Sadiya Akter Sh*thila-সাদিয়া আক্তার শিথীলা

Sadiya Akter Sh*thila-সাদিয়া আক্তার শিথীলা -তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম
যাদের আচার-আচরণ ও চরিত্র উত্তম-!

 #প্রেমশ্রু  #সাদিয়া_আক্তার_শিথীলা  #পর্বঃ১ [(অনুমতি ব্যতিত কপি  করা নিষেধ, চাইলে শেয়ার দিতে পারেন। ) 📕🖋️❌❌] ১৬ এপ্রিল ২...
16/07/2025

#প্রেমশ্রু
#সাদিয়া_আক্তার_শিথীলা
#পর্বঃ১

[(অনুমতি ব্যতিত কপি করা নিষেধ, চাইলে শেয়ার দিতে পারেন। ) 📕🖋️❌❌]

১৬ এপ্রিল ২০২২। দুপুর ২:৩৬ মিনিট । কন্স্টেবল আবিল আহমেদ হাঁক ছাড়ে ঢাকা থানার নতুন এস আই স্যার তালহা এহসান তুহিন মিত্র এর উদ্দেশ্যে। আবিল এর ডাক শুনে তালহা পূর্ণতার টেবিল সাইটে আসে। আবিল ২টা ডাইরি আর একটা ঔষধ কোম্পানির ছোট খাতা এগিয়ে দিলো তালহার কাছে। একটি নীল রঙের ডাইরি আর একটি হাল্কা বাদামি রঙ বলা যায়। সাথে ঔষধ কোম্পানির ছোট খাতাটায় কিছু পেন্সিল ক্যাস করা আছে।পেন্সিল ক্যস গুলো দেখেই বুঝা যাচ্ছে এগুলো পাকা হাতের করা না। হয়তো সখের বসে ছবি আকা হয়েছে। তালহা ডাইরি গুলো দেখতে লাগলো। চোখ আটকে যাচ্ছে সুধু একটা তারিখে ১৬ এপ্রিল। অবাক করা বিষয় আজকের তারিখটাও ১৬ এপ্রিল। দু জন এর মুখবয় তাকিয়ে চোখের ভাসা যেন বুঝে নিলো দুজন। ডাইরি গোলো রেখে আর একবার বাড়িটা পর্যবেক্ষন করতে লাগলো। তালহ আবিল কে নিচ তলা সার্চ করতে বলে। আবিল আদেশ পেয়ে নিচে চলে যায়।

তালহা বাড়িটা সার্চ এর জন্য আসার সময় এক নজরে পর্যবেক্ষন করে এসেছে উপরে।একটা ছোট ডোপ্লেক্স বাড়ি। বাড়িটা তে মোটে তিনটা থাকার রুম। দুইটা উপর তলায় আর একটা নিচ তলায়।তবে পূর্ণতার রুমটা নজর কারা। পূর্ণতার রুমটা দ্বিতীয় তলায়, রুমে দক্ষিণা বারান্দা আছে। সব কিছু খুব সুন্দর ভাবে গুছানো এখানে সন্দেহ জনক কিছুই চোখে পরছে না। তবুও তল্লাসি চালানো হলো রুম জুড়ে। সুধু এই ডাইরি গোলই কাজের, এছাড়া আর কিছুই মিললোনা।চোখ গেল বারান্দায়। বারান্দায় প্রবেশ করতেই দেখা গেলো একটা টি টিবিল রাখা।বারান্দার এক কোনে একটা কালো গোলাপ আর একটা সাদা গোলাপ এর টব রাখা। কিন্তু সাদা গোলাপের টবে একটা বুক মার্ক এর সাইজে কাঠ ঝোলানো। যাতে লেখা আছে কাঠ গোলাপ। এইটা দেখে তালহার ভ্রু কুচকে এলো। এই মেয়েকি ফুল চিনে না? লেখাটা ঠিক দেখছে কিনা সিউর হওয়ার জন্য তালহা গাছ গোলর কাছে গিয়ে দেখলো।লেখাতো ঠিকি দেখছে। তালহা ভাবলো মেয়েটা হয়তো ফুল চিনে না।

সে ফিরে যাওয়ার জন্য পা বারাতেই টি টেবিল এর নিচে পরে থাকা কিছু কাঠগোলাপ এর দিকে চোখ পরলো। সাথে একটা গিফট বক্স ও পরে আছে। তালহা সেগুলো তুলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। আবিল তখন এসে হাজির হয়ে বলে, স্যার তেমন কিছুই পেলাম না। তবে পাশের বাসা থেকে জানতে পারলাম এখানে আসামি তার পরিবারের সাথেই থাকতো। আসামি পূর্ণতার বাবা -মা সাথে পূর্ণতার ৬ বছর এর একটা বোন থাকতেন। তারা এ বাড়ি থেকে গিয়েছেন দিন পনেরো আগে। আর আসামি মেয়েটাকে তেমন ভাবে কেউ চিনে না। মেয়েটা কখনো নাকি তেমন বাসা থেকে বের হতো না। খুব শান্ত প্রকৃতির ছিলো। বাড়িতে প্রতিবেশি কেউ আসলেও সে নাকি তার মোতই থাকতো। তবে আসামির ছোট বোন নাকি খুব দুষ্টু প্রকৃতির, দুই বোন নাকি দুই মেরুর মতো। তালহা বলে হুম, তাহলে আসামির পরিবার এখোন কোথায়? আসামির পরিবার তাদের গ্রামের বাড়িতে আছে। ময়মনসিংহ।।

ময়মনসিংহ সদর এই থাকেন তারা বর্তমানে। আবিল তাহলে উনাদের খবর দেওয়ার ব্যবস্থা করো। উনাদের গুনদর মেয়ে প্রেমিক হত্যা চেষ্টার দায় জেলে আছে। জি স্যার আমি জানিয়ে দিয়েছি, উনারা আসছেন। স্যার তাহলে চলুন অফিস এ যাই আমরা। হুম চলো আবিল। এই গুলো নেও সাথে........ স্যার ফুল, গিফট? এগুলো.... কার। আবিল এগুলো কার সেইটা ওই মেয়ে বলতে পারবে। এগুলো নিয়ে চলো অফিস এ দেখতে হবে। সাথে ডাইরি গুলোও নিয়ে নাও। ওকে স্যার। এখন বাজে ৪:২০।। তালহা এহসান তুহিন তার অফিস কক্ষে প্রবেশ করেছেন। কেউ অফিস এ আসছে বুঝে মধ্য বয়সি দুইজন নর-নারী উঠে দাঁড়ালেন। তালহা এহসান তুহিন চেয়ারে বসতে নিয়েও সুজা হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরলেন। আশ্চর্য নয়নে সামনে থাকা মাঝ বয়সি দুই জন ব্যক্তি কে দেখে সে যেন বড় কোন ধাক্কা খেল। এখানে থাকার কথা আসামি পূর্ণতার বাবা-মার কিন্তু এখানে....।।।। তালহা অবাক লেচনে চেয়ে প্রশ্ন করলেন...! কাকাই -কাকিয়া আপনারা এখানে কি করছেন?

সামনে থাকা মাঝ বয়সি ব্যক্তি দুইজন অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন স্যার আপনি কি আমাদের বলছেন? কাকাই আমাকে স্যার কেন বলছেন? আমি তালহা। আপনি জয়নাল দাদুর ছেলে সাইফ কাকাই না? ব্যক্তিটি অবাক হলেন, বাবা আমি তুমায় চিনতে পারছিনা এখনো! কাকাই আমি আপনার চাচাতো ভাই শাহীন মিত্রের এর ছেলে। যদিও কোন যোগাযোগ নেই আমাদের কিন্তু কাকাই আমি আপনাদের চিনতে পারছি।বাবা তুহিন তুমি৷অনেক বড় হয়েগিয়েছো। সেই ১৪,১৫ বছর বয়েসে দেখেছিলাম তোমায়।আচ্ছা সে সব পরে হবে কাকাই,কিন্তু আপনারা এখানে কেন? তালহার এমন প্রশ্নে ভদ্রলোক মাথা নিচু করলেন, ভদ্রমহিলার চোখর জল আরো দ্রুত পরতে শুরু করলো। তখনি রুমে প্রবেশ করে আবিল, পূর্ণতার কেস ফাইল নিয়ে।

তালহা তখন ভদ্রমহিলা কে কাকিয়া বলে সম্মদ্ধন করতে করতে শান্ত হতে বলেন৷ আবিল অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, স্যার উনি আপনার কাকিয়া? হ্যাঁ কেন?আবিল চোখ এমন বড় করে তাকিয়েছে যেন চোখ জোরা এখোনি মেঝেতে খুলে পরবে।আবিল এর এমন চাহনি তে তালহা ধমক দিয়ে বসে, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন আবিল? আ-আ...... আ - আ কী ? বোবা হয়ে গেলে নাকি?আবিল গলা কাশি দিয়ে বলে আ-আসলে স্যার!আপনি যাদের কাকাই-কাকিয়া বলছেন, তারাই আসামি পূর্ণতার বাবা-মা। আবিল এর কথা তালহার কানে আস্তেই স্তব্দ হয়ে যায় তালহার চার -পাশ। ও ঠিক শুনলো তো? এই পূর্ণতাই সেই পূণা, তার এলোকেশি? একবার যার দেখা পাওয়ার জন্য রাতের পর রাত জেগে কল্পনা করেছে? এই সেই পূর্ণা?

