Khalid hasan

Khalid hasan আমায় কি চিনিলে না?
🔥আমি তো অতল আঁধারের অন্তরালে দীপশিখার অন্বেষণরত এক নির্ভীক অভিযাত্রী🔥

 #ভিএম্পায়ার  #পর্বঃ১৬ #লেখাঃKhalid_Hasanউঠে দাঁড়ালো এজেন্ট খালিদ। ব্রিফকেসটা হাতে নিয়ে হেঁটে এসে আমার মুখোমুখি দাঁড়াল...
07/10/2025

#ভিএম্পায়ার
#পর্বঃ১৬
#লেখাঃKhalid_Hasan

উঠে দাঁড়ালো এজেন্ট খালিদ। ব্রিফকেসটা হাতে নিয়ে হেঁটে এসে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালো। রুমালের আড়াল থেকে ভেসে এলো তাঁর কণ্ঠস্বর
– আমাকে নিশ্চিত করো পিচ্চি ছেলে, তুমি তাঁর সাথে চুক্তি করোনি।

আমি একটু দ্বিধাগ্রস্ত হলাম। লোকটা কি বিষয়ে বললো মাথায় ঢুকলো না। সে আবারও বললো ..
– তুমি কি বুঝতে পারছোনা আমি তোমার ভিতরে থাকা পরজীবীর ব্যপারে বলছি!

এবারে পরিষ্কার বুঝলাম আমি। কিন্ত আমার ভিতরে পরজীবী বাস করে সে ব্যপারে এই আগন্তুক কিভাবে জানলো! সে কি অন্তর্যামী! না, এটা তো অসম্ভব! লোকটাকে খুবই চিন্তিত লাগছে। আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম ..
– যদি বলি আমি তার সাথে চুক্তি করেছি?

রুমালের বাইরে থেকে স্পষ্ট দেখতে পেলাম এজেন্ট খালিদের রাগান্বিত কুচকানো ভ্রু
– তবে এখানেই তোমার জীবন গল্পের সমাপ্তি হবে।

লোকটার কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলাম আমি। যেনো প্রচন্ড রেগে গেছে সে। খানিক বাদেই শান্ত হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লোকটা বললো ..
– আমি জানি তুমি এমনটা করোনি। আর আমার বিশ্বাস তুমি এমনটা কখনো করবেনা। আর যদি করো তবে আমার হাতেই তোমার জীবনের সমাপ্তি হবে।

তার কথাবার্তা খুবই রহস্যময় লাগছে আর আমি ক্রমেই বিষ্ময়ের সাগরে নিমজ্জিত হচ্ছি। জিজ্ঞেস করলাম
– আমি তা করিনি আপনি এটা কিভাবে নিশ্চিত হলেন?

লোকটা তার ব্রিফকেস নিয়ে আবারও বালির উপর বসে পড়লো। কিছু একটা করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো আবারও। উত্তর দিল ..
–তোমার সাথে তো এটাই প্রথমবার সাক্ষাৎ নয়। পরজীবীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হলে কবেই তোমার জীবনের সমাপ্তি হয়ে যেতো। অবশ্যই আমার হাত দিয়েই সেটা হতো।

অবাক হয়ে গেলাম আমি। লোকটার সাথে আসলেই কি আমার সাক্ষাৎ হয়েছিলো এর আগে! না, তা কিভাবে সম্ভব! আমি এতিমখানায় বড়ো হওয়া ছেলে। এতিমখানা সমুদ্রসৈকত আর আমাদের এতিমখানার পাশে থাকা বাজার পর্যন্তই আমার বিচরণ ছিলো। এমন আজগুবি পোশাকের মানুষের সাথে আমার কখনো সাক্ষাৎ হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। জিজ্ঞেস করলাম ..
– মাফ করবেন স্যার, কিন্ত আমার সাথে আপনার এর আগে কোথায় সাক্ষাৎ হয়েছিলো? আমার ঠিক মনে পড়ছে না।

লোকটা মুখ তুলে চাইলো আমার দিকে। বললো ..
– ওহ আমারই ভুল হয়েছে কোথাও। একটু কনফিউজড। আমাদের দেখা হয়েছিলো ভবিষ্যতে।

– অদ্ভুত তো! আপনি বলছেন ভবিষ্যতে! আবার বলছেন দেখা হয়েছিলো!

লোকটা একটু হাসলো। তারপর ব্রিফকেসে নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে বলতে লাগলো ..
– বাদ দাও, ব্রেইনে এত চাপ প্রয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই। কাজের কথায় আসা যাক। আমি ভ্যালমোরায় এসেছি একটা সিক্রেট মিশনে। যেটা তোমার সহযোগিতা ছাড়া কম্প্লিট করা সম্ভব নয়।

– এর মানে!
– এর মানে হলো তুমি আমাকে সহযোগিতা করবে।
– একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন মিস্টার আগন্তুক। এজেন্সি “ট্রিপল এ” টাকা ছাড়া কোনো চুক্তি করেনা।

হোহো করে হেসে উঠলো লোকটা। অদ্ভুত! আমি কি কোনো জোকস বলেছি! প্রশ্ন করলো সে ..
– তুমি খুবই মজার ছেলে তো। সবসময়ই কি এমন মজা করো?

সে আবার উঠে দাঁড়ালো। চোখে চোখ রেখে বললো…
– শুনো পিচ্চি, ভ্যালমোরায় আনাচে কানাচে মনস্টারদের আবির্ভাব হচ্ছে। তুমি কি ভাবো কাড়ি কাড়ি টাকা তোমাকে এদের থেকে বাঁচাতে পারবে? ইতোমধ্যেই তোমার অনেক শত্রু তৈরী হয়ে গেছে। আমার সাথে চুক্তি করো, আমি তোমাকে বিনিময় হিসেবে যা দিবো তা আর কেউ দিতে পারবে না। আর তার বিনিময়ে আমি তোমাকে যা করতে বলবো তাই করবে।

– ওয়েট ওয়েট, আপনি আমার কাছে সহযোগিতা চাচ্ছেন তার মানে আমি যোগ্য ব্যক্তি তাইতো! ওকে, আমি সবকিছু করতে পারি। তবে আমার জানা জরুরী বিনিময়ে আপনি আমাকে কি দিবেন।

লোকটা একদম মাথা নুইয়ে আমার কানে কানে বললো ..
– ভ্যালমোরার হিরো বানাবো তোমাকে। ভ্যালমোরা থেকে বের হওয়ার রাস্তা দেখাবো। তুমি যেতে পারবে সমুদ্রের ওইপাড়ে। যেটা ভ্যালমোরার সবার কাছে একটা স্বপ্ন মাত্র। আর সবচেয়ে বড়ো রহস্য, তোমার গলায় ঝুলে থাকা ওই লকেট! হাহাহা, এর ব্যপারে হয়তো আমিই সবচেয়ে ভালো জানি। বলো পিচ্চি ছেলে, এমন বিনিময় মূল্য কি তোমার ভিতরে বসবাসকারী পরজীবী দিতে পারবে? মনে রাখবে, ভিতরে বাস করা পরজীবী যা দেয় তার থেকে বেশি কেড়ে নেয়। আমি তেমনটা নই।

সরে দাঁড়ালো লোকটা। আমার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে। লোকটা কি আসলেই অন্তর্যামী! সে কিভাবে জানলো আমি ভ্যালমোরার হিরো হতে চাই! কিভাবেই বা জানলো আমি সমুদ্রের ওপারে যেতে চাই! আর এই লকেট! সে কি সত্যি আমাকে আগে থেকেই চিনে! আমার পিছনে পড়ে ছিলো আগে থেকেই! সে কি আগে থেকেই জানে আমি একটা মনস্টার হয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে! লোকটা আবারও প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ..

– বলো, তুমি কি চুক্তি করতে প্রস্তুত?

আমার মস্তিষ্কে ট্রাফিক জ্যাম লেগে যেতে লাগলো। আমার এখুনি সম্মতি জানাতে হবে। হ্যাঁ এখুনি। অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম ..
– ডিল ফাইনাল, বলুন আপনাকে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি?

হেসে উঠলো লোকটা
– হাহাহা, জানতাম রাজি না হয়ে পারবে না।

আমার মাথায় হাত রাখলো লোকটা। তারপর বললো ..
– এত তাড়াহুড়ো করতে হবেনা পিচ্চি ছেলে। মিশন তো সবেমাত্র শুরু হলো। তবে আমাকে সহযোগিতা করার মতো যোগ্যতা এখনো তোমার হয়নি। আগে তোমাকে যোগ্য বানাতে হবে। যোগ্য হওয়ার জন্য সহযোগিতা আমিই করবো। আর যোগ্য হবার পরেই জানাবো তোমাকে কি করতে হবে। আপাতত তোমার একটাই কাজ আর সেটা হলো তোমার রাজ্যের কিং কে পরাস্ত করা। আশাকরি এই সহজ কাজটা তুমি খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলবে। আমাদের আবারও দেখা হবে। খুব শিঘ্রই …

কিং কে পরাস্ত করতে হবে! লোকটার মাথা ঠিক আছে! কি বলছে সে! কিং কে পরাস্ত করা সহজ কাজ!
লোকটা তার হাতে থাকা একটা কালো বস্তুতে কিছু একটা করলো। আর সেটা করতেই আমার পিছনে খানিকটা দূরে আলোর ঝলকানি শুরু হয়ে গেলো। আমি পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম একটা পোর্টাল খুলেছে। আরে! এই জিনিস তো আমি আগেও দেখেছিলাম। হ্যাঁ, মারিয়া। মারিয়া এর ভিতর থেকে আসে। লোকটা বলতে লাগলো ..
– এর ভিতরে প্রবেশ করো। তোমার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। অবাক হবার কিছু নেই পিচ্চি ছেলে। আরো অনেক কিছু জানা বাকি তোমার। এখুনি এত অবাক হলে চলবে না। আমার হাতে অনেক কাজ পড়ে আছে। ভবিষ্যতে আমরা একসাথে সব বিস্ময়কর ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ পাবো।

আমি বাধ্য ছেলের মতো পোর্টালের দিকে চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালাম। তীব্র আলো আসছে সেখান থেকে। ঢুকতে যাবো এমন সময় পিছুডাক ..
– কিছু একটা ভুলে গিয়েছো পিচ্চি ছেলে।

পিছন ঘুরে তাকালাম। সে আবারও তার ব্রিফকেস নিয়ে বসে পড়েছে। মাথা নোয়ানো অবস্থাতেই বললো ..
– ভিক্টরের মতো মনস্টার থেকে বাঁচিয়েছি তোমায়। তুমি ধন্যবাদ দিতে ভুলে গেছিলে ..

আরে তাইতো, ভিক্টরের কথা তো ভুলেই গেছিলাম। সে হাসতে হাসতে বললো ..
– আচ্ছা এখুনি ধন্যবাদ দিতে হবেনা। জমা করে রাখো। আমি একসাথে অনেক ধন্যবাদ পেতে চাই। এবারে যাও .. কিং কে পরাস্ত করার প্রস্তুতি নাও। এটাই তোমার রাজ্যের জন্য মঙ্গলজনক। বেস্ট অফ লাক ..

