Sadiya Jahan

Sadiya Jahan This page parsonal

23/03/2024

╱◥██████◣
│∩│🪟▤│🪟│
▓▆▇█▓🚪▓█▇
এ ঘরটি কপি করতে পারলে বুঝবো আপনার ফোন অনেক দামী।🙂

30/01/2024

খারাপ লাগে তখন যখন নিজের প্রিয় মানুষ অন্য জনের কথা বলে আর আফসোস করে তার জন্য 😔

 #নিয়তিপর্ব ২শেষ আমার বউ নিশি পা*জামা টা উলটো করে পরে আছে। ওর অফিসে যাবার আগে সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু যখন বাড়িতে আসলো...
27/01/2024

#নিয়তি
পর্ব ২শেষ
আমার বউ নিশি পা*জামা টা উলটো করে পরে আছে। ওর অফিসে যাবার আগে সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু যখন বাড়িতে আসলো তখন তার সব কিছু উলটো। আমি যেনো কিছুই ভাবতে পারছি না। তবে কি আমি সকালে রুপার সাথে যা জোর করে এসেছি তা নিশি সেচ্ছায় করে আসলো। কারন নিশি কে এমন খুশি হওয়া এর আগে কখনো আমি দেখি নাই। আমার বুকের ভেতর যেন এক অদ্ভুত কম্পন শুরু হয়ে গেলো। আর আমি এই এসি রুমের মধ্যেও ঘামতে শুরু করলাম। আমার এমন ঘামতে থাকা দেখে নিশি বললো,,,,,,,,

নিশি-- কি হলো তুমি ঘামছো কেনো এত। অসুখ বিসুখ বাধালে নাকি। ( বলেই আমার কপালে হাত দিলো)
আমার জবান যেনো বন্ধ হয়ে গেছে কি বলবো কিছুই ভাবতে পারতেছি না। আমার স্তব্ধ হয়ে যাওয়া দেখে নিশি আবারও বললো,,

নিশি-- কি হলো তুমি কথা বলছো না কেনো? কিছুক্ষণ আগোও তো হাসিখুশি ছিলে,,,,, কি এমন হলো যে নিমিষেই মুখটা মলিন হয়ে গেলো তোমার?(বলেই আবার আমার কপালে হাত দিলো। আমি নিশির হাত টা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললাম)

আমি-- কিছু হয় নাই আমার।

বলেই শোবার রুমে চলে আসলাম। কিছুই মাথায় আসছে না কি করবো আমি। নিশির সাথে আমার প্রেম করে বিয়ে হয়েছে। মেয়েটা আমাকে ছাড়া যেনো কিছুই বোঝেনা। তাহলে কেনো আমার সাথে এমন করলো? নাকি আমি রুপার সাথে যা জোর করে করেছি তা নিশির সাথেও করা হয়েছে। আমি রুপার সাথে যা করেছি তা তো পাপ, আমি পাপী
নাহ এটা আমার পাপের ফল। আমি পাপ করেছি। আমি পাপী,,,,, আর এটা আমার পাপ এর ফল।
হে আল্লাহ তুমি বলে দাও আমি এখন কি করবো। আমি বুঝতে পেরেছি পাপ করলে সে পাপের ফল তাকে ভোগ করতেই হয়।

রাত ১২টা চোখে ঘুম নেই এখনো কিছু খাওয়াই হয় নাই। নিশি অবশ্য খাবার জন্য অনেক বার ডেকে গেছে কিন্তু আমি খাইতে যাই নাই। নিশি আমার পাসেই শুয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখতে একদম নিস্পাপ বাচ্চার মতো লাগছে। নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি সে খেয়ালই নেই।

ঘুম ভাঙলো ফজরের আজান এর শব্দ শুনে। এর আগে কখনো ফজর এর সময় উঠি নাই। এর আগে নিশি ফজরের নামাজ পড়ার জন্য প্রায় দিন ডেকেছে কিন্তু আমি তখন ঘুমের দেশে ব্যস্ত ছিলাম। আজ কেনো জানি না ঘুম ভেঙে গেলো। হে আল্লাহ আমি জানি আমি যে পাপ করেছি তার কোনো ক্ষমা নেই। তবু আজ কেনো জানি তোমার সেজদায় পরে কাঁদতে মন চাচ্ছে।

ওজু করে এসে বাড়িতে সুন্নাত নামাজ পরে ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে চলে গেলাম। নামাজ পরে এসে দেখি নিশি কুরআন পরছে। আমার এখন বিশ্বাসই হচ্ছে না নিশি এমন টা করতে পারে। তবে কি আমার ভাবনা টা ভুল?

**দুপুর ১২ টা**
বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম,,,, উদ্দেশ্য রুপার বাড়ি। আমি পাপ করেছি আমার এই পাপের ক্ষমা আছে কি না আমি জানি না। কিন্তু আমার রুপার কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে। নইলে যে আমি ম*র লেও শান্তি পাবো না। ভাবতে ভাবতে রুপার বাড়ির সামনে চলে আসলাম। কলিং বেল দিতেই রুপা এসে দরজা টা খুলে দিলো। আমাকে দেখেই,,,,,,,,,

রুপা-- একি আপনি,,,? আপনি কেনো এখানে আবার এসেছেন। নাকি আবার আমাকে ভো*গ করার আপনার শখ জাগছে? আমার সব তো কেরেই নিলেন তবে আবার কেনো এসেছেন? ( বলেই রুপা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো)
আর আমি ফ্লোরে বসে পরে রুপার পা দুটি জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে,,,,,

আমি-- রুপা আমি পাপী,,, আমি তোমার সাথে অনেক বড় পাপ করেছি। রুপা তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি এই পাপ যে আর বয়ে বেরাতে পারছি না রুপা। তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও রুপা আমায় ক্ষমা করে দাও।

রুপা-- ক্ষমা কিসের ক্ষমা? আপনাকে আমি কি ভাবে ক্ষমা করবো বলতে পারবেন? আপনি কি আমার হারিয়ে যাওয়া স*তি*ত্ব ফিরিয়ে এনে দিতে পারবে? আপনাকে কি ভাবে ক্ষমা করবো? যে লোক নিজের একটু পু*রুষ*ত্বের সুখ এর জন্য একটা পরিবার ভেঙে দিতেও পারে তাকে কি ভাবে ক্ষমা করবো বলতে পারবেন! পারবেন না। তাহলে কি ভাবে আমি আপনাকে ক্ষমা করবো বলুন? আমার স্বামীর বিপদের সময় যখন আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইতে গেলাম তার বিনিময়ে আপনি আমার স*তি*ত্ব টাই কেরে নিলেন। আমি এখন কি নিয়ে আমার স্বামীর কাছে যাবো? বলুন জবাব দিন,,, জবাব দিন। জানি আপনার কাছে কোনো জবাব নেই। আমি আপনাকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না। আমার আল্লাহও আপনাকে কখনো ক্ষমা করবে না। এর ফল আপনি পাবেন আজ না হয় হাসর এর ময়দানে ঠিক পাবেন।

আমি-- রুপা আমি জানি আমার এই পাপ এর কোনো ক্ষমা নেই। আর আমার এই পাপ এর সর্বোচ্চ শাস্তি কি তাও আমি জানি। এই পাপ এর সর্বোচ্চ শাস্তি গলা অব্দি মাটির সাথে গেরে পাথর নিক্ষেপ করা যতক্ষণ না সেই পাপী মা*রা যায় ততক্ষণ। কিন্তু আমার তখন কি হয়েছিল আমি নিজেও বলতে পারবো না। রুপা আমি জানি তুমি আমায় কখনো ক্ষমা করতে পারবে না। কারন আমি যে ক্ষমার জগ্য নই তারপরেও তোমার এই বি*পদের দিনে আমাকে তোমার পাসে থাকতে দিয়ো।

রুপা-- কি করতে চান আপনি?

আমি-- এই নাও এখানে ৪লাখ টাকা আছে। এই টাকাটা দিয়ে তুমি তোমার স্বামীর চিকিৎসা টা করে নিয়ো। প্লিজ না করবে না,,, আমি জানি তোমার এখন টাকা টার খুবই দরকার। আর আমি এ-ও জানি আমি যে পাপ করেছি এর কোনো ক্ষমা নেই। আর আমিতো আ*ত্ম*হ*ত্যা ও করতে পারবো না। কারন আ*ত্ম*হ*ত্যা মহা পাপ। এমনি একটা পাপ করেছি আর একটা পাপ করে আমার পাপের বোঝা টা আর বাড়াতে চাই না। আমি এখন আসি রুপা আরো টাকার দরকার হলে আমাকে বলবে।

বলেই ওখান থেকে চলে আসলাম। জোহরের আজান হয়ে গেছে তাই মাসজিদে নামাজ আদায় করার জন্য আসলাম। নামাজ পড়ে মোনাজাত এ আল্লাহ এর কাছে অনেক্ক্ষণ কাঁদলাম কারন আমি যে পাপী। হে আল্লাহ আমিতো অবুঝ ছিলাম তাই কিছু বুঝতে পারি নাই। আর যখন বুঝতে পারলাম তার আগেই আমি এক মহা পাপী হয়ে গেলাম।

নামাজ পরে বের হয়ে বুঝতে পারলাম আমার অনেক খুদা পেয়েছে। কারন সেই কাল রাত থেকে এখনো কিছু পেটের মধ্যে যায় নাই। তাই একটা হোটেল দিকে গেলাম। হোটেল এর সামনে যেতেই চোখ পড়লো ভিতরের একাটা টেবিলের দিকে।

আমার বউ নিশি একটা ছেলের সাথে এক টেবিলে বসে আছে। ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছে না কারন সে অন্য পাশ হয়ে বসে আছে। কিন্তু নিশির মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। তবে কি এই সেই লোক যার কারনে কাল নিশি এমন ভাবে বাসায় আসলো,,,,,,,,,,,,,,,,,?

