11/06/2023
একবার এক বাড়িতে চোর ঢুকে। রাতের আঁধারে সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, সে অতি সন্তর্পণে বাড়িতে ঢুকে যায়। যে বাড়িকে সেদিন রাতে সে টার্গেট বানিয়েছিল, ভেবেছিল এই বাড়ির মানুষজন রাতে থাকে না। তাই দীর্ঘ সময় নিয়ে সে পুরো বাড়ি তল্লাসি চলায়। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পর নেওয়ার মতো একটি কানাকড়িও পেল না। পুরো বাড়ি খালি!
হঠাৎ একটু দূরে চোখ আটকে গেল চোরের। কিছু একটা বোধহয় অন্ধকারের মধ্যে নড়াচড়া করছে। সামনে আগাতেই দেখল একটা অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে জায়নামাজের ওপর! কলিজার পানি যেন শুকিয়ে গেল চোরের! জিন ভূত না তো! নইলে এতক্ষণ ধরে সে যে ঘরে অবস্থান করছে, যদি এটা মানুষ হতো তাহলে তো টের পেয়ে যেত!
কোনো মতে চোর কয়েক কদম সামনে আগায়। দেখে একজন মানুষই নামাজ পড়ছে। কোনো জিন ভূত নয়। যাক বাঁচা গেল! কিন্তু তাও চোরের বিস্ময় কাটল না। কারণ, দীর্ঘক্ষণ ধরে সে ঘরের জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করছে, শব্দ করেছে, কিন্তু এই নামাজি মানুষটা টেরই পায়নি! এটা ভেবেই চোর হতবাক। সে আরও অবাক হলো এই ঘরে কিছুই নেই দেখে! জীবনে কত মানুষের বাড়িতে চুরি করতে গেছে, কিন্তু এই প্রথম কারও বাড়ি পেল যেখানে কিছুই নেই।
আসলে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটিকে চোর চিনতে পারেনি। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় হিজরির একজন বিখ্যাত মনিষী, বসরার মালিক বিন দীনার রহ.। অতীতের মনিষীরা এমনই ছিলেন, তাঁরা যখন নামাজে দাঁড়াতেন, মনে হতো কোনো খুঁটি গেড়ে দেওয়া হয়েছে মাটিতে, কিংবা কোনো গাছ দাঁড়িয়ে আছে যেখানে পাখিরা অনায়াসে বসতে পারে। এতটা খুশু খুযুর সাথে নামাজ পড়তেন তাঁরা!
যাইহোক, মালিক বিন দীনার নামাজ শেষ করলেন। সালাম ফিরিয়ে দেখলেন পেছনে একজন দাঁড়িয়ে আছে। বাহ্যিক অবয়ব দেখেই তিনি বুঝে গেলেন এটা চোর। তবে মুখের চাহনি বলছে, চোর হতবাক।
মালিক বিন দীনার জিজ্ঞেস করলেন, 'কী ভাই? আমার ঘরে কিছু পাওনি বলে অবাক হয়েছে? আসলে এই ক্ষণিকের দুনিয়ার জীবনে আমি কিছুই জমা রাখিনি। এজন্যই আমার ঘরে কিছু নেই। তবে তুমি চাইলে আমি তোমাকে এমন জিনিসের সন্ধান দিতে পারি, যার মূল্য দুনিয়ার কোনোকিছুর সাথে তুলনা হয় না। যেটা অনন্তকাল তোমার থাকবে। কেউ ছিনিয়ে নেবে না। মৃত্যুর পরও তোমার সঙ্গী হবে।'
চোর অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইল। কথা শুনছে আর ভাবছে, লোকটা বলে কী! মালিক বিন দীনারের হৃদয়গ্রাহী বয়ান শুনে কুখ্যাত চোরের দু‘চোখ বেয়ে অশ্রু পড়তে লাগল। এই দিকে ফজরের আযান পড়ে গেছে মসজিদে। মালিক বিন দীনার তার হাত ধরে মসজিদে নিয়ে গেলেন।
চোরটা বেশ কুখ্যাত ছিল। এলাকার কমবেশি সবাই চিনতো। তাই হঠাৎ মালিক বিন দীনারের সাথে চোরকে দেখে সবার চক্ষু চড়কগাছ। এত বড় হুজুরের সঙ্গে একজন দুর্ধর্ষ চোর! তাও আবার মসজিদে! ও নিশ্চয়ই হুজুরের বাসায় চুরি করতে গিয়েছিল! তাই গণধোলাই দেবার জন্য হুজুর তাকে মসজিদে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু মালিক বিন দীনার (রহ.) সবার ভুল ভেঙ্গে দিয়ে বললেন,
"সে আমাদের বাসায় চুরি করতে এসেছিল। আমরাই তাকে চুরি করে ফেলেছি।"
অর্থাৎ সে আমাদের বাড়িতে দুনিয়ার খোঁজে এসেছিল, আমরা তাকে আখিরাত ধরিয়ে দিয়েছি। আল্লাহু আকবার!
সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা: ৪/১৯০ অবলম্বনে গল্পটি লেখা হয়েছে