সে বুরো আঙ্গুল দেখিয়ে আমার থেকে মনোযোগ সরিয়ে মাথা নুইয়ে আবারও তার ব্রিফকেসে কিছু একটা করতে লাগলো। আমি দ্রুত পোর্টালে প্রবেশ করলাম। তীব্র আলোর ঝলকানি আর শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। আলোর ঝলকানিতে চোখ বন্ধ করেই সামনের দিকে পা বাড়ালাম আমি। আর চোখ খুলেই দেখলাম আমি দাড়িয়ে আছি আমাদের হোস্টেলের পিছনের দিকে।

পোর্টাল বন্ধ হয়ে গেলো। আলোর ঝলকানি নিভে গেলো। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখলাম ঘন জঙ্গল। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে আমার। কি সব আজগুবি ঘটনার শুরু হয়েছে আমার সাথে। ও হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ভিক্টরের ব্যপারে। দ্রুত হোস্টেলে যাই। লোকটা একটা মনস্টার এবং সে আমার উপর চরমভাবে ক্ষেপে আছে। যেকোনো সময় আবারও আক্রমণ করতে পারে। আমার দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিতে হবে। সেইসাথে এজেন্সি ট্রিপল এ এর বাকি সদস্যদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমি দ্রুত হোস্টেলের রুমে চলে গেলাম। আর গিয়েই দেখলাম ঘরে আমার বন্ধুরা ব্যাগ গুছাচ্ছে।

সঙ্গে ঘরে একজন নতুন সদস্য। ছেলেটা হালকা বেঁটে। আর মাথায় অগোছালো নোংরা চুল। ফকির মিসকিন নাকি বুঝা যাচ্ছেনা। পড়নেও নোংরা পোশাক। আমাকে দেখা মাত্রই আব্রাহাম বলে উঠলো…
– দোস্ত এসে গেছিস তুই! পরিচয় হয়ে নে, ও হলো আমার রুমমেট সাদেক। আমরা তার গ্রামে যাচ্ছি আজ রাতের মধ্যেই ..

সাদেক ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। আমি একটু অবাক হলাম আদিল আব্রাহামের ব্যাগ গুছানোর তাড়াহুড়ো দেখে। জিজ্ঞেস করলাম ..
– তোরা রাতের বেলা এত তাড়াহুড়ো করে তার গ্রামে কেন যাচ্ছিস বুঝলাম না!

রেগে উঠলো আদিল ..
– বুঝেনা! কচি খোকা! দিছোস তো লাইফের বারোটা বাজায়া। চোখ কান খোলা আছে তোর? যেই বেডার ভি চুরি করছে হালায় সেই বেডারই মাইয়ারে প্রপোজ কইরা দিছে। এবার বুঝো ঠেলা! তোরে যে এখনো ক্রসফায়ার করেনাই কপাল ভালা। ওরে ডরে আমার ঠ্যাং কাঁপতাছে। কোনদিক থাইকা কে আইসা আবার পাকড়াও করে!

সাদেক ছেলেটা আদিলকে অভয় দিতে লাগলো ..
– ভয় নেই বন্ধু, তোমরা নিশ্চিন্ত থাকো। আমার সিক্রেট ভিলেজে তোমরা নিরাপদ থাকবে। আমার মা তোমাদের রক্ষা করবেন।

কিঞ্চিৎ অবাক হলো আব্রাহাম
– মা! ওই বেটা তোর আবার মা এলো কোথা থেকে! তুই না চাচা চাচীর কাছে বড়ো হইছোস বলছিলি!

– আরে বাবা আমার দেবী মায়ের কথা বলেছি! আমি যার পূজো করি।

এবার আমিও অবাক হলাম। আমি বললাম ..
– তোমার নাম শুনে তো মুসলিম ভেবেছিলাম!
– আরে আমিতো মুসলিম জন্মগত। কিন্ত আমি নাস্তিক ছিলাম। আর এখন দেবী মায়ের পূজো করি। আমাদের সিক্রেট ভিলেজে সেই এখন রক্ষাকর্তা।

আমার ভীষণ বিরক্ত লাগলো ছেলেটার কথায়। আস্ত পাগল মনে হচ্ছে। একবার বলছে সে মুসলিম আবার একবার নাস্তিক। আবার এখন নাকি পূজো করে! আজব! বিরক্ত হয়েই আব্রাহামের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলাম ..
– আরে বাবা রাতের বেলা এভাবে তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছিস কেন!

উত্তর দিলো আদিল ..
– শুধু আমরা না তুইও যাচ্ছিস।
– কিন্ত কেন!

আমার দিকে এগিয়ে এলো আব্রাহাম। তার মোবাইল স্ক্রিনটা আমার সামনে ধরলো। আমি দেখলাম তাতে পরিষ্কার লিখা “এজেন্সি ট্রিপল এ আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে। তাদের ধরিয়ে দিন। যে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে পাঁচ কোটি টাকা পুরষ্কার দেয়া হবে।” লিখাটার সঙ্গে আমার আর আলিশার আজ সকালের ক্যান্টিনের ঘটনার একটা ছবি জুড়ে দেয়া।

আব্রাহাম ফোন পকেটে রেখে বলতে লাগলো ..
– এই ছিলো রাত দশটার ব্রেকিং নিউজ। এবার বুঝেছিস তো কেন আত্মগোপনে যেতে হবে। নে, রেডি হয়ে নে। অনেক পথ হাঁটতে হবে। রাতে গাড়িঘোড়া পাবো কিনা জানিনা।

– হুম বুঝলাম, কিন্ত পাঁচ কোটি টাকা মাত্র! এজেন্সি “ট্রিপল এ” এর দাম মাত্র পাঁচ কোটি! খুবই কম মনে হচ্ছে, অপমানিত বোধ করছি।

প্যানপ্যানানি শুরু হলো আদিলের
– ওই বেডা নাটক কম কর। হেতে এজেন্সি ট্রিপল এ এর দাম কয়নাই। হেতের হারানো মেয়ের লাইফের দাম কইছে। আজ দুপুরের পর থাইকা আসলেই ওই ডাইনি মাইয়াডারে খুঁইজা পাওয়া যাইতেছে না। আর তাই হেতে আমগোরেই সন্দেহ করতাছে।

বেশ অবাক হলাম আদিলের কথা শুনে। আসলেই আলিশাকে খুজেঁ পাওয়া যাচ্ছেনা! সঙ্গে সঙ্গে আব্রাহাম কাছে এসে বললো ..
– আমার মনে হয় সে একটা গেম খেলতে চাইছে। সে নিশ্চয়ই নিজে থেকেই তার মেয়েকে কিডন্যাপ করিয়েছে আমাদের উপর দোষ চাপানোর জন্য। সকালের ক্যান্টিনের ঘটনায় সে বড়ো সুযোগ পেয়েছে আর সেটাকেই কাজে লাগাচ্ছে। তোর কি মনে হয়না আমাদের মতো তিনটে ছেলেকে ধরা তার বাম হাতের কাজ মাত্র। সে পলিটিশার, নাভারার মেয়র। ডেল্টোরার যেকোনো প্রয়োজনে সে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে আমাদের পাকড়াও করতে পারে। সে চাইলেই হোস্টেলে পুলিশ পাঠিয়ে আমাদের ধরতে পারতো। কিন্ত সে এমনটা করছে ভি ফেরত পাওয়ার জন্য। আর তাই সে গেম খেলছে যাতে আমরা বাধ্য হই তার সাথে নেগোশিয়েট করতে। ভি এর ব্যপারটা সে গোপন রাখতে চাইছে এটা এখন পরিষ্কার। সে চাইছে রাজ্যবাসীর কাছে এজেন্সি “ট্রিপল এ” ভিলেনে পরিণত হোক। হয়তো ভি ফেরত দিলে সে আমাদের আবারও হিরো বানিয়ে দেবে। এরা পলিটিশার ভাই, সবই পারে। তুই কি ভি ফেরত দিবি?

– একদমই না ..
– হুম জানতাম। তো দেরি না করে চল ভাই। আপাতত আত্মগোপন করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নাই।

সবাই হোস্টেল থেকে বের হতে লাগলাম। কিন্ত একটা বিষয় এখনো মাথায় ঢুকছে না। ভিক্টর ভি ফেরত পাবার আশায় যদি আমার সাথে এমন গেম খেলবে তাহলে একটু আগে কেন সে আমার মুখোমুখি হয়েছিলো তার মেয়েকে ফেরত পাবার আশায়। এর মানে হলো আলিশা সত্যিই হারিয়ে গেছে। কিন্ত লোকটা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পুরো রাজ্যের কাছে আমাকে ভিলেন বানিয়ে ফেলেছে। আররে! আমার এজেন্সি “ট্রিপল এ” এর পুরো ভবিষ্যৎ খেয়ে দিয়েছে! এখন আমি রাজ্যবাসীর সামনে এই মুখ দেখাবো কিভাবে! আচ্ছা তাহলে কিছুদিনের জন্য আত্মগোপণেই যাই। তার মেয়েকে খুজেঁ পেলে হয়তো এজেন্সি “ট্রিপল এ” এর সম্মান কিছুটা হলেও রক্ষা হবে। সবকিছু যেনো তড়িৎ গতিতে ঘটে যাচ্ছে। কি যে শুরু হলো আমার সাথে!

সাদেকের সিক্রেট ভিলেজের দিকে রওনা করলাম আমরা। রাতের অন্ধকারে প্রায় এক ঘন্টা হাঁটার পর আমরা গ্রামের পথ পেয়ে গেলাম। আর দেখলাম আমাদের জন্য সাদেক আগে থেকেই একটা ঘোড়াগাড়ির ব্যবস্থা করে রেখেছিলো। ঘোড়াগাড়ির দেখেই আদিল আব্রাহামের খুশিতে গদগদ অবস্থা। তারা জীবনে এই প্রথম ঘোড়ার গাড়িতে উঠতে যাচ্ছে এই খুশি দেখে কে! অবশ্য আমারও প্রথমবার ঘোড়াগাড়িতে যাত্রা। সবাই ঘোড়া গাড়িতে উঠে বসলাম। চালক ঘোড়ার পিছনে লাথি মেরে যাত্রা শুরু করলো। সাদেক জানালো তার গ্রাম ডেল্টোরা থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে। পাহাড়ী জঙ্গলের মাঝে। যেতে অনেক সময় লাগবে। এদিকে আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে! শরীর অনেক ক্লান্ত। ঘোড়ার গাড়ি এমন ভাবে দুলতে দুলতে যাচ্ছে ঘুমও হবেনা। বিরক্ত লাগছে আমার।

কতক্ষণ ঘোড়ার গাড়ি চললো হিসেব নেই আমার। পাহাড়ী রাস্তার ধারে গিয়ে ঘোড়া গাড়ি থেকে নামতে হলো আমাদের। সাদেক জানালো বাকিটা পথ পাহাড়ী রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে হবে। আমরা হাঁটতে লাগলাম। ঘন্টার পর ঘন্টা অনবরত হেঁটেই চলেছি। পাহাড়ী ঝোপঝাড় ডিঙ্গিয়ে যতই এগোচ্ছি ততই যেনো গা ছমছমে পরিবেশ তৈরী হচ্ছে। আমরা শহর থেকে এত দূরে চলে এসেছি যে এখানে আব্রাহামের ফোনে কোনো নেটওয়ার্ক পাচ্ছেনা। কোনো গাড়ি ঘোড়া নেই, নেই কোনো জনমানব। কি এক নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশ চারদিকে। আকাশ মেঘলা, চাঁদটাও যেনো দুর্বল হয়ে গেছে। এভাবে চলতে চলতে ভোরের আলো ফুটতে শুরু হলো। আর সাদেক জানালো আমরা তার গ্রামের একদম কাছে চলে এসেছি। পাহাড়ের ঢালু বেয়ে নামতে শুরু করেছি আমরা।

খানিক হাঁটার পর হঠাৎ খেয়াল করলাম ঝোপঝাড় পার হয়ে একটা খোলা ময়দানের মতো জায়গা। তার চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়ী জঙ্গলে ঘেরা। ময়দানের কোণায় একটা গেট, যেটা বাঁশের কঞ্চি আর পাহাড়ী বুনো ফুল দিয়ে সাজানো। তার ওপাশে কতগুলো নারী ও ছেলে বুড়ো দাড়িয়ে আছে। যেনো তারা এতক্ষণ আমাদেরই অপেক্ষায় ছিলো। তাদের হাতে ফুলের ঝুড়ি। কারো হাতে গ্লাস ভর্তি শরবত। বেশ অবাক হলাম। তারা কি আগে থেকেই জানতো আমরা আসতাম! সাদেক তো কলেজে ছিলোনা! তবে তার গ্রামে অতিথি আসছে এই ব্যপারটা গ্রামের লোকজন কিভাবে জানলো। হয়তো খবর পাঠিয়েছিলো কোনোভাবে। ফোনেও জানাতে পারে! কিন্ত এখানে তো নেটওয়ার্ক নেই! বিষয়টা নিয়ে ভাব্বার সময় পেলাম না।