আমার আর খাওয়া হলো না। বাসায় চলে আসলাম। নাহ আমার আর বে*চে থাকার কোনো অধিকার নেই। আর কেনোই বা বে*চে থাকবো? যে নিজেই একটা ল*ম্পট চরি*ত্রহী*ন। আবার তার বউ? সেও অন্য পুরুষ এর সাথে,,,,,৷?
এই পৃথিবীতে আমার জায়গা নেই। যা করার আজ রাতের মধ্যেই করতে হবে। কিন্তু বাড়িতে কিছুই করা যাবে না যা করার বাড়ির বাহিরে করতে হবে।

*রাত ৪টা নিশি এখনো ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে যে এই মেয়েটাকে কতটা আরো বেশি সুন্দর লাগে তা বলে বুঝাতে পারবো না। মন ভোরে মেয়েটাকে দেখে নিলাম। কারন এর পর আর কখনো এই মেয়ে টাকে দেখা হবে না।
যাবার আগে টেবিলের উপর একটা চিঠি লিখলাম। তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম। উদ্দেশ্য ট্রেন স্টেশন,,,,,,, সকাল ৫টায় ট্রেন আসে আর তার নিচেই ঝাপ দিয়ে চলে যাবো না ফে*রার দেশে। স্টেশনে এসে বসে আছি।

ভোর ৫ টা,,,,,, ওইতো ট্রেন আসছে। আমিও তইরি ঝা*প দেবার জন্য। যেই লাফ দি*বো অমনি অতীত এর কথা গুলো মনে পরে গেলো। কিন্তু আমি পিছপা হইলাম না আমি ম*হাপাপ করেছি পাপের শাস্তি তো পেতেই হবে।

ট্রেন আসছে আর আমিও ট্রেনের নিচে ঝা*পিয়ে পাড়ার জন্য প্রস্তুত। পাপী দের এই পৃথিবীতে থাকার কোনো অধিকার নেই। মৃ*ত্যুর আগে মনে হয় সবারই প্রিয়জন দের সাথে কাটানো সময় গুলো মনে পড়ে যায়,,, সে হোকনা একজন ভালো মানুষ অথবা পাপী। আমারও তার বিপরীত হলো না। নিশির সাথে কা*টানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত যেনো আমার চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে।

বিদায় পৃথিবী,,,,, আর যেনো কোনো পাপীর জন্য রুপার মতো নিষ্পাপ মেয়েদের স*তি*ত্ব না হারাতে হয়।

আমি দিলাম লাফ।

কিন্তু একি সামনের দিকে না গিয়ে পিছনের দিকে আসলাম কেনো। আর আমি ট্রে*নের নিচে না পড়ে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই ফ্লোরে পড়ে গেলাম।
মনে হলো কেউ একজন পিছনে থেকে টান মে রেছেন। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি নিশি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

নিশির চোখ গুলো ফুলে লাল হয়ে আছে। মনে হয় অনেকক্ষণ কান্না করেছে।

আমার শার্টের কলার ধরে উপরে তুলে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে আসলো। আসার সময় নিশি একটা কথাও বলে নাই। আমিও বলি নাই,,, কিন্তু সারা রাস্তা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম মুখটা একদম রাগে ভরপুর হয়ে ছিলো।

রুমের মধ্যে নিয়ে এসে আমাকে খাটের ওপর বসিয়ে দিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া।
তারপর নিশি,,,,,

নিশি-- এসবের মানে কি? (রাগী সাথে কান্না মাখা কন্ঠে)

আমি-- চুপ করে আছি।

নিশি-- আমি কিছু বলছি। কথা গুলো কি কানে যাচ্ছে না। এই চিঠি টার মানে কি? (এইবারে কেঁদে দিলো)

আমি-- উপায় ছিলো না( নিচের দিকে তাকিয়ে)

নিশি-- শুধু নিজের কথাই চিন্তা করলে। একবারো আমার আর আমার ভিতরে যে বড় হচ্ছে তার কথাটা চিন্তা করলে না? তুমি এতটা সার্থ পর?

আমি-- তোমার ভিতরের টা মানে বুজলাম না?

নিশি-- মানে আমি মা হাত চলেছি আর তুমি বাবা।

নিশির কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে এবার পানি বেরিয়ে আসলো। আমি কি বলবো কিছুই মাথায় আসছে না। তারপরও বললাম,,,,

আমি-- তুমি জানো না নিশি আমি কত বড় একটা পাপ করেছি। আমি অনেক বড় পাপী অপরাধী। এই পৃথিবীতে আমার বে*চে থাকার কোনো অধিকার নেই। আমি চাই না আমার পাপের মাশুল তোমাকে দিতে হোক। তুমি জানো না নিশি তুৃমি কিছুই জানো না। ( কাঁদতে কাঁদতে)

নিশি-- আমি সব জানি।

আমি-- মানে,,,,,,,,, কি জানো তুমি?

নিশি-- তার আগে তুমি কিছু খেয়ে নাও আজ দুই দিন তুমি না খেয়ে আছো সাথে আমাকেও না খাইয়ে রাখছো।

আমি-- মানে তুমি খাও নাই

নিশি-- তোমাকে ছাড়া কোনো দিন খাইছি।

আমি-- নাহ। কিন্তু তার আগে বলো তুমি কি জানো।
নিশি বলতে শুরু করলো,,,,,,,,,

নিশি-- তাহলে শোনো। আমি কোনো প্রমোশন পাই নাই আমার অফিস থেকে।
সেদিন যখন অফিস থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম রাস্তায় রুপা ভাবীর সাথে দেখা হলো। আমি রুপা ভাবীকে আগে থেকেই চিন্তাম তোমার অফিস থেকেই তার সাথে আমার পরিচয়। মেয়েটাকে কেমন কেমন যেনো লাগছিল। তাকে যখন আমি জিজ্ঞেস করলাম তার এমন অবস্থা কেনো। তিনি যেনো কিছুতেই বলতে রাজি নন। পড়ে জো*রাজো*রি করাতে রুপা ভাবী আমাকে জরিয়ে ধরে কেদে দিলেন।
তার দিকে খেয়াল করে বুজতে পারলাম তার জা*মাকা*পড় ঠিকঠাক নেই। তখনি বুঝতে পারলাম তার সাথে কিছু একটা হয়েছে। পড়ে যখন আরও জোর করলাম তখন তিনি তোমার কথা যা বললেন তা শুনে আমি একদম ( বলেই নিশি কেঁদে উঠলেন) তুমি ওনার সাথে এমনটা করতে পারো এটা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করি নাই বিশ্বাস কর। তারপর রুপা ভাবীকে অবিশ্বাস করে তাকে আরো দু*চার টা কথা শুনিয়ে দিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। তারপর মনে হলো তুমি যদি সত্যি রুপা ভাবীর সাথে ওই কাজ টা করে থাকো। তাই আমাদের রুমে না ডুকে জাহানারা আপা দের রুমে কলিং বেল বাজাই। তারপর জাহানারা আপা এসে দরজা খুলে দেন। আর আমি তাদের বাথরুমে গিয়ে আমার জা*মাকা*পড়ও ওল*ট-পা*লট করে নেই যেমনটা রুপা ভাবীর ছিলো।
আর তাই তোমার নজরে আসার জন্য প্রমোশন এর কথা টা বলি এবং পাইচারি করি।

জানো তোমার মুখে যখন ভয়ের ছাপ দেখতে পেলাম তখন আমার কতটা কষ্ট হচ্ছিল। আমি বুঝতে পেরে গেলাম তুমি রুপা ভাবীর সাথে ওই নি*চু কাজ টা করেছো।
শত কষ্টের মঝেও মুখে হাসির ছাপ এনে রাখা ছিলাম।

আমি-- তাহলে যে তোমায় কাল দেখলাম ওই হোটেলে কার সাথে যেনো বসে আছো।

নিশি-- হা হা হা। ওইটা আমার ছোট ভাই রিফত ছিলো। আমি যখন জানতে পারলাম রুপা ভাবীর অনেক টাকার দরকার। আর তিনি টাকার জন্য তোমার সাথে ওই নোং*রা কাজ করতে বাধ্য হয়েছে তখন আমি কিছু টাকার জন্য রিফাত কে বলি।
আর টাকা টা নিয়ে যখন রুপা ভাবীর কাছে গেলাম তখন তিনি বললেন তুমি নাকি এসেছিলে তার কাছে টাকা দেবার জন্য আর তার কাছে ক্ষমা চাইবার জন্য।
তখন আমার খুব ভালো লেগেছিল জানো তুমি আজিজ। আর সব থেকে বেশি ভালো লেগেছিলো তুমি যখন নামাজ পড়া শুরু করলে তখন।

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আজিজ। তোমাকে ছাড়া আমিও যে বাঁ*চতে পারবো না(কান্না করতে করতে নিশি)

নিশি-- বিশ্বাস কর আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমিও যে আর বাঁচ*বো না।

আমি-- কিন্তু আমি যে পাপ করেছি আমি যে পাপী। তাহলে কেনো তুমি আমায় ভালোবাসবে?

