26/10/2025
:_মায়া
( ভাবতে ভাবতেই দিশহান গাড়ি থেকে নেমে চুড়ির দোকান টার সামনে গিয়ে দাড়ালো। )
তারপর নিজের পছন্দ মত বিভিন্ন রং এর চুড়ি কিনলো মায়ার জন্য দিশহান।
দোকানদার: স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করি। ( দিশহান কে উদ্দেশ্য করে বলল)
দিশহান: হুম বলো।
দোকানদার: স্যার এত গুলা চুড়ি কি আপনার বৌ এর জন্য? ম্যাডামের সাথে মনে হয় আপনার রাগারাগি হইছে। তাই চুড়ি দিয়ে রাগ ভাংজ্ঞাবেন তাই না???
দিশহান: বৌ কথা টা শুনেই দিশহানের এক অদ্ভুত অনূভুতি হলো মায়ার জন্য। তাও দোকানদার কে রেগে গিয়ে বলল।
-- That's none of your business !
দোকানদার: ভয় পেয়ে বলল।
"Sorry sir"!
--চুড়িগুলো হাতে নিয়ে দিশহানের মায়ার হাসি মাখা মুখটা মনে পড়লো। যদিও মায়া দিশহানের সামনে কখনোই তেমন হাসে না। কিন্তু অন্যদের সাথে যখন মায়া খিলখিল করে হাসতে থাকে দিশহান তা অপলক ভাবে তাকিয়ে দেখে। আজ নিশ্চই চুড়ি গুলো পেয়ে মায়া অনেক খুশি হবে। কথা টা ভেবেই দিশহানের মুখেও এক চিলটে হাসি ফুটে উঠলো। এদিকে আবার দোকানদারের মায়াকে দিশহানের বৌ ভাবা। এটা মনে পড়তেই এক অদ্ভুত ভালোলাগা তৈরি হচ্ছে দিশহানের মায়ার জন্য।
-- দিশহান গাড়িতে উঠে আবার গাড়ি ড্রাইব করতে লাগলো বাড়ির উদ্দেশ্য।
বাড়িতে পা রেখেই দিশহান এর চোখ মায়াকে খুজছে।এই সময় তো মায়া ডয়িং রুমে থাকে। কিন্তু আজ নেই কেন?তার মানে মায়ার জর কি এখনো কমে নি সেইজন্যই কি মায়া নিচে নামেনি। ভাবতেই ভাবতেই দিশহান উপরে মায়ার রুমে গেলো।
-- উপরেও তো মায়া নেই। গেলো কোথায় মেয়েটা? ( দিশহান ভাবছে)
দিশহান: মা, মা!
দিশহানের মা: আরে দিশহান তুই কখন এলি বাবা ??
দিশহান: এইতো এখনি এলাম। মা, মায়া কোথায়? ওর কি জর এখনো কমেনি?তুমি ডাক্তার আংকেল কে ফোন দিয়ে ওকে দেখে যেতে বলনি? মায়া নিছেও নেই ওর ঘরেও নেই গেলো কোথায় জর নিয়ে মেয়েটা?
দিশহানের মা: আরে বাবা এত প্রশ্ন এক সাথে করলে উত্তর দিবো কিভাবে। মায়া তুলির সাথে বাইরে গেছে।
দিশহান: What! মায়া জ্বর নিয়ে বাইরে কেন গেছে? আর তুমি বা কেন যেতে দিলে। ( রাগী গলায়)
দিশহানের মা: আমিতো বারন করেছি। কিন্তু তুলি জোর করে নিয়ে গেলো।বলল বাইরে থেকে ঘুরে আসলে মায়ার মনটা একটু ভাল লাগবে তাই।
দিশহান মায়ার মন ভালো হবে শুনে বলল।
-- হুম ঠিক আছে। আমি উপরে যাচ্ছি আমার কফি পাঠিয়ে দাও।
দিশহানের মা: আচ্ছা তুই যা ফ্রেস হো আমি কফি পাঠাচ্ছি।
দিশহান: মা! বাবা কোথায়? দেখছি না যে।
দিশহানের মা: তোর বাবা নামায পড়তে মসজিদে গেছে।
দিশহান: ও আচ্ছা। বলেই উপরে চলে গেলো।
দিশহান উপরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে কফিতে চুমুক দিতেই হাতের ওয়াচ এর দিকে নজর পড়লো। সন্ধ্যা ৬ টা বাজলো। তুলি আর মায়াতো এখনো আসলো না। তুলিকে একটা ফোন দি বলেই দিশহান তুলি কে ফোন দিল।
তুলি: হ্যা ভাইমনি বলো।
দিশহান: তোরা কোথাই?