আমাদের দেখামাত্র লোকগুলো যেনো উচ্ছ্বসিত হয়ে গেলো। আমরা প্রবেশদ্বার পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপর থেকে ফুলের বৃষ্টি শুরু হলো। তারা আমাদের মাথায় ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছে। দুজন অল্পবয়সী মেয়ে চলে এলো শরবত হাতে নিয়ে। শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিলো আমাদের দিকে। বিষয়টা ভালো লাগলো, খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি। শরবতের গ্লাস পেয়ে সবাই ঢকঢক করে গিলতে শুরু করলাম।

ভোরের আলো ফুটে গেছে। ময়দানের এক কোণায় কয়েকটা দোতলা কাঠের ঘর চোখে পড়লো। সাদেক মুচকি হেসে আব্রাহামের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো ..
– আমরা অতিথিদের এভাবেই বরণ করি। রাতেই আমাদের আসার ব্যপারে খবর পাঠিয়েছিলাম। তাই তারা আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রেখেছে।

আব্রাহাম অট্টহাসিতে মেতে উঠলো ..
– তুই যে গেঁয়ো ভূত এটা আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু এত অজপাড়া গাঁয়ে থাকিস এটা কল্পনা করিনি। একেবারে রূপকথার দেশে এসে গেছি বলে মনে হচ্ছে। ছবির মতো সুন্দর। বাপের জন্মে এমন সুন্দর জায়গা দেখিনি।

সাদেক হেসে উত্তর দিলো
– এমন সৌভাগ্য সবার হয়না দোস্ত। আমাদের এই সিক্রেট ভিলেজের সন্ধান ভ্যালমোরার কোনো ট্যুরিস্টের কাছে নেই। এখনো তো অতিথি আপায়ন করলামই না। চল দ্রুত। আগে বিশ্রাম করবি। আজ আবার একটা রিচুয়াল আছে আমাদের। বিকেল বেলা। দেখবি অনেক মজা পাবি।

আমি খেয়াল করলাম আদিল এখন পর্যন্ত চুপচাপ আছে। আমার কেমন যেনো এই জায়গাটা অন্যরকম লাগছে। মানুষগুলোর চাহনি অন্যরকম মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে তারা আমাদের ব্যপারে অনেক কৌতুহলি কিন্ত তারা আমাদের ব্যপারে জানার ইচ্ছাটা চেপে রাখছে। কেউ আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলছে না। যেনো অতিথিদের সাথে দায় সাড়া কিছু রীতিনীতি পালনে ব্যস্ত। আর জায়গাটাও কেমন গা ছমছমে। না জানি রাতের বেলা আরো কতটা ভয়ংকর লাগে দেখতে। যদিও জায়গাটা দেখতে কোনো দক্ষ শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা ছবির মতোই সুন্দর।

আমরা একটা দোতলা বাড়ির উপরের ঘরে চলে গেলাম। সেখানেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আব্রাহাম সাদেককে প্রশ্ন করলো …
– তোর চাচা চাচীকে কোথাও দেখছি না।
– আরে আজ তো চাচা চাচীর বিশেষ দিন। তারা নদীর পাড়ে আছে। একান্তে সময় কাটাচ্ছে। রিচুয়ালের সময় দেখতে পাবি। তোরা বিশ্রাম কর। আমার কিছু কাজ আছে। রিচুয়ালের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তোদের সাথে পরে দেখা হচ্ছে। বিশ্রামের পর আমি তোদের গ্রামের চারপাশটা ঘুরে দেখাবো কেমন ..

কথাগুলো বলে সাদেক চলে গেলো। আমরা ঘরের চারপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। ঘরের দেয়ালগুলোতে অদ্ভুত সব ছবি অঙ্কন করা। যার কোনো মাথামুন্ডু বুঝতে পারছি না আমি। আদিল চারপাশে একবার ভালো করে তাকিয়ে নিয়ে আব্রাহামের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো ..
– দোস্ত, তুই সাদেকরে কতদিন ধরে চিনিস?
– চিনি তো অনেক আগে থেকেই। কিন্ত খুব বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলাম না। ও যে এমন জায়গায় বসবাস করে এটা তো কল্পনাও করিনি আমি।
– দোস্ত এই জায়গায় কি বসবাস করা যায়! আমার তো এইখানে আসার পর থাইকাই ভিতরে ভিতরে ফাটতাছে। কেমন ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগতাছে। ওরে আব্রাহাম, দেয়ালের ওই ছবিগুলা দেখ! ডরে আমার ঠ্যাং কাঁপতাছে। রাইতের বেলা আমি ক্যামনে ঘুমামু!

আমরা আদিলের ইশারা করা দেয়ালের দিকে তাকাতেই দেখলাম একটা অদ্ভুত ছবি আঁকা। কোন এক ডাইনি একটা ছেলের পেটে নখ দিয়ে ছিঁড়ে নাড়িভুড়ি বের করেছে। মুখে লেগে আছে রক্ত। যদিও ছবি অস্পষ্ট। কিন্ত দেখে এমনটাই লাগছে। খুবই বিদ্ঘুটে, খুবই অস্বস্তিকর।

আব্রাহামের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ খেয়াল করলাম। সে কিছু একটা ভেবে বললো ..
– আরে বাবা এরা হয়তো ওদের দেবীর ছবি এভাবে এঁকেছে। সাদেক বললো না ওরা নাকি কোন দেবীর পূজা করে। এসব এতো সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেন! আত্মগোপনের জন্য এত সুন্দর জায়গা পেয়েছি এটাই অনেক। তোরা খামোখা ভয় পাচ্ছিস।

কিন্ত আদিল যেনো কিছুতেই শান্ত হলোনা ..
– ভাই একবার চিন্তা কর, এমন অদ্ভুত ছবি অঙ্কন করার রুচি হইলো কোন আর্টিস্টের!

আদিলের কথা শেষ না হতেই ঘরে প্রবেশ করলো একটা বাচ্চা মেয়ে। তার হাতের ঝুড়িতে ফল ভর্তি। ঝুড়িটা রুমের এক কোণায় একটা টুলের উপর রেখে সে দ্রুত চলে গেলো। আব্রাহাম আদিলের কথায় আর পাত্তা দিলোনা। ফলের ঝুড়ি দেখেই বলে উঠলো ..
– রাখ তোর রুচি! ওই দেখে ফলের ঝুড়ি। মনে হচ্ছে এরা ফলমূল ছাড়া কিছু খায়না। চল দোস্ত ফল দিয়েই ব্রেকফাস্ট করা যাক। আরে কত সুন্দর তরতাজা পাহাড়ী ফলমূল , আমার তো দেখেই জিভে পানি এসে যাচ্ছে।

আব্রাহাম যদিও বিষয়টা পাত্তা দিচ্ছেনা কিন্ত আদিলের মতো আমিও চিন্তিত। জায়গাটা আসলেই গা ছমছমে আর ভুতুড়ে। মনে হচ্ছে কোথাও একটা গন্ডগোল আছে। আর গ্রামে অল্প কিছু মানুষ যারা খুবই অদ্ভুত। শহরের এত আধুনিক জীবন ব্যবস্থা ছেড়ে এরা এই অজপাড়া গায়ে কেন এমন চ্যালেঞ্জিং জীবনযাপন করছে সেটাই মাথায় ঢুকছে না!

আব্রাহাম ফলের ঝুড়ি থেকে ফল নিয়ে গপাগপ গিলতে শুরু করেছে। এদিকে আদিলের ভয় যেনো কাটছে না। সে এবার আমার সাথে প্যান্যপ্যানানি শুরু করলো ..
– ওই আকি, তুই ক। এই আজগুবি ছবি ঘরের মধ্যে থাকলে ঘুম হইবো?

বিরক্ত হয়ে জবাব দিলাম আমি
– হ্যাঁ হবে।
– হইবো মানে! ক্যামনে?
– এমনে

আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি তাই শরীর ভীষণ ক্লান্ত। একটু ঘুমিয়ে নেয়া জরুরী হয়ে গেছে আমার। আদিলও আব্রাহামের সাথে ফল খাওয়া শুরু করলো। আমি গভীর ঘুমে নিমজ্জিত হয়ে গেলাম।
.
আমার ঘুম ভাংলো প্রায় তিন চার ঘন্টা পর জোড়ালো একটা কণ্ঠস্বর শুনে।
–তুমি ভেবেছো এই সব দানবের হাত থেকে এত সহজেই রক্ষা পাবে! চুক্তি তোমাকে করতেই হবে আকিরা! আমি ছাড়া তুমি অনেক দুর্বল। ওই আগন্তুক তোমাকে সবসময় রক্ষা করতে পারবে না।

সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসলাম আমি। ঘরে আদিল আব্রাহাম কাউকে দেখতে পেলাম না। প্রচন্ড বিরক্ত হলাম ..
– তো তুমি এজন্যই শান্তিতে ঘুমাতে দিবেনা? এমনিতেও তোমার চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অতি উৎসাহ খুবই সন্দেহজনক মনে হয়। আমার আরো ভাবতে হবে ব্যপারটা নিয়ে।

– ভাবো ভাবো ভাবতে থাকো আকিরা। শীঘ্রই তুমি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে যখন আমি ছাড়া তোমার কাছে বাঁচার আর কোনো উপায় অবশিষ্ট রইবে না।

– আচ্ছা তখন ভেবে দেখবো চুক্তি করার ব্যপারটা।

আমার কথাটা শেষ হতেই ঘরে এলো আদিল। সে এসেই আমার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ..
– উইঠা গেছোস, আমিতো ভাবলাম তোর গায়ে পানি ঢাইলা উঠানো লাগবে। চল, সাদেক আমগো গ্রাম ঘুইরা দেখাইতে নিয়া যাইবে। চারদিকে তো পাহাড় আর জঙ্গল ছাড়া কিছু দেহিনা। হেতে আমগো কি দেখাইবো!

আমি আদিলের সাথে নিচে নামলাম। আব্রাহাম আর সাদেক নিচেই দাড়িয়ে ছিলো আমাদের অপেক্ষায়। সাদেক আমাদের জায়গাটা ঘুরে দেখাতে লাগলো। তাদের ফসলি জমি আর গরু ছাগলের খামার। কিভাবে তারা গ্রামীণ জীবন ও জীবিকা চালায় তার একটা পরিষ্কার ধারণা দিলো। জঙ্গলের ভিতরে পাহাড়ী ঢালের নদী। সেখানকার তাজা মাছ। জিনিসগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম আমরা। আর নদীর তীর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করলাম নদীর তীরে একটা তাবু। জিজ্ঞেস করলো আব্রাহাম ..
– আরে দোস্ত তাবুতে কি! এইখানে কি মাছ ধরতে আইসা রাতে থাকা যায় নাকি?

সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেলো সাদেক। তার চোখেমুখে একটা চিন্তার ছাপ। ঘুরে দাড়িয়ে বললো ..
– ওদিকে যাওয়া যাবেনা। ওখানে চাচা চাচী আছে। আজকের রিচুয়ালের প্রধান আকর্ষণ তারা। সাত দিন আগে থেকেই তারা ওখানে থাকছে। কোনো মানুষের সাথে কথা বলা নিষেধ রিচুয়াল সম্পন্ন না হওয়া অবধি।

বলে উঠলো আদিল ..
– ও বুইজা গেছি, মৌনব্রত টাইপ কাহিনী। আমার তো রিচুয়াল দেহনের লাইগা আগ্রহ বাইরা গেলো। কি হয় আসলে তোমাগো রিচুয়ালে?