-- আমি জানি তুমি পাপ করেছো তুমি পাপী। কিন্তু তুমিতো সে পাপ বুঝতে পেড়েছো এবং ক্ষমাও চেয়েছো। একটা কথা কি জানে? ঘৃ*না পাপকে করতে হয় পাপী কে নয়। তোমার পাপ টা যত বড় তার থেকে আমার ভালোবাসাটাও অনেক বড় আমি যে তোমায় অনেক ভালোবাসি আজিজ।

-- কিন্তু?

-- কোনো কিন্তু নয়। আমি তোমার সাথে জান্নাতে যেতে চেয়েছিলাম আজিজ। এখনো যেতে চাই,,, তুমি কথা দাও আজিজ এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে। সামনে রমজান মাস কথা দাও এই রমজানে ৩০ টা রোজাই পালন করবে। কথা দাও তুমি আমায় আর কখনো কারো ক্ষতি হয় এমন কাজ কখনোই করবে না। কথা দাও আমায় কথা দাও।

-- হুম কথা দিলাম। আমি জানিনা আমার এই পাপ এর ফল।

-- ধন্যবাদ তোমায়। ফজরের আজান যে আজান যে হয়ে গেছে সে দিকে কি আপনার খেয়াল আছে আমার স্বামী? (মুচকি হেসে মুখে যেন তার এখন বিজয় এর হাসি)

-- হুম।

-- তবে চল দুজন ওজু বানিয়ে আসি। তারপর এক সাথে নামাজ আদায় করবো। শুধু আজকেই কিন্তু বাড়িতে ফজরের নামাজ আদায় করবে। কাল থেকে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে হবে।

-- হুম।
( আল্লাহ তুমি আমার মতো একজন এর কপালে এমন একটা বউ দিয়েছো তার জন্য তোমার দরবারে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করি।)

তারপর দুজনে মিলে নামাজ আদায় করে নিলাম।নামাজ শেষে নিশি চলে গেলো রান্না ঘরে আর আমি এসে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরে নিশি একটা প্লেটে করে খাবার নিয়ে আসলো।

নিশি-- এই উঠো আগে খেয়ে নাও।

আমি-- তুমি খাবে না?

-- হুম খাবো তো?

-- তাহলে একটা প্লেটে আনলে যে?

-- কারন আমরা এক প্লেটেই খাবো। তুমি আমায় খাইয়ে দিবে আর আমি তোমাকে। এক প্লেটে খাওয়া সুন্নাত বুজলে?

-- হুম। দাও খাইয়ে দাও।

-- হুম হা করো। তারপর আমি নিশিকে আর নিশি আমাকে দুজন দুজনকে খাইয়ে দিলাম। খাওয়া শেষে,,,,,

নিশি-- শুনো আমরা এখন মার্কেটএ যাবো। আমাদের তো বেবি হবে তাইনা। বেবির জন্য এখন থেকেই সব কিছু কিনে রাখবো। আর তার সাথে বেবির আব্বুর জন্য কিছু কিনবো।

আমি-- বেবির আব্বুর জন্য আবার কি কিনবে?

-- পাঞ্জাবি কিনবো টুপি কিনবো আর একটা সুগন্ধি কিনবো। আমার বেবির আব্বুকে এখন থেকে হুজুর বানিয়ে রাখবো। কি তোমার বেবির আম্মুর হুজুর হবে না।

-- হুম হবো। কিন্তু লোকে তো নানান ধরনের কথা বলবে। বলবে যে দেখ দেখ শালায় শাখ দিয়ে মাচ ঢাকার চেষ্টা করছে।

-- লোকে কি বলবে না বলবে তা তুমি কেনো শুনতে যাবে। একটা কথা সবসময় মনে রাখবে,,, আমাদের সমাজে যদি কেউ ভালো কাজ করতে চায় তাকে উৎসাহ দেবার মতো একটা লোকও খুজে পাবে না। কিন্তু সেই লোকটাই যদি খা*রাপ কাজ করতে যায় তার পিছনে হাজার হাজার লোকের সমাগম দেখতে পারবে। পড়ে আবার দোষ টা তাকেই দিবে এই সমাজের লোকজন। তাই কে কি বললো তাতে কান না দেওয়াই উত্তম বুজলে?

-- হুম বুঝলাম।

-- এখন তাহলে চল। আগে হসপিটাল যাবো রফিক ভাইকে দেখার জন্য। তারপর মার্কেট যাবো কেমন। আর শুনো রফিক ভাইয়ের হসপিটালের যাবতীয় খরচ কিন্তু আমরাই মিটাবো। আর তার সাথে তার পরিবারের সকল খরচও তুমি চালাবে যতদিন না রফিক ভাই সুস্থ হন।

-- হুম ঠিক আছে।

তারপর দুজনে বের হয়ে পড়লাম। প্রথমত হসপিটাল গেলাম। সাথে কিছু ফলমূল নিয়ে গেলাম। আর আসার সময় তার জন্য সকল মেডিসিন কিনে দিয়ে আসলাম। সেখান থেকে মার্কেট গিয়ে কিছু শপিং করে নিয়ে আসলাম।

এভাবেই দিন যেতে লাগলো। নামাজ খাওয়া আর দৈনন্দিন কাজ সাথে ঘুম এভাবেই ৭টা বছর পার হয়ে গেলো। নিশি সেদিন থেকে আর তার অফিস যায়না। সেদিনই চা*করি টা ছেড়ে দেয়। ওহ আপনাদের তো বলাই হয় নাই আমাদের একটা পুত্র সন্তান হয়েছে। তাঁকে হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি নিশির ইচ্ছেয়। আমাদের জন্য দোয়া করবেন সকলে, ছেলে কে যেনো একজন হাফেজ বানাতে পারি।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে পাপ থেকে বিরত রাখুন। সকলকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। সামনে রোজার মাসে সকলকে ৩০টি রোজা আদায় করার তাওফিক দান করুন! আমিন।

সমাপ্ত
বিঃদ্রঃ গল্পের সাথে বাস্তবতা মিলাতে চাইবেন না। গল্প শুধু গল্পই। তবে কিছু কিছু জিনিস গল্পের সাথেও মিলে যায়।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

কাপর পরতে পরতে রুপা বললো স্যার আমার কাজটা হয়ে জাবে তো এবার তাই না?  আমিতো এবার টাকাটা পেয়ে যাব স্যার তাই না? আমার স্বামী...
27/01/2024

কাপর পরতে পরতে রুপা বললো স্যার আমার কাজটা হয়ে জাবে তো এবার তাই না? আমিতো এবার টাকাটা পেয়ে যাব স্যার তাই না? আমার স্বামীকে এবার সারিয়ে তুলতে পারবোতো স্যার?

আমি আবারো কুনজরে রুপার বু*কের দিকে তাকালাম। আমার খা*রাপ নজরে তাকানো দেখে রুপা তার জা*মাটা এবার পরে নিল।
আমি মুচকি হেসে বল্লাম

-- হা টাকা তো তুমি পাবেই। তোমার স্বামী আমাদের জন্য পুলিশের গু*লি খেয়ে এখনো হসপিটালে আছে। আর তোমার কাজটা আমি করবো না তাই কি কখনো হয়।

-- স্যার তাহলে আমি কবে টাকা টা পাবো?

আমি আবারো তার শ*রীরের দিকে তাকিয়ে বললাম।

-- পাবেতো,,,,, তবে তার জন্য যে তোমাকে আবার আমার সাথে দুই একবার দেখা করতে হবে গো রুপা।

রুপা এবার আমার চোখের দিকে তাকালো। রুপার চোখে আমি আমার প্রতি সম্পন্ন ঘৃ*ণার ছাপ দেখতে পেলাম। রুপা এবার কোনো কথা না বলে সোফার ওপর থেকে তার ওড়না টা নিয়ে গা*য়ে জরিয়ে চলে যেতে লাগলো। আমি রুপাকে বল্লাম দাঁড়াও আমি আগে দেখে আসি বাহিরে কেই আছে নাকি। রুপা দাঁড়িয়ে গেলো। আর আমি একনজর বাহিরে চোখ বুলিয়ে আসলাম নাহ কেউ নেনলই।
এবার রুপাকে চলে যেতে বল্লাম ও যেতে লাগলো। আবারো রুপার দিকে তাকিয়ে দেখি ও পা*জামা টা উল্টো করে পরেছে। তাই আবারো রুপাকে দার করালাম। বললাম।

-- রুপা তুমি তোমার পা*জামাটা উল্টো করে পরেছো ওটা ঠিক করে পরে তারপর বের হও।

কিন্তু রুপা তা ঠিক করলো না। আমার দিকে একবার তাকিয়ে সে বেরিয়ে গেলো। আমি রুপার চোখে যেনো দেখতে পেলাম একজন অসহায় নারীকে। তার চোখে দেখতে পেলাম আমার প্রতি ঘৃণা। তার চোখে দেখতে পেলাম প্রতি*শোধ এর আ*গুন।
রুপা বেরিয়ে যাবার পর আমি বেলকনিতে গেলাম। দেখার জন্য যে রুপা কি কাউকে কিছু বলে দেয় কি নাকি তাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে। কিন্তু নাহ ও সোজা চোলে গেলো,,,, এক সময় সে আমার চোখের আরাল হয়ে গেলো।