এই সেই তার এলোকেশি?কিন্তু এ কিভাবে সম্ভব তার এলোকেশি কাওকে মারতে চাইতে পারে না। সে তো খুব সরল, বাচ্চা, ভীষন ভীতু মেয়ে। যার পায়ের তলায় পিশে একটা পিপড়া মারা পরলেও কাদে ভাসাতো। সে কিভাবে একজন মানুষ এর বুকে ছুরি চালাবে? এইটা কিছুতেই সম্ভব না। তালহা ধপাস করে চেয়ারে বসে পরে চার পাশ কেমন আবছা হয়ে এসেছে। এখনি যেন জ্ঞ্যন শূন্য হয়ে পরবে। ভদ্রলোক, ভদ্রমহিলা, আবিল তিন জনি এগিয়ে যায় এস আই তালহার কাছে। তালহাকে পানি পান করানো হয়। চোখে মুখে পানির ছিটে দেওয়া হয়। ভদ্রমহিলা জিগ্যেস করেন বাবা তুমি ঠিক আছো? আবিল এর প্রশ্ন, স্যার আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাই চলুন। আপনার শরীর বেশি খারাপ লাগছে ?

আমি ঠিক আছি। আবিল তুমি বাহিরে যাও। প্রোয়জন হলে আমি তুমায় ডেকে নিব।।।ওঁকে স্যার।।। তালহা গ্লাস ভর্তি পানি পান করে। দুজন কে বসতে বলে। তার পর শুরু হয় তার জিজ্ঞাসা বাদ। দেখুন এই মূহুরতে আমি একজন এস আই।।। প্লিজ আপনারা কিছু লোকাবেন না যা জানেন সবটা বলবেন।পূর্না একটা ছেলেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। এটেম টু মাডার কেস এইটা। ছেলেটা মরে গেলে পূর্নার ফাসিও হতে পারে। ছেলেটা এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে লাইভ সাপোর্টে আছে। যে কোন সময় একটা দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আপনারা বুঝতে পারছেন ও কি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে? বাবা - সত্যি বলতে আমরা এসব এর কিছুই জানিনা। পূর্ণা ছেলে বেলায় যেমন ছিলো এখনো তেমনি...।।। সব কিছুতেই ভয় পেতো। ও যে কাকে কি করেছে আমরা তাও জানিনা। গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি পনেরো দিন হলো। পূর্ণা বলেছিল তুমরা যাও, আমি ১৭ তারিখে চলে যাবো। কলেজে একটু কাজ আছে। পূর্ণার কথা আমরা বিশ্বাস করেছি।কারণ পূর্ণাকে অবিশ্বাস করার মতো কিছু করেনি কোন দিন। আমার মনে হচ্চে পূর্ণা ফেসে গেছে বাবা। তুমি আমাদের পূর্ণাকে বাচাও।দেখুন কাকাই পূর্ণাকে এরেস্ট করেছে সময় আমাদের কন্স্টেবল আবিল আহমেদ নিজে দেখেছে পূর্ণার হাতে ছুরি।আর সেই ছুরি ভিদে ছিলো সেই ছেলেটার বুকে।

আবিল এর কাছে শুনেছিলাম পূর্ণাকে অনেক বার জিজ্ঞাস্য করার পরও পূর্ণা কোন কথা বলে নি, কোন প্রশ্নেরি উত্তর দেয়নি। ছেলেটা সেন্সলেস হওয়ার আগে পূর্ণতা বলে পূর্ণার হাত চেপে ধরেছিলো। সেখান থেকেই আবিল বুঝতে পেরেছিলো মেয়েটার নাম। কিন্তু হাজারটা প্রশ্নের পরেও কোন উত্তর দেয়নি পূর্ণা। ছেলেটার আত্তা এখনো দুনিয়ায় আছে বলে আর পূর্ণার সম্পূর্ণ তথ্য জানা ছিলো না বলে আর ছেলেটার বাড়ি থেকে এখনো কোন কেস ফাইল করা হয়নি পূর্ণার বিরুদ্ধে তাই রিমান্ডে এখনো আমরা দেয়নি পূর্ণতাকে। ৯৯৯ এ কল করে জানিয়ে ছিলো এক ব্যক্তি আমাদের।তারপর আমাদের টিম ঘটনা স্থলে পৌছায়। এখনো পূর্ণা যদি মুখ না খুলে তাহলে কাকাই, পূর্ণা কিন্তু বাঝে ভাবে ফেসে যাবে।বাবা আমাদের একবার ওর সাথে দেখা করিয়ে দিবে। আমাদের বিশাস্ব পূর্ণা এমন কিছু করতে পারে না।হুম কাকাই আমিও মানতে পারছিনা পূর্ণা এরকম কিছু করেছে।তবে পূর্ণাকে বুঝিয়ে বলো আমাদের সব বলতে।নাহয় আমাদের হাতে কিছুই করার থাকবে না। ঠিক আছে বাবা পূর্ণার সাথে আমাদের দেখা করার ব্যবস্থা করে দেও আমরা পূর্ণাকে বুঝিয়ে বলছি।

________________________________________________

তালহা আবিল কে কল দেয়। আবিল আমার কেভিন এ আসো ফাস্ট।ওঁকে স্যার।।।। কল কেটে যায়।আবিল প্রবেশ করে এস আই তালহা এহসান তুহিন এর কেভিন এ। মে আই কামিন স্যার। ইয়েস।।। উনাদের পূর্ণাতার সাথে দেখা করিয়ে দেও। ওকে স্যার।পূর্ণার বাবা- মা কে আবিল নিয়ে যায় পূর্ণতার কাছে। পূর্ণা তখনও এক কোনে বসে নি শব্দে চোখের পানি ফেলছে। সাইফ সাব পূর্ণতাকে ডাকলেন।পূর্ণা"মা" বাবা এসেছি।পূর্ণা তখনও ঘোরের মাঝেই আছে৷ জেল কাস্টারি তে থাকা আর একজন বৃদ্ধ বয়সি মহিলা পূর্ণাকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বল্লেন ও মে তুমার বাপ মায় আইছে মনে হয়। শুন্তাছো হেরা তুমারে ডাকতাছে। পূর্ণার জেন হুস এলো। ডান দিকে তাকাতেই দেখতে পেল তার বাবা মা দুজন লোহার বেরার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পূর্ণা ছুটে গেল সেখানে বাবার হাত নিজের হাতের মাঝে ঝাপটে ধরল।

কিছুটা উঁচু সুরে বলতে লাগলো..... বাবা আমি আহির কে মারিনি।আমি আহির কে খুব ভালোবাসি বাবা। ভীষন ভালোবাসি আমি। আহির তবুও আমায় কেন ভালোবাসলোনা? আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা।আমি তুমাদের বলতে পারিনি। আমি মিথ্যা বলেছি তোমাদের।আমার খুব ভয় লাগছিলো যদি তুমি জ্যেঠুর মতো কর।আমি সেই জন্য কিচ্ছু বলতে পারিনি।জ্যেঠু যেমন স্নেহা আপুর আর মুখ দেখেনা, একজন কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল বলে। তুমিও যদি আমার সাথে এরকম করতে সেই ভয়ে আমি কিচ্ছু বলতে পারিনি তুমাদের বাবা। আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা। আমি তুমাদের কষ্ট দিতে চাইনি কখনো তবুও আজ তুমাদের আমার জন্য কষ্ট পেতে হচ্ছে। শান্ত হ মা।তুই তো সুধু ভালোবেসেছিস, বিয়েতো করিস নি। ভয় পাস না মা।আমরা তোকে জামিনে এখান থেকে নিয়ে যাব। একদম ভয় পাবিনা। আমরা আছিতো।।

