Sheakshazib

Sheakshazib আমি যাদের দুচোখের বিষ তারা আমায় খেয়ে মরে যা প্লিজ।

ব্যাটামানুষ আসলে ভালো মেয়েদের কদর করতে জানেনা। নাহলে যে মেয়েটা সকালে উঠে জায়নামাজ খুঁজতো, কোরআন তিলওয়াত দিয়ে দিন শুরু কর...
08/07/2025

ব্যাটামানুষ আসলে ভালো মেয়েদের কদর করতে জানেনা। নাহলে যে মেয়েটা সকালে উঠে জায়নামাজ খুঁজতো, কোরআন তিলওয়াত দিয়ে দিন শুরু করতো তাকে কিভাবে তাড়িয়ে দিতে পারে?

বাজারদর বেড়ে গেলে হিসাবী মেয়েটা পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করতো। বেগুনের দাম বাড়লে মিষ্টি কুমড়ার বেগুনি বানাতো। কাঁঠালের ইউনিক বার্গার রেসিপি দিতেই একদল তো তাকে কটুকথায় চিপেচেপে ভর্তা বানিয়ে দিলো। শুধু কী তাই? একজন নয়, দু'জন নয় হাজার হাজার ব্যাডামানুষ মিলে বাপ-মা হারা মেয়েটারে বিদায় করে তবেই থামলো। আমার এখনো মনে পড়ে সারাজীবন কষ্ট করে কেবল মাত্র তিনটা ট্রলিব্যাগ নিয়ে তার নিঃশব্দ চলে যাওয়াটা। শুনেছি মাঝেমাঝেই ফোন করে সে ফিরতে চায়। কিন্তু পুরুষের মন, সে বড়োই কঠিন। কোনোমতেই আর তাকে ফেরত নেবে না।

তার সাজানো ঘরটাও তছনছ করতে একবারও ভাবেনি কেউ। যে হাসের ডিম বেঁচে পদ্মা সেতু বানালো সেই হাঁসটাকেও নিয়ে গেলো। যে পুকুরের মাছ বেঁচে মেট্রোরেল করলো সেই পুকুরটাকেও জলঘোলা করে মাছগুলো মেরে খেলো। আহারে পুরুষ! নতুন পেলে পুরোনো কারো কথা কি আর মনে থাকে তোমাদের? কিন্তু সে তোমাদের কথা ভোলেনি, যাবার আগে ঠিকই বাসন ভরে রান্না করে রেখে গিয়েছিলো যাতে খুধার সময় তোমরা খেতে পাও পেটপুরে।

তবে আল্লাহর দুনিয়ায় ভালো পুরুষও আছে। যাকে তোমরা অবহেলা করে ছুড়ে ফেলেছিলে, বর্ডারের ওপার থেকে একজন তাকে যত্নে কুড়িয়ে নিলো। মুছে দিলো তার দুঃখ, ভুলিয়ে দিলো পুরোনো সব ব্যাথা। কিন্তু মেয়েটা নাকি এখনো মায়া কাটাতে পারেনা। প্রায়শই একে ওকে ফোন করে বলে তার জন্য চট করে ঢুকে পড়ার ব্যবস্থা করে দিতে। সে আবার ফিরতে চায়, পোষা মুরগির ডিম বেঁচে করে দিতে চায় বুলেট ট্রেন।

একেই বলে মায়াবতী, একেই বলে নারীর মন। 🥹

আহারে! আজকে একটা বছর হয়ে গেল কিন্তু কেউ বুঝলো না তাকে। ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। 🤧

আমি বুঝেছি, তোমার জীবনে আমার গুরুত্বের পরিসীমা অতিক্রম করাটা ঠিক হয়নি। আমার বোঝা উচিত ছিল, কাউকে ভালোবাসলে আগে নিজের অবস...
03/07/2025

আমি বুঝেছি, তোমার জীবনে আমার গুরুত্বের পরিসীমা অতিক্রম করাটা ঠিক হয়নি। আমার বোঝা উচিত ছিল, কাউকে ভালোবাসলে আগে নিজের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হতে হয়৷ কারো মাঝে ডুবে যাওয়ার আগে দেখতে হয়, সেই মানুষটাও ঠিক একইভাবে আগ্রহী কিনা। আগে বুঝতে হয়, ঠিক কোথায় গিয়ে থামতে হবে, কোথায় নিজেকে থামানো উচিত৷ ঠিক কখন নিজেকে সরিয়ে নেয়া উচিত।

আমার এক ফ্রেন্ড আজকে তার বান্ধবীকে নিয়ে উদ্যানে গিয়েছিল ঘুরতে। সে জানত না যে আজকে হুজুরদের প্রোগ্রাম আছে ওখানে। দুজন অন্...
01/07/2025

আমার এক ফ্রেন্ড আজকে তার বান্ধবীকে নিয়ে উদ্যানে গিয়েছিল ঘুরতে। সে জানত না যে আজকে হুজুরদের প্রোগ্রাম আছে ওখানে।
দুজন অন্যান্য দিনের মত ঘুরাঘুরি শেষে এক জায়গায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল।

আমার ওই ফ্রেন্ড মাইগ্রেনের রোগী। হঠাৎ তার মাথাব্যথা শুরু হওয়ায় সে তার বান্ধবীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকে। আর মেয়েটা তার কপালে আস্তে আস্তে মালিশ করছিল।
আমার বন্ধুও হাত দিয়ে মেয়েটার সাথে দুষ্টুমি করছিল।