মেয়েটার নাম রুপা তার স্বামী একটা কাজের জন্য পুলিশের গু*লি খেয়ে এখন হসপিটালে।। রুপার স্বামী আমার সাথেই কাজ করতো। তবে সে আমার থেকেও নিচু পদের।
রুপা আমার কাছে সাহায্য চাইতে আসে যাতে তার স্বামীর ভালো ভাবে চিকিৎসা হয়। আর আমার চোখ পরে রুপার শ*রীরে গঠনের ওপর। তারপর তাকে আমি আমার সাথে কিছুক্ষণ সময় খাটানোর প্রস্তাব দেই। প্রথমে রাজি ছিলো না পরে অভাবের তাড়নায় ঠিকই রাজি হয়ে গেলো। আর তারপর ওপরের ঘঠনা।

বসে বসে টিভি দেখছি,,,,, হঠাৎ কলিং বেল টা বেজে উঠল। গিয়ে দরজা টা খুলে দিলাম। আর কেউ নয় আমার বউ নিশি এসেছে।
মেয়ে টাকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে। হাতে অনেক শপিং ব্যাগ। ডুকেই আমাকে জ*রিয়ে ধরলো। আমি বললাম,,,,,

আমি-- কি বেপার আজ আমার জান টাকে এত খুশি খুশি লাগছে,,,,,,, বেপার টা কি হুম☺

নিশি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ গুলো সোফাতে রেখে বললো।

নিশি-- হু হু গ্রেস কর কি হতে পারে। আজ আমি অনেক খুশি।☺

-- তা তো আমার বউ টার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি আমার বউটা খুব খুশি। কিন্তু সোনা তুমি যদি না বল তাহলে বুঝবো কি করে।

-- জান আমার প্রমোশন হয়েছে অফিসে ( কিছুটা এক্সাইটেড হয়ে)
আমিও ওনেক খুশি হলাম আর বললাম।

-- ওয়াও জান তাই তাহলে তো ভালোই হলো।

নিশি পাই চারি করতে করতে বলতে শুরু করলো।

-- হুম সোনা জানো,,,,,, আমি তো অনেক খুশি হয়েছি। নুসরাতও হিং*সা শুরু করে দিয়েছে আমার সাথে যখন শুনলো আমার প্রমোশন হয়েছে। রফিক স্যার তো আমার কেবিনে এসে আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে গেলেন,,,,,,,,,,,, নিশি সমানে বলেই চলেছে তার কথা গুলো আর আমি মুচকি হেসে হেসে তার কথা গুলো শুনছি।

হঠাৎ চোখ পরলো নিশির পড়নের পাজামার দিকে। নিশির পাজামার দিকে তাকিয়ে আমার হাসি মাখা মুখ নিমিষেই যেনো মলিন হয়ে গেলো। কারন

নিশির পা*জামাটা উলটো ,,,,,, নিশি উলটো করে পা*জামাটা পরে আছে। তখনি আমার মনে পরে গেলো রুপার কথা। সকালে রুপাকে যখন আমি,,,,,, তবে কি নিশিও তাহলে। না না এহতে পারে না। নিশি আমার সাথে এত বড় বে*ইমানি করতে পারে না।
নিশি কথা বলেই যাচ্ছে আর আমি ঘামছি। আমার ঘামা দেখে নিশি বললো।

নিশি-- কি হলো তুমি,,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,?

গল্প #নিয়তি
পর্ব ১

27/01/2024

#গল্পঃ_এক_জীবন_প্রেম
শেষ পর্ব || ০৪

সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিল এখুনি লঞ্চঘাটে যাবে।সকলের সাথে আমিও গেলাম।বাসায় শুধু বড়ভাবী,রিনি আর আমার ছোট্ট ছেলেটা রইলো।আমাকে অবশ্য কেউ নিতে চায় নি। সবাই বলেছে আমার ছেলেকে দেখতে, আর কোন দুশ্চিন্তা না করতে। কিন্তু দুশ্চিন্তা না করতে বললেই তো আর দুশ্চিন্তা ছাড়া থাকা যায় না।আমি সকলের সাথে এক প্রকার জোর করেই গেলাম।

আদিবের জন্য আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। দোয়া করছি যেভাবেই হোক আদিব যেন ফিরে আসে। টানা তিনদিনের ছুটি থাকায় রাস্তায় অনেক জ্যাম পড়লো। সন্ধ্যার দিকে সিএনজি-বাসের সংঘর্ষের ফলে বহু মানুষ আহত হয়েছে। সেজন্য অর্ধেক রাস্তা বন্ধ।

আমরা কোনরকম লঞ্চঘাটে পৌঁছালাম। জানতে পারলাম বেশিরভাগ মানুষ উদ্ধার করা হয়ে গিয়েছে। কাউকে জীবিত অবস্থায় আবার কাউকে মৃ*ত।
একপাশে অনেকগুলো লা*শ জড়ো করে রাখা হয়েছে। এখানে আসার পর ভয়ে আমার শরীরে কাঁপুনি ধরে গেল। চারপাশে মানুষের কান্নার আহাজারিতে আমি নিজেই কাঁদতে ভুলে গেলাম।

মনে হচ্ছিল আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাব।নিজেকে অনেক কষ্টে দাঁড় করিয়ে রাখলাম। আদিবের বড়ভাই আর আমার বড়ভাইয়া দুজনে গিয়ে জড়ো করা লা*শের মধ্যে খুঁজলো।সেখানেও আদিবকে খুঁজে পেল না। খোঁজ করে জানা গেল এখনো চার-পাঁচজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। তাদের কথা শুনে আমাদের সকলের কান্নাটা বেড়ে গেল।

সকলে ধরেই নিলো ওই অজ্ঞাত লোকেদের মাঝে আদিবও আছে। আমার শাশুড়ী এই কথাটা শুনে পা*গলের মতো আচরণ করা করলো।তিনি রাস্তায় আদিবের বয়সী যাকে দেখছেন তাকেই বলছেন, ‘আমার আদিব মরে নি;আমার আদিব বেঁচে আছে।এই তো আমার মানিক’


আমার শ্বাশুড়িকে অনেক কষ্ট করে বাড়ি আনা হলো। বাড়ি আসার পরে দেখি আত্মীয়স্বজন দিয়ে বাড়ি ভরে গেছে। পুরো বাড়িতে মরা কান্না জুড়ে গেল। সকলে কাঁদছে, কেবল আমিই কাঁদছি না।এমনকি আমার দুধের শিশুটাও কাঁদছে।আর আমি নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি।আমি বিশ্বাসই
করতে পারছি না আদিব যে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।

অনেকেই আমাকে বলছে চিৎকার করে কাঁদতে।কাঁদলে মনটা হালকা হতো। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছি,আর দুঃস্বপ্নটা ভেঙে গেলে আমি আবার আগের জায়গায় ফিরে যাব।আমার মাথাটা কেমন জানি ভার হয়ে আসছে,চারপাশে অন্ধকার হয়ে এলো। এরপর আর মনে নেই পরে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করি। বড়ভাবী আমার পাশে আছেন। বাবুকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছেন।আমাকে নড়াচড়া করতে
দেখেই বললেন,

-- 'বোন আমার বাবুটা সন্ধ্যা থেকে কষ্ট পাচ্ছে। ওর দিকেও তো তোমার একটু খেয়াল রাখা উচিত। এখন গভীর রাত ওকে একটু বুকে জ*ড়িয়ে আদর করো, ওকে খাওয়াও।যা হবার তা তবেই কেউ আমরা ফিরাতে পারবো না। তুমি নিজেকে একটু শক্ত করো।'

সত্যিই আদিবের চিন্তায় বাবুর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। বাবুকে কোলে নেওয়ার পর বুক ফে*টে কান্না আসলো। জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদলাম।
পরদিন পুরো বাড়িতে থমথমে অবস্থা। বাড়ির আত্মীয়স্বজন, আমার বাড়ির সকলে চলে গিয়েছে।বড়ভাবী ছাড়া কেউ আমার সাথে কথা বলছে না।আমার শাশুড়ী কিছুক্ষন পরপর কাঁদছে আমাকে বকছে।আব্বা,আদিবের বড়ভাইও আমার ওপর বেশ ক্ষিপ্ত। তাদের কথা অনুযায়ী আমি যদি আদিবকে লঞ্চে আসার পরামর্শ না দিতাম তাহলে আজকের এ দুর্দিন দেখতে হতো না। আমি কি কখনো জানতাম, লঞ্চটা ডুবে যাবে....
তাহলে তো কখনোই বলতাম না।

বিকেল পর্যন্ত লঞ্চঘাটে অনেক খোঁজাখুজি করেও আদিবের কোন খবর পাওয়া যায় নি। আমি রুমে বসে বাবুকে ঘুম পাড়াচ্ছি আর আদিবের কথা ভেবে ভেবে নিরবে চোখের জল ফেলছি।হুট করে আমার শাশুড়ী রুমে ঢুকলেন। আমার কোল থেকে আমার ছেলেকে এক প্রকার কেঁড়ে নিলেন। আমি কিছু বুঝে উঠার আগে আমার চুলের মুঠি আমার গালে দুই-তিনটা থা*প্পড় দিয়ে বললেন,

-- 'মুখপুড়ি অপয়া অলক্ষ্মী কোথাকার! আমার ছেলেটাকে খে*য়ে এখানে বসে নাটক করছে। তুই আমার ছেলের জীবনে আসার পর আদিবের জীবনে সব অঘটন ঘটে যাচ্ছে। বিয়ের এক সপ্তাহ আগে এক্সিডেন্টে পা দুটো হারাতে বসেছিল একমাত্র তোর কারনে। আর এখন আমার ছেলেকে খে*য়ে ফেললি। কয়দিন পর দেখা যাবে আদিবের ছেলেটাকেও খেয়ে ফেলবি।আর তোকে এ বাড়িতে রাখব না।বের হ.... '

