর দেয়া চলে না। হয়তো অন্য মানুষ হলে আমি দারুন একটি উত্তর দিয়ে দিতাম। যাইহোক এমন আরও হাজার হাজার বার আমি শুনেছি একটা জব করতে পারলাম না কি করলাম জীবনে আমি। আমি যা করেছি তা শুধু আমি জানি। আমি না খেয়ে বাচ্চা সামলেছি ,রাতে না ঘুমিয়ে বাচ্চা পেলেছি ,কুলে নিয়ে রান্না করেছি ,খেতে বসে বার বার উঠেছি পটি ক্লিন করার জন্য ,দু হাত পেতে বমি ধরেছি বাচ্চার। এই যে ছোট ছোট হাত দুটো আমায় এসে জড়িয়ে ধরে সারাদিন আমার সাথে লেপটে থাকে এটাই আমার জীবনের প্রাপ্তি। আমি যদি অফিস করতাম এই বাচ্চাটাই অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকতো কখন আমি আসবো ,সঠিক টাইম গোসল করতো না ,হয়তো ময়লা জামা পড়তো বিনিময়ে আমি মাস শেষে কিছু টাকা পেতাম এইতো! যে সব মায়েরা বাচ্চা রেখে জব করে তাদের আমি অনেক সম্মান করি ,নিজের বাচ্চা বুক থেকে রেখে যেয়ে জব করা মুখের কথা না। হ্যাঁ আমার বাচ্চা একদিন বড় হবে আলাদা জগৎ ,বিয়ে করবে সংসার করবে হয়তো এই গুলো মনেও থাকবে না ওর কিন্তু আমি যে ওকে আমার জীবনের পুরোটা সময় দিয়ে বড় করে তুলেছি এটাই আমার জীবনের এচিভমেন্ট।তার জন্য হয়তো দিন শেষে ইনকাম করিনা স্বামীর থেকে চেয়ে নিতে হয়। আমি এটা স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছি। কারন আমি মা হতে চেয়েছিলাম ক্যারিয়ার চাইনি 🙂