দিশহানের প্রশ্নটা শুনেই তুলির পেটে মোছড় দিয়ে উঠলো।
তুলি: কেন ভাইমনি?
দিশহান: আরে আমি সে কখন বাড়িতে এসেছি কিন্তু তোরা বাড়িতে নেই। মা বলল তোরা নাকি বাইরে গেছছ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই ফোন দিলাম। কোথাই আছিস জানার জন্য।
তুলি: এইতো ভাইমনি আমরা প্রায় চলে এসেছি।
দিশহান: ওকে। তাড়াতাড়ি আয় আর গাড়ি নিয়ে গেছিস তো নাকি?
তুলি: না,,,মানে গাড়িতো আনিনি। ( ভয়ে ভয়ে)
দিশহান: What! গাড়ি নিসনি মানে?
তুলি: না মানে আমি আর মায়া আপুনি একটু রিকশা দিয়ে ঘুরছি তাই আর কি গাড়ি আনিনি।
দিশহান: ঘুরাতো গাড়ি দিয়েও ঘুরা যায়। এমনিতে মায়ার শরীর খারাপ তার উপর বাইরে গেলি কেন গাড়ি ছাড়া। তাড়াতাড়ি আয় বাসায় বলেই ফোনটা কেটে দিল দিশহান ( অনেক রেগে গেছে দিশহান)
এদিকে তুলিতো ভয়ে শেষ ভাইমনি তার উপর রেগে গেছে সেই জন্য। ভাইমনি যেমন তাকে ভালবাসে তেমনি শাষনও করে। আর রাগলে তো ভাইমনি আগুন হয়ে যায় সেটা তুলিও খুব ভাল করে জানে।
তুলি: আপুনি চলো তাড়াতাড়ি। আজকে ভাইমনি আমাকে অনেক বকবে।
মায়া: কেন? কি হয়েছে?
তুলি: তোমার শরীর খারাপ তাও আমি তোমাকে নিয়ে বাইরে এসেছি আবার গাড়িও নিয়ে আসিনি সেই জন্য।
মায়া: ধুর বাদ দাও তো কিচ্ছু হবে না। আমি উনাকে বলবো আমি নিজের ইচ্ছেই তোমার সাথে এসেছি। আমার বাড়িতে ভাল লাগতেছে না তাই। আর আমি গাড়ি আনতে বারণ করেছি।
তুলি: প্লিজ আপুনি তুমি ভাইমনি কে একটু বুঝাই বলিও। আমার খুব ভয় করতেছে।
মায়া: কিচ্ছু হবে না। আমি আছিতো নাকি? এখন চলো তাড়াতাড়ি বাড়ি যাই।
-- মায়াতো খুব বড় গলায় তুলিকে বলল কিচ্ছু হবে না। কিন্তু ওর ও মনে মনে খুব ভয় করতেছে। দিশহান জানি আজ আবার কি করবে ওর সাথে।(ভাবতেছে মায়া)
বাড়িতে পৌছাতে মায়া আর তুলির ৭ টা বেজে গেলো।
বড়মা: কিরে তোদের এই আসার সময় হল।
তুলি: না মানে জেম্মা আমি আর মায়া আপুনি একটু রিকশা নিয়ে ঘুরেছিলাম তাই।
বড়মা: হুম বুজলাম! তোমার ভাইমনি কিন্তু খুব রেগে আছে। এখন যাও উপরে গিয়ে ফ্রেস হও। মায়া তুই ফ্রেস হয়ে দিশহানের ঘরে যাস। দিশহান ডেকে পাঠিয়েছে তোকে।
বড় মার কথাটা শুনেই মায়ার কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। রাক্ষস টা মনে হয় খুব রেগে গেছে আজ। আল্লাহ আজ মনে হয় আমি শেষ! আল্লাহ আপনি আমাকে বাছান প্লিজ প্লিজ। বিড়বিড় করতে করতে মায়া উপরে চলে গেলো।
মায়া উপরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে দিশহানের রুমের সামনে গিয়ে আয়াতুল কুরসি পড়ে নিজের বুকে ফু দিচ্ছে!