আমি কিছু বলার আগেই আমার চুল ধরে হি*ড়হি*ড় করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সদর দরজা লাগিয়ে দিলেন, সবাইকে শাসালেন কেউ যাতে দরজা না খোলে।আমি অনেকক্ষণ দরজা ধাক্কালাম, কেউ দরজা খুলল না। অনেক কাঁদলাম, দরজার বাইরেই বসে রইলাম। শরীরটা ভীষণ খা*রাপ লাগছে।

গতকাল রাত থেকে অনেক ঝাপটা বয়ে গেছে আমার ওপর দিয়ে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। রাত নয়টার দিকে আমার শ্বশুর কোন কাজে
বাইরে যাওয়ার জন্য দরজা খুললেন।তাকে দেখামাত্র আমি তার পা জড়িয়ে অনেক কাঁদলাম। কিছু বলতে পারলাম না।কারণ কান্নার কারনে গলা বসে গেছে। তিনি আমাকে অগ্রাহ্য করে চলে গেলেন।আর বললেন,

-- 'তোমার শাশুড়ী যা করেছে একদম ঠিক করেছে।আমার ছেলের এমন অবস্থার জন্য দায়ী একমাত্র তুমি।আমার ছেলেই নেই তোমাকে রেখে কি করবো? আর আদিবের ছেলে আমাদের কাছেই থাকবে।'

আমি ওনার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।মানুষ কু*কুরের প্রতিও মায়া দেখায় কিন্তু ওনি আমাকে পা ঝাড়া দিয়ে ফেলে রেখে চলে গেলেন। তবুও আমি গেলাম না।দরজার সামনেই শুয়ে রইলাম।

গভীর রাত কয়টা ঠিক আমি জানি না।তবে চারপাশ নিরব। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। দেখলাম বড়ভাবী আর ভাই। বড়ভাবী আমাকে জড়িয়ে ধরে ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,

-- 'দেখেছো তোমার মা-টা কতো নিষ্ঠুর! এমন ভাব ধরছে যেন তিনি নিজেই একমাত্র ছেলের শোকে কষ্ট পাচ্ছেন, আর তিশা ওর বউ হয়ে ওর কোন কষ্ট নেই।কোনো মেয়ে কি চায় তার হাজবেন্ড ম*রে যাক? এটা যে একটা দূর্ঘটনা সেটা তোমরা কেউ বুঝতে চাইছো না। কালকে যাওয়ার সময় তো দেখলাম রাস্তায় এক্সিডেন্ট হয়েছিল সেখানে যদি আদিব থাকতো তখন কি তোমার মা এই মেয়েটার দোষ দিতো পারতো? আর তোমরা... তোমরাও মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে যাচ্ছো, কেউ মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পাচ্ছ না।'

ভাই কিছু বললেন না। চুপ করে ভাবীর কথাগুলো শুনে গেলেন। কথাগুলো বলে ভাবী আর ভাই আমাকে রুমে নিয়ে গেলেন। ঘড়িতে দেখলাম রাত একটা বাজে। আমার ছেলেটা রুশার (ভাবীর মেয়ে) সাথে ঘুমিয়ে আছে।
আমার জন্য ভাবী তাড়াতাড়ি খাবার গরম করে নিয়ে আসলেন। আমাকে খাইয়ে দিতে দিতে বললেন,

-- 'মায়া-দয়া বলতে এদের মনের মধ্যে কিছু নেই। বোন আমার, বড়বোন হিসেবে তোমাকে একটা অনুরোধ করি তুমি কালকে সকালেই তোমার বাপের বাড়ি চলে যাও। এখন হাজার চাইলেও বাবুকে তোমার কাছে দিবে না। কয়দিন পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আম্মাকে বুঝিয়ে বাবুকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিব। এখন তুমি যতোই এখানে থাকার চেষ্টা করবে ততই তাদের হিং*স্র আচরণের শিকার হবে।'

ভাবীর কথা শুনে আমি তাকে ধরে কেঁদে ফেললাম।



সকালে আমি ভাবীর রুমে বসে আছি।ভাই-ভাবী ছাড়া কেউ জানে না আমি যে এ বাড়িতে আছি।সকলে জানে আমি চলে গেছি।ভাবী বারবার আমাকে অনুরোধ করছে আমি যাতে আমার ভাইয়াদের কল করে আমাকে নিয়ে যেতে বলি। ছোটভাইয়া অবশ্য কল দিয়েছিল ভোরে আদিবের কোন খবর পাওয়া গেছে কি না জানতে!

আমার শ্বশুরবাড়িতে যে এতো কাহিনি হয়েছে সেগুলো বলি নি।শুনলে সাথে সাথে এসে আমাকে নিয়ে তো যাবেই সাথে বাড়িসুদ্ধ সবাইকে কথা শুনিয়ে যাবে এই ভয়ে আমি কিছু বলি নি।আমি চাই না এই শোকের সময় আমার জন্য আবার নতুন কোন ঘটনা ঘটুক। এই দুইটা দিনে আমার জীবনটা পুরোই ওলট-পালট হয়ে গেল।বারবার আদিবের সাথে বলা শেষ কথাগুলো কানে বাজছে - ‘আমি লঞ্চে উঠতে ভয় পাই। সাঁতার জানি না।’

হঠাৎ করেই আমার ফোনটা বেজে উঠল। দেখলাম আননোন ন*ম্বর থেকে কল এসেছে। মন-মে*জাজ এমনিতেই ভালো ফোনটা ধরার কোন ইচ্ছে ছিল না। তবুও কলটা রিসিভ করলাম। রিসিভ করার পর ওপর প্রান্তে থাকা লোকটা আমাকে আদিবের খবর জানালো,

-- 'আসসালামু আলাইকুম, আপনি কি আদিব সাহেবের ওয়াইফ?'

-- 'জ্-জ্বি! কেনো? আদিবের কোন খবর পেয়েছেন?'

-- 'হ্যাঁ,আদিব এখন হাসপাতালে ভর্তি। আপনি কেমন ওয়াইফ উনার? দুইদিন ধরে হাজবেন্ড হাসপাতালে রোড এক্সিডেন্ট করে মৃ*ত্যুর সাথে লড়ছে আর আপনাদের কোন খবর নেই।আপনি হাসপাতালের ঠিকানা টেক্সট করে দিচ্ছি আপনারা এখুনি আসুন।'

-- 'হ্যাঁ..হ্যাঁ অবশ্যই।আমরা এখুনি আসছি।'

ফোনটা রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া আমার আদিব বেঁ*চে আছে। আমি তাড়াতাড়ি আম্মাকে ডাকতে গেলাম। আম্মাকে ডাক দিতেই আম্মা তেড়ে এলেন।

-- 'মুখপুড়ি তুই এখনো যাস নি? আর তোর ওই মুখে আম্মা বলে ডাকবি না... '

-- 'আম্মা আপনার ছেলে বেঁচে আছে।হাসপাতাল থেকে একজন কল করে বলেছে।রোড এ*ক্সি*ডেন্ট করে দুইদিন ধরে ও হাসপাতালে আছে।আমাদের এখুনি যেতে বলেছে।' (তাড়াহুড়ো আম্মাকে কি বললাম নিজেও জানি না)

-- 'রোড এ*ক্সি*ডেন্ট? ও কি তাহলে লঞ্চে করে আসে নি?'

-- 'জানি না আম্মা, আপনারা তাড়াতাড়ি রেডি হোন।আব্বাকেও গিয়ে বলুন।'

আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাবুকে দিয়ে ভাবীর কাছে দিয়ে গেলাম।আদিবের বড়ভাই,আমি,আম্মা,আব্বা সকলে মিলে হাসপাতালে গেলাম। হাসপাতালে যাওয়ার পর ওই লোকটা আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-- 'আপনার ছেলে যে এখানে এক্সিডেন্ট করে দুইদিন ধরে পড়ে আছে সেই খেয়াল আছে। ছেলের প্রতি কি কোনো দরদ নেই? দুইদিন পর আজ ওনার জ্ঞান ফিরেছে।ওনার থেকে না*ম্বার নিয়ে ওনার ওয়াইফকে কল করলাম।' (কিছুটা রাগী সুরে)

আব্বা বললেন,
-- 'আসলে আমরা জানতাম আদিব লঞ্চ দিয়ে আসবে। তো লঞ্চ ডোবার ঘটনা শোনার পর থেকে লঞ্চ ঘাটেই সবসময় যোগাযোগ রেখেছি। আপনি আমাদের যে উপকার করলেন তার ঋন কোনদিন শোধ করতে পারব না।চিরকৃতজ্ঞ আমরা। আপনি যে না থাকলে কি হতো?'
লোকটির হাত ধরে আমার শ্বশুর কথাগুলো বললেন।

-- 'ওহহ,আচ্ছা এই ঘটনা। সরি না জেনেই আপনাদের কতো কথা বলে ফেললাম। আসলে দুইদিন হয়ে গেছে অথচ আপনারা কোনো খবর নেন নাই।আমার ছোটভাইও আপনার ছেলের সাথে এক্সিডেন্ট করেছিল। ওর সাথে আপনার ছেলেকেও আমরা হাসপাতালে নিয়ে আসি। আপনার ছেলে মাথায় অনেক আঘাত পেয়েছিল।প্রচুর র*ক্তক্ষরণ হয়েছে। তারপর কত কষ্ট করে র*ক্ত জোগাড় করেওনাকে র*ক্ত দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর রহমতে এখন আগের চেয়ে সুস্থ।'

-- 'আপনাকে কি বলে যে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবো বুঝতে পারছি না। তা আপনার ছোটভাই ভালো আছেন?'