স্তব্দতা পূর্ণতার চার পাশ যেন ঘিরে ধরে বাবার এই কথায় "তুই তো আর বিয়ে করিস নি " গাল বেয়ে পরা চোখের পানির গতি যেন বেগ পায়। বাবা মিহি কোথায়?ও কে তো তুমাদের সাথে দেখছিনা। মা মিহি কোথায়?মিহি তোর নানু মনির কাছে। মা মিহি একা কখনো থাকেনি তুমরা চলে যাও।আমি যে পাপ করেছি তার শাস্তি আমাকে পেতে হবেই। মা মিহিকে খুব আগলে রাখবে,খুব চোখে,চোখে রাখবে। খুব যত্ন নেবে ওর মা। তোর কিছু হবে না পূর্ণা। তুই তো আর ছেলেটাকে কিছু করিস নি। তুই তো নিজেই একটু আগে বললি।হ্যাঁ, আমি আহির কে মারিনি কিন্তু আমি একটা অন্ত:সত্তা মেয়েকে... সম্পূর্ণ কথা শেষ না করেই পূর্ণা হেচকি তুলে কাদতে থাকে। আপনাদের সময় শেষ আর কথা বলা যাবেনা।আপনারা চলে আসোন। মা কি বললি তুই? মেম প্লিজ আপনার চলে যান।সময় শেষ আপনাদের। আমরা আসছি, তুই ভয় পাবি না। এখানে আমাদের শাহিন এর ছেলে আছে তালহা। ও তোর কেস টা দেখবে। তুই সুধু সব সত্যি টা বলবি।আমরা যাবিন এর ব্যবস্থা করছি যত তারাতাড়ি সম্ভব। আসছি মা। কাদবিনা একদম।পূর্ণার বাবা-মা চলে যায়।।।।।।।

তালহা এতোক্ষন যাবত পূর্ণার বাসা থেকে আনা ফুল, গিফট বক্স, আর্ট খাতা,আর ২টা ডাইরি সবগুলো খুতিয়ে খুতিয়ে দেখছিল। ডাইরিতে বিশেষ কিছু লেখা নেই। সুধু লেখা ছেলেটার সাথে কবে কবে দেখা হয়েছিল আর কি ভাবে কেটেছে দেখা করার দিন গুলো। ১৯এপ্রিল ২০১৮ পূর্ণতার প্রেম এর শুরু।কিন্তু ১৬ এপ্রিল ২০২১জীবন এর পূর্ণতা লেখা।। এই কথাটার মানে ঠিক বুঝাগেলনা। জীবন এর পূর্ণতা মানে? সেদিন কি হিয়েছিল?এটাই এখন তালহার কাছে লাখ টাকার প্রশ্ন। লেখাটা যত বার দেখছে তত বারি বাজে চিন্তা ঘিরে ধরছে তালহা কে। এসির ঠাণ্ডাটা বাতাস এর মধ্যেও শার্ট দিয়ে ঘাম বয়ে যাচ্ছে সুধু এই একটি লাইন এর জন্য। তখনি রুমে প্রবেশ এর অনুমতি চায় আবিল। স্যার! এসো আবিল, বলো।স্যার আসামি পূর্ণতার বাবা-মা দেখা করতে চাইছেন আপনার সাথে।

আসামি শব্দটা কানে বাজতেই তেতে উঠে তালহা এহসান। আবিল জাস্ট সেটআপ পূর্ণা আসামি এখনও প্রমান হয়নি, সো পূর্ণাকে আসামি বলবে না। সরি স্যার। তালহা নিজের চুল গুলো খামচে ধরে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ এর চেষ্টা চলায়। অন্ত:পর শান্ত সুরে আবিল কে আদেশ দেয় পূর্ণার বাবা মাকে তার রুমে আসতে দেওয়ার জন্য। ওঁকে স্যার।। রুমে প্রবেশ করে দুইজন। সাইফ সাব তালহা কে বলে বাবা পূর্ণার সাথে কথা হয়েছে কিন্তু কথা শেষ করতে পারিনি তার আগেই সময় শেষ হয়ে গেছে। পূর্ণতা কিসের অন্ত:সত্তা মেয়ের কিথা কি যেন বলতে চাইছিল। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার জন্য বাবা। আপনারা নিশ্চিন্তে বাড়ি যান কাকাই। আমি দেখছি পূর্ণার সাথে কথা বলে আপনাদের সব জানাবো আমি। উকিল এর ব্যবস্থা আমি করছি। আচ্ছা বাবা। একটু দেখো,আসছি আমরা। হ্যাঁ সাবধানে যাবেন।

সন্ধ্যা ৬ টা বাজে এখন। পূর্ণতার কাছে যেতে চেয়েও যেতে পারছিল না কিন্তু এইরকম হলে চলবে না সবটা জানতে হবে। কিন্তু এইভাবে দেখা হবে সপ্নে আকা নারীর সাথে, এইটা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে তালহার। তালহা কল্পনাও করেনি তার জীবন এর প্রথম কেস এর সাথে যুক্ত থাকবে তার এলোকিশি। দীর্ঘ এক নিশাস্ব ত্যগ করে তালহা পা বারায় পূর্ণতাকে দেখার জন্য, তার সত্যিটা জানতে হবে।

মনে নানারকম চিন্তা ভাবনার সাথে লড়াই করে পূর্ণতার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াচ্ছে তালহা। আর দুই থেকে তিন কদম এগোলেই পূর্ণতার কাস্টারি। আর এক কদম এগোতেই পিছন থেকে ডাক পরে কন্স্টেবল আবিল আহমেদ এর। স্যার! ২ জন মহিলা এসেছেন। ভীষন কাদছেন তারা। বার বার বলছেন থানার বড় বাবুর সাথে দেখা করবো। আমার কাছে কিছুতেই ডাইরি লিখাচ্ছেন না।

তালহা একবার পিছন ফিরে পূর্ণতার জেল কাস্টারির দিকে তাকালেন, তবে পূর্ণতার দেখা মিললো না পূরপুরি। একটা অল্প বয়সী মেয়ে তার হাঁটুর নিচ অবদি চুল গুলো ছেড়ে বসে আছে,দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে। সাথে জেল এর সাদা চেক শাড়ি পরা এক বৃদ্ধা বসে সেই এলোকেশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। তালহার বুঝতে দেড়ি হলো না।এটাই তার এলোকেশি,তার পূর্ণা। তার মনের রানী ঐ দগ্ধ জেলে, ভাবতেই বুকটা মুচড়ে উঠলো তালহার। চিন চিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে তালহার বুকের বাম পাশে। নিজের অজান্তেই নিজের বুকের বাম পাশে তালহা হাত রাখলো,চোখ জোড়া বন্ধ করে জোরে জোরে শাস্ব নিচ্ছে তালহা। স্যার! আপনার কি আবার শরীর খারাপ লাগছে? আবিল এর প্রশ্নে তালহা চোখ মেলে তাকায়। না আবিল তুমি যাও, আমি আসছি। ওকে,স্যার! আবিল সামনের দিকে পা বাড়ায়। তালহাও যায় সেই আবিল এর গন্তব্যে। আইন এর কাজে নাম লিখিয়েছে। এতো ভেঙে পরলে কাজ চলবেনা। নিজের মনকে নানাভাবে বুঝ দিয়ে এগোলেন তালহা কারা আবার কি কেস লিখাতে আসলেন সে দিক দেখতে। পূর্ণতার কাছে আপাতত যাওয়া আটকে গেলো।

থানার ভিতর দাঁড়িয়ে আছেন একটি অল্প বয়সী মেয়ে আর একজন পঞ্চাশ এর কোটায় বয়েস হবে এক নারী।মেয়েটা আস আই তালহা এহসান তুহিন এর রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে আছেন। রুমের দরজার পাশের দেয়ালে বড় করে লেখা এস আই তালহা এহসান তুহিন।
মনে মনে ভাবছে এরা আদেও সৎ বিচার দিবে? তখনি এস আই তালহা ভেতরে যেতে যেতে বলেন আবিল উনাদের পাঠিয়ে দাও। আবিল স্যার তালহার রুমে দুইজন কে প্রবেশ এর অনুমতি দেয়। দুইজনি প্রবেশ করে তালহার রুমে। তালহা সাদরে দুইজন কে তার সামনের চেয়ারে বসার অনুমুতু দেন। দুই জনি বসে সালাম দেয়। তালহা সালাম এর জবাব নিয়ে তাদের সমস্যা জানতে চায়। পঞ্চাশ এর কোটায় পরা মহিলাটি ভাঙা গলায় বলে আজ রমনায় যে ছেলেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন ও আমার এক মাত্র সন্তান আবরার আহির চৌধুরী । তালহা চমকে উঠে। তার মানে এরা পূর্ণার বিরুদ্ধে কেস ফাইল করতে এসেছেন। তাহলে পূর্ণার জামিন করানো তো কঠিন হয়ে পরবে। আচ্ছা আপনি শান্ত হোন। আপনার অবস্থা ভালো লাগছে না, অসুস্থ হয়ে পরবেন। শান্ত হোন আপনি। আমি দেখছি।সাথে থাকা কিশোরী কে তালহা প্রশ্ন করে। আপনার নাম?কিশোরীর উত্তর, আমার নাম সৌমি চৌধুরি। আপনার পরিচয়?আব্রাব আহির চৌধুরীর চাচাতো বোন আমি । উনি আমার কাকি মা সাহিলা বেগম চৌধুরী, আহির এর মা । আচ্ছা তাহলে আপনারা কন্স্টেবল আবিল এর কাছেই তো কেস লিখাতে পারতেন। আমায় কেন খুজচ্ছিলেন।মধ্য বয়সি মহিলা কান্না ভেজা গলায় আবার বলেন, বাবা আমার পুলাটা তুমার বয়সি হইবো।তুমি থানার বড় ওসি শুনেছি, তুমি দয়া করে ন্যায় বিচার পায়িয়ে দিবে আমার ছেলেকে বাবা। যার জন্য আমার ছেলেকে মৃত্যুর সাথে লড়তে হচ্ছে তারে তুমি খুজে সাস্তি দিবা বলো বাবা। বাবা আমাদের কিছুই নেই। আহির এর বাবা দিন আনে দিন খাই আমরা। আমাদের সাথে কারোর শত্রুতা নেই।

