
18/06/2025
আমার বাবা: ভালোবাসা আর শাসনের এক মমতাময় ছায়া
আমার কাছে বাবা দিবস কিংবা মা দিবস মানে শুধু কোনো নির্দিষ্ট একটা দিন নয়—বরং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুরোটা জীবন। একসময় আমিও সবাইর মতো করে দিবস উদযাপন করতাম। কিন্তু যখন উপলব্ধি করলাম, আল্লাহ তাআলা আমাকে আমার বাবা-মায়ের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে এনেছেন, তখন বুঝলাম—এই জীবনটাই তাঁদের ভালোবাসা, সম্মান আর যত্নে উৎসর্গ করার জন্য। পারি আর না পারি, প্রতিটি দিন আমি চেষ্টা করি তাঁদের ভালো রাখতে, পাশে থাকতে।
বাবা-মা নিয়ে বললে তো একটা জীবনই কম পড়ে যাবে। তবে আজ শুধু বাবাকে নিয়েই একটু বলি।
আমি ছোটবেলায় খুব ‘বাবা প্রিয়’ ছিলাম, আর এই জায়গাটা গড়ে দিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল আমার মায়ের। তিনি সবসময় চাইতেন আমি যেন বাবার সান্নিধ্যে থাকি। বাবা কখনোই আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তাঁর শাসনের ধরনটা ছিল একেবারেই আলাদা—শান্ত, কোমল, আর বুদ্ধিদীপ্ত।
আমার বয়স তখন প্রায় চার বছর। আমি ছিলাম বাবা-মার বড় মেয়ে। একদিন দাঁত দিয়ে হাতের নখ কাটছিলাম, মা সেটা দেখে আমাকে নিয়ে গেলেন বাবার কাছে। মায়ের চোখে এটা ছিল একরকম "অপরাধ" 😄
আমি তো ভয়েই একেবারে চুপসে গেছি। ভাবছি, বাবা এখন রেগে যাবেন, ধমক দেবেন। কিন্তু না, বাবা আমাকে কাছে ডাকলেন, হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন,
– "তুমি কি এটা করেছো?"
আমি মাথা নাড়িয়ে স্বীকার করলাম।
তখন তিনি খুব শান্তভাবে বললেন,
– "দেখো, এটা ভালো কাজ না। দাঁত দিয়ে নখ কাটা উচিত না। আর যদি আবার করো, তাহলে কিন্তু তোমাকে মুরগির ঘরে আটকে রাখবো!"
আমি তো ভয়ে কাঁপছি! মুরগির সেই ছোট, গন্ধযুক্ত, নোংরা ঘরে আমি কিভাবে থাকবো! 😳
সেই এক কথায় পুরো ব্যাপারটাই এমনভাবে গেঁথে গেল মনে, যে আর কোনোদিন দাঁত দিয়ে নখ কাটার সাহসই করিনি।
এমন ছিলো বাবার শাসন—না কোনো চিৎকার, না কোনো ভয় দেখানো; তবু আজও স্মৃতিতে কড়া নাড়ে তাঁর সেই কোমল অথচ দৃঢ় শিক্ষা।
বাবা মানে শুধু একজন অভিভাবক না, তিনি জীবনের প্রথম শিক্ষক, নিরাপত্তার দেয়াল, আর নীরব ভালোবাসার প্রতীক। আজও মনে হয়, তাঁর একটা কথাই জীবনের পথ বদলে দিতে পারে।
Anima R Diya