28/03/2025
হে আমার প্রভু, হে করুণার আধার, হে দয়াময় আল্লাহ…
রমজানের শেষ প্রহর চলছে। আপনার রহমতের বাতাস চারদিকে বইছে, অথচ আমি, এক গোনাহগার, এক ধুলায় মাখা পাপী, আপনার দরজায় কাঁদতে কাঁদতে এসে দাঁড়িয়েছি, হে আল্লাহ। আমার কোনো যোগ্যতা নেই, কোনো পুণ্য নেই, কেবল চোখে জল আর হৃদয়ে ভাঙা আর্তনাদ, এই নিয়েই এসেছি আমি।
আপনি যদি ফিরিয়ে দেন, আমি কোথায় যাবো? আপনি ছাড়া তো আমার কেউ নেই। এই পৃথিবীর মানুষ ঠেলে দেয়, সমাজ মুখ ফিরিয়ে নেয়, কিন্তু আপনি তো ফিরিয়ে দেন না, হে রহীম!
হে আল্লাহ, আমি কিছু চাই না আজকে নিজের জন্য। আমি চাই আপনার করুণা সেইসব মানুষের জন্য:-
যে মা সারাদিন রোজা রাখে, অথচ ইফতারে নিজে কিছু না খেয়ে সন্তানের মুখে সামান্য খাবার তুলে দেয়।
যে বাবা গোটা রাত রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরে, শুধু এই আশায়, সন্তানটা স্কুলে যাবে।
যে দাদা কাঁধে লাঠি নিয়ে ভিক্ষা করছে, শুধু নাতিকে একমুঠো ভাত খাওয়াতে।
যে মা গর্ভে সন্তান নিয়ে কাঁদছে, কারণ ঘরে চাল নেই, ওষুধ নেই, আপনার ছাড়া কোনো আশ্রয় নেই।
যে বাবা দিনের পর দিন পরিশ্রম করেও ঋণের কিস্তি দিতে না পেরে সন্তানকে স্কুল থেকে তুলেছে।
হে আল্লাহ, এই কষ্ট সহ্য হয় না। বুক ভেঙে যায়, যখন দেখি:
একটি মা সন্তানের মুখে এক ফোঁটা দুধ দিতে পারে না, অথচ নিজে সারারাত কান্নায় ভেসে যায়।
একটি বাবা দুশ্চিন্তায় রাত জাগে, কাল সন্তানের জন্য বাজারে কী নেবে?
একটি পরিবার ইফতারির সময় শুধু পানির বোতল নিয়ে বসে, আর মুখে থাকে “আলহামদুলিল্লাহ”!
একটি শিশু পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল পরে দাঁড়িয়ে থাকে অন্যের ঈদের জামা দেখার আশায়।
একটি মায়ের বুক জ্বলে যায় যখন সন্তান জিজ্ঞেস করে—“মা, আমরা গরীব কেন?”
হে আল্লাহ, সেই কান্না আপনি শুনুন! সেই চোখের পানি আপনি ফিরিয়ে দিন আশায়!
আপনি গায়েবী রহমতে ঘরভরা খাবার দিন সেই পরিবারকে যারা আজ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। আপনি বরকত দিন সেই পিতার রিজিকে, যে হালাল পথে চলতে গিয়ে সমাজের চোখে ছোট হয়ে যায়।
আপনি রহম করুন সেই মায়ের উপর, যার কোল শুকিয়ে যাচ্ছে দুধের অভাবে।
আপনি ঋণমুক্ত করুন সেই পরিবারকে, যাদের প্রতিদিনের আতঙ্ক হচ্ছে পাওনাদারের ধমক।
হে আল্লাহ, আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশ:
এই দেশের প্রতিটি দরিদ্র ঘর যেন হয় আপনার করুণার ছায়ায় ঢাকা। এই মাটির প্রতিটি মজদুর, রিকশাচালক, কৃষক যেন পায় পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য। এই দেশের পিতা-মাতা যেন অপমানিত না হয়, না ঘরে, না সমাজে, না সন্তানের চোখে।
এই দেশের কোনো সন্তান যেন না হয় ক্ষুধার শিকার, না হয় অপুষ্টির বলি। হে আল্লাহ, আপনি রক্ষা করুন আমাদের দেশের ঈমান, আমাদের ন্যায়বিচার, আমাদের দয়া।
হে আল্লাহ, রমজানের এই শেষ রাতে আমি কাঁদছি আপনার কাছে:
আপনি আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন সবার জন্য।
সেই পিতার স্বপ্ন পূরণ করুন, যে শুধু সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চায়।
সেই মায়ের বুক শান্ত করুন, যে একাই লড়ে যাচ্ছে জীবনযুদ্ধে।
সেই শিশুর পেটে অন্ন দিন, যে ক্ষুধায় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে।
সেই ছাত্রকে সহায়তা করুন, যার প্রতিভা আছে কিন্তু টাকার অভাবে বই নেই, খাতা নেই।
সেই বোনটির ইজ্জত রক্ষা করুন, যে গরিব বলেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে।
হে আল্লাহ, আমি জানি না আপনি কখন আমার ডাক শুনবেন। আমি জানি না আমার চোখের পানি আপনার আরশে পৌঁছেছে কি না। কিন্তু আমি জানি—আপনি রহীম, করীম, গফ্ফার, রায্জাক, সালাম, মুহসিন। আপনি শুনেন, আপনি ভালোবাসেন, আপনি ফেরান না।
হে আল্লাহ, রমজানের এই শেষ রাত হোক রহমতের ঝর্ণাধারা।
এই রাত হোক গরীবের হাসির শুরু।
এই রাত হোক অপমানিত বাবার সম্মানের পুনর্জন্ম।
এই রাত হোক কাঁদতে থাকা মায়ের চোখ মুছে ফেলার রাত।
এই রাত হোক বাংলাদেশে দয়া, ন্যায় ও বরকতের সূর্যোদয়।
আমিন। আমিন। আমিন।