16/08/2025
১৪৬২ খ্রিস্টাব্দ, বসন্তকাল
বসফরাসের তীরে দাঁড়িয়ে সুলতান মেহমেদ ফাতিহ দূরদৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছেন।
তাঁর মনে ফিরে আসে শৈশবের দিনগুলো—অটোমান প্রাসাদের ভেতর, যেখানে তাঁর সঙ্গী ছিল ভ্লাদ ড্রাকুলা। একই টেবিলে খাবার খাওয়া, একই হাতে তরবারি ধরা—দুজনই ছিলেন প্রাসাদের বন্দি রাজপুত্র, দুই ভিন্ন দেশের সন্তান।
কিন্তু আজ সেই ভ্লাদই হয়ে উঠেছে তাঁর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শত্রু।
“হুযুর,” এক উজির এসে খবর দিলেন,
“ভ্লাদ ট্যাক্স দিতে অস্বীকার করেছে। শুধু তাই নয়, আমাদের দূতদের শিরশ্ছেদ করেছে।”
মেহমেদের ঠোঁটে তিক্ত এক হাসি ফুটে উঠল—
“তাহলে এখন আর ভাই নয়… শত্রু।”
---
ওয়ালাকিয়ার অন্ধকার বনভূমি
১৪৬২ সালের জুন মাসের এক রাত।
চাঁদ ঢাকা, জঙ্গল নীরব। হঠাৎই অন্ধকার ভেদ করে মশালের আলো জ্বলে ওঠে। ভ্লাদ ড্রাকুলার যোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়ে অটোমান শিবিরে।
তাদের লক্ষ্য—সুলতান মেহমেদকে হত্যা।
রাতভর যুদ্ধ হয়, তলোয়ারের ঝলক আর আর্তনাদে আকাশ ভরে ওঠে। ইতিহাসে এই হামলাকে বলা হয়—“নাইট অ্যাটাক অব তিরগোভিশতে”।
ভ্লাদ ভেবেছিলেন এই রাতেই তিনি অটোমান সুলতানকে হত্যা করবেন।
কিন্তু ভাগ্য অন্যকিছু লিখেছিল—মেহমেদ প্রাণে বেঁচে যান।
---
টারগোভিশতের পথে অটোমান বাহিনী
পরদিন ভোরে মেহমেদের সৈন্যরা যখন টারগোভিশতের দিকে এগোয়, তখন তাঁদের চোখ আটকে যায় এক ভয়ংকর দৃশ্যে।
মাইলের পর মাইল জুড়ে খুঁটির বন—প্রতিটি খুঁটিতে গাঁথা মানুষের দেহ। ইতিহাসে এ দৃশ্যকে বলা হয় “ফরেস্ট অব দ্য ইমপেলড”।
প্রায় ২০,০০০ মানুষকে (অটোমান সৈন্য, ওয়ালাকিয়ান ও নিরীহ গ্রামবাসী) ভ্লাদ খুঁটিতে গেঁথে রেখেছিল।
একজন জেনারেল চুপচাপ বললেন,
“এ যেন জাহান্নামের দরজা।”
মেহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন—
“সে জানে, যুদ্ধ কেবল অস্ত্র দিয়ে হয় না… ভয় দিয়েও জয় করা যায়।”
---
শেষ অধ্যায়
ভ্লাদ ড্রাকুলার শাসন ছিল ভয় আর আতঙ্কের ওপর দাঁড়িয়ে। ইউরোপ তাঁকে একদিকে নায়ক ভেবেছিল—কারণ তিনি ওসমানীদের থামিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর নিষ্ঠুরতার কারণে অন্যরা তাঁকে বলেছিল—“দ্য ইমপেলার” (খুঁটিতে গেঁথে হত্যাকারী)।
অবশেষে ভ্লাদ নিজের মিত্রদের বিশ্বাসঘাতকতায় পরাজিত হন। তাঁর মাথা কেটে পাঠানো হয় ইস্তাম্বুলে।
সেখানে অটোমান সুলতান মেহমেদ তাঁর প্রাক্তন শৈশবসঙ্গীর কাটা মাথা দেখেছিলেন—নিঃশব্দে।
আর মেহমেদ?
তিনি ফিরে গেলেন কনস্টান্টিনোপলে—যাকে তিনি সাত বছর আগে জয় করেছিলেন।
এবার তিনি জয়ের জন্য নয়, এক নতুন উপলব্ধির জন্য ইতিহাসে বেঁচে থাকলেন।
“একজন রক্ত দিয়ে রাজত্ব গড়তে চেয়েছিল…
আরেকজন ধৈর্য আর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সাম্রাজ্য লিখেছিলেন।”