28/08/2025
এক ভয়াবহ অদৃশ্য সংকটে বাংলাদেশ।সম্পত্তির জন্য গত ২৭ আগস্টে ভাইয়ের হাতে ভাইয়ের চোখ তুলে নেওয়া কিংবা ১২ জুলাই ২০২৫-এ চাঁদার জন্য প্রকাশ্য রপ্তায় কাউকে পাথর মেরে তখন ওর মত নির্মম ঘটনা ঘটে তখন ভাবতেই হয় যে এত অমানুষ যখন হয়ে গেল। হুট করে মনে হতে পারে এগুলো কোন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বা পুরনো শত্রুতার কারণে ঘটেছে ঘটনাগুলো। এগুলো বাদ দিলেও এরকম অহরহ ঘটনা আমাদের আশেপাশে ঘটে যাচ্ছে প্রতিদিন ছোট্ট একটা কারণ কে কেন্দ্র করে অনেক বড় ধরনের হত্যা পর্যন্ত হচ্ছে। তবে এর পেছনের কারণ এবং এই রকম ঘটনার ইতিহাস আপনার চোখের বিস্ফোরণ ঘটে যাবে।
১৭৯৩ সালের পর ফ্রান্সে তৈরি হয় এক ভয়াবহ অরাজকতার পরিবেশ , চারিদিকে খুন অন্যায় চুরি ডাকাতি, বিশৃঙ্খলা সহ শত শত খুনের ঘটনা ঘটেছে, ঘটনা এত ভয়াবহতা ছিল যে একটি মৃত্যু সময়ের মধ্যেই তিনবার গণঅভ্যুত্থানে লাগে
এরকম আরেকটা ঘটনা ঘটে ১৭৪৭ সালের দিকে, সহস্র মানুষ খুন হত্যা রাহাজানি একের পর এক মানবীয় গুণবালীর বিলুপ্ত হয়েছিল সেই সময়। এই অরাজক পরিবেশ এত বেশি ছিল যে ইতিহাসবিদরা বলেন প্রায় ৭৫ হাজার নারীদের অপহরণ ও ধর্ষণ হত্যা ধর্মান্তরিত করা হয়।
শুধু ভারতী নয় ১৯৯১ সালের দিকে বাংলাদেশেও শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতার দাঙ্গা হাঙ্গামা আগুন অন্য সাম্প্রদায় কে হামলা সহ নানা রকমের ঘটনাটা কি হয়েছিল বাংলাদেশ।
১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডার গণহত্যা বলুন কিংবা ২০০৩ সালে সাদ্দামের পতন প্রতিটি ঘটনায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ও মানুষের দয়াময় হীনতার হিংস্রতার এক আলাদা রূপ প্রকাশ করে দিয়েছিল।
তুই কি ভয়াবহ ঘটনাগুলো পড়ার পরে হয়তো আপনি ভাবছেন যে হুট করে কি হয় মানুষ কেন এরকম অমানুষ হয়ে যায় কিন্তু সবচাইতে রহস্য ও ভয়ের বিষয় হচ্ছে প্রতিটি ঘটনায় ঘটেছিল তখনকার সময়ের প্রতিটি স্বৈরশাসক পতনের পরেই প্রতিটি দেশেই এরকম ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল দেশবাসী……জি হ্যাঁ !
👉 রাজনৈতিক বা স্বৈরশাসক পতনের পর কেন হয় এই সহিংসতা ?
কারণ:
🛑 আইনের শাসন ভেঙ্গে পড়ে।
মানুষ ভেবে নেয় তখন অপরাধ করলে শাসন বা আইনের আওতায় আনার কেউ নেই।
🛑 ভিন্ন ভিন্ন দল ও মতবাদ তৈরি হয়, তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন।
🛑 পূর্বের শত্রুতা।
🛑 দখলদারি মনোভাব ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ও তা অভাবের কারণে হয়ে থাকে।
👉 কিন্তু আইনের শাসন ভেঙে পড়লেই কি মানুষ এরকম অমানবিক ও অরজগতের মেতে উঠবে তার সামাজিক যে গুণাবলী মানবিক সবচেয়ে হারিয়ে যাবে ??? আর মেতে উঠবে সকল অসামাজিক কাজে?
