01/04/2025
**গ্রাম থেকে শহরে **
আমার ছোটবেলা কেটেছে এক শান্ত গ্রামে। চারপাশে সবুজের সমারোহ, নদীর তীরে ঘাসে ঢেকে থাকা ছোট ছোট পথ, আর পাখিদের গান—এমন এক পরিবেশে বড় হওয়া খুবই সুন্দর ছিল। তবে শহরের প্রতি একটা অদৃশ্য আকর্ষণ ছিল মনে। শহরের উচ্চতা, দালান-কোঠা, উঁচু রাস্তা, গাড়ির সোঁ সোঁ শব্দ—এইসব কিছুই আমাকে নিজের কাছে অজানা মনে হত।
একদিন মা-বাবা আমাকে বলল, "শহরে যেতে হবে, সেখানে তোমার ভালো ভবিষ্যতের জন্য কিছু সুযোগ অপেক্ষা করছে।" সেই মুহূর্তে আমি কিছুটা হতাশ ছিলাম। গ্রাম ছেড়ে শহরে যাওয়া মানে তো আমার অচেনা পরিবেশে ঢুকে পড়া, কিন্তু আর উপায় ছিল না। গ্রাম ছেড়ে শহরে আসার দিন আমার মনে ছিল কেমন এক অস্থিরতা।
যেদিন শহরে আসলাম, সেদিন আকাশটা ছিল মেঘলা। গাড়ির জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম শহরের বিশালতা, একের পর এক বাড়ির সারি, আর মানুষের ভিড়। রাস্তার ধারে অসংখ্য দোকান, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির সারি—এমন দৃশ্য দেখে আমার মনটা একটু অস্বস্তিতে পড়েছিল। গ্রামে কখনো এমন দৃশ্য দেখিনি। তবে কিছুক্ষণ পর আমি বুঝতে পারলাম, এই শহরের মাঝে মানুষের জীবনে এক ধরনের আলাদা গতির অনুভূতি রয়েছে। সব কিছু এত দ্রুত চলে, এত কিছু ঘটে এখানে!
শহরের প্রথম দিনগুলো ছিল একটু বিভ্রান্তিকর। গ্রামে যেখানে শান্তি ছিল, শহরের ভিড়, গতি আর শব্দ আমাকে অবাক করে দিচ্ছিল। তবে ধীরে ধীরে আমি শহরের সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করলাম। নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম, নতুন বন্ধুরা পেলাম। শহরের জীবনের প্রতি এক ধরনের ভালোলাগা তৈরি হলো, তবে গ্রামটার জন্য মনটা মাঝেমাঝে উড়ে যেত।
এখন আমি শহরের এক অংশ হয়ে গেছি। তবে মনেমনে আজও মাঝে মাঝে ভাবি, গ্রামের সেই সরল জীবনটা কত সুন্দর ছিল। তবুও, শহরের সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষার আধুনিকতা আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শেখাচ্ছে। জীবনটা একটা যাত্রার মতো, যা কেবল সামনে এগিয়ে চলে—শহর কিংবা গ্রাম, আমাদের কাজ হলো সেই যাত্রাকে নিজের মতো করে উপভোগ করা।