মায়া: ভেতরে আসবো?
দিশহান: খুব নরম সুরে বলল।
আয় মায়া তোর অপেক্ষাই করছিলাম।
মায়া: রাক্ষস টা আমার অপেক্ষা করছিল মানে। ও হ্যা বুজতে পারছি আমাকে কথা শুনানোর জন্য আমার অপেক্ষা করছে। কিন্তু রাক্ষস টা এত নরম সুরে কেন কথা বলছে? সবই তো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
দিশহান: কিরে তুই কি বাইরে দাড়িয়ে থাকবি নাকি ভিতরে আসবি? দিশহানের কথা শুনে মায়া ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। মায়া আস্তে আস্তে ভিতরে ডুকলো।
--আ,,,আ,,আপনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন কেন???
দিশহান: শরীর খারাপ নিয়ে বাইরে যাওয়াত কি বেশি দরকার ছিল মায়া?
মায়া: না,,,মানে, আমার বাড়িতে থাকতে ভাল লাগছিল না তাই তুলি আমাকে নিয়ে গেছে। ( ভয়ে ভয়ে বলল)
দিশহান: দিব্যি বুজতে পারছে মায়া ভয় পাচ্ছে। দিশহান মায়ার কাছে গিয়ে বলল। বাড়িতে ভাল লাগছিলো না তুইতো আমাকেও বলতে পারতি। আমি তোকে নিয়ে বাইরে যেতাম।
-- মায়াতো পুরাই অভাব! রাক্ষস টা কি বলতেছে এসব। আমাকে নিয়ে উনি বাইরে যাবে। আমি সপ্ন দেখতিছি নাতো। নাকি ভূত দেখতিছি আমি।
মায়া: আ,,, আপনি কি সত্যিই দিশহান চৌধুরী?? নাকি অন্য কেও??
দিশহান: একটু ভ্রু কুচকে।
কেন কি হয়েছে????
মায়া: না,,,না মানে আপনি।
দিশহান: আমি কি মায়া???
মায়া: আপনি আমার সাথে এত ভালভাবে কথা বলতেছেন তো তাই আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। আচ্ছা আমি কি সত্যিই দেখতেছি নাকি এটা কোন স্বপ্ন? প্লিজ আমাকে একটা চিমটি কাটবেন আপনি।
দিশহান মায়ার কথা শুনে হো হো করে হাসতে লাগলো। আর বলল।
-- কেন আমি বুজি তোর সাথে ভালভাবে কথা বললে তোর ভাল লাগে না??
মায়াতো রিতিমত পুরো টাশকি খেয়ে যাচ্ছে। ডান হাতের বৃদ্ধা আংজ্ঞুলের নক কামড়াচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে মায়া।
-- রাক্ষস টার হল কি আজ? আমার সাথে এতো ভালভাবে কথা বলছে আবার হাসছেও।
দিশহান: কিরে মায়া মনে মনে কি এত ভাবছিস তুই?? আর এত অভাকই বা হচ্ছিস কেন?? দেখ অভাক হওয়ার কিছু নাই। আমি দিশহান আর তুই কোন স্বপ্নও দেখছিস না। তোকে কিছু কথা বলার ছিল আমার।
মায়া মাথা নিচু করে বলল।
-- জ্বি বলুন!
দিশহান: accually না মানে... কালকের ঘঠনার জন্য আমি....আমি.. কালকের ঘটনার জন্য আমি....আমি....!
মায়া: কি আপনি বলুন?
কালকের ঘটনার জন্য আপনি কি?
দিশহান মনে মনে বলছে।
-- ধুর সামান্য একটা সরি বলতে আমি এত তোতলাচ্ছি কেন? আর কেনই বা মায়াকে সরি বলতে পারছি না আমি? কামন দিশহান তুমি পারবে। তোমাকে পারতেই হবে। তুমি এমনিতেও মায়াকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছো। এখন তোমাকে মায়াকে সরি বলতে হবেই।
মায়া: কি হল? কি এত ভাবছেন আপনি?? কি বলবেন আমাকে বলেন।
দিশহান: না মানে.. আসলে কালকের ঘটনার জন্য আমি....আমি....আমি সরি। কথাটা বলেই দিশহান জোরে একটা নিশ্বাস নিলো।এদিকে মায়াতো পুরো socked! দিশহান তাকে সরি বলতেছে দিশহান? মায়া যে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি দিশহান তাকে সরি বলবে! ইনফ্যাক্ট মায়ার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। যে দিশহান তাকে সরি বলেছে। সাতপাঁচ না ভেবে এবার মায়া দিশহানকে বলেই পেললো।
-- প্লিজ আপনার দোহাই লাগে আপনি আমাকে একটা চিমটি কাটেন। আমার মনে হয় আমি স্বপ্ন দেখতেছি!