তবে আহির এর বন্ধুরা হাসপাতালে আহির কে দেখতে আইসা আমারে বলছে, যে কাকি মা পূর্ণতা নামে একটা মেয়ের জন্য তুমার পুলা অনেক রাইগা থাকতো।ঔ মাইয়া নাকি আহির রে ভালো থাকতে দিতো না বাবা।আমি ওই মাইয়ার নামেই মামলা করমু।ওই মাইয়ার লগে নাকি আমার পুলার ভালোবাসা আছিলো,তো আমার পুলাটার সাথে এইরকম কেন করলো মাইয়াডা?আর আপনারাও ওই মাইয়ারেই নাকি আমার পুলার আহত শরীর যেনে পইরা আছিলো ওই খান তে ধইরা আনছেন থানায়। তা ওই মাইয়া কই আমি দেখবার চাই মাইয়াটারে। আমি যানতে চাই কেন এইরকম করলো আমার পুলার সাথে। আচ্ছা আপনি শান্ত হোন। আমরা তদন্ত করছি। আপনার ছেলে ন্যায় বিচার পাবে আমি কথা দিচ্ছি। আর এখন এইভাবে দেখা করা সম্ভব না। এইটা থানা। মেয়েটকে এখনি অপরাধিও বলা যায় না যতক্ষন না পর্যন্ত প্রমান হচ্ছে সব কিছু। আর মেয়েটা আমাদের কাস্টারিতেই আছে। পালানোর সুঝোগ নেই। আপনারা কন্সটেবল আবিল এর কাছে ডাইরি করে যান। আমি নিজে এই কেস এর তদন্ত করছি। আর আপনাদের ফোন নাম্বারও দিয়ে জাবেন। দরকার পরলে যেন পাওয়া যায় আপনাদের।আবিল উনাদের ডাইরি লেখো। আমি আসছি একটু।কাজ আছে আমার। ওঁকে স্যার।

তালহা থানা থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে। কোথায় যাচ্ছে সে এখন নিজেও জানেনা। তালহার কপালের, হাতের রগ গোল ফোলে নিল রঙ ধারণ করে নিয়েছে। গাড়ি স্টার্ট দেয়। ছোটে চলে গন্তব্যহীন পথে।দির্ঘ সময় পথ পারি দিতে দিতে লক্ষ করে তার ব্ল্যাক কালার গাড়ি টা শহর এর ব্যাস্ত গন্ডি পেরিয়ে কোন এক জনশূন নির্জন স্থানে চলে এসেছে।রাস্তার দুই পাশ ধরে ঘন বড় -বড় গাছ দেখা যাচ্ছে।রাস্তার এক পাশে তালহা নিজের গাড়ি থামায়। অন্ত:পর গাড়ির থেকে নেমে যায়। বেশ শীতল হাওয়া বইছে জায়গাটায়।গাড়ি তে এসি থাকা সত্তেও তালহার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছিল। এখন তা কপালেই শুকিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এর আনা-গোনা নেই রাস্তাটায়।মাঝে মাঝে এক-দুইটা পন্যবাহি ট্রাক যাচ্ছে। বেশ নির্জন জায়াগাটা। মনে যদি ঝড় না বইতো, তাহলে এই পরিবেশটা তালহা বেশ উপভোগ করতে পারতো। তালহা গাড়ির দরজায় হেলান দিয়ে সমস্ত অভিযোগ ছোড়ে মারে ঐ আকাশ পনে তাকিয়ে। পূর্ণা তুমি জানলেই না তুমাকে পাওয়ার বাসনা নিয়ে কেও একজন কতো রঙের সপ্ন বুনে ছিলো। তুমাকে নিজের করে পাবার বাসনা নিয়ে কেউ একজন বেচে ছিলো। কেও একজন তুমাকে দূর থেকে পাগল এর মতো ভালোবেসে গেছে। জানো পূর্ণা ওই আহির এর মা যখন বলছিলেন যে তুমার সাথে তার ছেলে আহির এর ভালোবাসার সম্পর্ক আছে, আমার হৃদয়টা ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছিলো।আমি পারছিনা পূর্ণা। আমি সয্য করতে পারছিনা। আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে। তোমাকে শক্ত করে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে তুমি সুধু আমার পূর্ণা।সুধুই আমার।জানো কত সপ্ন দেখেছি তোমায় নিয়ে, তোমার ওই এলোমেলো কেশ গোল আমার বুকে আছরে পরবে। আমি সযত্নে সেগুলো তুমার কানের পিঠে গুযে দিব। তুমার ওই টানা চোখে কাজল একে দিব নিজ হাতে। তোমার মনে কষ্ট হলে তোমার চোখ এর কাজল নষ্ট হওয়ার আগেই সেই কষ্ট মুছে দিবার কতো শখ ছিলো আমার জানো পূর্ণা?

আমি কেন তোমায় বলতে পারিনি আমার মনের কথা? সেদিন যদি আমি তুমায় বলে দিতাম আমি তুমায় ভালোবেসে ফেলেছি এলোকেশি। তাহলে হয়তো তুমার পড়া-লেখা খারাপ হতো, তবে আমার এলোকেশির গায়ে কলঙ্ক লাগতো না। আমি কোন কলঙ্ক লাগতেই দিতাম না। তুমি তো আমার নিজেস্ব চাঁদ ছিলে পূর্ণা। সে চাঁদের কলঙ্ক যে আমি সয্য করতে পারছিনা। তুমি আমার কাছে এখোন নিশপাপ চাঁদ পূর্ণা। তুমি এখনো আমার অবুঝ এলোকেশি। ওই ছেলেটাকে যদি তুমি আঘাত করেও থাকো, এমনি এমনি তো করোনি। নিশ্চয়ই ওই ছেলেটা আমার পূর্ণাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। তা -না-হলে আমার পূর্ণা কাওকে আঘাত করতোই না। আর কেউ না জানুক আমিতো আমার পূর্ণাকে জানি।

আচ্ছা পূর্ণা ! আমি যদি তোমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে ভালোবাসা ভিক্ষা চাই তোমার কাছে,দেবে আমায় তোমার ভালোবাসা আমায়?আমার সপ্নের এলোকেশির মতো আমার দুহাতে আগলে নিবে? আমার বুকের মাঝে লেপ্টে যাবে ? জোছনা রাতের চাঁদের আলো যেমন মাটিতে পরার সাথে সাথে মাটিতে লেপ্টে যায় ঠিক সেভাবে আমার বুকে লেপ্টে যাবেতো এলোকেশি?আমি যে বড্ড ভালোবাসি তুমাকে। দেখছো পূর্ণা? তালহা ভালোবাসি কিথাটা উচ্চারণ করতে করতে হেলান দেওয়া অবস্থাতেই মাটিতে বসে পরে। চোখ দুটো লালা হয়ে আছে এক-দু ফোট চোখের জল চিক চিক করছে চোখের কোনে। ছেলেদের সহজে কাদতে মানা। তাই হয়তো মন খুলে কাদতে পারেনি আজ তালহা। নিজেকে সামলানোর জন্য সুধু এই আকাশ পনে নিজের না পাওয়া ভালোবাসার অভিযোগ ছুড়েদিলো হয়তো।

