Quazi Mart

Quazi Mart I Am a Digital Marketing Expert

রুমে দুটো বিছানা। একটাতে আমি আর স্ত্রী ঘুমাই। অন্যটাতে আমাদের দশ বছরের ছেলে ঘুমায়। এক রাতে ছেলেটা খুব কাশছিলো। ছেলের কাশ...
05/07/2024

রুমে দুটো বিছানা। একটাতে আমি আর স্ত্রী ঘুমাই। অন্যটাতে আমাদের দশ বছরের ছেলে ঘুমায়। এক রাতে ছেলেটা খুব কাশছিলো। ছেলের কাশির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ভেঙে যাওয়াতে এবং ছেলের বিরতিহীন কাশির শব্দ শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
ঘুমন্ত স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে তিরিক্ষি স্বরে বললাম,"ছেলে ঘুমাতে পারছে না, আমি ঘুমাতে পারছি না, আর তুমি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছো? লজ্জা করে না?"
হঠাৎ ঘুম ভাঙাতে স্ত্রী হতভম্ব হয়ে গেলো।
তারপর বললাম,"তোমার জন্য ছেলের এই অবস্থা। আমি সারাদিন খেটে খেটে মরছি। আর তুমি আছো শুধু খাওয়া আর ঘুম নিয়ে। ছেলে কী করছে, কী খাচ্ছে, সে খেয়াল আছে? যদি সঠিক ভাবে ছেলের যত্ন নিতে তাহলে ছেলে অসুস্থ হতো না।"
স্ত্রী বললো,"সব বাচ্চাদের অসুখ বিসুখ হয়। এর জন্য কি মায়েরা দায়ী? কোনো মা কি চায় তার বাচ্চা অসুস্থ হোক? আর ছেলের দেখাশোনা একা আমাকে কেনো করতে হবে? তুমিও তো দেখতে পারো?"
স্ত্রীর কথা শুনে এতোটাই রেগে গেলাম যে, তুই তোকারি শুরু করলাম।
"একদম চুপ। একটা কথা বলবি না। আমার খাবি, আমার পরবি, আবার আমার মুখে মুখে তর্ক করবি? আমার ঘরে থাকতে হলে আমি যেভাবে বলবো সেভাবে চলবি। নইলে ঘর থেকে বের করে দেবো।"
স্ত্রী আর কিছু না বলে শোয়া থেকে উঠে ছেলের কাছে গেলো। ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে বিছানায় এলো। আমি ঘুমিয়ে পড়ার আগে টের পেলাম ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কাঁদুক। দোষ করবে আবার মুখে মুখে তর্ক করবে!
পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি স্ত্রী নেই। ছেলের কাছ থেকে জানলাম স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে গেছে। স্ত্রীর চলে যাওয়ার কথা শুনে প্রথমে দেমাক দেখিয়ে বললাম, গেছে ভালো হয়েছে। আপদ বিদায় হয়েছে।
কিন্তু কিছুদিন পরই বুঝতে পারলাম, মহা বিপদে পড়েছি। চাকরি, রান্নাবান্না, ছেলের দেখাশোনা সব মিলিয়ে নাজেহাল হয়ে গেলাম। তবু জেদ করে স্ত্রীকে আনলাম না। কাজের বুয়াকে টাকা বাড়িয়ে দিলাম, যাতে সে প্রতিদিন আসে। ঘরের কাজকর্ম এক রকম চালিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু সমস্যায় পড়লাম ছেলেকে নিয়ে। কিছুদিন পর পর ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতো যত্ন নেয়ার পরও কেনো ছেলে ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ে বুঝতে পারলাম না। তখন আবিষ্কার করলাম, স্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ছেলে এতো অসুস্থ হতো না। অর্থাৎ স্ত্রী যে আমার চেয়ে ছেলের ভালো যত্ন নিতো এটা পরিষ্কার হয়ে গেলো।
এই উপলব্ধির পর সেদিন রাতে স্ত্রীর সাথে যে অযথা বাজে ব্যবহার করেছিলাম তার জন্য অপরাধ বোধ জেগে উঠলো। এবং স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিলাম।
