12/06/2025
গাদীরে খুম সম্পর্কে আয়াত - “ইয়া আইয়ুহার রাসূল বাল্লিগ মা উনঝিলা ইলাইকা মিররব্বিক। ইন্না আলিয়ান মাওলাল মুমিনিনা ওয়া ইল্লাম তাফয়াল ফামা বাল্লাগতা রিসালাতাহু ওয়াল্লাহু ইয়া’সিমুকা মিনান্নাস” অর্থাৎ হে রাসূল! আপনার রবের নিকট থেকে আপনার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা প্রচার করুন। নিশ্চয়ই আলী (ع) মুমিনদের মাওলা (অভিভাবক)। যদি আপনি এরূপ না করেন তবে তো আপনি তাঁর রেসালাত প্রচার করলেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন।
(সূত্রঃ ইমাম সুয়ুতী: তাফসীরে দুররে মনসুর, ২/২৯৮পৃ)
❏ গাদীরে খুমে নবীজি দীর্ঘক্ষণ ভাষণ প্রদান করলেন। ভাষণের একেবারে শেষ প্রান্তে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরআন ও আহলে বাইতকে শক্ত করে ধারণ করতে বললেন। এরপরই বললেন, ‘হে লোক সকল! আমি কি সকল মু’মিনদের চেয়ে সর্বোত্তম নেতা নই? তখন সকলে সমস্বরে বলে উঠলো, জ্বি ইয়া রাসূলাল্লাহ।’ তিনি আরও বললেন, ﺃَﻟَﺴْﺖُ ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺑِﺎﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ অর্থাৎ আমি কি তোমাদের প্রাণের চাইতে বেশী প্রিয় নই? তখন সকলে সমস্বরে বলে উঠলো, জ্বি ইয়া রাসূলাল্লাহ।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর পার্শ্বে উপবিষ্ট হযরত আলী (ع) এর হাত সকলের সম্মুখে উঁচু করে তুলে ধরলেন এবং ঘোষনা দিলেন,
✨ﻣَﻦْ ﻛُﻨْﺖُ ﻣَﻮْﻻَﻩُ ﻓَﻌَﻠِﻲٌّ ﻣَﻮْﻻَﻩُ✨
অর্থাৎ আমি যার মাওলা (অভিভাবক/ বন্ধু), আলী (ع)ও তার মাওলা।
তথ্যসূত্রঃ
(ক) তিরমিজী শরীফ, কিতাবুল মানাকিব, মানাকিবে আলী (رضي الله عنه), হাদিস নং-৩৭১৩
(খ)সাহাবাহ, ২/৫৬৯পৃ, হাদিস-১৫৯
(গ) ইমাম তাবারানী: আল মুজামুল কবীর, ৫/১৯৫পৃ, হাদিস-৫০৭১
(ঘ) ইবনে কাসীর: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/৪৬৩পৃ
(ঙ) ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ৪৫/১৬৩পৃ
❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেন,
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻭَﺍﻝِ ﻣَﻦْ ﻭَﺍﻟَﺎﻩُ، ﻭَﻋَﺎﺩِ ﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَﺍﻩُ، ﻭَﺃَﺣِﺐَّ ﻣَﻦْ ﺃَﺣَﺒَّﻪُ، ﻭَﺃَﺑْﻐِﺾْ ﻣَﻦْ ﺃَﺑْﻐَﻀَﻪُ، ﻭَﺍﻧْﺼُﺮْ ﻣَﻦْ ﻧَﺼَﺮَﻩُ، ﻭَﺍﺧْﺬُﻝْ ﻣَﻦْ ﺧَﺬَﻟَﻪُ
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি তার বন্ধু হোন যে আলী (ع) -র বন্ধু হয়, তার শত্রু হোন যে আলী (ع) -র শত্রু হয়। তাকে ভালবাসুন যে তাঁকে (আলী (ع)-কে) ভালবাসে, তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করুন যে তার (আলী (ع)-র) প্রতি বিদ্ধেষ রাখে, তাকে সাহায্য করুন যে তাকে (আলী (ع)-কে) সাহায্য করে, তাকে অপদস্থ করুন যে তাকে (আলী (ع)-কে) অপদস্থ করতে চেষ্টা করে।
তথ্যসূত্রঃ
(ক) ইমাম বাজ্জার: আল মুসনাদ, হাদিস নং-৭৮৬
(খ) ইমাম হায়ছামী: মাজামউয যাওয়ায়েদ, ৯/১০৪পৃৃ
(গ) মুত্তাকি হিন্দি: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং-৩৬৪৮৭
(ঘ) ইমাম তাহাবী: মাশকালুল আশার, ২/৩০৮পৃ
(ঙ) ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ৪৫/১৬০পৃ
❏ যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত আলী (ع) কে মাওলা হিসেবে ঘোষণা করলেন তখন সকল সাহাবী হযরত আলী (ع)কে মাওলা হিসেবে মেনে নিলেন এবং মুবারকবাদ জানালেন। তখনই কুরআনের শেষ আয়াত নাযিল হলো।
ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺃَﻛْﻤَﻠْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺗْﻤَﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻧِﻌْﻤَﺘِﻲ ﻭَﺭَﺿِﻴﺖُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡَ ﺩِﻳﻨًﺎ
