
03/09/2025
নফসের ইবাদাত: শিরকের এক গোপন রূপ
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন—
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَـٰهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ ٱللَّهُ عَلَىٰ عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمْعِهِۦ وَقَلْبِهِۦ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِۦ غِشَـٰوَةً ۖ فَمَن يَهْدِيهِ مِنۢ بَعْدِ ٱللَّهِ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
“তুমি কি তাকে দেখেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে (নিজ খেয়াল খুশিকে) তার ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ জেনে-শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও হৃদয়ে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর পর্দা টেনে দিয়েছেন। আল্লাহ ছাড়া কে তাকে হেদায়াত দিতে পারে? তবে কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?” ( সূরা জাসিয়া : ২৩)
আল্লাহ তায়ালা কুরআনের আরেক স্থানে বলেন—
أَرَءَيْتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَـٰهَهُ هَوَاهُ ۚ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا
“তুমি কি তাকে দেখেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে তার ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? তবে কি তুমি তার দায়িত্বভার বহন করবে?” সূরা আল-ফুরকান (২৫): ৪৩
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ, قَالُوا: وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟, قَالَ: الرِّيَاءُ
— “তোমাদের জন্য আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাই ছোট শিরকের বিষয়ে।” সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শিরক কী? তিনি বললেন: তা হলো রিয়া (লোক দেখানো আমল)।
(মুসনাদ আহমদ: ২৩৬৩০; সহীহ আল-জামী: ১৫৫৫)
যে মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে সম্পদ, মর্যাদা বা নফসের ইচ্ছার দাস হয়ে যায়, সে আসলে নফসের সাথে আল্লাহর শরীক করাতে জড়িয়ে পরে। এমন মানুষদের জন্য আল্লাহ ধ্বংস অনিবার্য করে রেখেছেন। এ ব্যাপারে রাসুল (স) বলেনঃ
تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ، وَعَبْدُ الدِّرْهَمِ، وَعَبْدُ الْخَمِيصَةِ
“ধ্বংস হোক দিনার (টাকা)-এর দাস, ধ্বংস হোক দিরহাম (মুদ্রা)-এর দাস, ধ্বংস হোক পোশাকের দাস।” (সহীহ বুখারী: ২৮৮৭)
নফসের ইবাদাতের কিছু সহজ উদাহরণ
১. নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর আদেশের উপরে রাখা।
২. রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদাত করা।
৩. হারামকে হালাল বানিয়ে নেওয়া, শুধু নফসের তাড়নায়।
৪. মানুষের ভয় বা লাভের আশায় সত্যকে লুকানো।
৫. অর্থ, পদমর্যাদা বা খ্যাতিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপরে স্থান দেওয়া।
নফসের এমন ভয়ানক ধোকা হতে বাচার জন্য রাসূল ﷺ আমাদের একটি দোয়া শিখিয়েছেন যা তিনিপ্রায়ই পাঠ করতেন—
উচ্চারণ: “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল ‘আজ্যি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুব্নি ওয়াল বুখ্লি ওয়াল হারামি ওয়া ‘আযা-বিল কব্রি, আল্ল-হুম্মা আ-তি নাফসী তাক্ওয়া-হা ওয়াযাক্কিহা-আন্তা খইরু মান্ যাক্কা-হা আন্তা ওয়ালী ইউহা- ওয়া মাওলা-হা-, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘ইল্মিন্ লা- ইয়ান্ফা‘উ ওয়ামিন কালবিন্ লা- ইয়াখ্শা‘উ ওয়ামিন নাফ্সিন লা- তাশ্বা‘উ ওয়ামিন দা‘ওয়াতিন লা- ইউসতাজা-বু লাহা-”
““হেআল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ চাই অপরাগতা, অলসতা, ভীরুতা, বখিলতা, বার্ধক্যতা এবং কবরের শাস্তি থেকে। হে আল্লাহ! আমার নফসকে তাকওয়া দান করো, তাকে পরিশুদ্ধ করো। তুমি-ই তার শ্রেষ্ঠ পরিশোধক। তুমি-ই তার অভিভাবক ও রক্ষক।” (সহীহ মুসলিম: ৬৭৯৯)
নফসকে নিয়ন্ত্রণ না করলে এটিই হয়ে যায় মানুষকে শিরকের পথে ঠেলে দেওয়ার প্রধান কারণ। এজন্য মনে রাখা দরকার আসল তাওহীদ হলো আল্লাহর হুকুমকে নফসের ইচ্ছার উপরে রাখা।
Muhammad Raduan Sheik Rasel