সাদেক হেসে উত্তর দিলো
– সেটাতো বিকেলেই নিজ চোখে দেখতে পাবে সবাই। তার আগে চলো দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেড়ে নেই। আজ দুপুরে বুনো হাঁসের মাংস আর ডাল রান্না হয়েছে। সেই ভোজ হবে।

আব্রাহামের খুশি দেখে কে
– দোস্ত, কি শুনাইলি আমারে! জিভে পানি এসে যাচ্ছে।

আমি পিছন ঘুরে তাবুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। খেয়াল করলাম একজন মহিলা আর একজন পুরুষ নীরবে নদীর ওপারে তাকিয়ে আছে। তারা তাবুর বাইরে দাড়িয়ে আছে। তাদের খুবই বিষন্ন মনে হচ্ছে। অবশ্য দূর থেকে তাদের মুখাবয়ব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিনা। হঠাৎই আমার কাঁধে কেউ একজন হাত রাখতেই চমকে উঠলাম। দেখলাম সাদেক পাশে দাড়িয়ে। আদিল আব্রাহাম দূরে ময়দানের দিকে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলো সাদেক ..
– কি হলো! খাবেনা?

আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। সে বলতে লাগলো ..
– তোমার এই জায়গাটা পছন্দ হয়নি তাইনা?

হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্ন করলো সাদেক। উত্তরও সে নিজেই দিলো ..
– তোমার পছন্দ হয়নি কারণ তুমি জায়গাটার ব্যপারে জানোনা।

আমি বললাম
– জায়গাটা অন্য আট দশটা সাধারণ গ্রামের মতোই। বিশেষ কিছু দেখলাম না এখনো।

হেসে উঠলো সাদেক
– বাইরে থেকে দেখে বুঝা যায়না। তাছাড়া জায়গাটা তো বিশেষ কিছু না। বিশেষ তো আমাদের গ্রামের প্রতিটা মানুষ।

– বিশেষ! কিভাবে! তোমরাও ভ্যালমোরার অন্য মানুষদের মতোই!

আবারও হেসে উঠলো সাদেক
– হাহাহা, এই গ্রামের সবাই বিশেষ। কারণ এই গ্রামের সবাই অমর। আমরা এমন দেবীর পূজো করি যে আমাদের অমরত্ব দিয়েছে। বলো, ভ্যালমোরার কোথাও তুমি অমরত্ব পাবে?

থেমে গেলাম আমি। সাদেকের কথা শুনে রীতিমতো চমকে উঠলাম। কি বললো ছেলেটা! সবাই অমর! আমাকে আশ্চর্য হতে দেখে সাদেক আবারও বললো ..
– কি হলো, এমন আশ্চর্য হলে যে?

– তুমি মজা করছো তাইনা!
আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম আমি। আমার প্রশ্নে সাদেক হোহো করে হাসতে হাসতে আমাকে ময়দানের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। ব্যপারটা যেনো তার কাছে খুবই মজার। আমাকে আশ্চর্য হতে দেখে সে আরো মজা নিচ্ছে।

খেয়াল করলাম ময়দানের মাঝখানে খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। টেবিল আর মোড়া পেতে দেয়া হয়েছে আমাদের জন্য। খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে কলাপাতায়। কয়েকজন মহিলা আর একটা অল্পবয়সী মেয়ে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন আমাদের। আমাদের পাশাপাশি গ্রামের বাকি সবাই খেতে বসেছে। আমি গণনা করার চেষ্টা করলাম এখানে কতজন মানুষ আছে। আমরা সহ ত্রিশ জনও হবেনা মনে হচ্ছে। তার মানে এখানে মাত্র কয়েকটা পরিবারই বসবাস করে। খাবার খেতে খেতে পাতে একটা কাগজের টুকরো পেয়ে গেলাম। আরে! খাবারের মাঝে শুকনো কাগজ কিভাবে এলো! আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম আদিল আব্রাহাম সহ গ্রামের সবাই খাবার খেতে ব্যস্ত। আমি কাগজটা হাতে নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলাম খাবার পরিবেশন করতে থাকা অল্পবয়সী মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাগজটা কি সে দিলো!

আমি খাওয়া বাদ দিয়ে কাগজটার দিকে মনোযোগ দিলাম। সেটা ভাজ করা বলে মনে হলো। ভাজ খুলতেই দেখলাম তাতে কিছু লিখা। “সময় থাকতে পালিয়ে যান”।
লিখাটা পড়া মাত্রই খাবার গলায় আটকালো আমার। হেঁচকি উঠে গেলো। কাগজটা পকেটে পুরে রাখলাম। অল্প বয়সী মেয়েটা আমার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। আমি পানি খেয়ে আবারও মেয়েটার দিকে তাকালাম। কি মায়াবী চেহারা মেয়েটার। চোখগুলো যেনো নিষ্প্রাণ। মুখে কোনো হাসি নেই। কিন্ত সে আমাকে পালিয়ে যেতে কেন বলছে! আর সবার অগোচরেই বা কেন বলছে! তবে কি সে অন্যদের থেকে আলাদা!

খাবার খাওয়া শেষ করতেই দেখলাম গ্রামের কয়েকজন ঢোল আর বাঁশি বাজানো শুরু করেছে। সবাই ময়দানের অন্য পাশের দিকে লাইন ধরে হেঁটে যাচ্ছে। সবার আগে সেই ঢোল বাদক আর বাঁশিওয়ালা হাঁটছে। বাকি সবাই তাদের অনুসরণ করতে লাগলো। সাদেক আমাদের বললো ..
– চলো সবাই, রিচুয়াল শুরু হয়ে গেছে।

কি হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। অগত্যা আদিল আব্রহামসহ আমি হাঁটতে লাগলাম। লোকগুলো ময়দানের এক কোণায় গিয়ে দাড়িয়ে গেলো। ঢোল আর বাঁশি অনবরত বেজেই যাচ্ছে। মাথা ঘুরাচ্ছে আমার অতিরিক্ত শব্দের কারণে। কি যে করুন সেই বাঁশির সুর। এই সুর যেনো হৃদয়ে আর্তনাদ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। খেয়াল করলাম ময়দানের কোণায় একটা উচুঁ টিলার মতো জায়গা। যেখানটায় সিঁড়ি বেয়ে উঠা যায়। আর টিলার নিচে বড়ো বড়ো পাথর বিছিয়ে দেয়া। জায়গাটা কেমন যেনো অন্যরকম লাগলো। টিলার উচ্চতা একটা চারতলা বিল্ডিংয়ের সমান তো হবেই। তবে মনে হচ্ছে এই টিলা মানুষের তৈরী। পাথর আর মাটি একত্র করে এরা নিজেরাই এটা বানিয়েছে হয়তো। হঠাৎই খেয়াল করলাম টিলার উপর সিঁড়ি বেয়ে উঠছে সাদেকের চাচা চাচী। বলে উঠলো আদিল ..
– আরে, ওরা তোমার চাচা চাচী না?

হ্যাঁ সম্মতি জানালাে সাদেক। আর মুখে আঙ্গুল দিয়ে আদিলের উদ্দেশ্যে বললো ..
– রিচুয়ালের সময় কথা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ। শুধু যা ঘটছে দেখতে থাকো।

আমরা কৌতুহল আর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলাম টিলার দিকে। সাদেকের চাচা চাচী টিলার উপর উঠে দাঁড়িয়েছে। তারা নিচের দিকে মানে উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে আছে। সম্ভবত তারা কোনো বক্তৃতা প্রদান করবে বলেই মনে হচ্ছে।

কিন্ত তারা সেটা না করে হঠাৎই তারা টিলার নিচে সাজানো পাথরগুলোর দিকে তাকালো। সেইসঙ্গে থেমে গেলো ঢোল আর বাঁশির শব্দ। আমি ব্যপারটা আঁচ করতে পেরেছি। এমনকি আব্রাহামও বুঝে ফেলেছে। সে সাদেকের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো ..
– দোস্ত, চাচা চাচী কি করতে চাচ্ছে! তারা এভাবে নিচে তাকাচ্ছে কেন! তারা কি পাথরের উপরে ঝাপ দেবে নাকি!

বলে উঠলো সাদেক
– এটাই তো অমরত্ব লাভের প্রথম ধাপ। আগে পুরনো দেহ ত্যাগ করতে হবে।

সাদেকের কথা শেষ হতে না হতেই তার চাচা চাচী পাথরের উপর একসাথে ঝাপ দিলো। পাথরের উপর পতিত হবার সাথে সাথে তাদের দুজনেরই মাথা ফেটে চৌচির। মাথার ঘিলু ছিটকে ছড়িয়ে গেলো চারদিকে। রক্তে রঞ্জিত হয়ে যেতে লাগলো পাথর। সেইসাথে থরথর করে কাঁপছে তাদের অর্ধমৃত শরীর। কিন্ত সবাই দাড়িয়ে তামাশা দেখছে। যেনো সবাই তাদের মরে যাবার জন্য অপেক্ষা করছে।

এ দৃশ্য হজম করার মতো নয়। আব্রাহাম বমি করতে শুরু করে দিলো। আমি খেয়াল করলাম আদিলের পা ঠকঠক করে কাঁপছে। আমি পাথরের মতো জমে গেলাম। যা দেখলাম তা এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা। আমার কাঁধে হাত রাখলো সাদেক। আর বললো ..
– অমর হতে গেলে এটুকুই সেক্রিফাইস যথেষ্ট

আমি তাকালার সাদেকের দিকে। ওর চেহারা যেনো ভয়ংকর লাগছে। মুখে একটা বিদ্ঘুটে হাসি। যেনো অমরত্বের নেশায় উন্মাদ হয়ে আছে। ফিসফিস করে বলে উঠলো সে ..
– রিচুয়াল এখনো শেষ হয়নি। রাতে দেবী মায়ের মন্দিরে পূজো হবে। তোমরা সকলে আমন্ত্রিত।

সাদেকের কথাবার্তা খুবই অস্বাভাবিক। ক্রমশই শরীরের লোমগুলো শিউরে উঠতে লাগলো আমার ….

—---------- চলবে—-----

অমর হতে চান?
অনুভূতি প্রকাশ করুন কমেন্টে …

 #ভিএম্পায়ার  #পর্বঃ১৫ #লেখাঃKhalid_Hasan–না আকিরা, নিয়ন্ত্রণ হারালে চলবে না। নিজের শক্তিকে অনুভব করো। নিয়ন্ত্রণ করতে শ...
03/10/2025

#ভিএম্পায়ার
#পর্বঃ১৫
#লেখাঃKhalid_Hasan

–না আকিরা, নিয়ন্ত্রণ হারালে চলবে না। নিজের শক্তিকে অনুভব করো। নিয়ন্ত্রণ করতে শিখো। দুই হাত প্রসারিত করো। নিজের মনকে শক্তির সাথে কেন্দ্রীভূত করো। নিজের শক্তির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নাও। তুমি যে মরণ খেলায় মেতে উঠেছো। এই শক্তি ছাড়া তুমি এই খেলায় কোনোভাবেই জিততে পারবে না। শীঘ্রই তোমার অনেক শত্রুর উদ্ভব হবে। তুমি কি হেরে যেতে চাও তাদের কাছে?

কিরার কথায় হৃদয়ে প্রচন্ড ক্রোধ জন্মাতে লাগলো আমার। দুইহাত প্রসারিত করে দিলাম আমি। শরীরে আগুন জ্বলছে। চোখ থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে অগ্নিকুণ্ড। পুরো শরীর যেনো অগ্নিশিখায় রূপান্তর হয়ে যাচ্ছে। শিরা উপশিরা গুলো দিয়ে যেনো রক্তের বদলে আগুন দৌড়াচ্ছে। আমি জ্বলছি। কিন্ত শরীর পুড়ে ছাই হচ্ছেনা। অসহ্য যন্ত্রণাও যেনো শরীর সয়ে নিচ্ছে। আর্তনাদ করতে চেয়েও পারছি না আমি।

হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার দুই হাতে দুটো আগুনের গোলক..
– এটাই তোমার অস্ত্র আকিরা। ছুড়ে মারো আগুন। যে কেউ পরাস্ত হতে বাধ্য ..