সেখানে কয়েকজন মাদ্রাসার হুজুর এসে তাদের ধমক দেয় এবং উদ্যান থেকে বের হয়ে যেতে বলে। আমার বন্ধু কারণ জানতে চাইলে তারা বলে এসব অশ্লীলতা পাবলিক প্লেসে করবেন না।

এক পর্যায়ে হুজুরগুলো আমার বন্ধুর গায়ে হাত তুলে এবং তার বান্ধবীকে বলে, এসব কী উদ্যানে? শাহবাগী নাকি? এই কথা বলে হুজুরগুলো হাসতে হাসতে সেখান থেকে চলে যায়।

সে এখন প্রচণ্ড ট্রমার মধ্যে আছে। একেতো গায়ে হাত তুলছে আবার তার বান্ধবীকে অপমান করছে অথচ সে কিছুই করতে পারেনি। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার আশা করছি।

ইরান জানে— তারা একা।জানে, এই যুদ্ধ কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে নয়, বরং হিজরায়েল, ব্রিটেন, ন্যাটো, পুরো পশ্চিমা সামরিক জো...
24/06/2025

ইরান জানে— তারা একা।
জানে, এই যুদ্ধ কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে নয়, বরং হিজরায়েল, ব্রিটেন, ন্যাটো, পুরো পশ্চিমা সামরিক জোটের বিরুদ্ধে।
জানে, চারপাশে মাথা নিচু করা আরব দালালদের ভিড়ে তার কোনো বন্ধু নেই।

তবুও ইরান দাঁড়িয়ে আছে। বুক চিতিয়ে, চোখে চোখ রেখে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে।
কারণ, তারা বাঁচতে শিখেনি— মরতে শিখেছে। মরলেও মাথা নিচু করে নয়, মাথা উঁচু করেই।
এটাই ইরান। এটাই প্রতিরোধ।
এটাই ইতিহাসের পৃষ্ঠায় লেখা এক সাহসী জাতির নাম।

20/06/2025

হলুদের গুঁড়া গ্লাসে ছাইড়া তোমরা কি এক শাউয়োর ট্রেন্ড শুরু করলা। পানি ভর্তি গ্লাসে হলুদ উপর থেকে নিচে পড়তেছে সেটা ভিডিও করতে গিয়ে খুশিতে কাইন্দা দিতেছো। একেকজন নাকি কয়েকবারে চেষ্টায় প্রেগন্যান্ট হইতে পারছে সরি সফল হইতে পারছে।

বন্ধু মতিন টিকটকে এসব দেখে বাসার পুরা হলুদের বয়াম খালি করে ফেলছে। পরে ওর বউ ওরে ধইরা দিছে গদাম গদাম, তাও নাকি ঠিক মত ভিডিও হয়নি। পরে দেখি বান্দা স্লো মোশনে ভিডিও করে নাই, নরমাল মুডে করছে।

এদিকে কাজিন হলুদ মরিচ গুঁড়ো দিয়ে ভিডিও বানিয়ে টেবিলে গ্লাস রেখেছে। শরবত ভেবে ওর মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা ঘটককে সেটা দেয়। ঘটক এক টানে গিলে বাথরুমে। যাওয়ার সময় বলে গেছে, কোন শাও** নাতী তোমাদের ঘরে বিয়ে করে আমিও দেখে নিবো।

16/06/2025

প্রচন্ড দুঃখ পেলে মানুষ যার কাছে নালিশ করবে, সেই যদি দুঃখ দেয়, তবে মানুষের নালিশ করার আর কোনো জায়গা থাকে না!

সবচাইতে আক্ষেপের বিষয় কী, জানেন? দুঃখ কিংবা কষ্ট পেলে যেখানে আশ্রয় খুঁজবেন, সেখান থেকে আরও বেশি দুঃখ নিয়ে ফিরে আসাটা! যাকে বলবেন, “ আপনি ভালো নেই, আপনার ভীষণ মন খারাপ, কোনোকিছুই ভালো লাগছে না, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ” যদি সেই মানুষটাই আপনার মন খারাপের কারণ হয়, কষ্টের কারণ হয়, তবে নিজের এই অসহায়ত্বের কথা কাকে বলবেন? কাউকে বলা যায় না।

নিজের ঘরে সুখ না পেলে মানুষ বাইরে যায়। বাইরে সুখ না পেলে মানুষ বনে যায়৷ আর বনেও সুখ না পেলে মানুষ একা থাকে! তবে বিশ্বাস করুন, নিজের ঘরেই যদি সুখ পাওয়া না যায়, তবে সুখের খোঁজে তামাম পৃথিবী ঘুরলেও কেবল দুঃখই মেলে!

দিনশেষে মানুষ একটা নিরাপদ আশ্রয় চায়, যেখানে সারাদিনের ক্লান্তি আর দুঃখ বুকে নিয়ে বিশ্রাম নিতে পারে৷ একটা মানুষ চায়, শোনার জন্য। যার কাছে নালিশ করা যায়।

কিন্তু সেই মানুষগুলোই যখন আপনাকে দুঃখ দেয়, আপনাকে মানসিক যন্ত্রণা দেয়, তখন আর নালিশ দেয়ার মতো কেউ থাকে না৷ মানুষ যার কাছে শান্তি আশা করে, যাকে ভরসা করতে চায়, ঠিক তার কাছ থেকেই হতাশ হয়ে ফিরে আসে!