ঠিক এরকম একটি প্রশ্ন মনে এসেছিল ড. সিগমন ফ্রয়েড এর । তখন তিনি শুরু করেন গবেষণা আর আবিষ্কৃত হয় Duality of Human Nature নামে আলাদা একটি থিওরি যা প্রমান করতে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান থাকে একটি শয়তান। মানুষের ভিতরেই দুটি সত্তা বিদ্যমান থাকে একটি সত্য হয়তো সামাজিক পারিবারিক কিংবা নৈতিকতার কথা ভেবে কাজ করে আরেকটি সত্তা জাগিয়ে তুলে মানুষের সেই অমানবিক ও পাশবিক ও নির্মমতার প্রতিচ্ছবিগুলো।
শুধুমাত্র ডক্টর সিগমন ফ্রয়েড এই নয় আমেরিকার স্ট্যান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ২৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে করা হয়েছিল একটি পরীক্ষা।
টেনফোর্ড ইউনিভার্সিটি এর বেসমেন্টে তৈরি করা হয় একটি কৃত্রিম জেলখানা, আর একজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৪ জন কে করা হয় আসামি আর ১৪ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কারা রক্ষী হিসেবে, একসাথে পড়াশোনা করা ২৮ জন মানুষ এর মাঝে শুধুমাত্র লোহার তৈরি একটা খাঁচা বদলে দিয়েছিল মানুষের স্বাভাবিক চরিত্রকে। সেদিন ১৪ জন কারো কি হয়ে গিয়েছিল অমানবিক নিষ্ঠুর আর ভয়াবহ সব নিষ্ঠুরতা গিয়ে নিয়েছিল তাদের। দু সপ্তাহের এই এক্সপেরিমেন্ট এত ভয়াবহতা তৈরি করা শুরু করেছিল যে মাত্র ৬ দিন পরে তা বন্ধ করে দিতে হয়। এই রকম ঘটনার তালিকা অনেক বড়।
যখন একটি রাজনৈতিক দলের পতন ঘটে, তখন আরেকটি দলের কর্মীরা প্রায়শই উগ্র ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এর ফলেই শুরু হয় একের পর এক হত্যাকাণ্ড, প্রতিশোধ, গুজব, উস্কানি আর গণউন্মাদনা। মানুষ যখন একবার এই উন্মাদনার স্বাদ পায়, তখন আর সহজে তা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না। ইতিহাসে ১৭৯৪ ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজন কিংবা রুয়ান্ডা গণহত্যা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
ইতিহাস বলে—প্রতিটি গণঅভ্যুত্থানের পরে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে নতুন আরেকটি অস্থিরতা তৈরি হয়। উপরের তথ্য উপাত্ত গুলোর দিকে তাকিয়ে আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যায় ঠিক কাছাকাছি প্রতিচ্ছবি তবে কি বাংলাদেশী আসছে আরেকটি ভয়াবহ অমানবিকতার কালো ছায়া ১৯৭১ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে খবর মিলিয়ে মোট অভ্যুত্থান সংখ্যা ১১টি+। বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থাও এরকম একটি ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে হয়তো আগামী দিনে কোন আরেকটি কালো ছায়া গ্রাস করে নিবে আমাদের যদি না এখনই লাগাম টেনে ধরা না হয় ।
যে কোন দেশের জন্য অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়গুলো খুবই স্পর্শকাতর ও এগুলো হ্যান্ড সামাল দিতে হয় খুবই সাবধানতার সাথে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মানসিক বিশেষজ্ঞ সকল দলের সম্মিলিতভাবে। কিন্তু আফসো বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে রাজনৈতিক দলের কোন পরামর্শের প্রয়োজন হয় না কারণ তারা প্রতিটি দলেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে কম নয় এক একটি ব্যাংকের চাইতে কম নয় এক একটি সম্রাজ্যের চাইতে কম নয়। ভাই কখনোই তাদের প্রয়োজন পড়ে না কোন রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কিংবা মানসিক বিস্তারকদের।
নির্বাচন স্বাভাবিকভাবেই দেশের পরিস্থিতি কি একটু উত্তপ্ত করে তুলে এটি প্রতিটি দেশের একটি স্বাভাবিক ঘটনার অন্তর্ভুক্ত তবে অভ্যুত্থান পরবর্তী নির্বাচন হয়তো আরেকটি অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা খুলে না দেয় সেই ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে সর্ব রকম উপায়ে সাবধান থাকতে হবে , দেশের প্রতিটি দল মত নির্বিশেষে।
যদি এসব পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে সামনে আসতে পারে ২০০৭ সালের মতো আরেকটি ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট। যেমন সে সময় পুরো জাতি অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত হয়েছিল, তেমনি আবারও বাংলাদেশ অরাজকতা, হানাহানি ও গভীর রাজনৈতিক বিভাজনের দিকে ঠেলে যেতে পারে।
ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়—অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার ফল সবসময় রক্তক্ষয়ী। আজকের এই সংকট শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং জাতির নৈতিকতা ও মানবিকতার যদি না এখনোই আইন বিচার ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক দল গুলোকে দলীয় নেতাকর্মীদের স্বচ্ছতা সচেতনতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে না আনা যায়, তবে আগামী দিনের বাংলাদেশ আরও ভয়াবহ অরাজকতার মুখোমুখি হবে।
তবে আশার আলো এখনো আছে—যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, যদি রাষ্ট্র ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার ভিত্তি গড়ে তোলে, তবে ধ্বংস নয়, পুনর্জাগরণের নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয়তো এখনোই, কারণ কাল হয়তো কোন কালো দিন হয়ে আসতে পারে।
visit Ahmad Rafi