অর্থাৎ আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা-৩)
❏ হযরত আলী (ع) কে মাওলা ঘোষণার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর মাথায় পাগড়ী পড়িয়ে দেন। যেমন বর্ণিত আছে,
ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻗَﺎﻝَ : ﻋَﻤَّﻤَﻨِﻲ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻮْﻡَ ﻏَﺪِﻳﺮِ ﺧُﻢٍّ ﺑِﻌِﻤَﺎﻣَﺔٍ ﺳَﺪَﻟَﻬَﺎ ﺧَﻠْﻔِﻲ
অর্থাৎ হযরত আলী (ع) নিজেই বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, গাদীরে খুমের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি পাগড়ি আমার মাথায় পরিয়ে দিলেন এবং এর প্রান্তভাগ পিঠের দিকে ঝুলিয়ে দিলেন।
তথ্যসূত্রঃ
(ক) তায়ালিসি: আল মুসনাদ, হাদিস নং-১৪৯
(খ) ইমাম বায়হাকি: সুনানে কুবরা, হাদিস নং-১৯৭৩৬
(গ) মুত্তাকি হিন্দি: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং-৪১১৪১, ৪১৯০৯
(ঘ) ইমাম সুয়ূতী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং- ৩৩৬৭৮ ইমাম হায়ছামী উল্লেখ করেন,
❏ হযরত আলী (ع)কে মাওলা ঘোষনার পর সর্বপ্রথম হযরত আবু বকর ও হযরত উমর (رضي الله عنه) স্বীকৃতি দিলেন। ইমাম হায়ছামী বলেন,
ﻗﺎﻝ ﺃَﺑُﻮ ﺑﻜﺮ ﻭَﻋﻤﺮ ﻟﻌﻠﻰ ﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﻳﻮﻡ ﻏﺪﻳﺮ ﺧﻢ ﺃﻣﺴﻴﺖ ﻳَﺎ ﺍﺑْﻦ ﺃﺑﻲ ﻃَﺎﻟﺐ ﻣﻮﻟﻰ ﻛﻞ ﻣُﺆﻣﻦ ﻭﻣﺆﻣﻨﺔ — ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺪَّﺍﺭَﻗُﻄْﻨِﻲّ
অর্থাৎ হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه) গাদীরে খুমের দিন হযরত আলী (ع) বিন আবি তালিবকে বললেন, হে আবু তালিবের সন্তান! আপনি হলেন প্রতিটি মুমিন পুরুষ ও নারীর মাওলা। এটা দারা কুতনী বর্ণনা করেছেন। (সূত্রঃ ইমাম হায়ছামী: সাওয়ায়েকে মুহরিকা, ৯১পৃ)
❏ হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত আলী (ع) কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
ﺑَﺦٍ ﺑَﺦٍ ﻟَﻚَ ﻳَﺎ ﺍﺑْﻦَ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﺎﻟِﺐٍ، ﺃَﺻْﺒَﺤْﺖَ ﻣَﻮْﻟَﺎﻩُ ﻭَﻣَﻮْﻟَﻰ ﻛُﻞِّ ﻣُﺆْﻣِﻦٍ،
অর্থাৎ মারহাবা! মারহাবা! হে আবু তালিবের পুত্র। আপনি আমার মাওলা এবং প্রত্যেক মুমিনের মাওলা।
তথ্যসূত্রঃ
(ক) খতীব বাগদাদী: তারিখে বাগদাদ, ৮/২৯০পৃ
(খ) ইমাম তাবারানী: আল মুজামূল আওসাত, ৩/৩২৪পৃ
(গ) ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ৪৫/১৭৯পৃ
(ঘ) ওয়াহিদী: আসহাব উন নুজুল, ১০৮পৃ
(ঙ) ইমাম রাজী: তাফসীরে কবীর।
❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ، اَللَّهُمَّ وَالِ مَنْ وَالَاهُ وَعَاِد مَنْ عَادَاهُ.
আমি যার মাওলা আলী (ع) ও তার মাওলা। হে আল্লাহ! যে আলী (ع)কে ভালোবাসে তুমি তাকে ভালোবাস আর যে আলী (ع)র সাথে শত্রুতা করে তুমি তার সাথে শত্রুতা করো।
তথ্যসূত্রঃ
১.কানযুল উম্মাল ১১:৬০৯/৩২৯৫০,
২.আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১০৯,
৩.মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১০৪,
৪.আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানী ৪:১৭৩/৪০৫৩,
৫.তিরমিযী ৫:৬৩৩/৩৭১৩,
৬.মুসনাদে আহমাদ ১:৮৪, ৮৮, ১১৯, ১৫২, ৩৩১ ও ৪:২৮১, ৩৬৮, ৩৭০, ৩৭২ ও ৫:৩৪৭, ৩৫৮, ৩৬১, ৩৬৬, ৪১৯।
❏ হজরত আবু বকর ও হজরত ওমর, হজরত আলী (ع) কে এ বলে স্বাগতম জানালেন যে, ইয়া আলী (ع) ইবনে আবু তালিব, আজ থেকে আপনি সকল মোমেন ও মোমেনার মাওলা ( অভিভাবক ) হয়ে গেলেন ।
তথ্যসূত্রঃ
১.মুসনাদে হাম্বাল, খঃ-৪, পৃঃ-২৪;
২.তাফসিরে আল কাবীর, খঃ-১২, পৃঃ-৪৯;
৩.কানজুল উম্মাল, খঃ-৬, পৃঃ-৩৯৭;
৪.আর রিয়াযুন নাজরা, খঃ-২। পৃঃ-১৬৯;
৫.মুস্তাদারাকে হাকেম, খঃ-৩, পৃঃ-১০৯ ইত্যাদি।