08/11/2024
ইসলামিক জীবনবিধান হল আল্লাহর নির্দেশনা ও প্রেরিত নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর হাদিসের মাধ্যমে আমাদের জীবনের দিশা ও নৈতিকতা নির্ধারণ। এই বিধানটি কোরআন ও হাদিসে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, এবং এতে মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি, সমাজের সঠিক ব্যবস্থা এবং শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে।
১. ইমান ও তাওহীদ (একত্ব)
কোরআনে বার বার বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং তাঁর কাছে সমস্ত সৃষ্টির আনুগত্য প্রযোজ্য। এই বিশ্বাস আমাদের জীবনকে আল্লাহর দিকে নিবদ্ধ রাখে এবং দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী আনন্দের প্রতি ভ্রান্তি থেকে আমাদের দূরে রাখে।
কোরআন:
"আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।" (সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১৮২)
হাদিস:
"আমার (নবী সাঃ)-এর উপর বিশ্বাস করা, আপনার আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো প্রতি ভরসা রাখা বা অন্য কারো সাহায্য কামনা করা ইত্যাদি সমস্ত কিছু একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত।" (বুখারি)
২. নৈতিক জীবন ও চরিত্র
ইসলামে চরিত্রের গুরুত্ব অত্যন্ত। নৈতিকতার দিকে নজর দেওয়া, সত্য বলার অভ্যাস, অন্যের অধিকার রক্ষা করা, অসৎ কাজে না যাওয়া — এগুলি ইসলামী জীবনবিধানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোরআন:
"তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের অধিকার নষ্ট করো না এবং একে অপরকে ক্ষতির মধ্যে ফেলো না।" (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত 188)
হাদিস:
"মুসলমানের সঠিক বিশ্বাস হলো, যে ব্যক্তি তার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমানকে নিরাপদ রাখে।" (বুখারি)
৩. ইবাদত ও সালাত
ইসলামে প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সালাত আমাদের আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর করতে সাহায্য করে এবং আমাদের সকল কাজে সঠিক দিশা দেয়। এছাড়া অন্যান্য ইবাদত যেমন রোজা, যাকাত এবং হজ ইসলামী জীবন বিধানের অপরিহার্য অংশ।
কোরআন:
"সালাত তো একান্তভাবে আল্লাহর জন্য।" (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত 3)
হাদিস:
"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, তার আমলসমূহকে আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেন।" (বুখারি)
৪. সম্প্রীতি ও সহযোগিতা
ইসলাম সমাজে শান্তি, সুষমতা ও সহযোগিতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। মুসলিমরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি, দয়া এবং সাহায্য প্রদান করতে উৎসাহী হওয়া উচিত।
কোরআন:
"তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করো ভাল কাজ এবং তাকওয়া বিষয়ক, খারাপ কাজ ও শত্রুতায় নয়।" (সুরা আল-মায়িদা, আয়াত 2)
হাদিস:
"মুসলমান একে অপরকে মদদ করতে এবং একে অপরকে সাহায্য করতে বাধ্য।" (বুখারি)
৫. ধন-সম্পদ ও খরচ
ইসলামে ধন-সম্পদ অর্জন করা ও খরচ করার নিয়ম রয়েছে। মিথ্যাচার, প্রতারণা এবং অবৈধ উপার্জন হারাম। এর পাশাপাশি, যাকাত ও সাদাকা প্রদান করা মুসলমানদের দায়িত্ব।
কোরআন:
"তোমরা যা কিছু উপার্জন করো, তার মধ্যে একটি অংশে দরিদ্রদের সাহায্য করো।" (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত 177)
হাদিস:
"যে ব্যক্তি ভালোভাবে কাজ করে এবং আল্লাহর জন্য খরচ করে, তার প্রতি আল্লাহর পুরস্কার অবশ্যই আসবে।" (বুখারি)
৬. পারিবারিক জীবন
ইসলাম পরিবারে শান্তি, স্নেহ, সহমর্মিতা এবং অধিকার-দায়িত্বের প্রতি বিশেষ নজর দেয়। স্ত্রীর প্রতি সদ্ভাব, সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীলতা, এবং অভিভাবকদের প্রতি সন্মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোরআন:
"তোমরা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের অধিকার পূর্ণ করো এবং অন্যের অধিকার হরণ করো না।" (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত 188)
হাদিস:
"তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ব্যক্তি সে, যে তার পরিবারের সাথে ভালো আচরণ করে।" (তিরমিজি)
ইসলামিক জীবনবিধান কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুসারে একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও কল্যাণকর সমাজ গড়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে।