20/06/2025
আব্বা মারা গেলো হুট করেই,একদিন রাতের বেলা বাসা থেকে ফোন এলো আব্বা একটু অসুস্থ।আমি ওসব কিছু না বলে স্বান্তনা দিয়ে ফোন রেখে তাস খেলতে বসলাম।জমিয়ে তাস খেলছি,আজ হাত ও ভালো পড়ছে।রাতভর তাস খেলে আমি ঘুমাতে গেলাম ৩:৪৮ মিনিটে,
ফোন সাইলেন্ট করে।
ঘুম ভাঙলো ঠিক দুপুর ১:১৪ মিনিটে।।প্রকৃতির ডাকে।আমি ধীরে সুস্থে বাথ্রুম থেকে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখি ছোট বোনের নাম্বার থেকে ঠিক ১২৪ টা মিসড কল।
মিনিটে দুইবার করে হলেও এক ঘন্টায় ১২০ টা কল দেয়া যায়।তারমানে আমাকে শুধু কল করতেই এক ঘন্টার বেশী সময় গিয়েছে।আমার মনে তখনো কিছু নেই।আমি ফোন দিলাম,ধরে না।আমি আবার ফোন দিলাম ধরে না।আমার চিন্তা হওয়া উচিত,আমার তবুও চিন্তা হলো না।আমি তৃতীয় বার ফোন দিলাম,ফোন ধরলো আমার ছোট বোন যুথি।ফোন ধরেই ফুঁপাচ্ছে,দাদা রে আব্বা আর নেই রে দাদা।আব্বা আজ ভোরে মারা গেছেন।।তোকে কতবার ফোন দিলাম,ধরলি না।বাসায় আয় দাদা।
কেমন অপার্থিব এক কান্না।কেমন সব কিছু থেমে যাওয়া কান্না।
আমি ফোন রেখে দিলাম,দুই মিনিট বসে রইলাম ঝাড়া,বাসায় যাওয়া দরকার,মাসের ২৪ তারিখ।হাতে টাকা নেই ই।আব্বা এই মাসে টাকাও পাঠায় নি।
আমি কোন ঘোরে ছিলাম কে জানে,আব্বা টাকা পাঠায় নি এই হিসেব করছিলাম, যখন আমার আব্বা চলেই গেছেন একদম না ফেরার দেশে।
ব্যাগ গুছিয়ে বাইরে বের হলাম,শুক্রবার দিন,নামাজের পর সবাই বাসায়।আমার ক্ষুধাও লেগেছে।খাওয়া হয় নি।একজন মানুষের এই পর্যায়ে কিভাবে ক্ষুধা লাগে জানি না।কিন্তু আমার ক্ষুধা লেগেছিলো,ভয়ানক ক্ষুধা।এতই ভয়ানক যে চাংখারপুলে গিয়ে এক প্লেটের জায়গায় দেড় প্লেট কাচ্ছি খেয়ে এক গ্লাস বোরহানী ও খেয়ে ফেললাম।
খাবারের বিল দিয়ে বাইরে এসে, এবার নিজের ই রাগ হচ্ছে নিজের উপর।আমার বাসায় যাওয়া উচিত।ছোট বোনটা কাঁদছে,মা ও হয়তো অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।আর আমার ম্যাচ টা ধরাতেও হাত কাপলো না একটুও।
আমার আব্বা মারা গেলো হুট করে একদিন,আমি তাস খেলছিলাম রাতভর।বাবা বুকে ব্যাথা নিয়ে হাস্পাতালে ছিলো।আমি তাস খেলছিলাম।আমার ছোট বোন আমাকে ১২৪ বার ফোন দিয়েছিলো।
আমি বাসায় পৌছালাম রাত ৯:১৭ মিনিটে।আমাদের গ্রাম এখনো খুব আধুনিক হয় নি।বৃষ্টি কাদার দিন গ্রামের পথ ভেঙে কাদায় মাখামাখি হয়ে আমি যখন বাসার উঠানে এলাম,কিছুই বদলায় নি তেমন।এমন বর্ষার রাতে কারেন্ট আগেও থাকতো না,আজকেও নেই।বাসা টা এমন নিরিবিলি থাকতো,আজও তেমন।উঠানের কোনের আমড়া গাছটাও আগের মতই আছে।
বাইরে থেকে দেখলে কিছুই বদলায় নি।শুধু এ বাসায় আজ নেই আমাদের আব্বা।
আমার ছোট বোন আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদা শুরু করলো,আম্মা ফ্যালফ্যাল করে তাকায় আছে।কান্নার একটা শক্তি লাগে,সেটাও আর নেই তার।
বোন আমার হাউমাউ করে কাঁদছে আর বলছে, "দাদা ভাই ওরা আব্বাকে মাটির নিচে রেখে আসছে রে,আমি কত করে কইলাম আমার দাদা ভাই আসুক।কেউ শোনে নি।কেউ না।"
বাড়ির পিছন দিকে এক টুকরো জমিতে আব্বাকে কবর দেয়া হইছে।একদম ছোট্ট একটু জায়গা।
আমি আমার বোনকে নিয়ে কবরের পাশে দাঁড়ায় আছি।বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ করছে চারপাশ,ব্যাঙ ও ডাকছে বেশ।
আমার আব্বা শুয়ে আছে,এই তো এই মাটির নিচে।
আমি এতটা অভাগা আব্বার মুখটাও দেখতে পারলাম না।।আমায় হঠাত কেমন জানি শূন্যতা গ্রাস করলো।আমার হঠাত কেমন জানি কান্না পেতে লাগলো।
এই বিশাল পৃথিবীতে এ জীবনে আর আব্বা বলে কাউকে ডাকা হবে না,এই কথা ভেবে ভয়ানক শূন্যতায় ডুবে যেতে থাকলাম আমি,আব্বা সারাজীবন কষ্ট করে ই গেলো,আমি যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলাম,আম্মারে কইলো আমার আর টেনশন নাই গো যুবায়েরের মা।পোলায় বড় অফিসার হবে,আমাগের সব দুঃখের দিন শেষ হয়ে যাবে।
আব্বা মারা গেলো হুট করেই,এমন এক রোজার মাসে।আমি তখন তাস পিটাচ্ছিলাম মনের সুখে।
সারা মাস রোজা না রাখা আমি সেই দিন সেহেরী খেতে বসলাম।
আমাদের বাসায় ডাইনিং টেবিল নেই,মা বসে আছে চুপচাপ,ছোট বোন সারারাত কেঁদে কেটে এখন খাবার বাড়ছে, আমি চুপচাপ বসা।খুব একটা অস্বাভাবিকতা নেই।কেবল মাত্র যে মানুষটা গতকাল ও এই পাটিতে বসে সেহেরি খেয়েছিলো আজ নেই।
কি অদ্ভুত,নেই মানে নেই,একদম নেই।এমন না যে কোথাও বেড়াতে গেছে,চলে আসবে।সে নেই,এই অনন্ত নক্ষত্র বীথির কোথাও সে নেই।।অথচ সব কিছু চলছে,হয়তো একটু ধীরে চলছে,আবার হয়তো গতিশীল হবে।যে যায়, তার জন্যে কবে প্রকৃতি থামিয়ে রেখেছিলো কিছু?
আব্বা মারা যাবার পর প্রথম কয়েকদিন খুব গুমোট ছিলো সব।এক সপ্তাহ পর সব কেমন স্বাভাবিক হয়ে এলো। আমার চুল দাঁড়ির ভেতর কুটকুট করে চুলকাতে লাগলো,গ্রামে এসে কাটা হয় নি,বড় হয়ে গেছে। ছোট বোনটা কলেজে যাওয়া শুরু করলো, মা ও রান্না বান্না করা শুরু করলো।
গল্প উপন্যাসে থাকে, প্রিয় কেউ মারা গেলে তার প্রিয় খাবার খাওয়া হয় না। আব্বার প্রিয় ছিলো গরুর মাংস, আমি বাজার থেকে একদিন গরুর মাংশ ও কিনে নিয়ে এলাম।
সব কিছু বাইরে থেকে দেখে খুব সহজ মনে হচ্ছিলো,সব একদম ঠিকঠাক। শুধু খেতে বসার সময় আমরা বাসার দুই ভাইবোন দেখলাম আব্বার প্লেট আর গ্লাসটা প্রতিবেলা মা বের করে,কিছুক্ষণ শূন্য দৃষ্টিতে তাকায়, এরপর তুলে রাখে।
কিছু থেমে নেই,সব চলছে,শুধু এই চলার ভীড়ে গরুর মাংস দিয়ে ভাত মুখে তোলার সময় দু সেকেন্ডের জন্যে থমকে দাঁড়াই। আব্বার প্রিয় ছিলো গরুর মাংস, আমি তার ছেলে, নিজের টাকায় এক ছটাক মাংস তারে খাওয়াইতে পারলাম না, আর আমি লোকমা ভরে খাচ্ছি।
দশদিন পর আমি ঢাকা এলাম,এসে আস্তে আস্তে পড়ালেখা শুরু করলাম। একটা টিউশনি করাতাম, আরো দুই একটা টিউশনি খুঁজবার চেষ্টা করছিলাম, যাতে বাসায় কিছু সাহায্য করা যায়।
বাসা থেকে একদিন খাম এলো একটা, মাসের হাত খরচের টাকা আর মায়ের চিঠি। চিঠির সারমর্ম হচ্ছে,আব্বা বলে গেছিলেন আমি যেন কিছু নিয়ে টেনশন না করি,vটাকা পয়সা নিয়ে যেন না ভাবি। ভালো মত যেন পড়ালেখা করি।আমার জন্মের সময় থেকেই আব্বা আমার নামে কিছু কিছু টাকা সঞ্চয় করতেন,সেই টাকার পরিমাণ ২২ বছরে বেশ বলার মত একটা অংক।
চিঠি পড়ে হঠাৎ আমার বুকের মধ্যে একটু চিনচিনে ব্যাথা হতে লাগলো। আচ্ছা আমি কি আব্বা হতে পারবো কখনো??এত বিশাল কি হওয়া সম্ভব?? এতটাই যে পৃথিবী থেকে চলে গিয়েও ছায়ার মতই পাশে চলছেন......
সেই রাতে আমার জ্বর এলো,ভয়ানক জ্বর।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের ২১১ নাম্বার রুমে শুয়ে আমি কাতরাতে লাগলাম।আমার ছেলেবেলার কথা মনে হলো জ্বরের ঘোরে,মনে হলো আব্বা আমার শিয়রে বসা।
ছোট বেলায় আমি খুব অসুস্থ ছিলাম,বাঁচা আর মরার মাঝামাঝি একটা ব্যাপার। আমার মনে আছে আব্বা কিছুক্ষণ পর পর আমার নাকে হাত দিয়ে দেখতো আমি বেঁচে আছি কী না। ব্যাথায় ঘুমাতে পারতাম না আমি, আমার আব্বা সারারাত আমাকে ঘাড়ে করে,কাধে করে পাড়ায় হেটে হেটে ঘুম পাড়াবার চেষ্টা করতো।অনেক বছর, অনেক গুলো বছর আগের এসব কথা নিত্যদিনের চাল ডাল আর ব্যস্ততার ভীড়ে হারিয়ে গেছিলো। আমি জ্বরের ঘোরে ডুকরে কেঁদে উঠলাম।
শিয়র থেকে জানি আব্বা কথা বলে উঠলো,ওরে আমার বুকা বাপডা কানতিছে কেন?? আয় বাবা, বুকে আয়।আমি জ্বরের ঘোরে কেমন অপ্রকৃতস্থের মত কিছু ধরতে গেলাম,এরপর আমার মনে নেই।
চোখ মেলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাসপাতালে, চারপাশে ফিনাইলের কেমন কড়া গন্ধ। আমার বন্ধুরা জানালো আমি জ্বরে দুইদিন বেহুঁশ ছিলাম। জ্বর কমছিলোই না কিছুতে। হাসপাতালের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম আমার আব্বা এমন এক হাসপাতালে মারা গেছিলেন কষ্ট নিয়ে,আমি,তার বড় ছেলে তখন আরামে তাস খেলছিলাম।
আব্বা যখন মারা যায় আমি তখন ফোর্থ ইয়ারে।আব্বাকে সারাজীবন দেখেছি আমাকে বড় ভার্সিটি তে পড়াবার ইচ্ছে। নিজে ম্যাট্রিক পাশ করে সংসারের বোঝা টানতে নেমে গেলেন।পড়া হয় নি আর তার।আমি ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাবার পর আমার মনে তাই খুব লুকায়িত একটা ইচ্ছে ছিলো,যেদিন আমি পাশ করবো,এরপর আমাদের সমাবর্তনে আমার হ্যাট আর গাউন টা আমি আব্বারে পরায় দিবো।
ছোটবেলায় বাবা নিয়ে ক্লাসে রচনা লিখতে দিতো, আমার খুব অভিমান হতো আব্বার উপর। চারপাশে কত ছেলেমেয়েদের বাবাকে দেখতাম,এটা সেটা কিনে দিতো,স্কুলে আসতো,আব্বা কোনদিন এমন করতো না।তাই আব্বাকে নিয়ে রচনা লেখার সময় ভালো কিছুই আমার মাথায় আসতো না।
ক্লাস ফাইভে একবার রচনা লেখার সময় আমি বাবাকে নিয়ে রচনা লিখতে গিয়ে লিখলাম আমার আব্বা অনেক গরীব, অন্যদের আব্বা তাদের খেলনা কিনে দেয়, আমাকে দেয় না। অন্যদের কত নতুন জামা, আমাকে বছরে শুধু এক ঈদে একটা জামা দেয়া হয়।এইসব আরো কতশত অভিমানের কথা।
সেই অভিমানের কথা লিখতে গিয়ে ছোট্ট আমার ঠোট ফুলে গেলো,কান্না এলো। আমার আব্বা এমন কেন??একদম খারাপ। রচনা পড়ার পর স্যার আমাকে আলাদা করে ডাকলেন,আব্বাকে ডাকলেন। পড়ে শোনালেন তার ছেলে তাকে নিয়ে কি লিখেছে,শোনার পর একটা হাসি দিয়ে বললেন ঠিকই লিখছে মাস্টার সাব,ও যা কইছে সব সত্য কথা,খুবই সত্য কথা।
আব্বার সেই হাসির অর্থ সেদিন বুঝি নি, তার পিছনে কত কান্না লুকিয়ে থাকতে পারে বুঝি নি। শুধু আমার আব্বা অন্যরকম এটা বুঝেছি তার শ্রেণীর লোকগুলো যখন ছেলেরা আমার বয়সী হলেই কাজে লাগিয়ে দিতো, আমাকে পড়িয়েছেন, নিজে গাধার মত খেটে আমাকে পড়িয়েছেন। অনেকে হাসাহাসি করেছে, টিটকারি করেছে, তবু তিনি পড়িয়েছেন। আব্বাকে নিয়ে আমার না পাওয়ার এত এত অভিযোগ ছিলো, কিন্তু এই নিত্য সাধারণ দিনের চলার পথে আমি কখনোই দেখি নি আমার পড়ালেখার খরচ কোনদিন বাকী পড়ে নি, আমার বই খাতার অভাব হয় নি। আমার খাবারের অভাবে পড়া নষ্ট হয় নি। আমি কোনদিন এসব ভাবি নি যে এই কিছু দিতে না পারা বাবাটা কিভাবে এইসব ম্যানেজ করছে। আমি কোনদিন খেয়াল করি নি আমার আব্বার মাত্র দুটো জামা ছিলো, আমি কোনদিন লক্ষ্য করি নি আমার আব্বার বহু বছরের পুরোনো শীতের কাপড়টা ছেঁড়া ছিলো।
আমার অনেক অনেক অভিযোগ ছিলো,না পাওয়ার অভিযোগ, অপ্রাপ্তির অভিযোগ, গরীব হবার অভিযোগ।