স্থির হয়ে গেলাম আমি। দুই হাত সামনে বাড়ালাম। আগুনের গোলক ছুটে গেলো সামনে থাকা আয়না বরাবর। তারপর কাচঁ ভাঙ্গার শব্দ। সেইসাথে শুনতে পেলাম ওয়াশরুমের দরজায় ধুপধাপ চাপড়ের শব্দ।

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে লাগলো আমার শরীর। আয়নাটা ভেঙ্গে চুরচুরে হয়ে গেছে। ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো অগোছালো হয়ে পড়ে রইলো বেসিনজুড়ে। খেয়াল করলাম দেয়ালে আগুনের গোলকের আঘাতে কালো দাগ হয়ে আছে। ওদিকে দরজায় ধুপধাপ চাপড়ের আওয়াজ বেড়েই চলেছে। যা ঘটেছে তা কোনো দুঃস্বপ্ন নয়। এটা বাস্তব, একটা অবিশ্বাস্য বাস্তব ঘটনা যা এখনো আমার হৃদয়কে কম্পমান করে রেখেছে। ঘাম ছুটিয়েছে সারা শরীর জুড়ে।

একটু স্বাভাবিক হয়েই দরজা খুলে বের হলাম আমি। সাথে সাথে আব্রাহামের প্রশ্ন ..
– আরে ভাই ওয়াশরুমে এতক্ষণ ধরে কি করছিলি? হইছেটা কি তোর?

আদিলের প্যানপ্যানানি শুরু হলো জোড়ালোভাবে ..
– তুই আগে বল লাইটার জ্বালাইলি ক্যামনে? আমিও পরিষ্কার দেখছিলাম। লাইটারে কোনো ফুয়েল আছিলো না। সত্যি কইরা বল কোন ট্রিক খাটাইছিলি তুই?

কি জবাব দিবো বুঝতে পারছি না আমি। কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি দাড় করাতে পারছি না। কিন্ত আসল সত্যিটাও বলতে ভয় হচ্ছে। আমার বন্ধুরা এইসব ঘটনা শুনলে হয় আমাকে পাগল ভাববে আর যদি তা না ভাবে তাহলে তারা কখনো মানতে পারবে না তাদের বন্ধু ধীরে ধীরে একটা মনস্টার হয়ে যাচ্ছে। আমি মিন মিন করে বললাম ..
– লাইটারে হয়তো সামান্য ফুয়েল তলানিতে অবশিষ্ট ছিলো। তাছাড়া আগুন জ্বালানো সম্ভব না। আমি শুধু ভাগ্যের উপর নির্ভর করে চেষ্টা করেছিলাম।

–কিন্ত ওয়াশরুমে এতক্ষণ কি করছিলি তাই বল! তোর গায়ের ঘাম দেখে তো মনে হচ্ছে লাড্ডুর মতো তোরও কোষ্ঠকাঠিন্য ধরছে।

আব্রাহামের আশ্চর্যবোধক প্রশ্নের উত্তরে বললাম
– ওয়াশরুমে কি করে জানিস না? ভলিবল খেলছিলাম।

কথাটা বলেই আমি হাঁটতে শুরু করলাম। পিছন থেকে শুনতে পেলাম আদিলের আজব প্রশ্ন ..
– কিরে আব্রাহাম, এই কলেজের ওয়াশরুমে ভলিবলও খেলে নাকি?

– চুপ কর হালা বলদ।

আব্রাহাম আদিল কথোপকথন বাদ দিয়ে আমার পিছনে হাঁটতে লাগলো। আমি বিল্ডিং ত্যাগ করলাম। আব্রহামের রুমের দিকে যাওয়া শুরু করলাম। পথে আব্রাহামের কথা শুরু হলো ..
– দোস্ত, অলরেডি ক্যান্টিনে সবার সামনে কট খাইছি। অহন তোগো হোস্টেলে কতক্ষণ জায়গা দিতে পারবো কইতে পারিনা।

আমি জিজ্ঞেস করলাম
– কেন? কোনো সমস্যা?
– আরে ভাই হোস্টেলে শুধুমাত্র স্টুডেন্টরাই থাকতে পারে। তাছাড়া ডেল্টোরায় ইদানীং অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটায় বহিরাগত একদমই এলাউ করেনা। জানিসই তো, কিছুদিন আগে কি ঘটেছিলো ..

সাথে সাথে আদিলের উত্তর
– হ টিভিতে শুনছিলাম দোস্ত। কারে নাকি রক্ত চুইষা খায়া দিছিলো তাইনা! কাহিনী কি ক তো খুইল্লা ..

রেগে গেলো আব্রাহাম
– চুপ কর হালা। এইসব কথা বলার সময় নাই। তোরা যদি এইখানে থাকতে চাস তাহলে এখুনি ফর্ম তুলে কলেজে ভর্তি হওয়া লাগবে।

আব্রাহামের কথা শেষ না হতেই ঠাস করে একটা শব্দ হলো আমাদের ঠিক পাশেই। তিনজনই দাড়িয়ে গেলাম। একটা মেয়ে একটা ছেলেকে ভীষণ জোরে থাপ্পড় মেরেছে। তারপর চটাং চটাং করে মেয়েটা ছেলেটাকে বলছে ..
– শালা একটা দামি ফোন কিনে দিয়ে ভেবেছিস তোর সাথে বাইকে ঘুরে বেড়াবো? যা শালা, পারলে কার কিনে নিয়ে আয় ..

কথাটা বলেই মেয়েটা হন হন করে চলে গেলো। ছেলেটা দাড়িয়ে মিনতি করতে লাগলো ..
– পিও, পিলিজ চলে যেওনা। আমি আজই বাবাকে বলে নতুন কার কিনবো ..

আব্রাহাম এসব দেখেও না দেখার ভান করে আমার উদ্দেশ্যে বললো ..
– আরে এসবে পাত্তা দিস না আকি। এই কলেজে এইসব ঘটনা খুবই কমন। ধনীর দুলাল দুলালি সব। সবকটা মাথামোটা।

আদিলের উত্তর
– গোল্ডডিগার মাইয়া। দেইখাই তো বুঝা যায়। শালা চড় খেয়ে আবার রিকোয়েস্ট মারাইতাছে। আমি হইলে কইতাম “ নাটক কম করো পিও .. তুমি যে অন্য কারো পেমে আসক্ত ..

– আরে বাদ দে ওদের কথা। সব কটাই মাথামোটা।
আদিলকে থামিয়ে দিলো আব্রাহাম।

আমার কাছে ব্যাপারটা অবশ্য খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছে। জিজ্ঞেস করলাম আব্রাহামকে ..
– ভর্তি হতে কেমন খরচ লাগবে?
– দুই লাখ। দুইজনের মিলে চার লাখ তো লাগবেই। আরো কিছু আনুসাঙ্গিক খরচ তো আছেই।

আদিলের প্যানপ্যানি শুরু হলো
– এত টাকা! হালারা কি কলেজ বানাইছে নাকি রিসার্চ সেন্টার। এত টাকা লাগে কেন!

আব্রাহামের সরল উত্তর
– ভাই এটা বড়োলোকদের প্রাইভেট কলেজ। এইখানে সব বড়োলোকের ছেলেমেয়েরা পড়ে রে ভাই। খালি টাকার খেলা।
– কিন্ত আমগো কার্ড তো ফালায় আইছি জঙ্গলে। এই মুহুর্তে তো টাকা নাই।

আমি থামিয়ে দিলাম তাদেরকে ..
– কোনো ব্যপার না। এজেন্সি “ট্রিপল এ” যেকোনো মুহুর্তে সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমাদের টাকার দরকার তাইতো। আমরা এখুনি ইনকাম শুরু করবো। ফলো মি ..

আদিলের প্যানপ্যানানি থামলো না
– ইনকাম মানে! কি করতে চাইতাছোস তুই?
– সমস্যার সমাধান।

কিন্ত আমার উত্তরে আদিল আব্রাহাম কেউই সন্তুষ্ট হতে পারলো না। তারা নীরবে আমাকে অনুসরণ করতে লাগলো। আমার মাথায় একটা নতুন আইডিয়া এসেছে। ভালো ইনকাম করার সুযোগ এসেছে। ডেল্টোরায় থাকতে গেলে অনেক টাকার দরকার। এখানে জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে। বড়লোকদের শহর। আমাকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।


আব্রাহামের রুমে গিয়ে বিছানায় বসলাম আমরা। আমি একটা কাগজে লিখতে বললাম। আব্রাহাম আমার শিখিয়ে দেয়া কথাগুলো লিখে ফেললো কাগজে। তারপর ধরলো আমাদের সামনে। কাগজে লিখা ..
“লাখ টাকায় আপনার যেকোনো সমস্যার সমাধান দেবে এজেন্সি ট্রিপল এ”।

লিখাটা পড়েই চিৎকার করলো আদিল ..
– ওরে মাইরাফাইলাইলো রে। তোদের কি মরনের ভয় নাই! লাড্ডু বা ভিক্টরের লোক দেখলে আমগো বাঁচাইবো কেডায়! লাখ টাকা তোদের ওইদিক দিয়া হান্দায় দিবে! ভাই আমি এখুনি পালাই। ডরে ঠ্যাং কাঁপতাছে আমার..

আদিল উঠে দাঁড়াতেই ওর টিশার্টের কোণায় টান দিয়ে আবার বসিয়ে দিলাম।
– আমাদের এজেন্সির নাম টিভিতে প্রচার করা হয়েছিলো। এখন এই নাম ভাঙ্গিয়ে খাওয়ার সুযোগ এসেছে। ওইসব লাড্ডু ভিক্টরের ভয় নিয়ে থাকলে লাইফে কিছুই করা হবেনা। তাছাড়া এত ভয়ের কি আছে। কিছু টাকা ইনকাম করে আবার এজেন্সির কাজ স্থগিত করবো।

আদিলের প্যানপ্যানানি সহজে থামানো গেলোনা ..
– কিন্ত তোর কাছে লাখ টাকায় সমাধান নিতে আসবে কেন লোকে .. মাইনষেরে বলদ পাইছোস!

– হা হা .. বলদ নয় মাথামোটা। ধনীর দুলালরা তো আসবেই। এখন যা, তোরা আরো কয়েকটা কাগজে এসব লিখে ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেদের দরজার সামনে টাঙ্গায় দিয়ে আয়। কাগজের নিচে আমাদের রুম নাম্বার লিখে দিবি কিন্ত। আমার বিশ্বাস তারা অনেক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে। এজেন্সি “ট্রিপল এ” তাদের সমস্যা সমাধানের অপেক্ষায়।

আমার কথা শুনে খুশিতে নেচে উঠলো আব্রাহাম
– ওয়াও গুরু তোর জবাব নেই। এই আইডিয়া আগে আমার মাথায় কেন আসলো না বলতো .. বলদগুলারে লুটেপুটে খাওয়া যাবে।

সাথে সাথে আদিলের প্যানপ্যানি ..
– আসল বলদ তো তোরা! ভাইবা পাইনা তোর মতো বুদ্ধিমান পোলা আকির চক্করে পড়লো ক্যামনে। তোরা তো মরবি সাথে আমারেও মারবি। ডরে আমার ঠ্যাং কাঁপতাছে। আমি যাই ..

আদিল উঠে যেতে লাগলেই আব্রাহাম টেনে ধরলো ..
– ওই খাড়া কই যাস!
– আরে মুততে যামু, এহন কি চাস প্যান্টেই মুইতা দেই? এক্সট্রা প্যান্ট আছে তোর কাছে? তোরা এমন ভাবে আমারে ফাসায় দিছোস এখন আর পালাইতেও পারমু না। সবসময় ডরের মধ্যে থাকোন লাগবো ..