প্রত্যেকটা মানুষের এমন কেউ থাকা দরকার, যাকে দিনশেষে জমানো সব দুঃখ-কষ্ট, অভাববোধের কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আর যাই হোক, সে কখনোই কষ্টের কারণ হয় না, এমন। মানুষের যদি দুঃখ বলার জায়গা থাকে, নিজের ভেতর জমানো সব কথাগুলো উগড়ে দেয়ার জায়গা থাকে, সে কখনোই মানসিক যন্ত্রণায় তীলে তীলে শেষ হয় না।

16/06/2025

এমন নয় যে আমাকে হেলায় হারিয়ে ফেললে, সে রাতে আকাশে চাঁদ উঠবেনা। জোনাকি জ্বলবেনা। এমন নয় গাছের ডালে বসে সারারাত জাগবেনা হুতুমপেঁচা। ঝিঁঝিঁপোকার ডাক শোনা যাবেনা। টিনের চালে বৃষ্টি হলে, সে শব্দ শুনতে ভাল লাগবেনা।

এমন নয় যে আমাকে হেলায় হারিয়ে ফেললে, তোমার ক্ষুধা লাগবেনা। গোসলের প্রতি অনিহা হবে। এমন নয় যে তুমি পাতিলের রান্না করা মুরগির তরকারি থেকে রানের মাংস বাদ দিয়ে গলার হাড় চিবাবে।

এমন নয় যে আমাকে হারিয়ে ফেললে, ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যাবে। গ্যাসের লাইন লিক করবে। বিদ্যুত থাকবেনা কোথাও। পানির সাথে আয়রন এসে ট্যাপের মুখ বন্ধ হবে।

আমাকে হারিয়ে ফেললে, বড়জোর তোমার দু বেলা একা লাগবে। এরপর কেউ না কেউ চলে আসবে। তুমি চোখে কাজল পরলে, সে'ও একসময় বলে উঠবে- এমন চোখের দিকে আজন্ম তাকিয়ে থাকাতে, বিরক্তি আসেনা।

আমাকে হেলায় হারিয়ে ফেললে, কতটুকুই বা কি হারাবে তোমার?

শুধু আমার বেলায় কেন এত অনিহা তোমার?কথা বলার তীব্র তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে থাকে, তুমি কথা বলো না। তোমাকে দেখার আকুলতায় নিজেকে ...
14/06/2025

শুধু আমার বেলায় কেন এত অনিহা তোমার?

কথা বলার তীব্র তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে থাকে, তুমি কথা বলো না। তোমাকে দেখার আকুলতায় নিজেকে অসহায় লাগে, দেখা দাওনা। তোমাকে ছুঁতে গেলেই হাত সরিয়ে দাও, বুকের আষ্টেপৃষ্টে থাকতে গেলেই আরও দূরে সরে যাও, কাছে আসো না! শুধু আমার বেলায় তোমার এত উদাসীনতা!

মানুষ তো কোনো না কোনো ভাবে মানুষকে শান্তি দেয়, শুধু আমার বেলাতেই তোমার যত অনিহা! আমাকে একটু ভালো রাখতে তোমার মাঝে ক্ষুদ্র প্রয়াসও কখনো দেখিনি। ভালোবাসো বলেছো, তবে অনুভব করতে গিয়ে আমি শুধু নিজেকে একা খুঁজে পেয়েছি!

শুধু আমার বেলায় যত অনাগ্রহ তোমার! সবকিছুই তোমার নিয়মমাফিক, স্বাভাবিক ভাবে চললেও শুধু আমার সাথে কোনোকিছুই হয় না তোমার! তুমি ফেলে রাখো অবহেলায়, অনাদরে। কাছে গেলেই তোমার বিরক্তিমাখা উচ্চারণ, তোমাকে ধরতে গেলেই, বুকে থাকতে গেলেই তুমি লাপাত্তা!

ভালোবাসি বলা ছাড়া আর কি করেছো, বলো? ভালোবাসা মুখের কথায় হয় না। ভালোবাসা হয় ব্যবহারে, আচরণে। যদি অনুভব নাই করতে পারি, যদি তুমি দিব্যি থাকার পরেও নিজেকে এত একা লাগে, নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়, তবে তোমার মুখের কথার ভিত্তি কই?

আমায় যে ভালোবাসো, এটা শুধু তুমিই বুঝতে পারো। কই? আমি তো বুঝতে পারি না, তোমার ভালোবাসা কখনো ছুঁতে পারি না, দেখতে পারি না, অনুভব করতে পারি না।

যাকে ভালোবাসো, তাকে ভালো যদি নাই রাখতে পারো, তবে তোমার ভালোবাসা তাকে আর কতটুকুই সুখ দিবে, বলো?

শুধু আমার ক্ষেত্রেই এমন হয়!

দিনের পর দিন কথা না বলে থাকো, দেখা না দিয়ে থাকো। কি করলে ভালো থাকি, সেটা ভাবো না। তোমার ভালোবাসার চাইতে বোধহয় তোমার অবহেলাই বেশি পেয়েছি জীবনে! সঙ্গের লোভ দেখিয়ে নিদারুণ নিঃসঙ্গতায় ফেলে রেখেছো। আমি আর তোমায় কী করে ভরসা করি?

05/06/2025

শাহীনের ফোনে সকাল সকাল একটা মেসেজ আসলো। কেউ একজন ওর বিকাশে তের হাজার পাঁচশো টাকা পাঠিয়েছে। একাউন্টও চেক করে দেখলো, টাকা ঠিকঠাক ই জমা হয়েছে৷ শাহীন বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। কে টাকা দিতে পারে? এমন কেউ তো নেই, যার ওকে টাকা পাঠানোর কথা। তাছাড়া বাসা থেকে টাকা পাঠালেও না জানিয়ে কেন পাঠাবে৷ তারপরও শিওর হওয়ার জন্য সে বাড়িতে ফোন করল, দুয়েকজন বন্ধুবান্ধব এবং ও একটা কোচিংএ কিছুদিন ক্লাস নিয়েছিলো, ওদের কাছেও খোজ নিলো। না, কেউ ই টাকা পাঠায়নি। তার মানে নির্ঘাত কেউ ভুল করে ওর নাম্বারে টাকাটা পাঠিয়ে দিয়েছে। ইয়েস, খুশি হয়ে উঠলো শাহিন৷
না, আপনারা যা ভাবছেন তা না৷ টাকাটা মেরে দেয়ার কোনো ইচ্ছা ওর নেই। শাহিন খুশি হয়েছে নিজেকে মহান এবং ভালোমানুষ প্রমাণ করা যাবে এই আনন্দে। শাহীন অবশ্যই টাকাটা ফেরত দিয়ে দেবে৷ অন্যকারো টাকার প্রতি লোভ নেই ওর, তার ওপর মাত্র সাড়ে তের হাজার টাকা৷ এই টাকা মেরে দিয়ে কিইবা করবে ও। অথচ হতে পারে এটা কোনো দরিদ্র মানুষের বহু কষ্টের উপার্জন। লোকটা এখনো ফোন দিচ্ছে না কেন, ভাবতে ভাবতে ঘন্টাখানেক কেটে গেল৷ তারপরও ওদিক থেকে কোনো ফোন আসলো না৷

শেষমেশ অধৈর্য হয়ে যে নাম্বার থেকে টাকাটা এসেছে ঐ নাম্বারে কল দিলো শাহীন।
'হ্যালো, কে বলছেন?'
ওপাশ থেকে কেউ একজন বিরক্ত গলায় বললো, 'আপনি ফোন করেছেন আপনি জানবেন কার কাছে ফোন করেছেন।'
'দেখুন, আমি আপনার উপকার করার জন্য ফোন করেছি, আপনার বিকাশ থেকে কিছু টাকা...!'
শাহীন কথা শেষ করার আগেই ওপাশের লোকটা চিৎকার করে বললো, 'ওরে খানকির পোলা, তুই আমারে ভোদাই পাইছস। তুই আমারে চিনস? আমার লগে বিকাশ ফ্রড করতে আসছোস মাদার*দ। তোর মত ফ্রড পোলাপানরে ধইরা যদি আমি কুত্তা দিয়ে না...!'
'এক্সকিউজ মি, আপনি ভাষা সংযত করে কথা বলুন। আমি আপনার উপকার করার জন্য ফোন দিয়েছি, আর আপনি মুখ খারাপ করছেন।'
'ওরে হারামজাদা, তোর উপকার আমি তোর পাছার ভেতর দিয়ে ভইরা দিমু। আমারে চিনোনাই। ঘুঘু দেখছো, ঘুঘুর ফাদ দেখোনাই সোনামনি।'
এবার শাহীনও রেগে গেল, বললো, 'আরে ভাই, আপনি তো কথাই শুনতেছেন না, আপনার বিকাশ থেকে আমার একাউন্টে তের হাজার পাঁচশো টাকা এসেছে কিছুক্ষণ আগে। মনে হয় ভুল করে চলে এসেছে।'
লোকটা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, 'তওবা তওবা, স্যরি ভাই, না বুঝে অনেককিছু বলে ফেলছি। কিছু মনে করবেন না৷ আমি স্যরি। বুঝেনই তো, আজকাল খালি ফ্রড ঘুরে।'
শাহীনের রাগ কমলো লোকটার স্যরি শুনে। শান্তমুখে বললো, 'ঠিক আছে, সমস্যা নাই। আপনি ভাববেন না আমি টাকা মেরে দিব৷ আমি অন্যদের মত না। আপনার টাকাটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। এই নাম্বারে পাঠাবো?'
'না ভাই, এই নাম্বারে পাঠানোর দরকার নাই৷ আমি আরেকটা নাম্বার দিচ্ছি, ওটাতে একটু পাঠান।'
'ঠিক আছে, নাম্বার বলেন।'
'নাম্বার তো আমার মুখস্ত নাই, দেখে বলতে হবে। আপনাকে আমি হোয়াটসঅ্যাপে নাম্বারটা লিখে দিচ্ছি। আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার দেন।'
'আমি যে নাম্বারে কল করেছি, এটাই হোয়াটসঅ্যাপ।'
'ঠিক আছে। আমি নাম্বার দিচ্ছি।'

লোকটা ফোন কেটে দিলো। শাহীন ওয়াইফাই কানেক্ট করে বসে রইলো, কখন আসবে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ। কিন্তু কিসের কি, দেড় দুই ঘন্টা হয়ে গেল, কিন্তু কোনো মেসেজ আসলো না। এদিকে টাকাটা ফেরত দেয়ার আগ পর্যন্ত শাহীনের শান্তিও হচ্ছে না৷ সে বাধ্য হয়ে আবার কল করলো। কিন্তু ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলো না। শাহীন দেখলো যে নাম্বারে কথা হয়েছে, ঐ নাম্বারেই হোয়াটসঅ্যাপ আছে দেখাচ্ছে। সে হোয়াটসঅ্যাপে নক দিলো। লিখলো, 'হ্যালো, আমাকে চিনেছেন?'
কয়েক মিনিট পর রিপ্লাই আসলো, 'আপনি কোন দেশের মন্ত্রী না মিনিষ্টার যে আপনাকে চেনা লাগবে?'
শাহীনের আবার রাগ হলো। এই লোক তো মহা ঝামেলা। সে অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করে শান্তভাবে মেসেজ দিলো, 'দেখেন, আপনি বলেছিলেন হোয়াটসঅ্যাপে আমাকে বিকাশ নাম্বার দিবেন।'
'কই, আমি তো এমন কিছু বলিনি। আপনি কি বিকাশে ফ্রড করেন নাকি। কিসের বিকাশ নাম্বার দিব। এইসব ধান্ধা কতদিনের?'
'এক্সকিউজ মি, আপনার সাথে আমার একটু আগে ফোনে কথা হলো এই নাম্বারেই।'
ওপাশ থেকে অনেকক্ষণ রিপ্লাই আসলো না। তারপর একটা ভয়েস মেসেজ আসলো, এক মহিলা বলছে, 'ভাই, এই নাম্বার আমার হাজবেন্ডের ফোনে। এটার হোয়াটসঅ্যাপ আবার আমার ফোনে খোলা।'
'ও আচ্ছা, আপনার হাজবেন্ডের সাথে আমার কথা ছিলো। উনাকে বলেন ফোন করতে আমাকে।'
ওপাশ থেকে আবার ভয়েস মেসেজ, 'দেখেন ভাই, সে কি করে না করে আমি সেসবের মধ্যে নাই। আপনাদের ভেতরে কি হইছে আপনারাই বুঝেন৷ এই লোক বাসায় আসেনা এক সপ্তাহ হইছে। বাড়িতে একটা টাকাও পাঠায় না৷ আপনি তারে বলবেন সে যেন আমার ফোন ধরে। আমার কথা নাহয় না ভাবলো, তার দুইটা সন্তানের কথা সে ভাববে না। কেমন বাপ বলেন তো। মেয়েটা আব্বা আব্বা বলে কানতেছে।'

শাহীন কি বলবে ভেবে পেলো না৷ সামান্য একটা ভালো কাজ করতে গিয়ে সে কি ঝামেলায় পড়লো! কোনোমতে এই মহিলাকে মেসেজ দিলো, 'আন্টি, আপনি চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।'

তারপর আবার ফোনে কল করলো লোকটাকে। প্রথমবার রিসিভ হলো না৷ দ্বিতীয়বার ফোন কেটে দেয়া হলো ওপাশ থেকে। শাহীন এবার নাছোড়বান্দা। ফোন দিতেই থাকলো। চতুর্থবার ফোন রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে লোকটা রাগী গলায় বললো, 'আরে ভাই, সমস্যা কি আপনার। বারবার ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন কেন? আমি ব্যস্ত আছি, আপনার জ্বালায় দেখি শান্তিমতো কোনো কাজই করার উপায় নাই। বারবার ফোন কেটে দিচ্ছি বুঝতেছেন না। তারপরও ফোন দিয়ে বিরক্ত করেই যাচ্ছেন। কমনসেন্সের আজকাল এতো অভাব।'
'দেখুন, আপনার টাকা আমার কাছে, আপনি এমন ব্যবহার করতে পারেন না।'
'টাকা আছে তো কি মাথা কিনে নিছেন নাকি। বললাম নাম্বার দিব। আজকালকার ছেলেপেলের ধৈর্যের এতো অভাব। নাম্বার দিতে সময় লাগবে৷ এখন একটা কাজ করতেছি। বিরক্ত কইরেন না প্লিজ।'
শাহীন কিছু বলতে গেল৷ কিন্তু ওপাশ থেকে লোকটা ততক্ষণে ফোন কেটে দিয়েছে।
শাহীন রাগে দুঃখে বিরক্তিতে হতাশায় ভাষা হারিয়ে বসে রইলো।

বিকালে শাহীনের মেসে আসলো ওর বন্ধু রায়হান৷ এসেই বললো, 'দোস্ত, তোর বিকাশে টাকা আছে? আমাকে হাজারখানেক টাকা বিকাশ কর। নেক্সট উইকে দিয়ে দিব।'
শাহীন জানে এই ছেলে টাকা নিলে সহজে দিবে না৷ তাছাড়া ওর কাছে এইমুহুর্তে দেয়ার মত টাকাও নেই৷
সে বললো, 'টাকা নেই রে দোস্ত। আব্বা এখনো টাকা পাঠায়নি এইমাসের৷ বিকাশ ফাকা।'
'মিথ্যা বলিস না।'
'কসম টাকা নাই।'
'ঠিক আছে, তোর বিকাশ এপ খুলে দেখা। আমি নিজের চোখে দেখতে চাই।'
শাহীন পড়ে গেল ঝামেলায়৷ বিকাশে তো সাড়ে তের হাজার টাকা আছে৷ কিন্তু এই টাকা ওর না৷ সেটা রায়হানকে কিভাবে বোঝাবে।
'কি ব্যাপার, দেখা। পারবি না জানতাম৷ কারণ তোর বিকাশে টাকা আছে।'
শাহীন আমতা আমতা করে বললো, 'হ্যা, টাকা আছে, কিন্তু টাকাটা আমার না। অন্য একজনের।'
'ও আচ্ছা, তাই না? তুমি তো বিকাশের এজেন্ট খুলছো। মানুষ তোমার ফোনে টাকা রেখে গেছে।'
'আরে ভাই, একজনের টাকা ভুল করে চলে এসেছে।'
'তো তাকে ফেরত দিসনাই কেন?'
'দিব, কিন্তু কোন নাম্বারে দিব জানিনা।'
'বাহ, ভালোই নাটক সাজাইছিস৷ টাকা দিবি না বললেই হয়৷ এতোগুলা মিথ্যা কথা বলার কি আছে৷ বাদ দে, তোর কাছে টাকা আশা করাও আমার উচিত হয়নাই।'

শাহীন রায়হানকে বোঝানোর জন্য ওর সামনে আবার সেই লোকটাকে ফোন দিলো। কিন্তু এবারো ফোন রিসিভ হলো না।
রায়হান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, 'থাক তুই। ভালো থাকিস৷ কখনো হেল্প লাগলে জানাইস৷ আমি তোকে বন্ধু ভাবি এখনো। হেল্প না করতে পারি, অন্তত মিথ্যা কথা বলবো না।'

রায়হান চলে গেল রাগ করে৷ শাহীন কি করবে ভেবে পেলো না। ঐ লোক ফোন দিলো রাত এগারোটার দিকে। বললো, 'ভাই, কেমন আছেন?'
শাহীন অভিমানী গলায় বললো, 'তা দিয়ে আপনার কি দরকার। আপনার ব্যস্ততা শেষ হইছে?'
'পুরুষ মানুষের ব্যস্ততা কি আর শেষ হয় ভাই। পুরুষের জীবন মানে হলো...!'
'ধুর মিয়া। আপনার বিকাশ নাম্বার দেন৷ টাকা পাঠাই দেই। আর ভালো লাগতেছে না।'
'আপনি তো দেখি টাকা পাঠানোর জন্য পাগল হয়ে গেছেন। এতো চাপ নিলে তো শরীর খারাপ করবে৷ আপনে লোক ভালো, আপনার সাথে চিন পরিচয় হওয়া দরকার। আমি মফিজ, ময়মনসিংহ বাসা৷ ছোটখাটো ব্যবসা করি।'
'আপনি কি টাকাটা নিবেন না?'
'নিব না কেন। অবশ্যই নিব৷ কিন্তু টাকাই কি সব নাকি ভাই। আপনার কথা বলেন৷ আপনার ওপর রাগ করছিলাম বলে সর‍্যি। আপনার নাম কি, কই থাকেন, কি করেন?'
'আমি শাহীন, ঢাকা থাকি। লেখাপড়া করি।'
'আচ্ছা খুব ভালো। ঢাকা কই থাকেন?'
'আজিমপুর।'
'বাহ, খুবই ভালো লাগলো শুনে। বলছিলাম কি ভাই, আপনি মিরপুর যান নাকি?'
'মানে?'
'মানে যদি ছোট্ট একটা উপকার করতেন। আমি টাকাটা ঢাকায় যাকে পাঠাতে চেয়ে আপনার নাম্বারে ভুল করে গেছে, সেই লোক আমার সাথে দুই নাম্বারি করছে। ফোন ধরে না। তার একটা মাল কিনে আনার কথা ছিলো আমার ব্যবসার জন্য৷'
'তো?'
'আসলে টাকা তো আপনার কাছে, আপনি যদি মিরপুর তের নাম্বারে গিয়ে মালটা এনে আপনার কাছে রাখেন, তাহলে খুব উপকার হয়। দেরি হলে আমি জিনিসটা আর পাবো না। আমার রিকুয়েস্ট, ভাইয়ের এই হেল্পটা করেন। আপনি মানুষ ভালো, এইটা আমি বুঝছি।'

লোকটার কথা ফেলতে পারলো না শাহীন। পরদিন লোকটার দেয়া ঠিকানায় গেল। একটা গোডাউনের সামনে গিয়ে রফিক নামে একটা লোকের খোজ করলো৷ রফিক আসার পর বললো, 'আমি মফিজ ভাইয়ের জিনিসটা নিতে আসছেন।'
'আপনাকে তো চিনলাম না। আপনি কি উনার নতুন পাটনার?'
'যেই হোই না কেন, জিনিসটা দেন।'
'কিভাবে নিবেন, ভ্যান কই?'
'মানে?'
'আরে ভাই, ভ্যান বা অটো কিছু ডেকে আনেন। মাল নিয়ে যান।'
'জিনিসটা কি আমাকে বলেন তো।'

রফিক আর আরো কয়েকজন মিলে ভ্যান ঠিক করে মালগুলো তুলে দিলো। ভ্যান ভর্তি লুঙ্গি আর গামছা। কয়েক বস্তা। মফিজের নাকি গ্রামের হাটে লুঙ্গি আর গামছার দোকান আছে।

মেসের আর সবার সন্দেহভাজন দৃষ্টি উপেক্ষা করে শাহীন ভ্যানওয়ালাকে দিয়ে তার রুমে সাড়ে তের হাজার টাকার পাইকারি লুঙ্গি আর গামছা এনে রাখলো। রুম প্রায় ভরে গেল।

কোথা থেকে খবর পেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে রায়হান আসলো। প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, 'দোস্ত তুই মিথ্যা বলছস আমি মেনে নিয়েছি৷ তাই বলে এভাবে বিট্রে করলি?'
'মানে?'
'আমরা সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে দুইজন ঠিক করে রাখছিলাম একসাথে ব্যবসা করব। রেস্টুরেন্ট দিব, নাহয় অনলাইনে টিশার্ট বিক্রি করব। তুই আমাকে ছাড়াই শুরু করে দিলি? তাও লুঙ্গি আর গামছার ব্যবসা। কাজটা তুই ঠিক করলি? বন্ধুরে ধোকা দিয়ে জীবনে বিরাট উন্নতি করে ফেলবি তাইনা!'
শাহীন ওকে অনেক কষ্টে বুঝানোর চেষ্টা করলো এই জিনিসগুলো ওর না। এগুলো সেদিন বিকাশে যার টাকা এসেছিলো ভুল করে তার। বিশ্বাস করানোর জন্য মফিজকে ফোনও দিলো শাহীন। ফোন রিসিভ হলো না যথারীতি। রায়হান বেশ কিছু গালিগালাজ করে চলে গেল।

রাতে ফোন দিলো শাহীনের গার্লফ্রেন্ড শায়লা। রাগি গলায় বললো, 'এটা আমি কি শুনতেছি শাহীন।'
'কি শুনতেছ?'
'তুমি নাকি পাইকারিতে লুঙ্গি আর গামছা বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছ? তোমার কাছে আমি এটা একদমই আশা করিনি। আমার বাবাকে কি বলব? ছেলে লুঙ্গি বিক্রি করে? তুমি জানো বাবা বিসিএস ক্যাডার না হলে রাজি হবে না। তুমি বলেছিলে সর্বোচ্চ ট্রাই করবা। এই তোমার ট্রাই?'
'দেখ জান তুমি যা ভাবছ তা না। এটা মিথ্যা।'
'ও আচ্ছা, পুরো ক্যাম্পাসের সবাই জানে তোমার ব্যবসার কথা, আর তারপরও বলছ মিথ্যা। তুমি আমাকে আর ফোন দিব না৷ থাকো তোমার লুঙ্গি আর গামছা নিয়ে। লুঙ্গি পরে গামছা গায়ে দিয়ে বসে থাকো। বাই।'

শায়লা ফোন কেটে দিলো। কয়েকবার ফোন দেয়ার পরও রিসিভ করলো না। বিরক্ত হয়ে মফিজকে ফোন দিলো শাহীন৷ আবার যা তাই। ফোন কেটে দিচ্ছে৷ ছয়বার টানা ফোন দেয়ার পর মফিজ ফোন ধরে অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করছে এমনভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, 'ভাই, এতোবার ফোন দেন কেন। আমি ব্যস্ত। একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতেছি।'
'আপনার লুঙ্গির বস্তা আনছি৷ এখন কি করব বলেন৷ আমার বাসায় রাখা ঝামেলা।'
'ভাই, আমি ব্যবস্থা করতেছি। আমাকে একটা দিন সময় দেন। আমি কাল জানাচ্ছি। প্লিজ ভাই৷'
মফিজ ফোন রেখে দিলো। শাহীন হতাশ হয়ে ঘুমুতে গেল৷ ঘুমানোর আগে ফেসবুকে ঢুকে দেখলো, রায়হান স্ট্যাটাস দিয়েছে, 'কিছু বন্ধু হয় সাপের মত৷ তারা সুযোগ পেলেই পেছন থেকে দংশন করে।'
ভার্সিটির মেসেঞ্জার গ্রুপে সবাই শাহীনকে মেনশন দিয়ে ওর ব্যবসার অবস্থা জানতে চাচ্ছে। ফ্রিতে লুঙ্গি গামছা দিবে নাকি জিজ্ঞেস করছে। বোঝা যাচ্ছে এরা ওর সাথে মজা নিচ্ছে। শাহীন রাগে আর হতাশায় ফোন বন্ধ করে দিলো।

পরদিন সারাদিন কেটে গেলো, মফিজ কোনো কন্টাক্ট করলো না। রাত বারোটার দিকে শাহীনের আব্বু এসে হাজির হলো কিশোরগঞ্জ থেকে। জরুরি একটা কাজে নাকি ঢাকা এসেছে। রুমে ঢুকে বস্তা বস্তা লুঙ্গি আর গামছা দেখে খুবই রেগে গেলো। বললো, 'আমি এতো করে বলেছি গ্রামে এসে আমার সিমেন্টের ব্যবসা দেখতে, তা না তুই নাকি বড় চাকরি করবি, আমার ব্যবসা নাকি ছোট ব্যবসা, তোর মান সম্মান থাকবে না দোকানে বসলে। আর এখানে লুঙ্গি আর গামছার ব্যবসা শুরু করেছিস। এটা খুব বড় ব্যবসা, তাইনা?'
'দেখ আব্বু, তুমি যা ভাবছ তা না। এগুলো আমার না।'
'তাহলে কার?'
'অন্য একজনের। আমি চিনিনা তাকে।'
'চিনিস না আবার তার জিনিস তোর কাছে। ফাইজলামি পাইছিস, মিথ্যা বলার আর জায়গা পাচ্ছিস না।'
আব্বুকে বিশ্বাস করানোর জন্য শাহীন ফোন দিলো মফিজকে। এতো রাতে সে ফোন ধরবে না বলেই ওর বিশ্বাস ছিলো। কিন্তু শাহীনকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে ফোন রিসিভ হলো। আব্বুকে শোনানোর জন্য সে ফোন লাউড স্পিকারে দিলো।
ওপাশ থেকে এক মহিলা কণ্ঠ শোনা গেল, 'হ্যালো কে আপনি? কাকে চান?'
'আপনার হাজবেন্ডকে ফোনটা দেন প্লিজ।'
'কি পাগলের মত কথা বলছেন। আমি আমার হাজবেন্ডকে কিভাবে ফোন দিবো। সে তিন বছর হলো সৌদি আছে।'
'ও স্যরি আন্টি। এটা কার ফোন।'
'মফিজের ফোন।'
'হ্যা, উনাকেই প্লিজ ফোনটা দেন।'

কিছুক্ষণ পর মফিজ ফোন ধরেই বললো, 'স্যরি ভাইজান, আমি বাথরুমে ছিলাম। ফোন ধরেছিলো আমার প্রতিবেশি। সালমার আম্মা।'
শাহীনের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, 'এতো রাতে আপনার প্রতিবেশি আপনার ঘরে কি করে?'