আমি যেদিন ঢাকা চলে আসবো,তার আগের রাতে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়,আমি চুপচাপ শুনতে পাই আমার ভীষণ সাদাসিধে আর গরীব আব্বাটা বারান্দায় আম্মার সামনে কাঁদছে আর বলছে,ছেলেডা কাল চলে যাবে গো যুবায়েরের মা, সারাডাজীবন কিছুই দিতে পারি নি, এই ছেলে এখন ঢাকা যাবে,বড় বড় অফিসারগের ছেলেগের সাথে পড়বে, পরার জন্যি একটা ভালো জামা প্যান্ট ও নেই ওর। কাইল যাবার সময় ওর হাতে জামা কাপড় কিনার জন্যি ওই তিনহাজার টাকাডা দিও। আব্বার কান্না শুনে খারাপ লাগছিলো, কিন্তু নতুন জামা পাবো, ভালোও লাগছিলো একটু। সকাল বেলা বের হবার সময় আব্বাকে দেখলাম চুপচাপ বসে আছে এক কোণে, মাকে সালাম করলাম, আব্বার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। আব্বা শুধু একটু ধরা গলায় বললো ভালো থাইকো বাপ। মা খরচ বাদেও তিন হাজার টাকা দিছিলো কাপড় কিনতে, আমি কাপড় কিনেছিলাম, কিন্তু আমি জানতে চাই নি এই টাকা কিভাবে এলো, তাই আমি আসার দিন খেয়াল ও করি নি যে আব্বার বাইসাইকেল টাকেও বাসায় দেখা যাচ্ছে না।...
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলাম আরো দুইদিন পর।ইদানিং মাথার ভেতর মাঝে, মাঝেই ফাঁকা ফাঁকা লাগে।ক্লাস শেষ করে টিউশনিতে যাই। সন্ধ্যা লেগে যায়, আমি বের হই, হাঁটি, উদ্দেশ্যহীন হাঁটা, হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে রাতে হলে ফিরে আসি, ঘুমাই। সকালে ক্লাসে যাই।হাসপাতাল থেকে আসার পরেই কেমন জানি হয়ে গেছি, দিনে একবার বাড়ি ফোন দেই। মা আর ছোট বোনের সাথে কথা বলি। ফাইনাল পরীক্ষা আগায় আসতে থাকে,আমার পড়া হয় না। কেন জানি মন বসে না, কিছুতেই না...
পরীক্ষা চলে আসে দেখতে দেখতে,আমি পরীক্ষা দেই।গল্প উপন্যাসে নায়কেরা এক রাত পড়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়,আমি গল্পের নায়ক নই। আমি অতি সাধারণ এক বাবার দায়িত্বহীন এক ছেলে। রেজাল্ট হয়ে যায়,বন্ধুরা সব আনন্দ উল্লাস করছে,আবার কবে দেখা হবে না হবে এই সব নস্টালজিয়ার কথা হচ্ছে,আমি মৃদু হেসে বিদায় নেই এক সকালে, ক্লান্ত পায়ে হেঁটে বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাই, আমি ফিরে যাচ্ছি। সেই খানে, যেখান থেকে আমি এসেছিলাম, যেখানে আমার অতি সাধারণ সাদাসিধে বাবা ঘুমিয়ে আছেন মনের ভেতর অনেক অনেক কষ্ট নিয়ে।
শেষ কথাঃ ফলিত রসায়ন এ প্রথম শ্রেণীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে জুবায়ের,জি আর ই তে বেশ ভালো নাম্বার ও পায়।আমেরিকার দুটো ভার্সিটি থেকে সে ডাক পায়।
এক বর্ষায় তার বাবা মারা গেছিলো,এখন বর্ষা পেরিয়ে শীত,জুবায়ের দাঁড়িয়ে আছে বাবার কবরের সামনে।শীত কালে অদ্ভুত ভাবে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে, জুবায়ের ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে,কাঁদুক,এত দিনের জমানো ব্যাথা যদি একটু যায়। বৃষ্টির পানিতেও আলাদা করে বোঝা যাচ্ছে টপটপ করে গড়িয়ে পড়া চোখের জল।
©