আদিল ওয়াশরুমে চলে গেলো আর আব্রাহাম আরো কয়েকটা কাগজে লিখতে লাগলো।

এক ঘন্টার মধ্যেই প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেলো। এজেন্সি “ট্রিপল এ” এর এত ফ্যান ফলোয়ার আছে এই কলেজে আমরা কেউই তা আন্দাজ করতে পারিনি। রুমের বাইরে রীতিমতো লাইন লেগে গেছে ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেদের। রুমের দরজায় আদিলকে দাড় করিয়ে দিলাম এক এক করে মক্কেল পাঠাবে ভিতরে। আব্রাহাম ক্যাশিয়ার হিসেবে দরজায় রইলো। আর আমি চেয়ার টেবিলে চেম্বার বানিয়ে বসে আছি। এবার সমস্যার সমাধান করার পালা।

প্রথম মক্কেল ঘরে ঢুকেই আগে আব্রাহামকে এক লাখ ক্যাশ বুঝিয়ে দিলো। এরপর সোজা আমার ডেস্কের সামনে এসে বসলো। দাঁত কেলিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছে ছেলেটা আমার দিকে। পড়নে ওভার সাইজের টি-শার্ট। অদ্ভুত লাগছে দেখতে। যাকে বলে খাঁটি মাথামোটা। পাটিতে একটা দাঁত ভাঙ্গা থাকায় ছেলেটার চেহারা আরো হাস্যকর লাগছে। ছেলেটার বিদ্ঘুটে হাসি দেখে আমার একটু বিরক্তই লাগলো ..
–এ কি ভাই! দাঁতের সমস্যার সমাধান তো আমার কাছে নাই। আপনি কোনো ডেন্টিস্ট দেখান।

আমার কথায় হাসি থামিয়ে ছেলেটা কথা বলতে লাগলো এবার ..
–আরে না ভাই। দাঁত নিয়া প্রবলেম নাই। প্রবলেম তো হইছে অনলাইনে।

কিঞ্চিৎ আশ্চর্য হলাম আমি ..
–হ্যাঁ, তো বলুন অনলাইনে কি প্রবলেম হয়েছে?

–আরে অনলাইন থাইকা একটা টিশার্ট নিছিলাম। কিন্ত শার্টের হাতা এত বড়ো যে কি বলবো! এই দেখেন অবস্থা। এখন এই শার্ট নিয়া আমি কি করি বলেন তো? অনলাইন শপ আর এটা ফেরত নিচ্ছেনা। তাদের শপে নাকি রিটার্ন পলিসি নাই।

–আপনি এক কাজ করুন। দ্রুত চিড়িয়াখানায় রওনা করুন।

–সেকি! চিড়িয়াখানায় কেন!

–ওখানে শিম্পাঞ্জি আছে। আর জানেনই তো, শিম্পাঞ্জীর বডির তুলনায় হাত অনেক লম্বা। আপনার শার্ট শিম্পাঞ্জীর গায়ে ফিট করবে। সেটা তাকে দান করে দেবেন।

ছেলেটা আমার সমাধানে সন্তুষ্ট হলোনা ..
–কিন্ত আমি কি কোনো টেইলারিং শপ থেকে হাতা কেটে নিতে পারিনা?

বেজায় রেগে গেলাম আমি ..
–ওই মিয়া, এক লাখ টাকার টিকিট কেটে আমার থেকে সমাধান নিতে পারেন আর একটা সামান্য টিশার্ট দান করতে পারেন না? আর টেইলারিং শপেই যদি যাবেন তাইলে আমার এইখানে আসছেন কেন? যান ভাগেন।

ছেলেটা মন খারাপ করলো। রেগেও গেলো ..
–আমি কিন্ত সমাধান পাইনাই। আমার এক লাখ ফেরত চাই আমি।

পাশ থেকে আব্রাহাম চেঁচিয়ে উঠলো ..
–বাইর হন মিয়া! আমাদেরও কোনো রিটার্ন পলিসি নাই। সারাদিন আপনার পিছনে পড়ে থাকবো নাকি। বাইরে লম্বা লাইন। বাইর হোন ..

প্রথম মক্কেল বের হয়ে যেতেই দ্বিতীয় মক্কেল হাজির। লেনদেন শেষ করে আমার মুখোমুখি বসলো। কিন্ত মনে হলো ছেলেটা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ট্যারা সামাদের রোগে ধরলো নাকি ছেলেটাকে! আমার ভাবনায় ছেদ ঘটালো ছেলেটা ..
–ভাই আমার চোখ দুইটা ট্যারা। এইজন্য কোনো মেয়ে আমার প্রেমে পড়েনা। কিছুদিন আগে সানগ্লাস এপ্লাই করেছিলাম। কিন্ত সমস্যা হলো সানগ্লাস পড়লে আমি একদমই চোখে দেখিনা। এখন এই ট্যারা চোখ নিয়ে আমি কোথায় যাই বলুন তো?

কয়েক সেকেন্ড ভেবে উত্তর দিলাম আমি ..
–আপনি আপনার চুলগুলো আরো লম্বা করে ফেলুন। এরপর সেগুলো চোখের উপর ঝুলিয়ে দিন। স্টাইলও হবে মেয়েরাও প্রেমে পড়বে। চোখের দিকেও কারো নজর যাবেনা। সবার নজর চুলের দিকে থাকবে।

–কিন্ত আমার বাবার অনেক টাকা। আমি কি নতুন দুইটা চোখ লাগিয়ে নিতে পারবো না?

প্রচন্ড রেগে গেলাম আমি। আমার বলা উপায় পছন্দ না করায় ..
–ওই মিয়া মশকরা করেন? চোখ লাগায় নিবেন তো আমার এইখানে কেন আসছেন! কোনো চক্ষু হাসপাতালে যান না! যত্তসব! নেক্সট …

সে চলে যেতেই তিন নাম্বার মক্কেল হাজির। কিন্ত ছেলেটাকে কোনোভাবেই ছেলে হিসেবে মানতে পারছি না। দেখতে ছেলেদের মতো কিন্ত বসার স্টাইল মেয়েদের মতো। আর চোখে মাসকারা দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ঠোঁটে হালকা লিপিস্টিকও খেয়াল করলাম। কাহিনী কি! এটাতো বয়েজ হোস্টেল। মেয়ে আসার তো কথা না! সাথে সাথে ছেলেটার কথা শুরু ..

–ভাইয়া, আমার সমস্যা একটু জটিল। বাইরে থেকে দেখতে আমাকে ছেলে মনে হলেও ভিতরে ভিতরে আমি আসলে একটা মেয়ে।

প্রচন্ড শক লাগলো আমার ব্রেইনে। ছেলে বলে কি! আর এমনভাবে কথা বলছে যেনো সাক্ষাৎ প্রেমিকা..
– আপনার ভয়েস খুবই সিডাক্টিভ! হায় খোদা, এটা তো গুরুতর সমস্যা বলে মনে হচ্ছে! ছেলে হয়ে এরকম ভয়েস ..

আমাকে থামিয়ে দিলো ছেলেটা ..
–ও হো, তা নয় ভাইয়া। সমস্যা সেটা না। সমস্যা হলো আমি একটা ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসি।

–আরে কোনো ব্যপার না। ভালোবাসা হতেই পারে। কিন্ত ছেলে হয়ে ছেলের সাথে! নাহ তা কিভাবে সম্ভব! আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।

–আহা, ভাইয়া। একটু আগেই তো বললাম আমি ভিতরে ভিতরে আসলে একটা মেয়ে।

–ও হ্যাঁ তাইতো। তাহলে সমস্যা কোথায় প্রেম করুন।

–কিন্ত আমি যাকে ভালোবাসি সে দেখতে ছেলে হলেও ভিতরে ভিতরে সে ও আসলে একটা মেয়ে! এখন মেয়ে হয়ে আমি একটা মেয়েকে কিভাবে প্রপোজ করি বলুনতো?

আরে বাপ্রে! এসব কি চলছে ডেল্টোরায়। তার কথা শুনে গলা শুকিয়ে গেলো আমার। কিন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাভাবিক কথোপকথন চালাতে লাগলাম ..

–ও এই সমস্যা! এটা তো অনেক ইজি!

–আহা, সেটা সমস্যা না ভাইয়া। প্রপোজ তো করতেই পারি। কিন্ত সে না অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে।

–কিন্ত একটু আগেই না বললেন সে ভিতরে ভিতরে একটা মেয়ে! তাহলে মেয়ে হয়ে মেয়ের সাথে কিভাবে?

–আরে ভাইয়া, ও যে মেয়েটাকে ভালোবাসে সেই মেয়েটা আবার বাইরে থেকে মেয়ের মতো দেখতে হলেও ভিতরে ভিতরে একটা ছেলে।

হায় খোদা, ভিতরে ভিতরে দেখি অনেক কাহিনী চলছে ! আমার মাথা খারাপ করার জন্য সে আবারও বলতে লাগলো ..

–এইদিকে আরো একটা প্রবলেম। আমাকে আবার একটা ছেলে অনেক পছন্দ করে প্রপোজ করেছে। আমিও তাকে হ্যাঁ করে দিয়েছি। জানেনই তো, ভিতরে ভিতরে আমি একটা মেয়ে। তাই ছেলের থেকে প্রপোজ পেয়ে না করতে পারিনি।

–যাক, অবশেষে আপনার মনের আশা পূরণ হইছে।

–না ভাইয়া। আমার সমস্যার শুরু আসলে এইখানেই।

–কি বলেন! সমস্যা কি?

–হ্যাঁ, ছেলে ভেবে যাকে প্রেমিক বানালাম সেই ধোঁকা দিলো। প্রথম ডেটিংয়ের দিনেই বুঝতে পারলাম আমার প্রেমিক একটা ধোঁকাবাজ।

–বলেন কি! কি হয়েছিলো বলুন তো।

–আমার প্রেমিক। বাইরে থেকে দেখে একটা সুদর্শন ছেলে হলেও ভিতরে ভিতরে আসলে সেও একটা মেয়ে। আর ও নাকি আমাকে ছেলে ভেবেই প্রপোজ করেছিলো। পরে দেখা গেলো আমরা দুজনই ভিতরে ভিতরে মেয়ে। এখন আমরা কি করবো বলুন তো? আমাদের প্রেমের ভিতরে অনেক প্রবলেম হচ্ছে। দুজনে ভিতরে ভিতরে মেয়ে হওয়াতে কেউ কাউকে মেনে নিতে পারছি না। এ জীবন রেখে কি লাভ! কেন আমার সাথেই এমন হলো!

আমি পাগল হয়ে যেতে লাগলাম তার কথাবার্তা শুনে। আবার মরাকান্নাও শুরু করে দিয়েছে। প্রচন্ড রেগে গেলাম ..

–তুই এক্ষুনি ভিতর থেকে বের হয়ে যা। ভিতরে ভিতরে আমাকে পাগল বানানোর জন্য আসছিস তুই। এক্ষুনি যা বলছি। নইলে ভিতরে ভিতরে তরে খুন করে ফেলবো শালা সাইকোর বাচ্চা ..

–ও হো ভাইয়া এভাবে শালা বলে গালি দিবেন না প্লিজ … শালি বলবেন। একটু আগেই তো বললাম, ভিতরে ভিতরে আসলে আমি একটা মেয়ে।

–আআআআআআআ…

আর্তনাদ করে উঠলাম আমি। আমার রাগ দেখে ভয়ে ছেলেটা ঘর থেকে চলে গেলো।
সঙ্গে সঙ্গে ঘরে প্রবেশ করলো ট্যারা সামাদ আর রোগা মাসুদ। তাদের পিছনে দৌড়ে চলে আসলো আদিল। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো ..
– দোস্ত এই বেডারা সব মক্কেলরে ভাগায় দিছে ডর দেহায়া। প্রায় পঞ্চাশ জনের মতো আছিলো। আমগো আধা কোটি টাকা লোকসান কইরা দিলো রে …

রোগা মাসুদ হুঙ্কার করে উঠলো ..
–তোগোর ব্যবসা আইজ ছুটায়া দিমু। ব্যবসা করার আগে বড়ভাইগো থাইকা দোয়া নিছোস?

