05/07/2025
কোথায় কোন কাজ করতে হবে তা ঠিক করলাম
(স্মৃতি কথায় কামাল স্যার - পর্ব ১১)
ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার
রিসার্চের কাজ কোন অংশ কোথায় করতে হবে তা নিয়ে কামাল স্যারের সাথে পরামর্শ করলাম। স্যার সব কিছুর নির্দেশনা দিয়ে দিলেন সুন্দর করে। স্যার বললেন, "আপনি স্পেসিমেন হিসাবে এন্ডোস্কোপিক বায়োপসি এবং রিসেকশন বায়োপসি দুটোই কালেকশন করবেন। সার্জনরা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার রোগীর অপারেশন করে হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করার জন্য আমাদের ডিপার্টমেন্টের ল্যাব এবং বাইরের বিভিন্ন ল্যাবে পাঠান। বাইরের ল্যাবের মধ্যে ধানমন্ডির দি ল্যাবরেটরিতে এবং ডেল্টা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বেশী বেশী পাঠায়। আপনি এসব ল্যাব থেকে স্পেসিমেন কালেকশন করবেন। এখানকার ল্যাবে এগুলো প্রসেস করবেন। ইউরিয়েজ টেস্ট আপনি সাথে সাথেই করে ফেলতে পারবেন। ইম্প্রিন্ট থেকে স্মিয়ার জিয়েমসা স্টেইনও সাথে সাথে করে ফেলতে পারবেন। হিস্টোপ্যাথলজিকেল সেকশন রুহি দাসই করে দিতে পারবে। হেমাটক্সিলিন এন্ড ইউসিন রুটিন স্লাইডের সাথেই রুহি দাস করে দিতে পারবে। শুধু হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি কালচার করার জন্য আপনাকে মিক্রোবায়োলজি ল্যাবে যেতে হবে। আমাদের ইন্সটিটিউটে কালচার করা সম্ভব না হলে মহাখালীর আইসিডিডিআরবির মাইক্রোবালজি ল্যাব থেকে করাতে পারেন।
আমি আইপিজিএমআর মাইক্রোবায়োলজির ল্যাবে খোজ নিয়ে জানলাম সেখানে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি আইসোলেশন করা সম্ভব না। চলে গেলাম আইসিডিডিআরবির ল্যাবে। সেখানকার টেকনোলজিস্টরা আমাকে কথা বলতে বললেন ওখানকার চিপ কনসালট্যান্টের সাথে। আমি আমার কথা তার কাছে পেস করলেন। জীবাণু কালচারের জটিল জটিল বিষয়ের উপর তিনি আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। আমি একটা প্রশের উত্তর দিতে পারলাম না। তাতে তিনি বলে ফেললেন, "আপনি এটাই জানেন না, আবার আমার সাথে পরামর্শ নিতে আসছেন!" আমি লজ্জিত হয়ে ফিরে এলাম। কথাটা কামাল স্যারকে জানালাম না। এরপর কয়েকদিন একটানা মাইক্রোবায়োলজি বই পড়লাম লাইব্রেরিতে বসে বসে। জীবাণু কালচার বিষয়ে বিস্তারিত পড়লাম। মোটামুটি এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করলাম। এবার বার্ডেম এর মাইক্রোবায়োলজির টেকনোলজিস্টের সাথে বিস্তারিত আলাপ করলাম। তিনি হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি কালচার করতে পারবেন বলে সম্মতি দিলেন। ঘটনাটা এবার কামাল স্যারকে জানালাম। স্যার বললেন, "হবে, এবার শুরু করেন।"
হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি কালচার করতে যে যে মিডিয়ার প্রোয়জন তা বিএমএ ভবনের নিচতলার রিএজেনট মার্কেট থেকে কিনে এনে টেকনোলজিস্ট দিলাম। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে টেকনোলজিস্ট আমার দেয়া লিটারেচারগুলো ভালো করে পড়ে নিলেন।
