
29/06/2025
কুমিল্লা মুরাদনগরের ঘটনা ইতিমধ্যেই সবাই জানেন। আজকে নাকি আসামী ফজর আলীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এই ঘটনা নিয়েই কিছু স্পর্শকাতর কথা বলি। নিজ দায়িত্বে পড়ার ও হজম করবার অনুরোধ রইলো।
এই ঘটনায় দুঃখজনক ব্যাপারটা হলো যে, সংশ্লিষ্ট নারী পুরুষকে যখন হাতে নাতে ধরা হয় তখন কেউ একজন সেটা ভিডিও করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়। এসব পোস্টের কিছু কিছু কমেন্টে কেউ কেউ কমেন্ট করছেন যে, আসলে এখানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বরঞ্চ অভিযুক্ত দুজন নারী পুরুষ, যেখানে নারীটি হিন্দু সম্প্রদায়ের; পরকীয়ায় আসক্ত ছিলো। পরিবারের সবাই পুজোতে ব্যস্ত থাকার সময় অভিযুক্ত পুরুষ মানে যাকে ধর্ষক বলা হচ্ছে আর কি; মহিলাটির ঘরে প্রবেশ করে এবং দুজনে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে পরিবার এসে তাদের দুজনকে হাতেনাতে ধরে। মহিলাটিকে মারতে থাকে এবং পুরুষটিকে ধরে রাখে। তবে এটি অন্য কোন ভিডিও হওয়াটাও স্বাভাবিক। হয়তো ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও এটি নয়।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ভিডিওটি পুরো ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। আমি ফজরের পর ফেইসবুক ওপেন করে পুরো বেকুব বনে যাই। যারা পোস্টটিকে ভাইরাল করেছেন তারা অনেকেই ভিডিও সমেতই ভাইরাল করেছেন। তারা কি বুঝে করেছেন আল্লাহ্ মালুম! তাই এ ভিডিও দেখতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। পুরো নিউজ ফিড এই ভিডিওতে সয়লাব।
ভিডিওটাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, মাথায় সিঁদুর ও হাতে শাখা পরিহিতা নারীটি যেভাবে এবং যে ভঙ্গিমায় সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় খাটের উপর বসে রয়েছে তাতে প্রতীয়মান হয় যে, সে নিজেই সম্পূর্ণ নগ্ন হয়েছে। বিবাহিত যে কেউই বিষয়টা বুঝতে পারবে। ধর্ষিতাকে যেভাবে জোরপূর্বক নগ্ন করা হয়; সেভাবে বিষয়টা হয়নি, আমি আমার শব্দ চয়নের জন্য দুঃখিত। নারীটির শরীরে কোন আঘাতের চিহ্নও নেই যেমনটা কোন রেইপ ভিক্টিমের গায়ে থাকে। কোন ছেড়া ফাটা কাপড়েরও ভিডিওতে দেখানো খাটের উপর পড়ে থাকতে দেখা যায় না। অর্থাৎ প্রবল সম্ভাবনা আছে যে, সম্পর্কটা স্বেচ্ছায় হয়েছে। এখানে কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি, গণধর্ষণ তো পরের কথা। যারা আইন প্রশাসনের লোক আছেন এবং অপরাধ বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেন তারা এই জিনিসটা খুব ভালো বুঝবেন। সে সব কমেন্টও আমার চোখে পড়েছে যেখানে আসলে বলা হচ্ছে যে মহিলাটি শ্বশুরবাড়ির চাপে পড়ে এখন ধর্ষণ মামলা করেছেন তারই পরকীয়া প্রেমিকের বিরুদ্ধে। সত্য মিথ্যা আমার জানা নেই। অভিযুক্ত পুরুষটিকে কখনো বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত, কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। হয়তোবা তাদের সামনে রক্ষণশীল পরিবারের মান সম্মান বাঁচানোর এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এমনটাই করতে হচ্ছে। আবার মহিলাটি হিন্দু বলে সংখ্যালঘু ট্রামপ কার্ডও কিন্তু খেলা হচ্ছে। আমার কথা হল যেখানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি, এটাকে ধর্ষণের ঘটনা বলা নিতান্তই অজ্ঞতা মূলক কাজ। এখানে তখন যে দোষী, সে আসলে ভিকটিম হয়ে যায় কেননা, অপরাধ তো সে একা করেনি। তাহলে শাস্তি কেন সে একা ভোগ করবে? আর নারীটিই কেন ধর্ষিতা বলে পার পেয়ে যাবে? সে তো এখানে ধর্ষিতা নয়, বরং পরকীয়া প্রেমের অপরাধের অংশীদার। শাস্তি তো তারও পাওয়া উচিৎ। শুধু পুরুষটাই কেন শাস্তি পাবে? হ্যাঁ যদি ধর্ষণের ঘটনা হয়ে থাকে তাহলে শাস্তি পাওয়ার একমাত্র পুরুষটাই উপযুক্ত এখানে নারীটির কোন দোষ নেই, কিন্তু যদি স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক হয়ে থাকে তাহলে এখানে দুজনকেই শাস্তি দিতে হবে। একপেশে কথাবার্তা এখানে চালাচালি করা উচিত নয়।
এখানে আবার অনেকের প্রশ্ন আসতে পারে, ছি ছি; আপনি এমন একটা স্পর্শকাতর ভিডিও দেখে একজন মহিলাকে জাজ করেন? ভাই, যে ভিডিওটা করছে সেও অপরাধ করছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এই ভিডিওটা একটা এভিডেন্স; এটা তো স্বীকার করবেন, নাকি? অনেকে বলবেন, আপনার বোনের সাথে হলে বুঝতেন? জি অবশ্যই। এবং আমার বোন যদি পরকীয়ায় জড়িয়ে যেতো আর এভাবে ধরা পড়তো তাহলে আমি তার শাস্তির ব্যবস্থা করতাম। ছেড়ে দিতাম না। তাই আমি চাইবো, যদি পরকীয়া প্রেমের ঘটনা থাকে তাহলে যেন নারী-পুরুষ উভয়েই শাস্তি পায়। এবং এটা যেন পরকীয়া প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য একটা শিক্ষা হয়ে থাকে। যদি এটা অন্য কারো ভিডিও হয়, আর যদি মুরাদনগরের ঘটনা সত্যি হয় এবং মহিলা নিজে ভিকটিম হয় তাহলে যেন সুষ্ঠু বিচার হয় এবং ধর্ষক সাজা ভোগ করে। এবার সে হিন্দু হোক, মুসলিম হোক আর অন্য কোন সম্প্রদায়েরই হোক না কেন। আল্লাহই ভালো জানেন।
**উপরের লেখা আমার সম্পূর্ণ নিজস্ব অভিমত। তাই দ্বিমত করার সুযোগ অবশ্যই আছে। ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ রইলো।
- ইফতেখারুল ইসলাম শুভ