18/12/2023
মুরগি জবাই করার পর ড্রামের ভেতর রাখলে যেভাবে ছটফট করে আমি তা দেখিনি কখনোও, সরকারি হাসপাতাল গুলোতে পোস্ট-মর্টেম এর নামে ছোট্ট ছোট্ট কুড়াল দিয়ে বুকের ঠিক মাঝখানটায় ঠাঁস ঠাঁস করে যেভাবে কোঁপায় আমি তাও দেখিনি, বাইক এক্সিডেন্টে যুবকের গলা আলাদা হয়ে যাওয়া; মাথা থেতলে মগজ বেরিয়ে যাওয়া বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন লাশ দেখিনি আমি, রাস্তার পাশে ডাস্টবিনের ধারে বিক্ষিপ্তভাবে বমি করা মহিলা কিংবা উলঙ্গ অবস্থায় ডাস্টবিন থেকে মাছের কাঁটা কুড়িয়ে খাওয়া পুরুষ আমি দেখিনি। আমি শুধু বৃষ্টিভেজা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের রাতে এনিয়ে বিনিয়ে ছয়কে ছিয়ানব্বই বানিয়ে তোমার চলে যাওয়া দেখেছি।
তুমি যেদিন চলে গেলে সেদিন রাস্তার ধারের টঙের করিম চাচা হঠাৎ বলে উঠলো, "আরে ছ্যাড়া এতো কাঁদিস নে তো, তোর লিগি ঐই ছ্যাড়ী কাঁদবিনি যে কখনোও, তোর জীবনের চাইতে ঐই ছ্যাড়ীর চোখের কাজলের মেলা দাম, কাদিলে পরে ঐই ছ্যাড়ীর কাজল নষ্ট হয়ে যাবি যে"। রোড এক্সিডেন্টে মা মারা গেলে সন্তান যেভাবে কাঁদে, ঠিক সেভাবেই হাউমাউ কেঁদেছিলাম সেদিন। পূত্রের লাশ পিতার কাঁদে নিলে যে ব্যাথাটা অনুভব হয় একদিন বুকের বা পাশে সেই ব্যাথাটাই অনুভব হয়েছিলো। হলুদ ল্যাম্পপোষ্টের নিচে রাস্তার ধারে বসে থাকা হিংস্র কুকুরটাও হুঁ হুঁ করে কেঁদেছিলো সেদিন।
তুমি যেদিন চলে গেলে ঠিক তার দুদিন পরেই সেই রাস্তায় এক মেথরের সাথে দেখা হয়েছে আমার, কথায় কথায় তার পারিশ্রমিক জানতে চাইলে সে বলে দৈনিক ৪০০টাকা। দিনশেষে একজন মেতরও তার মজুরি পেলো, শুধু আমি অভাগাই বছরের পর বছর তোমার পিছু ঘুরে একটা দিনের জন্যও তোমাকে পেলাম না। হায়রে!.. নতুন খেলনা ভাঁঙ্গার পর বাচ্চা মেয়েরা যেভাবে হাউমাউ করে কাঁদে ঠিক সেই ভাবে কেঁদেছিলাম একদিন। দার্জিলিং এর উপর বসে লাল চা খাওয়া থেকে শুরু করে সমুদ্রের তলদেশে বাসর করার স্বপ্ন দেখিয়ে চলে গেছে সে। বাচ্চার নাম রাখা থেকে শুরু করে ছোটখাটো সংসারের একটা মাস্টার প্ল্যান করেও চোখ রাঙিয়ে চলে গেছে সে.. ফিরেও তাকায় নি.. একদম চলে গেছে...
লেখা: তারিফ হুসাইন