এমন সময় দেখা হলো জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একজন শিক্ষকের সাথে জিনি জাপানে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নিয়ে রিসার্চ করছেন। তিনি আমার সাথে কথা বলে খুশি হলেন। তিনি বললেন, "আমি অল্প দিনের জন্য দেশে এসেছি। ফেরার সময় কয়েকজন নতুন রিসার্চার সাথে নিয়ে যাবো। তাদেরকে নিয়ে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরির উপর রিসার্চ করবো। আপনি যদি এখানে এই জীবাণু আইসোলেট করতে পারেন তাহলে আমি এটার সেম্পল জাপানে নিয়ে গিয়ে জাপানি জীবাণুর স্ট্রেইনের সাথে বাংলাদেশী জীবাণুর পার্থক্য আছে কিনা তা নিয়ে রিসার্চ করবো নতুন রিসার্চারদের সাথে নিয়ে। এবার বেস কিছু নতুন রিসার্চার আমার সাথে জাপানে যাবে পিএইচডি কোর্সে।
কথাটা কামাল স্যারকে জানালাম। স্যার বললেন, " ভালোই হলো। যেহেতু প্রফেসর সাবের হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরির উপর দক্ষতা আছে সেহেতু আপনি যে নতুন জীবাণু আইসোলেট করবেন তা তিনি দেখে সাপোর্ট দিলে সেটা পাকাপোক্ত হবে। আপনি আমার সালাম দিয়ে আমাদের আইপিজিএমআর-এর গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির প্রফেসর এন্ড হেড, ডাঃ মাহমুদ হাসান স্যারের সাথে দেখা করেন। তিনি আপনাকে অনেক বায়োপসি সেম্পল দিতে পারবেন এবং ভালো গাইড করতে পারবেন।" আমি মাহমুদ হাসান স্যারের রুমে গেলাম। সালাম দিয়ে বললাম, "স্যার, আমি ডা: সাদেকুল ইসলাম তালুকদার। আমি এসোসিয়েশন অব হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি উইথ গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার" নিয়ে থিসিস শুরু করেছি। কামাল স্যার আমাকে পাঠিয়েছেন।" স্যার বললেন, "গুড, আপনি এখানে বসুন, আমি একটা আর্টিকেল লিখছি। একটু পরই কথা বলবো। " আমি স্যারের টেবিলের ডান পাশে বসলাম। কিছুক্ষণ পর পর একেকবার একেক জন বড় বড় স্যার আসেন মাহমুদ হাসান স্যারের কাছে। স্যার বলেন, "বসুন, ইনি ডা: সাদেকুল ইসলাম তালুকদার। ইনি হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নিয়ে রিসার্চ করনেন।" এতটুকু বলে আগুন্তুকের সাথে কথা বলে বিদায় করে দেন। এভাবে প্রায় ২৫/৩০ মিনিট কেটে গেলো। আমি নিখুঁত ভাবে স্যারের কথা বলার ধরন এবং অঙ্গ ভঙ্গি খেয়াল করছি। লেখাটি শেষ করে স্যার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "এখন বলুন।" আমি বিস্তারিত বললাম। স্যার বললেন, "খুব ভালো রিসার্চ হবে। আমি আপনাকে সহযোগিতা করবো। আমি যতগুলো বায়োপসি সেম্পল লাগে দিবো। কামাল সাবকে আমার সালাম দিয়েন।"
আমি এসে কামাল স্যারকে খুলে বললাম সব কিছু। স্যার খুশি হলেন।
(চলবে)
৫ জুলাই ২০২৫ খ্রি.
#কামাল #স্মৃতি
--------
প্রফেসর ডাঃ মুহাম্মদ কামাল
জন্ম: ৩১ ডিসেম্বর ১৯৫৪ খ্রি.
মৃত্যু : ৯ মে ২০২৫ খ্রি.
ভিজিটিং প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান
প্যাথলজি বিভাগ।
সাবেক ডীন, বেসিক সাইন্স এন্ড প্যারামেডিক্যাল সাইন্স অনুষদ,
সাবেক উপ-উপাচার্য (প্রশাসন),
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
শাহবাগ, ঢাকা।