তালহার ফোন বাইব্রেট করে রেখেছে, মাত্রই লক্ষ করলো। পকেটে থেকে ফোন বের করতেই, ফোন এর স্কিরিনে ভেসে উঠে সাইফ কাকাই সেভ করা নাম্বারটি। তালহা নিজেকে সাভাবিক করে নিয়ে ফোন রিসিপ করে, সালাম দেয়। ফোনের ওপাশ থেকে পূর্ণার বাবাও সালাম এর জবাব দেয়। অন্তঃপর জিজ্ঞেস করেন তিনি, বাবা আমার মেয়ের জামিন এর কি খবর। তালহা একটা সুস্খ ঢুক গিলে বলে চিন্তা করবেন না কাকাই। আজকেই পূর্ণার জামিন হয়ে যাবে৷ কাকাই আমি চাইছি পূর্ণা আমাদের বাসায় থাকুক। অন্তত যত দিন কেস টা চলবে তত দিন। ছেলেটার পরিবার এসে পূর্ণার নামে কেস করে গেছেন তাই পূর্ণার কেসটা কোটে উঠবেই। তবে কাকাই চিন্তা করোনা পূর্ণার কিছু হতে দিব না আমি। ওপাশ থেকে লোকটা কান্না ভেজা গলায় বলেন বাবা আমার শান্ত সিশ্ট মেয়েটার এই কি দূরদশা হলো? বাবা হয়ে আমি কিছুই করতে পারছি না। কাকাই প্লিজ শান্ত হোন আপনি। আমি কথা দিচ্ছিতো আপনার মেয়ে আপ্নার কাছে ফিরে যাবে। কিচ্ছু হবে না পূর্ণার। আচ্ছা বাবা! জামিন হলে আমার সাথে পূর্ণার একবার কথা বলিয়ে দিও। আচ্ছা কাকাই রাখছি।আপনি চিন্তা করবেন না। আমি কথা বলিয়ে দিবো পূর্ণার সাথে। তালহা ফোনটা কটে পকেটে রাখে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। তবে এবার গন্তব্যহীন নয়, এবার বেরেস্টার অর্নব এর বাসার উদ্দেশ্যে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালায়।

দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর পর নির্জন পথ অতিক্রম করে গাড়ি প্রবেশ করে চেনা শহরের গন্ডিতে৷ শুরু হয় সেই পরিচিত যানযট এর পথ। এখন এইটা পারি দেওয়ার অপেক্ষা।গাড়ি চাকা ৫ মিনিট চলছে তো ২০ মিনিট যেমে আটকেই পরে থাকতে হচ্ছে। এভাবেই এই যান যট পারি দিলো প্রায় দুই ঘন্টায়। যেখানে রাস্তা ছিলো মাত্র ত্রিশ মিনিট এর। মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টর এ ৫নং গলিতে বেরেস্টার অর্নব এর বাসার সামনে গাড়ি পার্কিং করলেন এস আই তালহা এহসান তুহিন। লিফ্ট এর মাধ্যমে বাসার ৬ষ্ঠ ফ্লোরে চলে এলেন তিনি। এই ফ্লোরেই থাকেন বেরেস্টার অর্নব। ক্রলিং বেল বাজাতেই এক বৃদ্ধা দরজা খুলে দিলেন৷ ইনি এই বাসার রান্না বান্না করে দেয়। ড্রয়িং রুবে বসে আছেন অর্নব। তালহা কে দেখেই তিনি উচ্চ সরে বলেন, আরে! কি ব্যাপার এস আয় দেখি উকিল এর বাসায়। তা স্যার আপনি কি এতো রাতে আমায় হাত করা পরাতে আসলেন নাকি? অর্নব! সব সময় ইয়ারকি করিস না, প্লিজ। আরে, এস আই সাব বেশ সিরিয়াস মোডে আছেন দেখছি। আচ্ছা আর মজা করলাম না। এবার বল দেখি কি হয়েছে। এই এক মিনিট! তালহা, তোর চোখ, মুখ এইরকম কেন?

বস এর কাছে বকা খেয়েছিস নাকি?(মশকরা ভংগিমাতে বলে)।।। তালহা রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। দাতে দাত চেপে বলে সব সময় বাজে বকার সভাব তোর গেলো না তাই না? অর্নব প্লিজ স্টপ ইউর ফান। আমার তোর একটা হেল্প লাগবে। করতে পারলে বল করবি আর তা হলে আমি অন্য উকিল এ রকাছে চলে যাবে। তবু তোর এই বাজে বক বক শুনতে আমি রাজি নই। আচ্ছা ভাই সরি, তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেন। আচ্ছা আর কিচ্ছু বলছিনা আমি, শান্ত হয়ে বসে বল কি হয়েছে? অর্নব একটা জামিন করাতে হবে। আরে এই ব্যাপার। এইটার জন্য তুই এতো তেতে যাচ্ছিলি। আচ্ছা যা কালকে নাহয় করিয়ে দিবো। কোন কেসে নিশ্চয়ই থ্রেড খেয়েছিস (উচ্চস্বরে বলে অর্নব)।

অর্নব জাস্ট সেট ইউর মাউথ। পুর কথা না শুনেই এভাবে লাফাচ্ছিস কেন? যা বলছি আগে ভালো করে শুন। অর্নব থ খেয়ে যায়। ছেলেটা রাগি অর্নব জানে, তবে আজ তালহাকে একটু বেশিই রাগ দেখাচ্ছে। অর্নব আর কিছু বলে না শান্ত হয়ে এবার মন দেয় তালহার কথায়। অর্নব জামিনটা আজকেই করাতে হবে। একটা এটেম টু মাডার কেস এর অভিযুক্ত কে ছাড়াতে হবে। যার খুনের চেষ্টার কেস লেখানো আছে সে এখনো জীবিতই আছে, তবে জ্ঞ্যান ফিরেনি এখোনো। আই সি ইউ তে ভর্তি আছে। এখন কি জামিন করাতে পারবি তুই?হ্যাঁ! পারবো! কিন্তু, তুই একজন আসামী কে কেন জামিন করাতে চাইছিস? অর্নব এর বাচ্চা ও আসামি নয় আ'ম সিউর পূর্ণা ফেসে গেছে। ও কাউকে আঘাত করতে পারে না আ'ম সিউর। অর্নব,এখোনি চোল। রেডি হয়ে নে তুই। দাঁড়া ভাই আমাকে জানতে তো দে তুই কেন এই মেয়েকে ছাড়ানোর জন্য পাগল হয়ে পরেছিস? আমি তোকে যেতে যেতে সব বলছি। তুই আগে রেডি হয়ে আয়, প্লিজ যা। ওকে। তুই ওয়েট কর, আমি ৫ মিনিটে আসছি।

অর্নব রেডি হয়ে চলে আসে। এবার দুই বন্ধু মিলে বেরিয়ে পরে থানার উদ্দেশ্যে। দুজনেই গাড়িতে বসে পরে। অর্নব কাউকে কল দিয়ে কিছু কাগজ রেডি করতে বলে ইমারজেন্সি এবং সেগুলো কোথায় নিয়ে আস্তে হবে তা ই - মেইল করে দেয়। এবার তালহাকে প্রশ্ন করে কিরে এবার বল মেয়েটা কে? তালহাত ছোট জবাব "পূর্ণা"! পূর্ণা বুঝলাম তবে কোন পূর্ণা? কিসের পূর............! এক সেকেন্ডে এই কি তোর সেই পূর্ণা? আবারো তালহার ছোট জবাব "হুম"! কি বলছিস এসব? সে জেলে কেন?কি করে কি আমাকে সবটা বল। অর্নব আমি নিজেও কিছু জানিনা। জানার জন্যই জামিন চাই। তবে আমি সিওর পূর্ণা এসব করেনি। মানে কি ভাই? এই বলছিস কিছু জানিস না। আবার বলছিস পূর্ণা কিছু করেনি। আমাকে সবটা খুলে বলবি প্লিজ? অর্নব আমার বিশাস্ব পূর্ণা কিছু করতে পারে না। আমি পূর্ণাকে জানি, চিনি, বুঝি। এখন দয়া করে তোর মুখ টা বন্ধ রাখ ভাই প্লিজ। আর তোকে তো জানাতেই হবে। ওর কেস তুই হেন্ডেল করবি, তবে আমি এই মুহূর্তে সত্যি কিছুই জানিনা।
আচ্ছা বুঝলাম, থানায় চল। জামিন হয়ে যাবে টেনশন নিস না।