-- 'জ্বি, আল্লাহর রহমতে ভালো আছে।আজকে আমার ভাইকে নিয়ে যাবো।আর আপনারা এমন করে বলবেন না, আদিবও তো আমার ভাইয়ের মতো।'

আমরা আদিবের সাথে দেখা করতে গেলাম। আদিবকে দেখে বেশ সুস্থ মনে হলো। ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানা গেল আজকে চাইলেই আমরা আদিবকে নিয়ে যেতে পারি।আমরাও আর ওকে হাসপাতালে রাখলাম না। হাসপাতালের বিল দেওয়ার সময় ওই লোকটার ভাইয়েরটাও আব্বা দিলেন। লোকটা অনেক না করলেন। আব্বা বললেন,

-- 'আরে আপনারাও তো আমার ছেলের মতো। আমাদের এতবড় উপকার করল আপনার জন্য সামান্য এটুকু করতে পারবো না।'

-- 'না,আঙ্কেল ধন্যবাদ। আমাদের বিল দেওয়া লাগবে না। উপকার করে যদি তার বিনিময়ে কিছু নিই তাহলে এ উপকারের কোনো মূল্য নেই।আপনি আমাদের জন্য মন থেকে দোয়া করবেন এটাই আমার চাওয়া।'

লোকটার কথা শুনে আমরা সবাই রীতিমতো মুগ্ধ। বর্তমান যুগেও এমন ভালো মানুষ আছে? অবশ্য ভালো মানুষ আছে বলেই দুনিয়া টিকে আছে।
আব্বা অনেক জোরাজোরি করে হাসপাতালের বিল দিয়ে আসলেন।



বাড়ি আসার পর আদিবের কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনলাম।

-- 'তিশার কথা শুনে আমি লঞ্চঘাটে যাই লঞ্চ দিয়ে আসার জন্য।এমনকি লঞ্চে উঠেও যাই। কিন্তু লঞ্চে এত বেশি মানুষ ছিল যে আমার মনের ভিতর আরো ভয় ঢুকলো,যদি বেশি মানুষের জন্য লঞ্চ ডুবে যায়।এমনিতেও তো আমি নৌপথে যাতায়াত করতে অনেক ভয় পাই।

লঞ্চ ছাড়ার পাঁচ মিনিট আগে আমি নেমে যাই।ভাবলাম জীবনের মূল্য থেকে সময়ের মূল্য বেশি হতে পারে না। বাড়ি যেতে দেরী হলে হোক,তিশাকে আমি মানিয়ে নেব। আমি তখনি সিএনজি নিয়ে রওনা দিই।কিন্তু আমার কপালে যে দূর্ঘটনা লেখা সেটাকে তো আর ফিরাতে পারবো না। সিএনজি-বাসের এক্সিডেন্ট হলো।আমি মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাই।অনেক র*ক্তক্ষরন হয়।আমার ফোনটাও ভেঙে যায়।যার কারণে তোমরা কল করে দেখছো বন্ধ। এরপরের কাহিনি তো তোমরা জানোই।'

-- 'লঞ্চ ডোবার কাহিনি শোনার পর আমরা চারচত্তর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যে শুনলাম কিছুক্ষন আগে এক্সিডেন্ট হয়েছে সেইখানেই কি.... '(তিশা)

-- 'হ্যাঁ।'

আদিবের কথা শোনার পর আব্বা-আম্মা আমাকে বললেন,

-- "বৌমা আমরা তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। আসলে ছেলের শোকে মাথা ঠিক ছিল না। তোমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।তুমি আমাদের মাফ করে দিও।'

তাদের আসল রূপ আমার দেখা হয়ে গিয়েছে। একটা মেয়ে কখনোই চায় না তার স্বামী মা*রা গিয়ে সে বিধবা হোক।তবুও সকলে মেয়েদের ওপরই সব দোষ দেওয়ার চেষ্টা করে। আজ বুঝতে পারলাম সেদিন বিয়ের আগে যদি আদিবের জায়গায় আমার পায়ের সমস্যা হতো তারা কখনোই আমাকে বাড়ির বৌ বানাতো না। আমার জন্মদাতা বাবা ভুল কিছুই বলেন নি।

আমি কিছুই বললাম না মাথা নিচু করে রইলাম।আমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা শুনে আদিব অনেকটাই রেগে গেল।পুরো কাহিনি শুনলে না জানি কোন কান্ড ঘটায়। আমি কিছু বলার আগেই আদিব বলে উঠল,

-- 'আমি ম*রে গেছি শুনেই তিশাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে! বাহ্।
আমার ম*রালা*শ দেখা পর্যন্ত বাড়িতে রাখলে না। ছিহ্!! তোমাদের ওপর আমার ঘৃণা হচ্ছে। যে মেয়েটা আমার মতো পঙ্গু ছেলেকে বিয়ে করে লোকজনের কথা শুনলো, আমাকে সেবা করে ভালো করে তুললো তার সাথে তোমরা এই ব্যবহারটা কীভাবে করলে? উপকারকারীর প্রতি এতো অকৃতঘ্ন হলে কি করে?তোমাদের বিবেকে কি এতটুকু বাঁধল না।'

-- 'থাক আদিব এসব কথা বাদ দাও।তোমার শরীরটা বেশি ভালো না তার ওপর এমন উত্তেজিত হয়ে কথা বলা উচিত না। আগে সুস্থ হয়ে নাও।' (বড়ভাবী)

-- 'তাই বলে আব্বু-আম্মু তিশার সাথে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিবে.... ' (আদিব)

-- 'থাক, আদিব বাদ দাও।তোমাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছি এটাই অনেক।' (তিশা)
বাবু হওয়ার পর থেকেই অনেক ঝা*মেলা লেগে আছে তাই ঠিকমতো নামটাও রাখি নি। আজকে বাবুর নাম রেখেছেন আমার শাশুড়ী। আদিবের নামের সাথে মিলিয়ে সাদিব। আমার পরিবারের সবাইকে এবাড়িতে দাওয়াত করা হয়েছে। আজ দুই পরিবারের মধ্যে নেই কোনো রাগ, ক্ষোভ, বিবাদ।আছে শুধু ভালোবাসা আর সম্মান। জীবনের প্রতিটি দিন সকলের সাথে এভাবেই আনন্দে কাটাতে চাই।

-----(সমাপ্ত)-----

(ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।হ্যাপি ইন্ডিংই দিলাম, স্যাড ইন্ডিং দেওয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু স্যাড ইন্ডিং দিতে গিয়ে আমি নিজেই ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছিলাম।যাইহোক, সকলে জানাবেন গল্পটা কেমন লেগেছে? আপনাদের ভালোলাগাই আমার লিখার অনুপ্রেরণা)

27/01/2024

#গল্পঃ_এক_জীবন_প্রেম
তৃতীয় পর্ব || ০৩

বিকেলে ছাদ থেকে জামাকাপড় এনে রুমে আসতেই আদিবকে দাঁড়াতে দেখে আমি খুশিতে একটা চিৎকার দিলাম।কিন্তু আমার খুশিটা বেশিক্ষন স্হায়ী হলো না..

আদিবের পা দুটো কাঁপতে কাঁপতে ও পড়ে গেল।আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে উঠালাম।আমি ওকে দাঁড়া করানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ওর পা দুটো কাঁপার কারনে দাঁড়াতে পারল না। শরীরও ঘামে পুরো ভিজে গেছে। মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম।অবশেষে আল্লাহ আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।মনের মাঝে আবারও আশার আলো দেখতে পেলাম।

রাতে আদিবের পায়ের ভালো ট্রিটমেন্টের জন্য ওর আব্বা, বড়ভাইদের সাথে পরামর্শ করলাম।পরদিনই আমি,আদিব, ওর বড়ভাই ডাক্তার কাছে নিয়ে গেলাম। সেখানে তারা অনেকগুলো টেস্ট করানোর পর আদিবের পায়ের জন্য ইন্ডিয়ার এক ডাক্তারকে দেখানোর জন্য পরামর্শ দিল।


বাড়ি এসে সকলের সাথে কথা বলে জরুরি ভিত্তিতে সব কাগজপত্র ঠিক করে আদিবকে দশদিনের ভিতর ইন্ডিয়া নেওয়া হলো। আদিবের সাথে আমি, বড় ভাইভাবী, আব্বা গিয়েছি।সেখানে আদিবের পায়ে ছোটখাটো একটা অস্ত্রপাচার করা হয়।প্রায় পনেরো দিনের মতো বেডরেস্টের পর আদিব স্ক্যাচ ব্যবহার করে দাঁড়াতে পারে। অল্প অল্প হাঁটতে পারে। বেশিক্ষন হাঁটতে পারে না, ক্লান্ত হয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে আস্তে আস্তে আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবে।


প্রায় দেড়মাস পরে আমরা ইন্ডিয়া থেকে ফিরলাম। আদিব স্ক্যাচ ব্যবহার করেই এখন হাঁটে। বাড়ি আসার পর আম্মা আমাকে আর আদিবকে দেখে সেকি কান্না!

