03/04/2024
#একটুকু_ছোঁয়া_লাগে
রাত তিনটার মতো বাজে। আচ্ছা, তিনটা কি রাত না ভোররাত? কীসব বাজে চিন্তা! যথারীতি তানিয়ার চোখে ঘুম নেই। ফোন হাতে শুয়ে ফেসবুক ব্রাউজ করছে আর পাইকারি দরে লাইক বিলিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎই বান্ধবী ঈশিতার একটা পোস্টে চোখ আটকে গেলো ওর। গট ম্যারেড উইথ অভ্র আহমেদ। বেশ, ভালো কথা। যাবো না যাবো না করেও অভ্রর প্রোফাইলে ঢুকে পড়লো তানিয়া। কি আসে যায়! হু ভিউড ইয়োর প্রোফাইল জাতীয় কোনো অপশন আছে নাকি?
বাহ,বেশ লাগছে তো অভ্রকে! সেই কলেজ লাইফের শেষ দিকে লাস্ট দেখেছিলো,তখন কেমন রোগাভোগা ছিলো! এখন বেশ ব্রাইট লাগছে কিন্তু। অবশ্য সাত বছরে মানুষের চেঞ্জ হবে এটাই স্বাভাবিক। নিজের অজান্তেই ওর এবাউটে ঢুকে স্ক্রল করতে থাকে তানিয়া। এতবড়ো একটা প্রজেক্টে কাজ করছে? বাব্বাহ! কলেজে থাকতে মনে হতো ঠিকঠাক কথাই বলতে পারে না। বারবার কলেজের কথা কেন মনে পড়ছে? আচ্ছা, কলেজের ওই দুই বছর ছাড়া স্মৃতি বলতে আর আছেই বা কি? নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এলো। কি দিন ছিলো সেসব! ক্লাস বাংক দিয়ে চার বন্ধু মিলে বাইরে গিয়ে বার্গার খাওয়া, তা-ও পুরো সপ্তাহ টাকা জমিয়ে। বাকি দুজন বন্ধু থাকলেও তানিয়া আর অভ্রতে চোখাচোখি হলেই খুব হাল্কা একটা হাসি ফুটে উঠতো দুজনেরই ঠোঁটের কোণে। ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হাতে হাতে ছোঁয়া লেগে যেতো, নিঃশব্দে। মাঝে মাঝে রাত জেগে গলা নামিয়ে ফোনে কথা বলা অথবা সারাদিন টেক্সট। সবই বন্ধুত্বপূর্ণ, তবে কোথাও যেন অন্য একটা সুর।
তানিয়া একটু স্ট্রেইট ছিলো সবসময়ই। কি আর হবে,বলেই দেই! কিন্তু যদি রাজি না হয়? এতো ভালো বন্ধুটাকেও হারিয়ে ফেলি? নানা আশংকা। তখন ওরা ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে। আচ্ছা,কারো সাথে একটু আলোচনা করে নিলে কেমন হয়? না পেরে নিজের সেই বন্ধু সার্কেলের ঈশিতাকেই ধরলো তানিয়া। দোস্ত, অভ্ররে তো আমার ভালো লাগে। কি করমু ক তো? একরাশ বিস্ময় ঈশিতার চোখে। কি বলিস ফ্রেন্ডদের মধ্যে এইসব। আমারে দ্যাখ বাইরে বহুত কিছু করলেও ক্যাম্পাসে কিন্তু কোনো কাহিনী করি নাই।আমারও একটা নীতি আছে। আর তুই কি-না....
তানিয়ার ছলছল চোখ দেখে ব্রেক কষলো ঈশিতা। আচ্ছা দোস্ত তুই দেখি সিরিয়াস। এক কাজ করি তাহলে। তুই কয়দিন একটু অভ্রর সাথে কথা বলা কমায়ে দে। ইন ফ্যাক্ট আমি ওর সাথে সার্কেলের বাইরে একটু কথাটথা বলে দেখি। একটু বাজায়ে দেখি বুঝলি।ভালো ফ্রেন্ড আর ভালো বয়ফ্রেন্ড কিন্তু এক জিনিস না।তোর চেয়ে অনেক পোলা বেশি দেখসি আমি।তারপর যদি ঠিকঠাক থাকে তাইলে তোদের সেটিং আমি করায় দেবো। তানিয়া খুশিতে জড়িয়ে ধরে ঈশিতাকে। দোস্ত,তুই আসলেই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড!
আস্তে আস্তে অভ্রর সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দ্যায় তানিয়া। টেক্সট করে না,কল দিলে ধরে না। গ্রুপেও দেখা হলে এড়িয়ে যায়।মনে মনে পুড়ে গেলেও তা দেখায় না। অভ্র কয়েকবার সামনাসামনি কথা বলতে চায়,কিন্তু তানিয়ার অনাগ্রহ দেখে আর আগায় না।দুই মাস এভাবে যাবার পরে হঠাৎই তানিয়া দেখে অভ্র তাকে আর টেক্সট বা কল দিচ্ছে না।সামনাসামনি ও খুবই নরমাল। এতদিনে একটু টনক নড়ে তানিয়ার। এর আগে কয়েকবারই সে ঈশিতাকে তার বাজিয়ে দেখার আপডেট জানতে চেয়েছে সে।প্রথম দিকে শুনেছে প্রক্রিয়া চলছে। পরে বলে ধুর দোস্ত বাদ দে এডি ভালা না। পরে অবাক হয়ে দেখে, তার বেস্ট ফ্রেন্ড ও তাকে এড়িয়ে চলছে। মনের কথা মনেই রয়ে যায়। সামনে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা।
রেজাল্টের দিনই শেষ দেখা সবার সাথে। এক্সাম হলেও এড়িয়ে গেছে। এরপর যে যার মতো। জাস্ট ফেসবুক ফ্রেন্ড। পরষ্পরের সোশ্যাল মিডিয়ার আপডেটে লাভ লাইক দেয়া ছাড়া কিছু নেই আর। বছর ছয়েক আগে হঠাৎই আপডেট আসে ঈশিতার। ইন আ রিলেশনশিপ উইথ অভ্র আহমেদ। নিচে সব বন্ধুদের কমেন্ট আর রিএক্টে ভর্তি। তখন কি সত্যি আর কিছু যায় আসে? তবু বালিশে মুখ চেপে সারাদিন চোখের পানি ঝরিয়েছে তানিয়া। অবশেষে উঠে হাতমুখ ধুয়ে পোস্টটা বের করে একটা লাভ রিএক্ট দিয়ে নিচে লিখলো, কংগ্রাচুলেশনস! নিচে সাথে সাথে ঈশিতার রিপ্লাই, থ্যাংকস মাই বেস্ট ফ্রেন্ড!
না,ঈশিতার উপর কোনো রাগ নেই তানিয়ার। ব্যস ছোট্ট একটা ক্ষোভ। ওকে তো আমি বেস্ট ফ্রেন্ড মানতাম।ওর জন্য সব কিছু করতে পারতাম। তোরই যদি অভ্রকে ভালো লাগে আমাকে একবার বলতি! এইগুলা কোনো ব্যাপার! হাসিমুখে সরে গিয়ে অভ্রকে দুলাভাই ডাকতাম,গাধা! তুই যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড!
এইরে,স্টক করতে গিয়ে লাইক বাটনে চাপ পড়ে গেলো না-কি অভ্রের ছবিতে? ধুর, ব্লক করে দিতে হবে এখন,তাড়াতাড়ি!
©অর্চি ভাস্বতী কবির, মে ১৪,২০২০।