ট্যারা সামাদের কন্ঠস্বর আরো একধাপ উপরে ..
–ওই তোরা জানোস না? এই কলেজে চা বেচতে হইলেও আগে লিডাররে ট্যাক্স দেয়া লাগে! তোগোরে আইজ খাইছি। কল্লা নামায় দিমু।

রোগা মাসুদ আবারও বললো ..
–কিরে হুনোছ নাই সামাদ কি কইছে? এখন ট্যাক্স বাইর কর। নইলে তোদের খবর আছে। সকালের ঘটনা কিন্তু আমি ভুলিনাই। আলিশারে ডিস্টার্ব করছিলি ওইটা মাফ পাইছোস বইলা কি অহন যা খুশি তাই করবি আর আমি তোগোরে ছাইড়া দিবো?

রোগা মাসুদ তার মতো রাগ ঝারছে এদিকে অর্ধকোটি টাকা লোকসান হয়ে গেছে সেই শোকে ভিতরে ভিতরে ক্রোধ বেড়েই চলেছে আমার। সাথে সাথে গায়েবি কন্ঠস্বর ..
– একটা পুটিমাছকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া তোমার বাঁ হাতের কাজ আকিরা। ভুলে যেওনা দুর্বলদের উপর সর্বদা সবলরা অত্যাচার চালায়। তাকে বুঝিয়ে দাও তুমি দুর্বল নও। অন্তত তার থেকে তো একদমই নও।

কিরার কথা শেষ হলোনা। আমি আমার বাঁ হাত দিয়ে সজোরে একটা থাপ্পড় মারলাম মাসুদের গালে। এক থাপড়ে হুরমুর করে মাসুদ দেয়ালে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো।

সঙ্গে সঙ্গে ট্যারা সামাদ ছুড়ি বের করে তেড়ে এলো আমার দিকে ..
– ওই, তুই লিডারের গায়ে হাত তুলছোস! কল্লা নামায় দিমু ..

খপ করে ট্যারা সামাদের কলার ধরে উপরে উঠালাম। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে কুকরে গেলো সে। হাত কাঁপতে কাঁপতে ছুড়িটা ট্যারা সামাদের হাত থেকে পড়ে গেলো মেঝেতে। ঝনঝন করে একটা শব্দ হলো। বললাম
–তোর শরীরের সব ছিদ্র দিয়ে ট্যাক্স ঢুকানো হবে। জলদি তোর লিডারকে নিয়ে ভাগ এখান থেকে। তোরা আমার অর্ধ কোটি টাকা লোকসান করে দিয়েছিস আজ। এই অর্ধ কোটির শোকে মার্ডারও করে ফেলতে পারি।

ট্যারা সামাদ মাসুদকে উঠিয়ে নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো। আমাকে এতটা রাগান্বিত দেখে আদিল আব্রাহামও যেনো ভয়ে চুপসে গেছে। আব্রাহামের উদ্দেশ্যে বললাম ..
– আমি বাইরে যাচ্ছি। ভালো লাগছেনা। একটু একা থাকতে চাচ্ছি।

কথাটা বলেই ঘর থেকে বের হতে যাবো। আর সাথে সাথে একটা ছেলে দৌড়ে চলে এলো ঘরে..হাঁপাতে হাঁপাতে সে বলতে লাগলো..
– বস আপনাকে খুঁইজা বেড়াইতাছি। শুনলাম আমাদের কলেজে এজেন্সি “ট্রিপল এ” এসেছে। বস আপনারাই কি তারা যারা কিছুদিন আগে গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন? আমি তো টিভিতে শুনছিলাম। কিন্ত বিশ্বাস হচ্ছেনা আপনারা আমাদের কলেজের স্টুডেন্ট! কি সৌভাগ্য আমার। বস একটা সেলফি প্লিজ! আমার লাইফ সেট হয়ে যাবে। আপনি তো এখন অনেক ফেমাস!

সঙ্গে সঙ্গে আব্রাহাম সক্রিয় হয়ে গেলো
– দেখুন ভাই টাকা ছাড়া এইখানে কোনো কাজ হয়না।

ছেলেটা পকেট থেকে দুইটা বান্ডিল বের করলো। আর আব্রাহামের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো ..
– বস, এইখানে দুই লাখ আছে। লাগলে আরো দিবো। একটা সেলফি নিবো জাস্ট ..

ছেলেটা টাকা দিয়ে সেলফি নিলো আমাদের সাথে। বুঝলাম না ব্যপারটা। টাকা কি এদের কাছে হাতের ময়লা নাকি! ছেলেটাকে বললাম ..
– হঠাৎ আমাদের নিয়ে এত মাতামাতির কি হলো। আপনি যতটা ভাবছেন ততটাও ফেমাস না আমরা।

– কি যে বলেন বস, সোস্যাল মিডিয়ার হট টপিক তো এখন আপনি। আপনার আর আলিশা ভাবির ভিডিও তো সব জায়গায় ছড়ায় গেছে। উফ বস, কি মারাত্মক প্রেম প্রস্তাবটাই না দিছিলেন। আলিশা ভাবি শক, ট্রিপল এ ভাই রক।

– মানে!

ছেলেটা তার ফোন থেকে আমাদের দেখালো। সকালের ক্যান্টিনের ঘটনাটা ভিডিও রেকর্ড হিসেবে ভাইরাল হয়ে গেছে। আরে! এটা কখন হলো! কিভাবে হলো!

ছেলেটা চলে যাওয়ার সময় বলতে লাগলো
– চালায় যান বস, রোগা মাসুদের দিন শেষ। আপনি আলিশা ভাবির যোগ্য। রোগা মাসুদ হালায় একটা ফাউল।

ছেলেটা চলে যেতেই আব্রাহাম বিড় বিড় করে বলতে লাগলো
– বার বার সাবধান করেছিলাম শুনিসনি। সব মাথামোটা ক্যামেরা অন করে দাঁড়ায় দাঁড়ায় তোর তামাশা দেখেছিলো।

আদিলের প্যানপ্যানানি শুরু হলো
– বেডায় গেছে ভাইরাল হয়া। ভাগ্য ভালো আমি এর মধ্যে নাই। তোর জন্য যে কয়বার ল্যাংটা হইছি ভাগ্য ভালো কোনো ক্যামেরাম্যানের সামনে পড়িনাই। কি সাংঘাতিক ক্যামেরাম্যান সব। মুহুর্তে ভাইরাল করে দেয়।

আমার দুশ্চিন্তা হতে লাগলো আলিশাকে নিয়ে। এরকম একটা ভিডিও ছড়িয়ে গেছে। কি অবস্থায় আছে সে! নিশ্চয়ই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে অনেক! আমার নিশ্চয়ই তাকে স্যরি বলা উচিৎ। আদিল আব্রাহামকে ভর্তি ফর্ম তুলতে বলে আমি বেড়িয়ে পড়লাম আলিশাকে খুঁজতে। না, ক্যান্টিনে আবেগের বশবর্তী হয়ে এসব করা আমার একদমই উচিৎ হয়নি। হাটছিলাম ক্যান্টিনের দিকে। যদি কোনোভাবে আশেপাশে তাকে দেখতে পাই।

হোস্টেল থেকে ক্যান্টিনে যাওয়ার পথে হঠাৎই রোগা মাসুদের কন্ঠস্বর ভেসে এলো। রাস্তার পাশে একটা ঝোপের আড়াল থেকে ভেসে আসছে রোগা মাসুদ আর ট্যারা সামাদের বিকৃত হাসির শব্দ …

–পথ ছাড়ো মাসুদ! এভাবে আমাকে উত্যক্ত করো না। আমার বাবাকে তোমার ব্যপারে জানালে একদম খুন করে ফেলবে।

কথাটা বললো আলিশা। সঙ্গে সঙ্গে ট্যারা সামাদ বলে উঠলো ..
–হাসাইলেন ভাবি! মাসুদ ভাই হইলো এই কলেজের লিডার। আপনার আব্বুর তো কপাল ভালো এমন জামাই পাইবো। তাইনা লিডার?

–হ, তুই ঠিকই কইছোস।
জবাব দিলো মাসুদ।

কিন্ত আলিশার কন্ঠে দুশ্চিন্তার বহিঃপ্রকাশ
–পথ ছাড়ো মাসুদ! ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি। সত্যি সত্যি বাবাকে বলে দেবো কিন্ত।

–ও তাই নাকি খুকি! তা কি বলবে বাবাকে? বাবা বাবা দেখো তোমার হবু জামাই আমাকে উত্যক্ত করে। হাহাহাহা

মাসুদ তাচ্ছিল্য করেই যাচ্ছে। আলিশা প্রচন্ড রেগে গেলো ..
–দেখো মাসুদ! ভালো হচ্ছেনা। এভাবে আমাকে উত্যক্ত করলে কিন্ত আমার হাত থেকে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না বলে দিলাম।

মাসুদও যেনো এবার ভয়ংকর হয়ে উঠলো
–কত্ত বড়ো সাহস! হবু বরকে হুমকি দেয়। তোর খুব রূপের গরম হইছে তাইনা? এখন যদি আমি এখুনি তোরে ধইরা সর্বনাশ কইরা দেই তাইলে তোরে কে বাচাইতে আসবে শুনি!

–আমি।

জোরেসোরে উত্তর দিলাম আমি। ট্যারা সামাদ আর মাসুদ আমাকে দেখে যেনো নিমিষেই চুপসে গেলো। সম্ভবত তারা আমার রাগান্বিত চেহারা সহ্য করতে পারছে না। আমি অপলক তাকিয়ে আছি মাসুদের দিকে। ছেলেটা যেনো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রীতিমতো ভয়ে কাঁপছে। হঠাৎই সে ভোঁ দৌড় দিলো। সেইসাথে ট্যারা সামাদও পালাতে লাগলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আলিশা। ব্যপারটা যেনো সে বিশ্বাস করতে পারছে না। আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো ..
– ওরা কি তোমার ভয়ে পালিয়ে গেলো!

আমি গর্বের সহিত বুক ফুলিয়ে জবাব দিলাম..
– আমার গার্লফ্রেন্ডকে ডিস্টার্ব করবে এই কলেজে এমন হিম্মতওয়ালা ছেলেও আছে নাকি!

কথাটা বলতেই বিকট একটা হাসির শব্দ শুনতে পেলাম আমি। কিন্ত আলিশার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে রাগান্বিত হয়ে আছে।
বিড়বিড় করে বললো আলিশা ..
– তুমিও ওদের মতোই বেয়াদপ ..

কথাটা বলেই হন হন করে চলে গেলো আলিশা। এটা কি হলো! আমার কি একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য ছিলোনা!

সেদিনের মতো কলেজে ভর্তির কাজগুলো সম্পন্ন করতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ব্যস্ততা কাটলো সন্ধ্যার পর। আমি সন্ধ্যার পর একা একা বাইরে বের হলাম। কলেজে এক প্রকার নাম ডাক তৈরী হয়েছে খেয়াল করলাম। একদিনের মধ্যে এই কলেজে এতটা প্রভাব বিস্তার হবে আমি তা কল্পনাও করিনি। আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে বহুগুণে। নিজেকে শক্তিশালী কেউ মনে হচ্ছে। জোৎস্না রাতে একা একাই জঙ্গলের দিকে হাঁটতে লাগলাম। উদ্দেশ্য আমাদের ফেলে আসা ডেবিট কার্ডটা খুজেঁ পাওয়া। হাঁটতে হাঁটতে সেখানেই চলে গেলাম। ঠিক যেখানে সেদিন লাড্ডু সিং আমাদের মুখোমুখি হয়েছিল। রাস্তার ধারে ঝোপঝাড়ে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ জিনিসটা পেয়ে গেলাম।

মাথা নুইয়ে ডেবিট কার্ডটা উঠানো মাত্র খুব জোড়ে একটা ডানা ঝাপটানোর শব্দ কানে এলো। দূর হতে শোনা গেলো শেয়ালের কান্না। মুহুর্তে আকাশ মেঘলা হয়ে যেতে লাগলো। নেমে আসতে লাগলো ঘোর অন্ধকার। আমি কারো উপস্থিতি অনুভব করতে লাগলাম। কোনো অশুভ শক্তি। যা আমার শরীরে অস্বাভাবিক অনুভূতি দিচ্ছে।

ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই চমকে উঠলাম আমি। দুটো লাল টকটকে জ্বলন্ত চোখ তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ভেসে আসছে তার নিঃশ্বাসের শব্দ। যেনো সে রাগে ফুসছে। হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার হতে লাগলো আমার। কে সে! কি চায় সে!