আমাকে বলে,
-- 'তুমি শুধু আমার বৌমা না,তুমি আমার মেয়ে। তোমার জন্য আজ আমার আদিব নতুন করে বাঁচতে পারবে।নিজের পায়ে হাঁটতে পারবে। তোমার জন্য মন থেকে অনেক দোয়া,তুমি জীবনে অনেক সুখি হও আমার ছেলেকে নিয়ে। তোমার মত এমন একটা বৌমা পেয়ে আমার অনেক গর্ব লাগছে।'

আমি মুচকি হেসে বললাম,
-- 'সবার আগে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করা উচিত। মানুষ তো মাত্র উছিলা।'

তবুও বাড়ির সকলে আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

---
--------
আদিব এখন সম্পূর্ণ সুস্হ। হাঁটাচলা করতে কোন অসুবিধা হয় না। একটা ব্যাংকে চা*কুরীও পেয়েছে। আজকেই ওর অফিসের প্রথম দিন। ইদানীং আমার কেনো জানি মাঝে মাঝে ভয় হয় আদিব কি আমাকে কখনো ছেড়ে চলে যাবে?

অফিস থেকে ফেরার সময় আমার জন্য একমুঠ রেশমি চুড়ি এনেছে।সেদিকে আমার হেলদোল নেই। আমার মাথায় কিসব হাবিজাবি চিন্তা-ভাবনা ঘুরছে।

আমি আদিবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-- 'তোমার সাথে কি কোনো মেয়ে কলিগ আছে?'

আমার কথা শুনে আদিব জোরে হেসে দিলো।

-- 'ওহহ,আচ্ছা এই জন্যই তোমাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে? (আবার হেসে দিয়ে)

হ্যাঁ,আছে তো। একজন মেয়ে কলিগ আছে। তবে আমার থেকে মিনিমাম সাত-আট বছরের বড়।তোমার চিন্তার কোন কারন নেই যদি আমার চেয়ে বয়সে ছোট হতোও তবুও আমি দূরে দূরে থাকতাম। কারন তুমিই যে আমার একমাত্র প্রিয়তমা। বিশস্ত অর্ধাঙ্গিনী। হাজার বাঁধা আসলেও তো তোমার হাত আমি ছাড়বো না যেমনটা তুমি আমার পাশে ছিলে হাজারো সমস্যা মোকাবিলা করে।'

আমি কেঁদে দিয়ে বললাম,
-- 'কথা দিলে তো?'

-- 'হ্যাঁ আমার পা*গলি।'

আমি ওর কানে কাছে গিয়ে লাজুক মুখে ফিসফিস করে বললাম,

-- 'ওই শোনো...একটা কথা বলার ছিলো।কিন্তু আমার না ভীষণ লজ্জা করছে।' (চোখ ঢেকে)

-- 'তাহলে বলে ফেলো, আমার কাছে আবার লজ্জা কিসের?'

-- 'উঁহু,আমার অনেক লজ্জা করছে তোমাকে কথাটা বলতে। ইদানীং আমার আসলে খাওয়ার প্রতি অরুচি লাগছে, খেতে বসলেই বমি আসে, মাঝে মাঝে আচার খেতে ইচ্ছা করে, এবার তুমি বুঝে নাও... '
(কথাটা বলে আমি আবারও হাত দিয়ে চোখ ঢাকলাম)

-- 'তোমার শরীর অসুস্থ এটা বলতে এতো লজ্জা? আচ্ছা আজকে ভাবীকে বলে দিব কালকে যাতে তোমাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায়। মনে হয় তোমার ফুড পয়জনিং হয়েছে।' (আদিব হাসি চেপে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই কথাটা বললো)

-- 'গা*ধা কোথাকার! আমার ফুড পয়জনিং হয়েছে তোকে কে বলেছে রে? আমি কি একবারও বলেছি? আমার চোখ দেখে অন্য সময় সব বলে দিতে পারো আর এখন কেনো বুঝছো না? কি বলতে চাইছি আমি?'
(কিছুটা চিল্লিয়ে)

-- 'থাক থাক মহারানী আর চিল্লাতে হবে না।আমার অনাগত প্রিন্স/প্রিন্সেস শুনলে কষ্ট পাবে, যে ওদের আম্মু ওর বাবার সাথে ঝগড়া করছে।' (মুচকি হাসি দিয়ে)

আদিবের কথা শুনে তিশা আরো ক্ষেপে গেল।নাক ফুলিয়ে বললে,
-- 'তাহলে এত ঢং দেখানোর কি হলো? ফালতু লোক কোথাকার... '

-- 'আরে আরে রাগ করছো কেনো? আমি তো দেখছিলাম আমার মিষ্টি বউটা আমার কাছে কেমন লজ্জা পাচ্ছিল,আবার আমি না বোঝার ভান ধরায় কেমন ক্ষেপে যাচ্ছিল।"

-- 'একটা কথা রাখবে?আমাকে আমাদের বাসায় কিছুদিনের জন্য দিয়ে আসবে।বাসায় যাওয়ার জন্য মন ছুটে গেছে। কতদিন সবাইকে একসাথে দেখি না। আর জানোই তো একটা মেয়ের এই অবস্থায় তার মাকে কতোটা প্রয়োজন... '

-- 'আচ্ছা মায়ের সাথে গিয়ে কথা বলে দেখি। জানোই তো আমাদের পরিবারে মায়ের কথাই সব কথা।'


আদিব ওর মায়ের কাছে গিয়ে আমার কথাটা বলাতে আগুনে ঘি ঢালার মতো হলো। আমি আমার রুম থেকেই শুনতে পেলাম আমার পরিবারের সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলছে। তারা ছেলেপক্ষ হয়ে কেনো তারা মেয়েপক্ষের কাছে ছোট হবে।আরো অনেক কথা...

ওনার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এলো।আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলাম।সেখানে কিছুক্ষণ কেঁদে চোখে-মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে এলাম।এসে দেখি আদিব চুপ করে মাথা নিচু করে বিছানায় বসে আছে। আমিও কিছু না জানার ভান ধরে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।

ও আমার হাত দুটো জড়িয়ে ধরে বলে,
-- 'তিশা, মা তোমাকে এই অবস্থায় জার্নি করতে নিষেধ করেছে।তুমি মাকে প্লিজ ভুল বুঝো না। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি দু-একদিনের মধ্যে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাব।'

আমি ওর মিথ্যা আশ্বাস শুনে চুপ করে রইলাম।
দেখতে দেখতে নয় মাস কে*টে গেছে।বেবি হওয়ার সময়ও প্রায় ঘনিয়ে এসেছে। বাসায় আর যেতে পারি নি। আদিব যদিও নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আমিই মিথ্যা কথা বলে যেতে চাই নি। এরমাঝে মা আমাকে
দুবার দেখে গেছেন। আশ্বাস দিয়ে গেছেন বেবি হলে বাবা আর রাগ করে থাকতে পারবে না। বাবার মাঝে এখনই আমার জন্য অনেক দূর্বলতা দেখতে পায় মা। আমিও সেইদিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন আমার বেবি এসে দু'পক্ষের মনোমালিন্য হিসাব শেষ করবে।

হঠাৎ করেই আমার পেইন উঠে।আমি তাড়াতাড়ি আদিবকে কল করি, ও তখন অফিসে। আদিব জানায় ও অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এখুনি আসছে।ভাবীদের নিয়ে যাতে হাসপাতালে যাই।আম্মা, দুই ভাবী আমাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো। যাওয়ার আগে আমার মাকেও খবর দেওয়া হলো। হাসপাতালে যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাকে ওটিরুমে নেওয়া হলো।

ততক্ষণে আদিব আর তিশার মা হাসপাতালে পৌঁছে যায়। ওটিরুম থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে আদিব মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ পড়ে নেয়।

নার্স এসে জানায় আদিবের ছেলে সন্তান হয়েছে। বাচ্চা ও মা দুজনেই সুস্থ আছে।নার্সের কথা শুনে আদিব আবারও মনে মনে 'আলহামদুলিল্লাহ' পড়ে নেয়।

দুইদিন পরে তিশাকে আর ওর ছেলেকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যায়। পুরো বাড়ি আনন্দে ভরে যায়। তিশার সবচেয়ে বেশি হাসি পায় যখন ছেলেকে নিয়ে আদিব দুষ্টুমি করে,তখন আদিবকেও বাচ্চাদের মতো মনে হয়। তএবার তিশা সিদ্ধান্ত নেয় ওর বাবাকে ফোন করবে। সব ভেবেচিন্তে তিশা কল করে ওর বাবাকে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করার পর তিশার বাবার কর্মকাণ্ডে তিশা পুরোই অবাক হয়ে যায়।

তিশার কন্ঠস্বর শুনে ওর বাবা হাউমাউ করে কান্না করে দেয়।

-- 'বাবা, তুমি কাঁদছো?'
(আদিবকে বিয়ের সময় অপমান করা নিয়ে বাবাকে অনেক কড়া কথা বলার ছিল। কিন্তু বাবার কান্না দেখে আমি আর বলতে পারলাম না।--মনে মনে...)

-- 'তোর সাথে,জামাইয়ের সাথে অনেক অন্যায় করেছি আমরা। আমাদের তুই মাফ করে দিস। এতদিন নিজের দাম্ভিকতাকেই মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম। কিন্তু মনের মাঝে একবিন্দুও শান্তি পাই নি। আজ একবছর পরে তোর কন্ঠস্বর শুনে মনে শান্তি পেলাম। তোর কথা ভেবে ভেবে একটা রাতও ঠিকমত শান্তিতে ঘুমাতে পারি নি'

-- 'তবুও তো তুমি তোমার এই মেয়েটাকে একটাবারের জন্যও দেখতে আসো নি। নিজের জেদটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছো।(কেঁদে দিয়ে)
এখন আসো প্লিজ তোমার নাতিটাকে দেখে যাও। নাকি এখনো আসবে না?'

