02/01/2025
প্রফের ভাইভা ঠিক কতটুকু ভয়াবহ যারা না দিয়েছেন তারা কখনোই জানবেন না, ছোট্ট একটা নমুনা বলি,
গত দুইদিন ধরে রংপুরে রোদ ওঠেনা,শীতে কাপাকাপি অবস্থা,সাইবেরিয়ার সাবসেক্টর বলা চলে।এখন আসি নমুনার কথায়, স্বভাবত আমি কেমন, কতটুকু পড়াশোনা করি সেটা আশেপাশের সবাই জানে।আমার মতো মানুষের ই মাইক্রো ভাইভার আগে সারা রাত ঘুম হয়নি। ঘুমোতে গেলেই অস্বাভাবিক রকম বুক ধরফর করা, চারিদিক কেমন কেঁপে কেঁপে উঠতেছে ফিলিংস টা নরমাল। রাত ৩ টার দিকে আমি খেয়াল করলাম,বাইরের দুনিয়া যেখানে ১১/১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জমে গেছে, তখন আমার কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরে পড়ছে। এক একটা রাত যেন জীবন থেকে এক একটা বছরের আয়ু কেড়ে নিয়ে চলে যায়। মরে গেলেই হয়তো মুক্তি! এত অমানবিক যন্ত্রণা সহ্য করছি কেন আমরা? মেডিকেলে পদার্পণের সেই প্রথম দিন নেয়া শপথ,
"I SOLEMNLY PLEDGE to dedicate my life to the service of humanity"
অথবা,
ছোটবেলায় প্যারাগ্রাফে লেখা সেই ডাক্তার হতে, যারা মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে গেছেন সারা জীবন।
৫ টা বছরের টর্চার সেল শেষে একটা সার্টিফিকেট। বাহিরের দুনিয়া,পরিবার পরিজনরা জানেন, তাদের ছেলে-মেয়ে ডাক্তার হয়েছে। অথচ ওই সদ্য ডাক্তার হওয়া ছেলে মেয়ে জানে, তার বিভীষিকাময় পথের কেবল শুরু। শুধু এমবিবিএস দিয়ে কিছুই হয়না আজকাল, চারপাশে এত এত ডিগ্রী। বিসিএস তো সোনার হরিণ!এফসিপিএস ও কম যায় না। পরিশ্রমের সাথে ভাগ্যের লীলাখেলার শেষ সীমানা যদি এক হয় তবেই এগুলো অর্জন করা সম্ভব! এই সোনার হরিণ পাবার আশায় অসংখ্য অজস্র মেধাবী প্রাণ নিজেকে অমানুষ করে তুলেছে দিনের পর দিন, আমাদের জীবনে অনুষ্ঠান বলতে কিছু নেই,ফ্যামিলি গেট টুগেদারে আমাদের পাওয়া যায় না,নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষের মৃত্যুতে পাশে থাকার মতো সৌভাগ্যও আমাদের সবার হয়না। আমাদের মনটা যদিও বা সেই স্বজনদের কাছে পরে থাকে, তবু দেহের ছুটি হয়না।
সেসব ও আমরা মুখ বুজে সহ্য করে নেই। তারপর যখন ডাক্তারদের নিয়ে কোন মিডিয়া কোন আর্টিকেল পাবলিশ করে, সেটার কমেন্ট বক্স চেক করে নিজেকে অস্তিত্বহীন, ব্যর্থ মনে হয়! এত অসম্মান, এত ঘৃণা সত্যিই কি আমরা ডিজার্ভ করি? একটা পজিটিভ কমেন্ট কেও করেনা ডাক্তারদের পক্ষে। ডাক্তারদের প্রতি তীব্র ঘৃণা পুষে রাখা ওই ব্যক্তির ও স্বপ্ন থাকে, তার ছোট্ট খোকা বড় হয়ে অনেক বড় ডাক্তার হবে। কি অদ্ভুত পৃথিবীর নিয়ম তাইনা?সবাই ভাবে ডাক্তার মানেই অনেক টাকা, গাড়ি,বাড়ি, ধন-দৌলত সব আমাদের ই। কিন্তু বাস্তবতা কি?
প্রাপ্য সম্মানী(পড়ুন ভাতা) পেতে আমাদের সাদা এপ্রোন গায়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে ওয়ার্ডে না গিয়ে।এক ভিডিও তে এক ভাই বলেছেন,যাকাতের জন্যও অনেক ডাক্তার অপেক্ষা করেন। একজন আপু, নিজের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেছেন। যাক গে সেসব কথা। মানুষের ধারণা,মানব সেবার জন্যই ডাক্তার। ঠিক আছে, আমি মানলাম। তবে একই কথা আপনারা ইঞ্জিনিয়ার দের জন্য বলেন না কেন?মানবতার ইঞ্জিনিয়ার,অথবা মানবতার উকিল! হাস্যকর লাগছে শুনতে?
এত আন্দোলন সংগ্রামের পর রেজাল্ট আল্টিমেটলি কি দাঁড়ালো? গতকাল দেখলাম, মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ১১ গ্রেড থেকে উন্নিত করে ১০ম গ্রেডের সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আর আমাদের প্রাইভেট ট্রেইনি ভাইবোনদের ৯ম গ্রেডের সুযোগ সুবিধা চাওয়াতেই হয়েছে যত অন্যায়। কারণ ডাক্তারদের অনেক টাকা।
আপনাদের আকাশ সমান ঘৃণা আর আক্রোশের কারণ হয়েও,আমরা আপনাদের ঘৃণা করতে পারিনা, কারণ,
"THE HEALTH AND WELL-BEING OF MY PATIENT will be my first consideration
I WILL NOT PERMIT considerations of age, disease or disability, creed, ethnic origin, gender, nationality, political affiliation, race, sexual orientation, social standing or any other factor to intervene between my duty and my patient"
পাগলের প্রলাপে কেও কিছু মনে করবেন না যেন। সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
রমেক
১.০১.২০২৫
© From platform