20/10/2024
#লাঠি_খেলা
"আপনি হঠাৎ এরকম কিছু শুধু গ্রামে থাকলেই দেখতে পাবেন, কিভাবে প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাতের থেকে নিজেকে রক্ষা করে, বা প্রতিপক্ষের লাঠির ফাক দিয়ে কিভাবে তাকে আঘাত করে। "
লাঠি খেলা লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষা শেখায়। ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার জমিদাররা (পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বঙ্গ) নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়ালদের নিযুক্ত করত। ইংরেজবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে বাঙালি লাঠিয়ালেরা ইংরেজের দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছিলেন বহুবার। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবী চৌধুরানী উপন্যাসে বাঙালির লাঠি বিষয়ে একটী পূর্ণ উপচ্ছেদ লিখেছিলেন তিনি। বাঙালির লাঠির আঘাতে অত্যাধুনিক বন্দুকও ভেঙে যেতো। স্বদেশী আন্দোলনাদির সময়ে বিপ্লবীরা গণজাগরণের উদ্দেশ্যে নিয়মিত লাঠি খেলার আয়োজন করতেন।
বাংলাদেশের নরসিংদী , ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইত্যাদি অঞ্চলে জমি দখলের জন্য মানুষ এখনও লাঠি দিয়ে মারামারি করে। মহরম ও পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে এই খেলাটি তাদের পরাক্রম ও সাহস প্রদর্শনের জন্য খেলা হয়ে থাকে। এই খেলার জন্য ব্যবহৃত লাঠি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা, এবং প্রায়ই তৈলাক্ত হয়। অত্যাশ্চর্য কৌশলের সঙ্গে প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করে। শুধুমাত্র বলিষ্ঠ যুবকেরাই এই খেলায় অংশ নিতে পারে। কিন্তু বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষেরাই লাঠিখেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। উত্তরবঙ্গে, ঈদের সময়ে চাদি নামক একটি অনুরূপ খেলা খেলা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানের সময় "লাঠি খেলা" এর প্রদর্শনী এখনও আছে। বাংলায় গুরুসদয় দত্ত কর্তৃক ব্রতচারী আন্দোলনের সময়ও লাঠি খেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
লাঠি খেলার অসাধারণ ইতিহাস আছে কিন্তু এর জনপ্রিয়তা এখন পড়তির দিকে। ঈদ উপলক্ষে লাঠিখেলার আয়োজন সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, নড়াইল প্রভৃতি জেলায় ভিন্ন নামে দেখা যায়।লাঠি খেলা নিয়ে বর্তমানে নতুন দল তৈরি হচ্ছে না। এছাড়া পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেও লাঠি খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে।