
09/06/2025
গল্পের নাম: "হিরা মনির অপেক্ষা"
গ্রামের শেষপ্রান্তে একটা ছোট্ট নদীর পাশে ছিল হিরা মনিদের বাড়ি। শান্ত, চুপচাপ, আর অদ্ভুত রকমের চোখ-ধাঁধানো এক মেয়ে ছিল হিরা মনি। সবাই তাকে পছন্দ করতো, কিন্তু হিরা মনির চোখে ছিল একটাই ছায়া—আরিফ।
আরিফ ছিল হিরা মনির ছোটবেলার বন্ধু। একসাথে বড় হওয়া, স্কুলে যাওয়া, নদীর ঘাটে বসে কাগজের নৌকা ভাসানো—সবই একসাথে। সময়ের সঙ্গে তারা বুঝে ফেলেছিল—এই বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্বের মধ্যে নেই, কিছু বেশি, অনেক বেশি।
কিন্তু বাস্তব সবসময় গল্পের মত হয় না।
আরিফ ঢাকায় চলে যায় পড়ালেখার জন্য। যাওয়ার সময় বলেছিল,
“হিরা, আমি ফিরবো। তুমি শুধু আমার জন্য অপেক্ষা করো।”
হিরা মনি হাসিমুখে বলেছিল, “আমি সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারবো, শুধু তুমিই থেকো প্রতিশ্রুতির পাশে।”
সেই প্রতীক্ষার শুরু—দিন গেল, মাস গেল, বছর পেরুলো। হিরা মনি অপেক্ষা করতেই থাকলো। তার সব বন্ধুরা বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেলো, কিন্তু হিরা প্রতিদিন সেই নদীর পাড়ে বসে থাকতো, হয়তো মনে মনে ভাবতো, আজ হয়তো আরিফ ফিরে আসবে।
একদিন হঠাৎ গ্রামে খবর আসে—আরিফের বিয়ে হয়েছে শহরে, একজন ধনী মেয়েকে। খবরটা হিরা মনির কাছে যেন বজ্রাঘাতের মত ছিল।
তবু হিরা মনির চোখে কোনো অভিমান ছিল না, শুধু ছিল নীরব এক ভালোবাসা।
বছর দুই পর, আরিফ গ্রামে আসে। হিরার চোখে চোখ রাখে। হিরা শুধু হাসে, আর বলে,
“তুমি এসেছো, এতেই শান্তি। বাকি পথ আমি একাই চলবো।”
আরিফ কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু হিরা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল,
“ভালোবাসা কখনো দাবি করে না, শুধু অপেক্ষা করে… চুপচাপ।”
সেই দিনই শেষবার হিরাকে দেখা গিয়েছিল নদীর পাড়ে। এরপর সে আর কাউকে কাছে আসতে দেয়নি। আজও কেউ যদি সেই নদীর পাড়ে যায়, শোনা যায় বাতাসে এক মিষ্টি গলায় ফিসফিসানি—
“আমি এখনো অপেক্ষায় আছি…”