দিশহান একটু মুচকি হেসে! ধীর পায়ে মায়ার দিকে এগোতে লাগলো। দিশহানকে এগিয়ে আসতে দেখে মায়া পিছোচ্ছে।দিশহান মায়ার একদমকাছে এসে মায়ার কানে কানে বলতে লাগলো।
-- রাক্ষস রুপ টা কি আবার দেখাবো তাহলে মনে হয় তোর বিশ্বাস হবে।
তারপর নিজ হাতে মায়ার খোঁপা বাধা চুল গুলো খুলে দিল দিশহান আর বলল।
-- মায়া শুন! চুল গুলো খোপা করে কেন রাখিস তুই?? খুলে রাখলেইতো পারিস।খোলা চুলে তোকে বেশ ভালই দেখায়। একসময় দিশহান মায়ার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে মায়াকে বিছানার উপর বসালো।
কি হচ্ছে এসব মায়ার সাথে সবই মায়ার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।দিশহান নিজের আলমারি থেকে মায়ার জন্য আনা চুড়ির প্যাকেট টা বের করে মায়ার হাতে দিলো ।
মায়া: এটা কি??
কি আছে এতে?? আর আমাকেই বা কেন দিচ্ছেন এটা? ?
দিশহান: তুই নিজেই খুলে দেখ কি আছে এতে। আর এটা আমি তোর জন্য এনেছি তো কাকে দিবো?
কথা কম বলে প্যাকেট টা খুলে দেখ।
মায়া প্যাকেট টা খুলে দেখে রং বে রং এর কাচের রেশমি চুড়ি।
-- ওয়াও রেশমি চুড়ি!
বলেই খিলখিল করে হেসে দিলো মায়া আর দিশহান মুগ্ধ নয়নে মায়ার হাসি দেখছে।দেখবে নাই বা কেন? হাসলে যে মায়াকে বড্ড মায়াবতী লাগে। মায়ার এই হাসির কারনেই মায়ার মায়া নামটা সার্থক।মায়ার এই হাসিতে যে কোন লোকই মায়ার মায়াতে পড়ে যাবে।দিশহানও যে আস্তে আস্তে মায়ার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে।
দিশহা: চুড়িগুলা পছন্দ হয়েছে আপনার প্রিন্সেস?
দিশহানের মুখে প্রিন্সেস নামটা শুনে মায়ার চোখে ঝলঝল করে পানি চলে এলো।কারন মা বাবা মারা যাওয়ার পর প্রথম কেউ মায়াকে এত যত্ন করে প্রিন্সেস বলে ডাকতেছে। কি ঘটতেছে এসব মায়ার সাথে। যে মানুষটা সব সময় মায়াকে এত কষ্ট দিতো এত কথা শুনাতো সেই মানুষটাই আজ মায়াকে এত কেয়ার করছে। প্রিন্সেস বলে ডাকছে। কথা গুলো ভেবেই
কেঁদেই ফেললো মায়া।
দিশহান: এই মায়া কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন??
সরি মায়া আমি মনে হয় তোকে আবারো কষ্ট দিয়ে পেল্লাম।
প্লিজ তুই কাঁদিস না!
