07/06/2023
আমাদের যুবকরা যদি এভাবে ভাবতে পারত!
তাহলে কোনো নারী তাদেরকে ফিতনায় ফেলতে পারত না...
আবুল ফারাজসহ আরও অনেকে বর্ণনা করেন, মক্কায় এক রূপবতী রমণী ছিল। তার স্বামীও ছিল। একদিন সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের রূপে মুগ্ধ হয়ে স্বামীকে বলল, আচ্ছা, তোমার কী মনে হয়, গোটা মক্কা নগরীতে এমন কোনো পুরুষ আছে, যে আমার রূপে পাগল হবে না?
: হ্যাঁ। আছে!
: কে সে!
: উবাইদ ইবনু উমাইর।
: তুমি যদি আমাকে অনুমতি দাও, তাহলে আমি তাকে আপন রূপের ছোঁয়ায় দুর্বল করে দেখাব।
: ঠিক আছে। চেষ্টা করে দেখতে পারো।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর সে মহিলা মাসআলা জানার বাহানায় উবাইদ ইবনু উমাইরের কাছে যায়। তিনি তখন মসজিদুল হারামের এক কোণে বসা ছিলেন। সবাই চলে যাওয়ার পর একটু নির্জনতা তৈরি হলে সে তার কাছে গিয়ে বসে এবং তার চাঁদের মতো ঝলমলে চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে ফেলে। উবাইদ ইবনু উমাইর বলে ওঠেন, হে আল্লাহর বান্দী, পর্দা করো।
: জনাব, আমি তো আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি। আপনি আমাকে গ্রহণ করুন।
: আমি তোমাকে কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করব। যদি তুমি সত্যি সত্যি উত্তর দাও, তবে তোমার প্রস্তাব নিয়ে ভেবে দেখবো!
: জি, জনাব, বলুন, আমি সত্যিটাই বলব।
: আচ্ছা, এই মুহূর্তে যদি মৃত্যুর ফেরেশতা তোমার জান কবজ করতে চলে আসে, আর আমি তোমার প্রস্তাব গ্রহণ করি, তবে কি তুমি এতে আনন্দিত হবে?
: জি না!
: হুম। ঠিক বলেছ। আচ্ছা, ধরো আমি তোমার প্রস্তাব গ্রহণ করলাম। তারপর যদি তোমাকে কবরে শোয়ানো হয়, আর ফেরেশতাগণ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তোমাকে বসায়, তখন কি প্রস্তাব গ্রহণ করার ব্যাপারটা তোমাকে কোনো আনন্দ দেবে?
জি না!
: হুম। ঠিকই বলেছ। আচ্ছা, যদি মানুষের হাতে আমলনামা তুলে দেওয়া হয়; কিন্তু তুমি জানো না, তোমার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে নাকি বাম হাতে! তখন কি এই প্রস্তাব গ্রহণের ব্যাপারটা তোমাকে আনন্দিত করবে?
: জি না!
: হুম। সত্য বলেছ। আচ্ছা, ধরো, যখন পুলসিরাত পাড়ি দেওয়ার সময় হবে; কিন্তু তুমি জানো না, সহজে তা উতরে যেতে পারবে কি না! তখন কি প্রস্তাব গ্রহণের ব্যাপারটা তোমার কাছে আনন্দের বিষয় হবে?
: জি না!
: হুম। একদম ঠিক বলেছ। আচ্ছা, আর যদি তুমি বিচারের কাঠগড়ায় আল্লাহ জাল্লা শানুহুর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও, তখন কি প্রস্তাব গ্রহণের ব্যাপারটা তোমাকে আনন্দিত করবে?
: জি না!
- হুম। একেবারে সত্য বলেছ। এবার উবাইদ ইবনু উমাইর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, আল্লাহর বান্দি, আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ তোমাকে অনেক নিয়ামত দিয়েছেন। তিনি তোমার প্রতি সদয় আচরণ করেছেন।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর সে তার স্বামীর কাছে ফিরে যায়। স্বামী তাকে জিজ্ঞেস করে, কী হলো? কিছু করতে পেরেছ? উত্তরে সে বলল, তুমিও অকর্মা। আমরাও সবাই অকর্মা।
এরপর সে সালাত, সিয়াম ও ইবাদতে মশগুল হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে তার স্বামী বলত, উবাইদ ইবন উমাইর আমার স্ত্রীর ওপর এতটা প্রভাব ফেলেছিল যে, যে-নারী প্রতি রাতে আমার জন্য বাসরশয্যা করত, এখন সে পুরোদস্তুর 'সন্ন্যাসিনী' বনে গেছে।
সমকালীন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত 'সালাফদের জীবনকথা' বই থেকে।