দীর্ঘ ৪০ মিনিটে গাড়ি চালিয়ে যেম অতিক্রম করে থানায় এসে হাজির হয় দুই বন্ধু। একজন জুনিয়র উকিল থানার সামনে কাগজ পাতি নিয়ে দাড়িয়ে আছে আগে থেকেই। অর্নব তাকেই কল করেছিলেন। এবার তিন জন মিলে থানার ভিতরে প্রবেশ করে। তালহার রুমে তিন জন আসে। অর্নব কাগজ গুলি এগিয়ে দিয়ে তালহাকে সাক্ষর করতে বলে তালহা সাক্ষর করে দেয়।পূর্ণতার জামিন হয়ে যায়। অন্তঃপর তালহা কনস্টেবল আবিল কে ডেকে নিজের রুমে নিয়ে আসে। তাকে আদেশ দেওয়া হয় পূর্ণতাকে জেল কাস্টারি থেকে এখানে নিয়ে আসার। আবিল চলে যায় পূর্ণতাকে নিয়ে আসতে।

আবিল পূর্ণতা কাস্টারির সামনে গিয়ে পূর্ণতা কে উদ্দেশ্যে করে ডাকে ম্যাম! পূর্ণতা চমকায় না, তাকায় সেই দিকে। আবিল পূনরায় বলে চলুন, আপনার জামিন হয়ে গেছে। পূর্ণতা অবাক লেচনে চায়, মনে মনে চাবে এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে কি হলো?, আবিল এর সাথে পূর্ণতা পা বারায়।

এদিকে ধুক পুক করতে থাকে তালহার হ্রদপিন্ড। কেমন যেন শাস্ব প্রশাস্ব ভারি হয়ে আসছে। হ্রিদ স্পন্দন এর গতি বেরে যাচ্ছে। বাহির থেকে জেন অর্নব ও শুনতে পারছে সেই শব্দ এইরকম ফিল হিচ্ছে তালহার। কতো বছর পর দেখবে আজ তার এলোকেশিকে। সেই চাঁদ পানা মুখের আদল। সেই ভীতু নয়ন জোড়া, যা তালহার কল্পনাতেও বাস্তব হয়ে উঠতো। মনে হতে ভীতু চোখে তার এলোকেশি সব সময় তাকে দেখছে।।।। স্যার তালহার রুমের দরজার ও পার থেকে পায়ের আওয়াজ ভেসে আসছে।

জানালা দিয়ে হঠাৎ হাওয়ার বেগ বেরেগেছে। আবিল তালহার কাছে অনুমুতি নিয়ে প্রেবেশ করলো রুমে সাথে সাথে পা বাড়ালো তালহার এলোকেশি। তালহা মগ্ন হয়ে দেখে তাকে টেবিল এ বসে থাকা তিন জনেরি চোখ সেদিকে। তবে একজন এর চোখে খেলে যাচ্ছে তৃষনা মেটানোর প্রয়াশ, তার এলোকেশী দেখার তৃষনা। গলাটাও শুকিয়ে কাঠ। এস আই তালহা এহসান তুহিন মিত্র, যার রাগি চেহারা সবাই চিনে। তবে আজ দেখছে, এস আই তালহা এহসান তুহিন মিত্রের অসহায় আঁখিদয়। যে চাহনি বার বার বুঝিয়ে দিচ্ছে সবাইকে, সে যেন এই রমনির কাছে একদম অসহায়। অর্নব তালহার কাধে হাত রাখে তালহার ধ্যান ভাঙে।।

পূর্ণতা চেয়ারে বস্তে আহবান জানায় অর্নব হোসেন। অর্নব এর প্রশ্ন, আপনার নাম পূর্ণতা মিত্র? পূর্ণতা হ্যাঁ বলে। আপনার জামিন হয়েছে, তালহা এহসান তুহিন আপনার কাজিন, আপনার জামিন সম্পন্ন করিয়েছেন। আপনাকে সব সত্যি বলতে হবে। সেই ঘটনা স্থলে কি হয়েছিলো সব কিছু আপনাকে খুলে বলার অনুরুদ রইলো। আমি আসা করছি আপনি বলবেন। পূর্ণতা নিশ্চুপ বসে থাকে। তালহা এখনো তাকিয়ে আছে তার এলোকেশীর দিকে। ঠিক আগে যেভাবে তাকিয়ে থাকতো। তবে তখন দেখতো আরাল থেকে। আজ দেখছে তার এলোকেশীকে সামনে থেকে এ যেন তার জীবন এর সেরা প্রাপ্তি। অর্নব বুঝলো তালহার অবস্থা বোধয়। তালহার কাধে আবারও হাত রেখে বলে তালহা আসছি আমরা। তুই পূর্ণাকে নিয়ে বাড়ি যা। অনেক রাত হয়েগেছে। কালকে ঠিক সময় চলে যাবো আমি। তালহা তাকায় অর্নব এর দিকে, থ্যাংকস অর্নব! সাবধানে যা। আমিও চলে যাচ্ছি। অর্নবরা বেরিয়ে যায়।

পূর্ণতার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তালহা মায়া ভরা সুরে বলে, চলো। পূর্ণতা এতক্ষন টেবিল এর দিকে তাকিয়ে ছিলো। এখন মাথা উঁচু করে তাকায় তালহার দিকে। পূর্ণার এই চাহনি তালহার বুকে তীর এর ন্যায় বিধে যায়। চোখ এর দিকে তাকানো যাচ্ছেনা তার এলোকেশির। অনেক কেদেছে পূর্ণা। চোখ দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। পূর্ণার প্রশ্ন "বাবা আসেনি?" কাকাই এত রাতে কিভাবে আসবে? তুমি চলো আমার সাথে। কোথায় যাব? সারারাত থানায় রাখার জন্য এতো তোরজোর করে নিশ্চয়ই জামিন এর ব্যবস্থা করিনি। চলো আমার সাথে। পূর্ণা আর কথা বারায় না, কথা বারানোর মতো মন মস্তিষ্ক কাজই করছেনা, বিশ্রাম প্রোয়োজন, শরীরটা ক্লান্ত খুব। তাই উঠে দাঁড়ায় তালহার সাথে যাওয়ার জন্য।

চলবে...................
[আমি লেখার জগতে একদম নতুন। ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা পড়ে থাকেল একটা গঠন মূলক কমেন্ট করবেন অনুগ্রহ করে ]

 #প্রেমশ্রু।  #সাদিয়া_আক্তার_শিথীলা।  পূর্ণতা! আমার পূর্ণতা। যাকে আমি আমার ভেবে বেচে রইলাম সে আমার না? কি আশ্চর্য! কেন এ...
16/07/2025

#প্রেমশ্রু।
#সাদিয়া_আক্তার_শিথীলা।

পূর্ণতা! আমার পূর্ণতা। যাকে আমি আমার ভেবে বেচে রইলাম সে আমার না? কি আশ্চর্য! কেন এরকম হলো? পূর্ণতা, আমার এলোকেশী সে কেন অন্য কারো হলো? কেন আমাকে তার চোখে পরলো না?কি কমতি ছিলো আমার মাঝে? কেন এরকম হয়? যে যাকে ভালো বাসে সে তাকে কেন পায় না? আমি তো সব মেনে নিয়েছিলাম তবুও কেন তুমি আমার হলো না? কেন সৃষ্টি কর্তা তাকে বার বার আমার কাছে এনেও, আমার হতে দিলো না তাকে? আমার ভালোবাসায় তো কোন প্রকার খাত ছিলো না, কোন খারাপ উদ্দেশ্যও ছিলো না। তবুও কেন আমি তাকে পেলাম না? তার ভালোবাসা পেলাম না কেন? কেন এরকম হলো পূর্ণা? সব আমার ভুল। আমি তুমাকে আমার করার সুঝুক পেয়েছিলাম বহু বার কিন্তু আমি আমার করতে পারি নি তুমায় পূর্ণা। আমি যদি একটু সাহস নিয়ে জোড় খাটিয়ে তুমায় আমার করে নিতাম। তাহলে তুমাকে এতো কষ্ট সয্য করতে হতো না। আর না তো আজকের এই দিনটা আমাদের জীবনে আসতো।