সাথে সাথে স্ত্রীকে ফোন করলাম। কিন্তু সে ফোন ধরলো না। যতোই ফোন করি সে ফোন ধরে না। ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে সরি বললাম। আর কখনো এমন করবো না, তাও বললাম। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। সে মেসেজ পড়েও দেখলো না।
অতঃপর শ্বশুরবাড়ি যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় রইলো না। পরদিনই শ্বশুরবাড়ি গেলাম। অনেকক্ষণ ছিলাম সেখানে। কিন্তু স্ত্রীকে আনতে পারলাম না। সে আমার সামনেই এলো না। বুঝতে পারলাম, সে আমার উপর ভালোই রেগে আছে। পরদিন শ্বশুরবাড়িতে আবার গেলাম। এবার স্ত্রীকে খুশি করার জন্য ওদের বাড়ির সবার জন্য নানা রকম উপহার নিয়ে গেলাম। আর ওর জন্য নিলাম দামী শাড়ি। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হলো না।
মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। একটা অন্যায়ের জন্য এমন শাস্তি পেতে হবে ধারণা করি নি। রাতে ঘুমাতে পারি না। খাওয়ার রুচি চলে গেলো। সব মিলে বাজে সময় কাটতে লাগলো।
একদিন সকালে অফিসে না গিয়ে পার্কে চলে গেলাম। বিষণ্ণ মনে চুপচাপ বসে থাকলাম। আধ ঘণ্টা পর ছোট্ট একটা মেয়ে ফুল বিক্রি করার জন্য এলো। মেয়েটার মুখটা শুকনো। দেখে বোঝা যায় ক্ষুধার্ত। কিন্তু আমি এখন ফুল নিয়ে করবোটা কী? স্ত্রী নেই। তাই ফুল কেনার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলাম না।
মেয়েটাকে বললাম,"ফুল লাগবে না।"
ফুল লাগবে না শুনে মেয়েটার শুকনো মুখ আরো শুকনো হয়ে গেলো।
ঐ শুকনো মুখে বললো,"সকাল থাইকা কোনো ফুল ব্যাচতে পারি নাই। একটা ন্যান না স্যার।"
"স্ত্রী রাগ করে বাবার বাড়ি চলে গেছে। ও থাকলে ফুল নিতাম। কিন্তু এখন ফুলের কোনো প্রয়োজন নেই।"
এসব সাংসারিক কথা ছোট্ট মেয়েটাকে বলা অর্থহীন। তবু কেনো জানি বলে দিলাম।
মেয়েটা আর কিছু না বলে নিরাশ মুখে চলে যেতে লাগলো। চলে যাওয়া মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। নিশ্চয়ই মেয়েটার অনেক সময় ধরে খাওয়া হয় নি।
ডাকলাম মেয়েটিকে,"এই শোনো।"
মেয়েটা ফিরে এলো।
বললাম,"আমি তোমার কাছ থেকে ফুল নেবো। একটা নয়, বেশ কয়েকটা নেবো। তবে আমার একটা কথা তোমাকে শুনতে হবে।"
"কী কথা?"
"ঐ যে একটা রেস্টুরেন্ট দেখতে পাচ্ছো, আমি এখন সেখানে খেতে যাবো। তুমি আমার সঙ্গে যাবে। আমরা দুজন একসাথে খাবো। তোমাকে আমি খাওয়াবো।"
মেয়েটি কী বলবে বুঝতে পারছিলো না। সে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
বললাম,"এতো ভাবার সময় নেই। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। জলদি চলো। খাওয়া শেষ হলে সুন্দর একটা ফুলের তোড়া বানিয়ে দেবে। কী দেবে তো?"
মেয়েটি মাথা নেড়ে বললো, দেবে।
মেয়েটিকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম। আমার ক্ষিধে ছিলো না। অনেকদিন থেকেই ক্ষিধে নেই। শুধু মাত্র মেয়েটাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য খেলাম। খাওয়া শেষে সে সুন্দর একটা ফুলের তোড়া বানিয়ে দিলো। মেয়েটিকে সাহায্য করা ছাড়া ফুলগুলো কেনার আর কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না। সেই ফুলের তোড়াটি নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
