
16/04/2025
“আপনাদের জুলুমেই আমরা বাধ্য হয়েছি আল্লাহর ঘর মসজিদকে ‘আহলে হাদীস’ বৈশিষ্ট্যগত নামে নামকরণ করতে ”।
(ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঘাচং গ্রামে মসজিদে হামলা ও ভাংচুর! একজন সুন্নাতপন্থী মুসল্লির হৃদয়স্পর্শী আর্তনাদ!)
আপনারা নিজেদের "হানাফি" দাবী করলেও আল্লাহর ঘর —বহু মসজিদ — থেকে আমাদেরকে কার্যত বহিষ্কার করে দিয়েছেন। আমাদেরকে বলা হয়, "ফিতনা করিস না", "এইটা আমাদের মসজিদ", "তুই ফিতনা করতে আসছিস", "যা, অন্য জায়গায় আলাদা মসজিদ বানায়ে ফিতনা কর!"
আমরা বলি—এই মসজিদ কার? হানাফিদের? নাকি আল্লাহর? আপনারা নিজেদের "হানাফি" দাবি করে আল্লাহর ঘর থেকে ঈমানদার মুসল্লিদের বের করে দেন! রমযানের তারাবীহ নামাজে সামনের কাতারে দাঁড়াতে দেন না। কেউ যদি জোরে "আমীন" বলে, বুকে হাত বাঁধে, রাফউল ইয়াদায়ন করে কিংবা পা মিলিয়ে দাঁড়ায়—তাকে বলেন, "ফিতনা করিস না!" এমনকি প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি, মারপিট,জখম ও গুরুতর আহত পর্যন্ত করা হচ্ছে।
এ কী ধরনের আচরণ? সুন্নাত পালন করা কি ফিতনা? আমরা যখন সুন্নাত মেনে সালাত আদায় করি, তাহলে সেটা কি ফিতনা হয়ে যায় ? বরং প্রকৃত ফিতনা তো তখনই শুরু হয়, যখন সুন্নাহর বিরুদ্ধে বাধা সৃষ্টি করা হয়, মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়, দলে দলে ভাগ করা হয়, আর মসজিদকে মাযহাবী দলবাজির কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়।
এভাবে আমরা যখন গোঁড়া মাযহাবীদের দ্বারা ঘরে-বাইরে নিপীড়িত হই, তখন কি আমাদের কোনো উপায় থাকে? আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ইবাদত করতে চাই। স্বাধীনভাবে রাসূলের সুন্নাহ মেনে চলতে চাই। তাই আমরা বাধ্য হই আলাদা মসজিদ গড়তে। কিন্তু এখানেও কি শান্তি পাই? না! তখন আবার আমাদের মসজিদকে ‘ফিতনার ঘর’, ‘মসজিদে যেরার’ ঘোষণা দিয়ে আমাদের মসজিদগুলো ভেঙে গুড়িয়ে এমনকি পুড়িয়েও দেওয়া হচ্ছে। কোথায় যাবে একজন নির্যাতিত মুসল্লি? এরপরও দিনের শেষে "আপনারা সাধু, আর আমরা ফেতনাবাজ!" — কী চরম বৈপরীত্য!
আরও কষ্ট হয় তখন, যখন সমাজের প্রভাবশালী আলেম ও বুদ্ধিজীবীরা(যেমন ওলীপুরী, ফারায়েজী, প্রমুখ) প্রকাশ্যে আমাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মুসল্লীদের উসকানি দেন। তারা বলেন—"এই সুন্নাতি আমলগুলো সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।" তারা সাহাবিদের আমলকে "ফিতনা", রাসূলের হাদীসকে "অশান্তির মূল", আর তার অনুসারীদের "ফেতনাবাজ", "গোমরাহ" "ইয়া~হু~দীদের দালাল" ইত্যাদি আখ্যা দেন। এ কেমন দ্বীন, যেখানে রাসূলের সুন্নাত প্রকাশ করাই ‘অপরাধ’?
এখন একটি প্রশ্ন—এইসব কাজ করতে গিয়ে আপনাদের ঈমান কোথায় থাকে? যে আমল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত—তাকে “ফিতনা” বলা কুফুরীর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। এই কথাগুলো বলার আগে একটু হলেও কি ভয় হয় না—আল্লাহর দরবারে কী জবাব দিবেন?
আজ আপনারা মাযহাবী গোঁড়ামির কারণে আল্লাহর ঘরে বিভাজন সৃষ্টি করছেন। আমাদের সুন্নাতি পরিচয়কে বিদ্বেষের কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছেন। অথচ আল্লাহ বলেন:
وَأَنَّ ٱلْمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ ٱللَّهِ أَحَدًۭا
“নিশ্চয়ই মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য, সুতরাং সেখানে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে ডাকো না।” (সূরা আল-জিন: ১৮)
তাহলে কে আপনাদেরকে এই অধিকার দিয়েছে—কারো সুন্নাহভিত্তিক ইবাদতকে বাধা দেয়ার?
আমরা কারও বিরুদ্ধে নই, আমরা হাদীস ও সুন্নাহর পক্ষে। আমরা চাই মাযহাবকে দল নয়—ফিকহি মতামত হিসেবে গ্রহণ করা হোক। কিন্তু যদি মাযহাবের নামে সুন্নাহকে রুদ্ধ করা হয়—তাহলে প্রতিবাদ করা ঈমানের দাবি। আর সেই দাবি থেকেই আমরা বলছি—
আপনারা যদি আল্লাহর ঘরে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলতে বাধা দেন, তাহলে জবাবদিহি একদিন আপনাদের করতেই হবে—ইনশাআল্লাহ। হয় এই দুনিয়ায়, নয়তো আখিরাতে; বিচার হবেই। কারণ আল্লাহর বিধান কখনো চাপা দেওয়া যায় না।