সুপালম্যান ! তুমি কাদছো কেন? আদো আদো শুরে প্রশ্ন করতে করতে ধারাণ তার ছুট্ট কোমল হাত জোড়া রাখে তালহার দু গালে। তালহা চোখ থেকে বেয়ে পরা পানির ফোট মুছে নেয় হাতের উল্টো পিঠ ধারা। তারপর ধারণ কে কুলে নিয়ে প্রশ্ন করে তুমি এখানে আসলে কিভাবে? ড্রাইভাল আংকেল এর সাথে এসেছি। আংকেল আমায় নিয়ে আসতে চাইছিলো না, আমি যোল কলে নিয়ে এসেছি। তালপল আমায় গালি থেকেও নামতে দিচ্ছিলো না। তালপল আমি বলেছি আমি আইস্কলিম খাবো। তারপর আংকেল আইস্কলিম কিনতে গেলে আমি লুকিয়ে চলে এসেছি এখানে। তারপর ওই দাদু টাকে জিজ্ঞেস করেছি আমার সুপারম্যান কে দেখেছো দাদু? তারপর সে তুমাল কাছে নিয়ে এসেছে। এসব তো একদম ঠিক করনি ধারাণ। খুব পচা কাজ করেছো তুমি। চলো ড্রাইভার আাংকেল কে এখনি গিয়ে সরি বলবে। আর এরকম দুষ্টুমি কখনো করবে না। ঠিক আছে? তুমার যদি কিছু হয়ে যেতো কেউ যদি নিয়ে যেত? আমার জি হতো ধারা? কোথায় খুজে পেতাম আমি? ওঁকে সুপালম্যান। আল কলবোনা তুমি কেদো না। তালহা বুকে জড়িয়ে নেয় ধারান কে। ধারণও তার নিজ সুপারম্যান এর বুকে মিশে যায়। তক্ষুণি সেই বৃদ্দ লোকটি তালহার কাছে আসে। তুমার ছেলে বুঝি? তালহা ধারাণ এর মুখের পনে চেয়ে মৃদু হাসে। বৃদ্দ লেকটি বুঝে নেয় বাচ্চাটি তালহার ছেলে। তারপর বলে, বাবা কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি? হ্যাঁ! অবশ্যই বলুন কি বলবেন। বলছিলাম যে বাবা তুমি প্রতিদিন এখানে একবার আসো। আর বছরের এই ১৬ এপ্রিল তারিখ টায় তুমি সারা দিন থাকো এখানে, কেন? না, আসলে এভাবে ক্বু থাকে না এখানে তাই জানতে ইচ্ছে হলো।

তখন তালহার ড্রাইভার সেখানে চলে আসে ধারণ কে খুজতে খুজতে। স্যার ধারাণ আপনার কাছে! আমি ভয় পেয়েগেছিলাম। চিন্তা করোনা রহিত। ও বুঝতে পারেনি। তুমি ধারাণ কে সাবধানে নিয়ে যাও। ধারাণ দুষ্টুমি করবে না একদম। বাসায় তুমার সৌমি আন্টি আর অর্নব আংকেল আছে।তাদের সব কথা শুনে চলবে ঠিক আছে। ধারাণ মন খারাপ করে বলে হুম। তালহা বুঝে তার মনখারাপ হয়েছে। তাই তাকে খুশি করতে বলে। আজকে অনেক চকলেট নিয়ে আসবো রাতে, ঠিক আছে? ওমনি খুশি হয়ে ধারাণ চলে যায় রহিত এর সাথে।

তালহা ওদের যাওয়া দেখে, বৃদ্দাও দেখে, ধারাণ এর নিমিশে মন ভালো করে দু গালে হাসি ফুটিয়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য।
তালহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে । তারপর বৃদ্দাকে নিয়ে বসে গাব গাছের নিচে।

Note : হয়তো লেখা ভালো হয়নি। ভালো করে লেখার চেষ্টা করবো। সবাই সাপোর্ট করবেন। আশা করি। লাইক কমেন্ট করেবেন ভালো লাগলে, গল্প পরে থাকলে। গল্প পোস্ট হবে কালকে থেকে।

 #সিক্ত_নীলাম্বরী #লেখা:  #সাদিয়া_আক্তার_শিথীলা #পর্বঃ৬জানালার পর্দা নড়ছে হালকা বাতাসে।অনুর ঘুম ভাঙতেই চারপাশে চেনা জিনি...
15/07/2025

#সিক্ত_নীলাম্বরী
#লেখা: #সাদিয়া_আক্তার_শিথীলা
#পর্বঃ৬

জানালার পর্দা নড়ছে হালকা বাতাসে।

অনুর ঘুম ভাঙতেই চারপাশে চেনা জিনিসগুলো দেখে একটা মুহূর্তের জন্য যেন অনু বিশ্বাস করে — সবই স্বাভাবিক।
কিন্তু বুকের মাঝে হঠাৎই একটা খালি হাহাকার খেলে যায়।

চোখ পড়ে টেবিলের ওপরে রাখা ওষুধ আর সেই চিরকুটে।

> “ভয় পেও না। কষ্ট হবে, কিন্তু চলে যাবে।
এটা তোমার শেষ ভয় নয়, Grasshopper।”

সে চোখ সরিয়ে নেয়। মাথা নিচু করে বসে থাকে কিছুক্ষণ।

ঠিক তখনই দরজায় কড়া নড়ে।

— “অনু? উঠলি না এখনো? স্কুলে যাবি না?”

মায়ের চেনা কণ্ঠ, চেনা স্বর — স্বাভাবিক, পরিপাটি।

— “হ্যাঁ মা… উঠছি।”

অনুর মা ঘরে ঢুকে।

হাতে গরম দুধ, আর আয়রন করা স্কুল ড্রেস। মুখে স্নিগ্ধ হাসি।

— “তোর শরীর খারাপ না তো? চোখ লাল লাগছে।”

— “ঘুম ঠিকমতো হয়নি আম্মু।”
অনু নিচু গলায় বলে।

অনুর মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আর আদেশ সরুপ বলেন — “চট করে তৈরি হয়ে যা, এসএসসি একদম সামনে। আজ তো ফিজিক্স টেস্টও আছে।”

অনু কিছু বলে না। শুধু মাথা নাড়ে।
অনুর মা বুঝতেও পারে না, তার মেয়ের হঠাৎ কি হলো? অনুতো রোজ ঘুম থেকে উঠে ভর সকালে, নামাজ পড়ে চলে যায় তার ছাদে। আপন করে নিজ হাতে গড়া তাদের ছাদের নিজের ছোট্ট ছাদ বাগানে।
অনু ছোট থেকেই ফুল ভালোবাসে বাগানে নানারকম গাছ থাকলেও অনু বাড়ির ছাদের এক পাশে সুধু লাল গোলাপ লাগিয়েছে। অনুর খুব পছন্দ লাল গোলাপ।

আজকে অনুকে দেখে তার মায়ের মনে হচ্ছে তার নেয়ে অনু জেন কোন এক ঘোরের মাঝে আছে। প্রানচঞ্চল অনুর মুখের আদল খানা আজ খুব ফেকাশে লাগছ। চিন্তিত লাগছে, অনুত ১৭ বছর বয়েসে এতোদিনে অনুর মা রুবিনা শেখ তার মেয়ে অনুর এমন মুখের আদল যেন দেখেনি।

সে চিন্তিত সুরে বলেন, অনু তোর কি অসুস্থ লাগছে? রুবিনা সেখ অনুর কপাল, গলায় হাত রেখে বলেন দেখি জর এলোকিনা? অনু মলিন হেসে রুবিনা শেখ কে জড়িয়ে ধরে বলেন না মা আমার কিচ্ছু হয়নি। সামনে এক্সাম তো তাই একটু পরছিলাম।

রুবিনা শেখ, অনুর কথায় আশ্চর্য না হয়ে পারলেন না। অবাক এর সুরে বলেন তুই রাত জেগে পড়েছিস? যাকে পড়তে বসাতে যুদ্ধ করতে হয়। সে নিজে থেকেই আজ পড়তে বসেছে তাও কিনা রাত জেগে। আমার মেয়ের দেখি বেশ উন্নতি হিয়েছে ভাই এর সাথে ঘুরতে বেড় হয়।শেষ কথা টা অরুনিমা শেখ হাসির ছলে বলেন।

অনু সকালের নাস্তা শেষ করে চলে যায় স্কুলের উদ্দেশ্যে।

আজকে স্কুলে বেশ দেরি হয় পৌছাতে অনুর।

ক্লাসে ঢুকেই অনু পেছনের বেঞ্চে বসে যায়।
সাধারণত সে আগেই আসে, সবাইকে নিয়ে হইচই করে।
রিতু তানিশা, রিমি সবাই অবাক।

রিতু কৌতুহল নিয়ে বলে আমাকে বল কি হয়েছে? তোকে আজ অন্য রকম লাগছ।

অনু একটু উচ্চ সরে চেচ বলে বলছিতো কিছু হিয়নি।
অনুর এমন বপ্রতিক্রিয়া রিতু থমকায়। তবে কিছু মনে করে না। রিতু জানে অনু নিজে থেকেই বলবে৷ অনুর একটু সময় দরকার।
পাশ থেকে অনুর চেচিয়ে কথা বলায় রিমি, তানিশা জিজ্ঞেস করে,
— “অনু, তুই ঠিক আছিস?”

— “হুম।”

— “তোর চোখ মুখ কেমন যেন লাগছে ! কিছু হয়েছে?”