হঠাৎই অনেক কাছে চলে এলো সে। আমার থেকে লম্বা। খোঁচা খোঁচা দাড়ি গোফ আর সাদা চুলগুলো দেখে আমি এবার তাকে চিনে ফেললাম। এটাতো ভিক্টর! একি অবস্থা লোকটার! লোকটাকে ভীষণ ভয়ংকর লাগছে। যেনো একটা মনস্টার। মুখের অঙ্গভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সে যেকোনো মুহুর্তে আমার উপর আক্রমণ করবে। আমাকে চিবিয়ে খাবে। তাকে দেখে কোনোমতেই পালানোর সাহস পাচ্ছিনা আমি। শরীর যেনো ভয়ে জমে গেছে আমার। তার থেকে প্রাণে বাঁচার জন্য আমাকে চেষ্টা করতে হবে। তাই কথা আমিই বলতে শুরু করলাম ..
– প্লিজ মিস্টার ভিক্টর, স্বাভাবিক হোন। আমি কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে ভি হ্যান্ডওভার করতে পারিনি। আপনি চাইলে আমি কালই আসল ভি আপনাকে দিয়ে দিবো। আপনি প্লিজ আমার উপর আক্রমণ করবেন না। আপনি যে সাধারণ কেউ নন এটা আমি আপনাকে প্রথমদিন দেখেই বুঝেছিলাম। আমি স্যারেন্ডার করছি।

কিন্ত আমার কথা শুনে লোকটার ভাবভঙ্গির কোনো পরিবর্তন খেয়াল করলাম না আমি। তার চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেনো আরো ভয়ংকর হতে লাগলো। এরপর ফ্যাশফ্যাশে গলায় বলতে লাগলো ..
– ভি তো আমি আদায় করবোই। তার আগে বলো আমার মেয়ে কোথায়?

চমকে উঠলাম আমি! মেয়ে মানে! ভিক্টরের থেকে এমন প্রশ্ন আশা করিনি! আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম ..
– মিস্টার ভিক্টর, আপনি কি লাল পানি অতিরিক্ত খেয়েছেন?

ভিক্টর তার পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিজের ফোন বের করলো। এরপর সকালের ক্যান্টিনের ভিডিওটা বের করে আমার চোখের সামনে ধরলো। আর বললো ..
– আলিশা, আমার একমাত্র মেয়ে। জলদি বলো আমার মেয়ে কোথায়? তার সাথে তুমি কি করেছো?

আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম! আলিশাকে দুপুরেও আমি দেখেছি। তার কিছু হয়েছে এমনটা তো শুনিনি। ভিক্টরকে শান্ত করতেই বলতে লাগলাম ..
– আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে মিস্টার ভিক্টর!

ভিক্টরের কন্ঠস্বর আরো ভয়ংকর হয়ে উঠলো ..
– হাউ ডেয়ার ইউ! তার মানে তুমি এভাবে স্বীকার করবে না? তোমাকে আমার ভয়ংকর রূপ দেখাতেই হচ্ছে।

খপ করে আমার গলা চেপে ধরলো ভিক্টর। শীতল হাত। নখগুলো ক্রমেই লম্বাটে আকার ধারণ করতে লাগলো। সেই বড়ো বড়ো নখের আচড় টের পাচ্ছিলাম গলায়। ভিক্টর নিজের দাঁতে দাঁত চেপে আমাকে গলা ধরে উপরে উঠাতে লাগলো। কি ভয়ংকর সূঁচালো দাঁত! যেনো কামড় বসানোর জন্য অস্থির হয়ে আছে। আমি ছটফট করতে লাগলাম। দম বন্ধ হবার উপক্রম। ভিক্টর দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো ..
– এখন পর্যন্ত যারাই আমার এই রূপ দেখেছে তারা কেউই জীবিত নেই। তুমি শুধুমাত্র আমার মেয়ের জন্য এখনো বেঁচে আছো। বলো তাকে কোথায় রেখেছো।

আমি ছটফট করতে লাগলাম। কিন্ত গলা চেপে ধরায় আমি কথাও বলতে পারছি না। আমি তাকে বুঝাতে পারছিনা আলিশাকে আমি কিছুই করিনি। আর সে হারিয়ে গেছে কিনা সে ব্যপারেও আমার জানা নেই। আমি শুধু মেয়েটাকে একটু ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। কিন্ত ভিক্টর এত রাগান্বিত হয়ে গেছে যে সে তার কবজির শক্তি আরো বৃদ্ধি করলো। আমি কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারছিনা। ছটফট করেই যাচ্ছি। দম ঠেকে আসছে আমার। ঠিক সেই মুহুর্তে গায়েবি কন্ঠস্বর ..
– তুমি কি তোমার শক্তির ব্যপারে ভুলে গেছো!

কিরার কথা শুনা মাত্রই যেনো শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো আমার। ইন্দ্রিয়সমূহ দ্রুত বেগে সক্রিয় হয়ে উঠলো। প্রচন্ড গরম অনুভব হতে লাগলো শরীরে। আমি খেয়াল করলাম আমার শরীর থেকে তীব্র আলোর বিচ্ছুরণ ঘটছে। লকেটটা ভীষণভাবে গরম হয়ে গেলো। সেইসাথে আমার দুইহাতে আগুন জ্বলে উঠেছে। হাতদুটো সামনে এনে সজোরে ধাক্কা মারলাম ভিক্টরের গায়ে। আগুনের গোলক তীব্র আঘাত করলো তাকে। ভিক্টর ছিটকে গিয়ে পড়লো কয়েক গজ দূরে। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। দ্রুত শ্বাস নিতে লাগলাম। গলায় প্রচন্ড ব্যথা করছে।

ভিক্টর উঠে দাড়ালো
– আনবিলিভেবল! ভ্যালমোরায় এত পুঁচকে মনস্টার পাওয়া যাবে জানা ছিলোনা। এখন তো আমি পুরোপুরি নিশ্চিত, আমার মেয়েকে তুই কিছু একটা করেছিস! বলে ফেল আমার মেয়ে কোথায়? নইলে আজ এখানেই তোর সমাপ্তি হবে ..

রাগে ফুসছে ভিক্টর। যেকোনো মুহুর্তে তেড়ে আসবে আমার দিকে। উত্তরের অপেক্ষায় আছে সে। তখনই কিরার কন্ঠস্বর ..
– আমি তাঁর শক্তি অনুভব করছি। তুমি এখনো তাকে হারানোর যোগ্য নও। কারণ তুমি তোমার শক্তির ব্যবহার এখনো শিখে উঠোনি। অন্যদিকে সে অনেক অভিজ্ঞ এবং তোমার থেকে অধিক শক্তিশালী। তবে একটা উপায় আছে। চুক্তি করো আমার সাথে। এটাই সময় .. করো নয়তো তার হাতে মরো। সিদ্ধান্ত তোমাকেই নিতে হবে .. চুক্তির পরেই আমি তোমাকে সাহায্য করবো ..

কিরার পরামর্শ খারাপ না। অন্যদিকে ভিক্টরের চেহারায় যে রাগ দেখা যাচ্ছে সে কিছুতেই আমার কথা মানবে না। সে আমাকে একটুও ছাড় দেবেনা বলেই মনে হচ্ছে। আর আমার আগুনের গোলক যে তার খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি সেটা তার বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর ভঙ্গিতেই বুঝা যাচ্ছে। এখন আমার কি করা উচিৎ! চুক্তি করে ফেলবো কিরার সাথে! সে আমাকে মহাশক্তিধর বানানোর ওয়াদা করেছিলো। শুধুমাত্র একটা সামান্য চুক্তিই তো। আচ্ছা, তবে তাই হোক ..

আমি কিরার উদ্দেশ্যে চুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করতে যাবো ঠিক সেই মুহুর্তে ভিক্টর অধৈর্য হয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতে লাগলো। সে যেনো শূন্যে লাফ দিয়ে উঠলো। পিছন থেকে তার ভয়ংকর কালো ডানা ঝাপটা দিলো। আমার দিকে তেরে আসছে সে একদম শূন্যে ভেসে। আমি খেয়াল করলাম তাঁর দাঁতগুলি আমার গলায় কামড় বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। নখগুলো প্রস্তুত হয়েছে খামছি দিয়ে ধরার জন্য। বিকৃত হয়ে গেছে চেহারা। আমি কিরার উদ্দেশ্যে চুক্তি করার জন্য কিছু বলার সুযোগ পেলাম না কেননা সেই মুহুর্তে চারদিক থেকে আমায় ঘিরে ধরলো তীব্র ঘূর্ণিবায়ু। আমি অনুভব করলাম কে যেনো আমায় পিছন থেকে জাপটে ধরেছে। এত তীব্র আলো আর দমকা হাওয়ায় দম আটকে যাবার মতো অবস্থা আমার। চোখ খোলা রেখেও আমি সাদা চকচকে তীব্র আলো ছাড়া আর কিছু দেখছি না। শরীরে অনুভব করতে লাগলাম তীব্র ঝাঁকুনি। যেনো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আমি কি পরপারে চলে এলাম! ভিক্টর কি আমায় শেষ করে ফেললো!


প্রায় কয়েক সেকেন্ড পর আমি আমার পায়ের নিচে মাটি অনুভব করলাম। ধীরে ধীরে আলোর তীব্রতা কেটে যেতেই খেয়াল করলাম আমি দাঁড়িয়ে আছি সমুদ্র তীরে। তীব্র ঝাঁকুনিতে মাথা ঘুরছে আমার। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। সামনে তাকিয়ে খেয়াল করলাম একটা অদ্ভুত পোশাকে আবৃত লোক দুই হাঁটু বালিতে রেখে তার ব্রিফকেস নিয়ে কিছু একটা করছে। মাথায় হ্যাট, মুখে তার রুমাল পেঁচানো। জোৎস্নার অস্পষ্ট আলোতে তাকে ভালোভাবে বুঝা যাচ্ছেনা। সেই তীব্র আলোর ঝলকানি কি সে তৈরি করেছিলো! কিন্ত কিভাবে! সে কি আমার নতুন কোনো শত্রু! অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করলাম সেই আগন্তুকের উদ্দেশ্যে ..
– কে আপনি!

সে আমার দিকে না তাকিয়েই তাঁর ব্রিফকেসের ভিতর কিছু একটা করতে করতেই উত্তর দিলো ..
– এজেন্ট খালিদ, ফ্রম এমএমএফ।
– এমএমএফ! এরকম কিছুর নাম কখনো শুনিনি।

লোকটা আমার দিকে মাথা তুলে তাকালো এবার ..
– শুনবে কিভাবে! এটাতো সমুদ্রের ওইপাড়ে অবস্থিত!

সমুদ্রের ওইপাড়ের কথা শুনে শরীর কেঁপে উঠলো আমার। যেনো বিস্ময় আর কৌতুহলে পাথর হয়ে যেতে লাগলো আমার শরীর। কোনোকিছুই বিশ্বাস হচ্ছেনা। সবকিছুই যেনো ঘোর লাগা স্বপ্নের মতো লাগছে। এই লোকটা! সে কি সত্যি সমুদ্রের ওইপাড় থেকে এসেছে! কিভাবে সম্ভব! ভ্যালমোরায় এটা অসম্ভব! আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না। সে কিভাবে ভ্যালমোরায় প্রবেশ করেছে! কিভাবে! কে এই আগন্তুক! হাজারো প্রশ্নে ছেয়ে যেতে লাগলো আমার মস্তিষ্ক।

—---- চলবে —

আমরা সবেমাত্র আসল কাহিনীতে প্রবেশ করলাম। এই পর্বে আপনাদের আগ্রহ দেখে

Address

Kalshi
Mirpur
1216

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Khalid hasan posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Khalid hasan:

Share