মায়া আর কোন কথা না বলে দিশহান কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। হঠাৎ,করে মায়া দিশহানকে এভাবে জড়িয়ে ধরাতে দিশহান প্রথমে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে লাগলেও পরে আবার ঠিক হয়ে দাড়ায়। দিশহানের হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে মায়া ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরাতে।
অন্যদিকে অঝোরে কাঁদছে মায়া। দিশহানও আজ মায়াকে থামাচ্ছে না। কাঁদুক, আজ মায়া মন ভরে কাঁদুক কেঁদে নিজের মনের ভিতর জমে থাকা কষ্ট গুলো বের করে ফেলুক।
আজকের পর আর কখনো তোকে আমি কাঁদতে দিবো না মায়া। প্রমিস! ( মনে মনে বলছে দিশহান) কিছুক্ষন পর মায়া কান্না থামিয়ে দিশহান কে ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলো।
-- সরি আসলে আমি আপনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে চাইনি। প্লিজ আপনি রাগ করবেন না। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন।আমি আর কখনো এমন ভুল করবো না। আসলে আমার বাবা মা মারা যাওয়ার পর প্রথম আমাকে কেউ প্রিন্সেস বলে ডেকেছে।তাই আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। আমার ভুল হয়ে গেছে।
দিশহান মায়ার কাছে এসে মায়ার চোখের পানি নিজের হাতে মুছিয়ে দিলো।তারপর মায়ার কাদের উপর নিজের দুহাত রেখে বলল।
-- তুই কোন ভুল করিস নি মায়া। আর এত ভয় কেন পাচ্ছিস তুই? এখন থেকে তুই আর আমাকে ভয় পাবিনা। তোর মনের যত কথা, কষ্ট, দুঃখ, রাগ, অভিমান, সব আমার সাথে শেয়ার করবি। আর আমিও এখন থেকে আর তোকে বকা দেবো না তোর উপর রাগও দেখাবো না।
আই প্রমিস।
মায়া দিশহানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে। আজ সে কোন দিশহান চৌধুরী কে দেখছে।এই দিশহান চৌধুরী যে তার চেনা দিশহান চৌধুরী থেকে একে বারে আলাদা।
এই দিশহান চৌধুরী কোন রাক্ষস নয়। নয় কোন ঘোমড়া মুখু। এই দিশহান চৌধুরী যে এক রাজপুত্র।যার কথায় আছে অদ্ভুত এক মায়া অফুরন্ত ভালবাসার ছোয়া।
দিশহান: কি হল কি এতো ভাবছিস তুই মায়া? আমি জানি তুই আমাকে নিয়েই ভাবছিস।আমি কিভাবে এতো বদলে গেলাম এইসবই তো ভাবছিস তাইনা??
মায়া: না,,মানে হ্যা।
দিশহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল!
-- কালকে রাত্রে যদি তোর জ্বর না আসতো আর আমিও তোর ঘরে না যেতাম তাহলে হয়তো আমার কখনো জানাই হত না। যে আমার উপর তোর এত রাগ অভিমান জমে আছে। believe me মায়া আমি ইচ্ছে করে তোকে কষ্ট দিতে বা তোর উপর রাগ দেখাতে চাই না। কিন্তু কেন জানি, না চাইতেও আমি তোর উপর রাগ দেখিয়ে ফেলি। তোকে কষ্ট দিয়ে পেলি। But trust me কালকে যখন তোর হাত কেটে যায় জ্বর আসে তাও আবার আমার জন্য। আমার নিজের উপর খুব রাগ হয়েছিল। আর তুই যখন জ্বরের ঘোরে অই কথা গুলো বলতে লাগলি আমার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিলো।
I promise You মায়া আমি আর কখনো তোর কোন কষ্টের কারন হব না।
মায়াতো পুরো অভাক হয়ে গেছে দিশহানের কথা শুনে। আবার ভয়ও পাচ্ছে কি এমন বলেছে কাল ও দিশহানকে যার জন্য দিশহানের মাঝে এতটা চেঞ্জড।
দিশহান আবার মায়ার কাছে গিয়ে বলতে লাগলো।
-- মায়া আমি হয়তো একটু রাগী, বদমেজাজি! কিন্তু অতটাও খারাপ মানুষ নই আমি। সো এখন থেকে তুইও আমাকে একটু কম ভয় পাস প্লিজ।আর আমার সামনে একটু নরমালি বিহেভ করার চেষ্টা করিস।তোর এই ভয় পাওয়ার কারনেই আমার রাগ তোর উপরে আরো দিগুন হয়ে যায়! এখন নিজের রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নে যা। আর হ্যা কাটা হাতে চুড়ি গুলা পড়তে যাস না আবার। হাতটা ভাল হলে পড়িস কেমন!
