17/06/2025
||মোবাইল ফ্ল্যাশ স্টিকার- হারিয়ে যাওয়া এক নস্টালজিয়া ||
ছোটবেলায় আমরা যারা ২০০০ এর দশকে বা তার আশপাশে বড় হয়েছি, তারা অনেকেই মোবাইল ফ্ল্যাশ স্টিকারের সঙ্গে পরিচিত। বিশেষ করে যখন চীনা বা কোরিয়ান ফোনগুলো বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তখন এই মোবাইল ফ্ল্যাশ স্টিকার ছিল এক অবিচ্ছেদ্য ট্রেন্ড। ফোনের পেছনে ছোট্ট একটি স্টিকার লাগানো থাকত। ফ্ল্যাশ অন অথবা অপর পাশ থেকে কেউ মিসড কল করলেই সেটা ঝলকে উঠত রঙিন আলোয়। তখনকার তরুণ-তরুণীদের কাছে এটা ছিল স্মার্টনেস আর ফ্যাশনের এক ধরণের প্রকাশ।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এটা কিভাবে কাজ করতো❓
এই স্টিকারগুলো আসলে খুবই সাধারণ প্রযুক্তিতে কাজ করত। কেউ কল করলে মোবাইল ফ্ল্যাশ স্টিকার জ্বলে উঠত মূলত ফোনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল বা ভাইব্রেশন সেন্সিং প্রযুক্তির মাধ্যমে। স্টিকারের ভেতরে একটি ক্ষুদ্র ইলেক্ট্রনিক সার্কিট ও মাইক্রো LED লাইট থাকত, যা ফোনে ইনকামিং কল বা মেসেজ এলে নির্গত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ শনাক্ত করে আলো জ্বালিয়ে দিত। কোনো কোনো স্টিকার আবার ফোনের ভাইব্রেশনের প্রতিক্রিয়াতেও সক্রিয় হতো। এতে ব্যাটারির দরকার হতো না, কারণ এটি ফোন থেকে নির্গত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজে থেকেই আলো দিতে পারত। ফলে ফোন বাজলে বা কল এলে হঠাৎ রঙিন আলোয় ঝিকমিকিয়ে উঠতো বেশ নজরকাড়া ভঙ্গিতে। দেশের দোকানগুলোতে এগুলো তখন হরহামেশাই দেখা যেত। দামও ছিল নাগালের মধ্যে।স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের কাছে এগুলো ছিল অত্যন্ত প্রিয়। অনেকে আবার একাধিক ডিজাইন কিনে রাখত, যাতে ইচ্ছেমতো বদলানো যায়।
কিন্তু এখন আর এই মোবাইল ফ্ল্যাশ স্টিকার দেখাই যায় না বললেই চলে। স্মার্টফোনের আধুনিক ডিজাইন, ক্যামেরার সেন্সর উন্নত হওয়া এবং স্লিম ডিজাইন অনুসরণ করার ফলে মানুষ আর ফোনের পেছনে কিছু লাগাতে চায় না। তাই এই স্টিকার হারিয়ে গেছে সময়ের সঙ্গে।
তবে আজও যদি কেউ হঠাৎ কোথাও পুরোনো কোনো দোকানের গুদামে একটি মোবাইল ফ্ল্যাশ স্টিকার খুঁজে পান, তাহলে হয়তো মনে পড়ে যাবে সেই বর্ণিল দিনের কথা। যেখানে প্রযুক্তি ছিল সহজ, ছোট খুশিগুলো ছিল রঙিন আলোয় ভরা। এটা শুধু একটা স্টিকার ছিল না, বরং ছিল আমাদের শৈশবের স্মৃতির একটা ঝলমলে অংশ। আজকের প্রজন্ম হয়তো সেটা বুঝবে না কিন্তু আমাদের কাছে এটা ছিল এক ধরণের ম্যাজিক।