22/07/2025
রাতে ঘুমের মধ্যেও তাঁর নাম মাথায় বাজছে। মাহরিন চৌধুরী। বয়স চল্লিশের ঘরে। বেঁচে থাকলে মাহরিন হয়তো এখন টিফিন গোছাতেন। জ্যামে আটকে পড়া অবস্থায় ফোনে বাকি ভাইবোনদের খোঁজ নিতেন কেননা তিনি বড় বোন। গতকাল উত্তরার মাইলস্টোন আবাসিক স্কুল-কলেজে যখন প্রশিক্ষণের বিমানটি ভেঙে পড়ে, মাহরিনের তখন স্কুলছুটি হয়ে গিয়েছে। অনায়াসে, অক্লেশে খুব সামান্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তিনি ওই পরিস্থিতি থেকে তিনি বের হয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু মাহরিন যে বড়, ছোটদের কথা আগে ভাবাটাই তাঁর জীবনের নিয়তি। কত কচিকাচা, কত প্রিয়মুখ স্কুলের চার দেওয়ালে বন্দি, চকিতে মনে পড়ে যায় মাহরিনের। তাদের বাঁচতে হবে। নামতা রিজনিং এআই ইতিহাস ভূগোল পড়ে বড় হতে হবে। তিনি আর সময় নেননি। অগ্নিকু ণ্ডের দিকে এগিয়ে যান। অন্তত কুড়ি জন শিক্ষার্থীকে সেখান থেকে বের করেন। ছোটদের রক্ষা করতে গিয়ে তার নিজের শরীর ৮০-৯০ ভাগ ঝ ল সে যায়। হাসপাতালে যখন নিয়ে যাওয়া হয়, তাঁর বাঁচার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। মাহরিন সচেতন ভাবেই এই পথ বেছে নেন, তিনি পালিয়ে বাঁচেননি। দায়িত্ব এড়াননি। ভাইবোনেদের মধ্যে বড় ছিলেন তিনি, জীবনের চেয়েও বড় হয়ে গেলেন মরণে। যে ছেলেমেয়েরা আজ বাঁচল, তারা জানবে একজন মানুষ জীবন দিয়ে তাদের বাঁচিয়েছে, এবং শিখিয়ে গিয়েছে পৃথিবীতে ধর্ম বলে যদি কিছু থাকে তবে এটাই ধর্ম। শিখিয়ে গিয়েছে, সব মরণ নয় সমান। কখনও কখনও মরণ জীবনের চেয়ে সহস্রগুণ বড়। আশা রাখি বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরউজ্জ্বল হয়ে থাকবে মাহরিনের ত্যাগের কথা। ধর্মে আমার মতি নেই। শুধু মনে পড়ে জসিমুদ্দিনের কবর কবিতাটির শেষাংশ।
"জোড়হাতে দাদু মোনাজাত কর, 'আয় খোদা! রহমান!
ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যু-ব্যথিত-প্রাণ।"
ছবি: Debashish