— “না তো। মাথাব্যথা।”

অনুর গলার স্বর কেমন ভেতরে আটকে যাচ্ছে।
চোখে ঝাপসা নেই, কিন্তু সেই স্বাভাবিক দীপ্তিটাও নেই।

সবাই বুঝে ফেলে — কিছু একটা হয়েছে।

কিন্তু কেউ জানে না, ঠিক কী।

তখনি ক্লাসে স্যার আসে, আজকে প্রথম ক্লাস শুরু হয় বাংলা দিয়েই। টিফিন পিরিয়ড পর্যন্ত একটা ক্লাস চলে এর মাঝে আজকে অনু কোন কথা বলে নি। অনুর এমন আচরণের সবচে বেশি অবাক হয়েছে রিতু।
টিফিন টাইম এ সবাই স্কুলের সবুজ ঘাসের মাঠে গিয়ে বসে ।

অনু আজকে যেতে না চাইলেও রিতু তাকে জোড় করে নিয়ে যায়। যদিও রোজ হয় তার উলউল্টো টা। রিতু থাকে বইয়ে মুখ গুজে আর অনু তাকে জোড় করে বাহিরে নিয়ে আসে। এই প্রথম এমিন ব্যতিক্রম হলো তাদের মাঝে।

স্কুলের মাঠের এক কোণায় সবুজ ঘাসে বসে রৌদউজ্জ্বল দিনের সাথে মৃদু বাতাসে গা ভাসিয়ে বসেছিল অনু। তার চোখে একধরনের ক্লান্তি, মুখে বিষণ্ণ প্রশান্তি। চারপাশে সহপাঠীদের কোলাহল, আড্ডা, হাসির ফোয়ারা – এসবের মাঝে অনু ছিল একদম একা, যেন শব্দহীন এক দ্বীপ।

"অনু! দেখ তো আমি কী এনেছি!" রিতু , তার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী, উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে সামনে এসে দাঁড়াল।

"কি এনেছিস?"
অনু ধীর চোখে তাকাল ওর দিকে।

"তোর পছন্দের ফুচকা!
রিতু টকজল ভর্তি গোল গোল ফুচাকার প্লেট তুলে ধরল , অনুর মুখের সামনে। তোর মুড ঠিক করার একমাত্র ঔষধ, নে এবার এক নিমিশে খেয়ে মনটা ভালো করে ফেলতো। আর তারপর আমাকে সব কিছু খুলে বল।

অনু এক মুহূর্ত চুপ করে রইল। তারপর ধীরে হাত বাড়িয়ে একটা ফুচকা নিলো। মুখের কাছে তুলতেই হঠাৎ কেমন যেন কেঁপে উঠল তার আঙুল। ফুচকার গন্ধটা আজ ভিন্ন... আজকের গন্ধে যেন লুকানো আছে একটা অজানা ভয়।

অনু, কাপা কাপা কন্ঠে বলে,

"এই ফুচকায়... এটা রক্তের গন্ধ!"
কণ্ঠটা গলেই থেমে গেল অনুর। ঠোঁট কাঁপছে।

আঁতকে উঠল, "কি বলিস! রক্ত? পাগল হইছিস? এইটা তো নতুন দোকানের...!"

অনু হঠাৎ কৌটাটা হাত থেকে ফেলে দেয়, মাটিতে গড়িয়ে পড়ে কয়েকটা ফুচকা — যেন রক্তের বিন্দু ছড়িয়ে পড়েছে সবুজ ঘাসের গায়ে।

---

স্কুলের ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিল মাহাতিম শ্রাবণ শিকদার। ধূসর চোখে সে তাকিয়ে ছিল নিচের সেই দৃশ্যের দিকে — যেখানে অনুর নিষ্পাপ মুখে এক ভয় আর বিতৃষ্ণার ঝলক খেলে যাচ্ছে।

ছাদে হালকা বাতাস বইছিল। বাতাসে শ্রাবণের পেছনের সাদা কোটটা উড়ছিল মৃদু ছন্দে — ঠিক যেন কোনো অপার্থিব কিছুর আগমন বার্তা।

তার ঠোঁটের কোণে খেলে গেল এক নিঃশব্দ, নির্মম হাসি।

"তোমার মুখে রক্তের স্বাদ কেমন লাগে, Grasshopper ?"

নিজের ভেতরে বলল সে।
সে জানে, অনু এখনো বুঝতে পারেনি — এটা কোনো কাকতাল নয়, এটা এক পরিকল্পিত খেলা।

ছাদে হালকা বাতাস বইছিল। বাতাসে শ্রাবণের পেছনের সাদা কোটটা উড়ছিল মৃদু ছন্দে — ঠিক যেন কোনো অপার্থিব কিছুর আগমন বার্তা।

অনু আর ক্লাস করেনা সেখান থেকেই সুঝা বেরিয়ে যায় স্কুল ব্যাগ নিয়ে রিতু হা করে দাড়িয়ে থাকে সেখানে। অনু বাড়ি চলে আসে তাদের বাড়ির গাড়ি নিয়েই ।

অনু বাড়ি ফিরে, নিজের রুমে গিয়ে বেশ সময় নিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বারান্দা থেকে মাহিম কে বাসায় আস্তেদএখে অনু বেশ কিচুক্ষণ পর ধীরে ধীরে পা ফেলে মাহিমের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়।

দরজায় হালকা টোকা দেয়।

— “ভাইয়া?”

— “আয়।”

রুমে ঢুকেই অনু বলে—

— “তুমি জানো না ভাইয়া কাল রাতে আমার সাথে কী হয়েছিল?”

মাহিম মোবাইল দেখছিলো, হঠাৎ অনুর এমন প্রশ্নে মাহিম একটু চমকায় কিন্তু তা বুঝতে দেয়না অনুকে। অনুর কথায় মাহিম মোবাইল একপাশে রেখে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে অনুর মুখের দিকে,
তারপর অনুকে জিজ্ঞেস করে,

— “তুই কিছু মনে করতে পারছিস কালকে কি হয়েছে ?”

অনু মাথা নাড়ে।

— “ছায়ার মতো কিছু মনে আছে।

মাহিম একটু সময় নিয়ে বলে—

— “একজন অচেনা লোক ফোন করে বলে—এক লক্ষ টাকা নিয়ে তার কাছে যেতে সে একটা ঠিকা দেয়, আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি তারপর বাসায় এসে তোকে না পেয়ে, সে লোকপর দেওয়া ঠিকানায় টাকা নিয়ে আমি পৌছাই।।

আমি গিয়ে দেখি তুই রাস্তার মাঝে পড়ে ছিলি… নিস্তেজ হয়ে। তোর পাশে লম্বা চৌরা একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ছিলো,

সে আমাকে তোকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি তোকে নিয়ে চলে এসেছি।
অনুর ঠোঁট শুকিয়ে যায়।

— “বাবা-মা জানে কিছু?”

— “না। তখন তারা বাসায় ছিল না। তোকে বলেছিলাম না শাপলা আন্টিদের বাড়িতে গিয়েছিল উনারা। আমি আর কিছু জানাই নি তাদের।
আমি বললে ভয় তারা ভয় পেতো। তুইও বলিস না কিছু ।” আমি দেখছি কে করেছে। এসব লোক টাকার জন্যই এসব করে।
ভয় পাস না তুই।
ভাইয়া তুমি জানো তারা আমাকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিলো।
মাহিম কিছু বলে না, সুধু বলে যা হিয়েছে ভুলে যা। ভয় পাবিনা। আমি আছিতো। আমি থাকতে আমার বোন এর গায়ে কোন আঘাত আসতে দিবো না আমি।

অনু চুপ করে থাকে। এক মুহূর্তের জন্য ঘরের সব শব্দ থেমে যায়।

— “কিন্তু ভাইয়া… আমি ভয় পাই। আবার মনে হয়… আমি যেন কারও খুঁজে থাকার মধ্যে আছি। কেউ আমাকে নিজরে রাখছে। প্রায় দুই, তিন বিছর আগেও আমার এইরকম লাগছিলো।

মাহিম থেমে যায়।

অনু

দরজার দিকে পা বাড়িয়ে হঠাৎ থেমে যায়।

— “ভাইয়া?”

— “হুম?”

— “‘Grasshopper’—এই নামটা তুমি কখনও শুনেছো?”

মাহিমের চোখ এক সেকেন্ডের জন্য কুঁচকে ওঠে।
হুম ফরিং তো কমন শব্দ কেন শুনবো না?

— “কিছু না…”

সে হেঁটে চলে যায়।

আর মাহিম কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে।

তার দৃষ্টি যেন ঘরে নেই। কোথাও, দূরে… অজানা এক ছায়ার পেছনে।

---

চলবে…

Address

Mymensingh

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sadiya Akter Sh*thila-সাদিয়া আক্তার শিথীলা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share