বাড়িতে ঢুকে চমকে উঠলাম। দেখি স্ত্রী রান্নাঘরে রান্না করছে, আর ছেলে তাকে সাহায্য করছে।
ফুল হাতে আমাকে দেখে স্ত্রী বললো,"কী ব্যাপার, তুমি আজ অফিসে যাও নি? আর হাতে ফুল কেনো? কেউ দিয়েছে, নাকি কারো জন্য কিনেছো? আমি কদিন ছিলাম না, তার মধ্যে এতো কিছু!"
স্ত্রী কী বলছিলো মাথায় ঢুকছিলো না। আমি শুধু আশ্চর্য হয়ে চেয়ে আছি স্ত্রীর দিকে। এতো কাকুতি মিনতি করেও যাকে ফিরিয়ে আনতে পারি নি, সে আজ নিজ থেকে কী করে ফিরে এলো?
স্ত্রীকে দেখে এতো ভালো লাগলো যে, বলার মতো নয়। ইচ্ছে করছিলো খুশিতে ভেউ ভেউ করে কাঁদি।
আচ্ছন্নের মতো স্ত্রীর কাছে এসে বললাম,"নাজনীন, আবার কখনো যদি তোমার সাথে বাজে আচরণ করি তাহলে জুতা দিয়ে মেরো। তবু প্লিজ বাড়ি ছেড়ে চলে যেও না। তুমি না থাকলে এই সংসার জাহান্নাম হয়ে যাবে।"
তারপর ফুলের তোড়াটি স্ত্রীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,"এই ফুলগুলো কেনার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। তবু কেনো কিনলাম, এখন বুঝতে পারছি। তুমি আসবে বলে আল্লাহ আমাকে দিয়ে ফুলগুলো কিনিয়েছেন। প্লিজ নাও।"
সে হাসি মুখে ফুলগুলো নিলো।
স্ত্রীর রান্নার দিকে তাকিয়ে এরপর বললাম,"নাজনীন, তুমি চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমার ক্ষিধেও হারিয়ে গিয়েছিলো। তুমি ফিরে আসাতে বহুদিন পর আজ আবার ক্ষিধে অনুভব করছি। আজ অনেক ভাত খাবো। দীর্ঘদিনের না খাওয়া ভাত আজ একসাথে খাবো।"
ছেলেটাও সুর মিলিয়ে বললো,"আজ আমিও অনেক ভাত খাবো।"
স্ত্রী বললো,"তোমরা গোসল সেরে টেবিলে এসো। আমি খাবার দিচ্ছি।"
সেদিন সারাদিন ভেবেছি স্ত্রীর এই হঠাৎ ফিরে আসার ব্যাপারটা। ভেবেছি স্ত্রীর ফিরে আসার সাথে ছোট্ট মেয়েটাকে সাহায্য করার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা?
সন্ধ্যায় এর উত্তর পেলাম।
সন্ধ্যায় স্ত্রী পড়ার টেবিলে ছেলেকে একটা হাদীস শেখাচ্ছিলো।
স্ত্রী ছেলেকে বললো,"একদিন এক লোক নবীজী (সঃ) কে প্রশ্ন করলো,'ইয়া রাসুলাল্লাহ, কেউ যদি একটা অন্যায় কাজ করে ফেলে তাহলে এর প্রতিকার হিসেবে সে কী করবে?'
নবীজী বললেন,'সে আল্লাহর কাছে তওবা করবে। যার সাথে অন্যায় করা হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চাইবে। এবং একটা ভালো কাজ করবে। তাহলে আল্লাহ ঐ অন্যায়ের গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং ভালো কাজের পুরষ্কার দেবেন'।"
স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,"হে আল্লাহ, আপনি অসাধারণ পুরষ্কার দিয়েছেন। অসাধারণ।"
Copy From
https://www.facebook.com/imtiaz.rafi.7106

17/01/2024

Wel Come in Quazi Mart

Address

71 No A B Goho Road
Mymensingh
2200

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Quazi Mart posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Quazi Mart:

Share