-- 'হ্যাঁ মা আসব। তোকে- জামাইকে প্রাপ্য সম্মান নিয়ে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসব। জামাই আবার রাগ ধরবে না তো?'

-- 'তুমি যদি নিজে আসো তাহলে রাগ করবে না।'

বাবার সাথে প্রায় একঘন্টা কথা বলে ফোনটা রাখলাম। আজ আমার মনেও অন্যরকম প্রশান্তি বইছে।মনে হচ্ছে সুখের সাগরে ভেসে যাব।কিন্তু এতো সুখ আমার কপালে সইবে তো?

ঠিক দুইদিন পর ঘরের কাজ করছি। হঠাং কলিংবেলটা বেজে উঠল। সাধারনত এ দুপুরের দিকটায় কেউ আসে না।আমি গিয়ে দরজা খোলার পর অবাক হয়ে গেছি। আমাদের বাড়ির সবাই এসেছে। তারা কেউই আমাকে বলে নি তারা যে আসবে। অনেক খাবার-দাবার,বাবুর জন্য জিনিসপত্র আরো অনেক কিছু সাথে নিয়ে এসেছে। বাবা-ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না!

আমার পরিবারের সবাইকে দেখে আমার শাশুড়ী রুমে গিয়ে মুখ গোমড়া করে বসে রইলেন। সাথে অন্য সবাইকেও আসতে নিষেধ করলেন।আমার শ্বশুরবাড়ির সবাইকে ডাকতে বললেন বাবা। আমি শাশুড়ীকে গিয়ে ডাক দিতেই তিনি আরেক দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলেন।আমি গিয়ে আম্মাকে
বললাম, ‘আমার বাড়ির লোকজন এসেছেন আসুন আপনি..’

তিনি পাশে বসে থাকা ননদকে গলার স্বর নামিয়ে বললেন,
-- 'আমার ছেলে আজ সম্পূর্ণ সুস্থ দেখে ওনারা আজ এসেছেন ঢং দেখাতে, এতদিন কই ছিল তাদের আলগা পিরিত।'

আম্মার কথা শুনে আমার ভীষণ রাগ লাগলো। এতদিন তার মুখের ওপর কোন কথা বলি নি।

কিন্তু আজ বললাম আমি বললাম,
-- 'আপনি ঠিক কি বললেন আম্মা? বুঝতে পারলাম না।'

তিনি আমতা আমতা করে বললেন,
-- 'না কিছু না,, তুমি গিয়ে নাস্তা রেডি করো। আমি এখুনি আসছি।'

আমি যাওয়ার কিছুক্ষন পরই আম্মা আসলেন। কিছুটা গোমড়ামুখ করেই সকলের সাথে কথা বললেন।দুপুরে খাওয়ার সময় বড়ভাইয়া বললেন,
আজকে আমাদেরকেতাদের সাথে নিয়ে যেতে চান। বাবাও ভাইয়ার সাথে একমত দিলেন। আমিও ভীষণ খুশি হলাম। কিন্তু আপত্তি করলেন আমার শ্বাশুড়ি।

-- 'পরে কোনদিন আদিব বৌমাকে নিয়ে আপনাদের বাড়ি যাবে, আজ না। আমার মনটায় কেমন কু-ডাক ডাকছে।' (আদিবের মা)

-- 'আরে..আজকে গেলে অসুবিধা কি? শুক্রবার-শনিবার তো এমনিই বন্ধ, আবার রবিবারেও সরকারি ছুটি পড়েছে।তাই বলছিলাম তিনদিন আমাদের বাড়ি মেয়ে আর জামাই বেড়িয়ে আসুক। তিনদিনের এমন ছুটি তো আর সবসময় আসে না।' (তিশার বাবা)

-- 'তবুও.... '
-- 'আম্মা, আপনি প্লিজ আর আপত্তি করবেন না। কতদিন বাসায় যাই না।কিচ্ছু হবে না দেখবেন।আমি এখুনি আদিবকে ফোন করে কথা বলছি।আর জামাকাপড়ও গুছিয়ে নিই।'
দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে জামাকাপড় গুছিয়ে আদিবকে বিকালের দিকে ফোন দিই। আমার পরিবারের লোকজন এই বাড়িতে এসেছে শুনে আদিব অনেক খুশিও হয় আবার অবাকও হয়।

-- 'কিহ! তুমি এতোক্ষণে এই কথা বলছো?'

-- 'তাহলে কখন বলতাম? এতোক্ষণ অনেক বিজি ছিলাম। শোনো তোমার অফিস তো আর কিছুক্ষনের মধ্যেই ছুটি হয়ে যাবে, তাই না? একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করো প্লিজ।'

-- 'পাঁচটায় অফিস ছুটি হবে।কিন্তু আগামী তিনদিনের ছুটি থাকায় বেশিরভাগ মানুষই আজ বেড়াতে যাবে।যার কারনে রাস্তায় আজ অনেক জ্যাম থাকবে। আর জ্যাম ছুটতে ছুটতে চার-পাঁচ ঘন্টা লেগে যাবে সেটা তো আর তোমার অজানা নয়।আমার আসতে আসতেও লেট হবে এটা ধরে নাও।'

-- 'আমি একটা বুদ্ধি দিই।তুমি না লঞ্চে করে চলে আসো। বাসায় আসতে আসতে একঘন্টা লাগবে।আর কোন জ্যাম-ট্যাম ভয় নেই।

-- 'মাথা খা*রাপ নাকি।তুমি জানো না আমি সাঁতার পারি না তাই লঞ্চে উঠিনা।নদীপথে যাতায়াত করতে আমার ভীষন ভয় লাগে। লাস্ট কবে উঠেছি তাও মনে নেই।আর উঠলেও সাথে পরিচিত কাউকে নিয়ে উঠি। বলা তো যায় না যদি লঞ্চ-টঞ্চ ডুবে মা*রা যাই।'

-- "ফালতু কথা বাদ দাও। এই সমস্ত কথা আর বলবে না। আর তুমি যা ভালো মনে করো,, তাই করো।'

কিছুটা অভিমান করে ফোনটা কেটে দিলাম।

কিছুক্ষন আবার আদিব ফোন করলো। আমি কলটা রিসিভ করলাম না। আবারও কল করলো আমি আবারও রিসিভ করলাম না। এমন করে অনেকগুলো কল করলো।শেষমেষ বাধ্য হয়ে কলটা রিসিভ করলাম।

-- 'কি হলো রাগ করেছো তিশা?'

আমি কোন উত্তর দিলাম না।

-- 'আরে শোনো,, আমি তোমার কথাটা ভেবেই লঞ্চঘাটে এসেছি।লঞ্চ দিয়েই আসবো,এবার খুশি তো?'

-- 'হ্যাঁ,খুব খুশি। তাড়াতাড়ি আর সাবধানে চলে এসো।'

আমি সবাইকে গিয়ে বললাম, ‘আদিব লঞ্চে করে আসছে। তাই জ্যামের কোনো চিন্তা নেই। খুব তাড়াতাড়িই চলে আসবে।’

প্রায় দু'ঘন্টা হয়ে গেছে অথচ আদিবের ফেরার কোন নাম নেই। অথচ একঘন্টা, সর্বোচ্চ দেড়ঘন্টার মধ্যে পৌঁছানোর কথা।ব্যস্ততার কারনে কলও করতে পারি নি। সন্ধ্যায় আমি সকলের জন্য নাস্তা বানাচ্ছি আর আমার ননদ রিনি টিভি দেখছে।

হঠাৎ রিনি চিৎকার দিয়ে আমাকে ডেকে বললো,
-- 'ভা--বী,ভাবী এই দেখো আমাদের শহরের লঞ্চঘাটে মাছের ট্রলারের সাথে ধাক্কা লেগে একটা লঞ্চ ডুবে গেছে।'

লঞ্চ ডোবার কাহিনি শুনে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল।আমি থরথর করে কাঁপছি। রিনির কথা শুনে সকলে নিউজ দেখার জন্য ড্রয়িংরুমে চলে আসলো,তাদের সাথে আমি যোগ দিলাম। আধাঘন্টা আগে লঞ্চটা ডুবেছে। আর সেই সময়টাতে আদিবেরও লঞ্চে উঠার কথা। আর ও যদি লঞ্চে উঠে থাকে,তাহলে......

না আমি কিছু ভাবতে পারছি না।আমি তাড়াতাড়ি ওকে কল দিলাম। কিন্তু ওর ফোনটা বন্ধ দেখাচ্ছে। ‘এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না কথাটা শোনা মাত্রই আমার বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল।’

আম্মা তখুনি কান্না শুরু করে দিল আর আমাকে গা*লিগা*লাজ করা শুরু করে দিল।

-- 'এই অলক্ষ্মী মেয়েটা সব কিছুর জন্য দায়ী।আমার ছেলের কিছু হলে তোকে আমি ছা*ড়বো না।'

বাড়ি জুড়ে সকলের কান্নার রোল পড়ে গেল।

(চলবে)...
(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করুন, ধন্যবাদ)

Address

নারায়ণগঞ্জ
Narayanganj

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sadiya Jahan posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share