23/08/2025
পঞ্চগড় থেকে হানিফ পরিবহনের বাসে উঠে ঢাকা রওনা দিলাম। পাশের সিটের মেয়েটা ইডেন কলেজের ছাত্রী। বাস ছাড়ার পর খুব বিরক্ত লাগলো কারণ যখন তখন দাঁড় করিয়ে লোকাল যাত্রী তুলছে।
তিনবার যাত্রী তোলার পরে আমি চিৎকার করে সুপারভাইজারকে বললাম " আর একবার যদি কাউন্টার ছাড়া লোক তুলেন তাহলে আমি কিন্তু হেড অফিসে অভিযোগ করবো। "
ব্যাস, এতেই কাজ হয়ে গেল। সিরাজগঞ্জের হোটেল ফুড ভিলেজে আসার আগ পর্যন্ত তারা আর যাত্রী তুলে নাই। কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক কাজটা করেছে ড্রাইভার সাহেব।
গাড়ি এমনভাবে চালিয়েছে যে ছোটখাটো গাড়ি সব আমাদের ওভারটেক করে সামনে উঠে গেল। হানিফ পরিবহনের এরকম রূপ সচারাচর সামনে পড়ে না। হোটেল পর্যন্ত আসতে আসতে পাশের মেয়েটার সঙ্গে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে। মেয়েটা বেশ কথা বলতে পছন্দ করে। তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে গাড়ির স্পিডের দিকে নজর ছিল না।
তখন রমজান মাস ছিল। হোটেলে যখন নামলাম তখন সাহরির সময় হয়ে গেছে। সবাই মিলে সাহরির জন্য কিংবা ফ্রেশ হতে হোটেলে গেলাম।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি সুপারভাইজার দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখে বললো, ভাইজান ভাবি কোই?
আমি অবাক হলাম। কিন্তু ততক্ষণে সেই মেয়ে পিছনে এসে দাড়িয়েছে। সে বললো,
- এইতো আমি, কি হয়েছে?
- ভাবি চলেন আপনারা সাহরির খাবার খাবেন না?
আমি তখনও অবাক। মেয়েটা আমার দিকে তাকালো। তারপর সে বললো,
- হ্যাঁ খাবো।
- তাহলে চলেন আমাদের সঙ্গে। একসঙ্গে নাহয় খেলাম।
ভাবলাম একসঙ্গে খেতে সমস্যা কি? এক টেবিলে বসে তো খাওয়াই যায়।
খাবার শেষ করে বিল দিতে পারলাম না। আমার আর মেয়েটার বিলও সুপারভাইজার দিয়ে দিল। জোর করলাম কিন্তু হোটেলের ক্যাশিয়ার আমার টাকা গ্রহণ করলেন না।
বাস ছাড়লো আবারও। আবারও সেই ধীরগতির চলাচল। যমুনা সেতু যখন পার হচ্ছি তখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার কাছাকাছি আসার সময় সুপারভাইজার আমাদের কাছে এলেন। তারপর দু একটা কথা বলেই জিজ্ঞেস করলেন,
- ভাইজান হোটেলের গরুর মাংসটা খেতে কেমন লাগছিল?
মেয়েটা বললো, খুবই ভালো লেগেছে।
- রুই মাছের ভুনা কিন্তু বেশ ছিল তাই না ভাবি?
- হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। অবশ্য আপনি এভাবে বিল দিবেন আমরা বুঝতে পারিনি।
সুপারভাইজার সামনে চলে যাবার সময় বললো, ভাইজান আশা করি এতো সুন্দর খাবারের কথা সহজে ভুলবেন না।
আমি চুপচাপ বসে রইলাম। এলেঙ্গা এসে বাস দাড়ঁ করানো হলো। যতগুলো সিট ফাঁকা ছিল সবগুলো সিট ভর্তি যাত্রী ওঠানো হলো। আমার কানের মধ্যে শুধু একটা কথা বাজতে লাগলো,
" ভাইজান আশা করি এতো সুন্দর খাবারের কথা সহজে ভুলবেন না। "
দুজনের খাবারের জন্য ৫০০/৭০০ টাকা খরচ করে সুপারভাইজার প্রায় ২৫০০/৩০০০ টাকার যাত্রী তুলে নিলেন। আমার পাশে বসে মেয়েটা বললো,
- আপনি কিছু বলছেন না কেন? রাতে তো ঠিকই প্রতিবাদ করেছিলেন।
- আমি বললাম, সাহরির সময় যে ঘুষ খেয়েছেন সেজন্য এখন মুখ বন্ধ রাখতে হবে। আমাদের সুপারভাইজার তো চালাক। সে জানতো এলেঙ্গা থেকে ভোরবেলা ঢাকার যাত্রী পাওয়া যাবে তাই হোটেলে বসে কৌশলে খাইয়ে দিয়েছে। এখন আর প্রতিবাদ করি কীভাবে বলেন?
রিপোস্ট!
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
কপি পোস্ট