ওপাশ থেকে কোনো কথা না বলে মফিজ হুট করে ফোন কেটে দিলো।
শাহীন আবার ফোন দিলো কিন্তু এবার আর ধরলো না।

আব্বা শাহীনের দিকে তাকিয়ে আগুনচোখে বললো, 'এইসব কোনধরনের লোকের সাথে তোর মেলামেশা? মান সম্মান চরিত্র সব শেষ করে বসে আছিস দেখছি। এই লোক তোর ব্যবসার পার্টনার?'
'আমি লুঙ্গি আর গামছার ব্যবসা করতেছিনা আব্বু।'
'তাহলে কিসের ব্যবসা করতেছিস? ভাবসাব তো কিছুই ভালো লাগছে না আমার। তোকে ঢাকা পাঠানোই ভুল হইছে। কাল আমার সাথে বাড়িতে চল।'
'আমার পরীক্ষা সামনের সপ্তায়।'
'পরীক্ষা শেষ করেই বাড়ি আসবি। তারপর তোর বিষয়টা দেখতেছি।'

পরদিন আব্বু গ্রামে চলে যাওয়ার পর শাহীনের ধৈর্যের বাধ পুরোপুরি ভেঙে গেলো। এনাফ ইজ এনাফ৷ যথেষ্ট হয়েছে। সে আজ সবকিছু শেষ করবে। হয় মফিজ আজ জিনিস নিবে, নাহয় শাহীন সমস্ত লুঙ্গি গামছা ফেলে দিয়ে আসবে। ভালোমানুষি দেখানো অনেক হইছে। এই দেশে ভালোমানুষের জায়গা নাই।
এরকম একটা ইচ্ছাশক্তি নিয়ে শাহীন ফোন দিলো মফিজকে। ফোন রিসিভ হওয়ার পর রাগান্বিত গলায় বললো, 'আপনি পাইছেন কি, হা? আর কতদিন ঘুরাবেন আমাকে? আজকের মধ্যে আপনি মাল নেয়ার ব্যবস্থা করবেন, নাহয় আপনি আপনার জিনিস আর কোনোদিন পাবেন না।'
ওপাশ থেকে একটা মোটা গলা শান্ত কণ্ঠে বললো, 'তার মানে আপনি মফিজের বিজনেস পার্টনার?'
শাহীন কণ্ঠ শুনে থতমত খেয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো, 'কে আপনি?'
'আমি ভালুকা থাকার এসআই মনোয়ার।'
'কিন্তু এই ফোন তো..!'
'হ্যা এটা আপনার পার্টনার মফিজের ফোন। গতকাল সে গাজা বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে তার পরকীয়া প্রেমিকার বাসা থেকে৷ অনেক জেরা করেও তার পার্টনারের কোনো খবর সে দেয়নি। এখন দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। মাল কোথায়?'
'বিশ্বাস করেন আমি কিছু জানিনা। আমার কাছে শুধু লুঙ্গি আর গামছা আছে।'

কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে গ্রেফতার করলো শাহীনকে। তার বাসায় রাখা লুঙ্গি আর গামছার বস্তার ভেতর থেকে উদ্ধার হলো দুই কেজি গাজা আর দেড় হাজার পিস ইয়াবা। পুলিশ শাহীনের ফোন চেক করে গত কয়েকদিন মফিজের সাথে নিয়মিত ফোনকলের হিস্ট্রি দেখে যা বোঝার বুঝে নিলো।
কোর্টে ওঠানোর পর ময়মনসিংহ দায়রা জজ শাহীনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলো।

পরের ঘটনা সামান্য। রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনেই শাহীন গাজা ও ইয়াবা ব্যবসার কথা স্বীকার করলো। তৃতীয় দিন জানালো সে কিভাবে নিজে গিয়ে বর্ডার থেকে জিনিস সংগ্রহ করে আনে এবং সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়। চতুর্থদিনে শাহীন শ্যামলিতে ছাত্রনেতা আজমল হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিলো। রিমান্ডের ষষ্ঠ দিনে সে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং রমনা বটমুলে গ্রেনেড হামলার সাথে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করলো। দেড় বছর মামলা চলার পর শাহীনের ফাসির আদেশ হলো। সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেও কাজ হলো না৷

শাহীনের কথা কোর্ট তো দূর, বাবা মা বন্ধুবান্ধব প্রেমিকা কেউ ই বিশ্বাস করলো না। সবার ই ধারণা ও এসবের সাথে জড়িত। ততদিনে রাগে দুঃখে হতাশায় শাহীন পাথর হয়ে গেছে।

২০২৩ সালের ১৯ এ ডিসেম্বর রাত বারোটায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শাহীনের ফাসি কার্যকর করা হয়। ফাসির আগে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, 'আপনার শেষ ইচ্ছা কী?'
শাহীন বিরক্ত গলায় বলেছিলো, 'তাড়াতাড়ি ফাসি দেন তো বাল। এতো কথা শুনতে ভাল্লাগতেছে না।'

04/06/2025

গরুর হাটে দালালের খপ্পর থেকে বাঁচার ১৫ টি উপায় নিম্নরূপ:

১. হাতে একটি চিকন বাঁশের কঞ্চি রাখবেন। দালাল দেখামাত্রই ...see more

03/06/2025

Celebrating my 8th year on Facebook. Thank you for your continuing support. I could never have made it without you. 🙏🤗🎉

Address

Narail
Narail
7500

Telephone

+8801930669446

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sheakshazib posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Sheakshazib:

Share