
20/04/2025
আমার নতুন পেজ সবাই ফলো করুন
লেখা গুলো পড়ে ভালো লাগবে ইনশা আল্লাহ্
পড়ে দেখুন ভালো লাগবে
রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার এক নীরব গাঁয়ে আরিয়ানের নিবাস। শ্যামল প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা ছেলেটি চোখেমুখে স্বপ্ন আর বুকে অফুরন্ত সাহস নিয়ে তাকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের পানে। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আরিয়ান ছোটবেলা থেকেই অভাবের সাথে পরিচিত। তবুও দারিদ্র্য তার উদ্যমী মনকে কখনো দমিয়ে রাখতে পারেনি।
আরিয়ানের একটি স্বপ্ন—সে বড় কিছু করতে চায়। শুধু নিজের জন্য নয়, তার গ্রামের পিছিয়ে পড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যেও কিছু করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তার হৃদয়ে। সে দেখে, অর্থাভাবে কত সম্ভাবনাময় জীবন অঙ্কুরেই ঝরে যায়। তার ইচ্ছে, এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে আর্থিক কষ্টের কারণে কোনো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থেমে না যায়।
তবে পথটা মসৃণ নয়। একদিকে সংসারের অভাব-অনটন, অন্যদিকে ভালো কোনো আয়ের উৎস না থাকায় দুশ্চিন্তার মেঘ সবসময় তার মাথায় ঘোরাফেরা করে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে এলাকার রাজনৈতিক অস্থিরতা। নানান ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক সমীকরণের জটিল জালে আটকা পড়ে তার অনেক উদ্যোগ ভেস্তে যায়। সৎ পথে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে চাওয়াটা যেন এখানে এক কঠিন পরীক্ষা।
আরিয়ান হতাশ হয়, তবে ভেঙে পড়ে না। রাতের অন্ধকারে যখন সবাই ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে, তখন সে হারিকেনের আলোয় বই নিয়ে বসে। নতুন কিছু শেখার, নিজেকে যোগ্য করে তোলার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যায়। সে জানে, জ্ঞানই তার প্রধান হাতিয়ার, যা দিয়ে সে সব বাধা অতিক্রম করতে পারবে।
কখনো বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে, কখনো গ্রামের মুরুব্বিদের কাছে পরামর্শ চায়—কীভাবে এই অচলায়তন ভাঙা যায়। তার মনে একটি বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে প্রোথিত—যদি সৎ উদ্দেশ্য থাকে আর কঠোর পরিশ্রম করা যায়, তাহলে কোনো বাধাই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।
ধীরে ধীরে, আরিয়ান ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। বন্ধুদের নিয়ে একটি পাঠাগার গড়ে তোলে, যেখানে সবাই মিলেমিশে পড়াশোনা করতে পারে। এলাকার ছোট বাচ্চাদের বিনামূল্যে পড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এসব কাজে অনেক বাধা আসে, রাজনৈতিক চাপও থাকে, তবুও সে পিছপা হয় না। তার সততা আর একাগ্রতা ধীরে ধীরে কিছু মানুষের মন জয় করে।
একদিন, আরিয়ান শোনে জেলা শহরে একটি বৃত্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নিজের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকা সত্ত্বেও, সে কয়েকজন মেধাবী ছাত্রকে সেই বৃত্তির জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। তাদের সাফল্য দেখে তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। এই সামান্য সাহায্য অনেকের জীবনে নতুন আলোর দিশা দেখাচ্ছে—এই উপলব্ধি তাকে আরও উৎসাহিত করে।
আরিয়ান জানে, তার পথ এখনো অনেক দীর্ঘ এবং বন্ধুর। অভাব, রাজনৈতিক জটিলতা, আর পরিবারের দায়িত্ব—এইসব কাঁটার পথ পেরোতে হবে তাকে। কিন্তু তার চোখের স্বপ্ন অমলিন, বুকের সাহস অটুট। সে বিশ্বাস করে, একদিন তার দেখানো পথে আরও অনেক তরুণ এগিয়ে আসবে, যারা শুধু নিজেদের নয়, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের ভাগ্য পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখবে। আরিয়ানের গল্প আসলে একটি স্বপ্ন দেখার এবং সেই স্বপ্নকে সত্যি করার অদম্য ইচ্ছাশক্তির গল্প।