মায়া: মাথা নাড়িয়ে ঠিক আছে বলল।তারপর মায়া দিশহানের ঘর থেকে চলে যেতে নিলে দিশহান পিছন থেকে মায়ার হাতটা ধরে পেলে। মায়া ভয় পেয়ে দিশহানের চোখের দিকে তাকায়। এক অদ্ভুত ভাললাগা দেখছে দিশহানের চোখে নিজের জন্য মায়া। যে ভাললাগায় একটু একটু করে মায়া নিজেও হারিয়ে যাচ্ছে।
-- ধুক ধুক..মায়ার হার্টবিট বেড়ে গেছে। মায়া স্পষ্ট আওয়াজ টা শুনতে পারতেছে।
দিশহান: মায়া!
মায়া: হুম!
দিশহান: আমি কি আজ থেকে তোকে প্রিন্সেস বলে ডাকতে পারি।
মায়া নিশ্চুপ হয়ে ভাবছে। এই মানুষ টাকে আমি এত দিন কত খারাপ কথা বলেছি।কত খারাপ ভেবেছি। কিন্তু আজ সেই মানুষটাই আমাকে এতটা!
দিশহান: কি হল মায়া? ডাকতে পারি প্রিন্সেস বলে ???
মায়া: জি পারেন।
"জ্বি পারেন " এই কথাটা শুনেই দিশহানের মুখে একটা রাজ্য জয়ের হাসি ভেসে উঠলো। আলতো করে মায়ার কপোলে একটা চুমু খেলো। সাথে সাথে মায়া চোখ দুটো বন্ধ করে পেললো। মায়া যেনো জমে গেছে দিশহানের স্পর্শে।
দিশহানের এইরকম স্পর্শে মায়া যেন কেঁপে উঠছে। ভয়, ভাল লাগা, সব মিলেমিশে এ এক অজানা অনূভুতি মায়ার জীবনে। যেই অনূভুতির সাথে মায়া আগে কখনো পরিচিত ছিল না।
মায়া দিশহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এক দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।দৌড়ে যাওয়ার সময় মায়ার পা থেকে একটা নুপুর পড়ে গেছে দিশহানের দরজার সামনে।দিশহান তা খেয়াল করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নুপুর টা তুলে নিয়ে পরম যত্নে নিজের আলমারি তে রেখে দিল। নিজের ঘরে গিয়ে ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে ফেললো মায়া। এখনো খুব হাপাচ্ছে মায়া। সারা শরীর কাপছে মায়ার। আজ যে মায়া এক অজানা অনুভূতির সাথে পরিচিত হল। বুকে হাত রেখে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো মায়া।
মায়া ভাবছে দিশহানের কথা। দিশহান ওর কপোলে চুমু খেলো কথাটা ভাবতেই মায়ার খুব লজ্জা লাগছে। মায়া নিজের কপোলে হাত দিয়ে নিজেই হেসে দিলো। এক অন্য রকম ভাললাগা শুরু হল মায়ার দিশহানের প্রতি আবার ভয় ও পাচ্ছে........
না না পাঠকেরা যা ভাবছেন তা নয়.! এই ভয় হচ্ছে মায়া জ্বরের ঘোরে দিশহান কে কি বলেছে সেটার ভয়।
-- আচ্ছা আমি উনাকে উল্টাপাল্টা কিছু বলিনাই তো। হুম বলেছি! না হলে উনি কি করে জানবে উনার উপর আমার অনেক রাগ।ইশ জ্বরের ঘোরে মনে হয় আমিও উনাকে অনেক খারাপ কথা বলেছি। না আমিও উনার কাছে ক্ষমা চাইবো।
কিন্তু....কোন কিন্তু নয় উনি যদি এত রাগী মানুষ হয়ে আমাকে সরি বলতে পারে তাহলে আমিও পারবো।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই মায়া চুড়ির প্যাকেট টাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
10 টার দিকে দিশহান ও বাড়ির সবাই একসাথে ডিনার করতে বসে Without মায়া।
দিশহান: মা!
মায়া খেয়েছে? ও আসলো না যে ডিনারে?
দিশহানের মা: কি জানি তুই খা আমি তুলিকে পাঠাচ্ছি ওকে ডেকে আনতে।
দিশহান: দাড়াও তুলি কে যেতে হবে না। আমি ডেকে আনছি মায়াকে।বলেই দিশহান মায়ার ঘরে গেলো...........!
চলবে....
[ গল্পটা পড়ে আপনাদের কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, কারন আপনাদের মতামতের উপর নির্ভর করছে আমি গল্পটা কত বড় করবো, সময় নিয়ে পড়ার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ)