13/07/2025                                                                            
                                    
                                                                            
                                            🌍 Just Transition বনাম সীসা দূষণ: এক দিগন্তজোড়া সংকটের অজানা দিক
জাস্ট ট্রানজিশন বা ন্যায্য রূপান্তর, পরিবেশ আন্দোলনের ময়দানে ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখার অন্যতম সম্ভাবনাময় সমাধান। এটি আর কল্পনা নয়, বরং বাস্তবতার ডাক। এখন বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত—জীবাশ্ম জ্বালানির কার্বন নিঃসরণ বিগত একশো বছরে পৃথিবীর বুকে যে আগুন নামিয়েছে, তা শুধুমাত্র তাপমাত্রা বাড়ায়নি, তা কোটি কোটি মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি, ভূমি, ও জীবিকার উৎস থেকে বিচ্যুত করেছে।
এই আগুন নেভাতে হলে আমাদের এখনই তেল-গ্যাস-কয়লা নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিকল্প খুঁজতে হবে। এবং সেই বিকল্প হলো নবায়নযোগ্য শক্তি—যা সৌর, বায়ু, জল ও জৈববস্তু নির্ভর, এবং তুলনামূলকভাবে পরিবেশের জন্য অনেক কম ক্ষতিকর।
তবে সমস্যার শেষ এখানেই নয়, বরং এখান থেকেই শুরু।
⚡ নবায়নযোগ্য শক্তির আশায় জেগে ওঠা আরেকটা দানব: সীসা
এই শক্তির পেছনের প্রযুক্তিগত ভরকেন্দ্র হলো ব্যাটারি। বিশেষ করে ইলেকট্রিক গাড়ি, সৌরবিদ্যুৎ সংরক্ষণ, এমনকি হোম ব্যাকআপ সিস্টেম—সবকিছুর মূলেই রয়েছে ব্যাটারি। আর এই ব্যাটারির প্রধান উপাদানগুলোর একটি হলো সীসা (Lead)।
সীসা এমন একটি উপাদান যা রক্তের সঙ্গে মিশে মস্তিষ্কের বিকাশে বাঁধা দেয়, শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র ও কিডনির স্থায়ী ক্ষতি করে এবং গর্ভবতী নারীদের গর্ভস্থ শিশুর বিকৃতির ঝুঁকি বাড়ায়। WHO এর মতে, বিশ্বজুড়ে শিশুদের IQ হ্রাসের অন্যতম কারণ সীসা দূষণ।
বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা দুর্বল, সেখানে অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানা এখন এক নীরব মৃত্যুকূপ।
⚠️ একটিকে না দেখলে অন্যটি ব্যর্থ হবে
যদি জাস্ট ট্রানজিশনের নামে শুধুমাত্র নবায়নযোগ্য শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে চলা হয়, অথচ তার অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যবিপর্যয়গুলিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়—তাহলে সেই রূপান্তর ন্যায্য নয়, বরং একধরনের প্রতারণা।
সত্যিকার জাস্ট ট্রানজিশন তখনই সফল হবে, যখন—
শ্রমিক হারানো কাজের পরিবর্তে অন্য সুযোগ পাবে
নদী, বন, মাটি থাকবে দূষণমুক্ত
শিশু জন্মাবে নিরাপদ শরীর ও মন নিয়ে
উন্নয়ন হবে মানুষকে সামনে রেখে, শুধু প্রকল্পকে নয়।
✅ সমাধান এখানেই
রিসাইক্লিং কারখানাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এখনই।
আইন থাকলেই হবে না, বাস্তব প্রয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিটি ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং কেন্দ্রে পরিবেশ সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আলাদা সেল গঠন করতে হবে।
অবস্থান নির্বাচন থেকে শুরু করে উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত যুক্ত করতে হবে।
🔚 উন্নয়ন যদি মানুষকে পেছনে ফেলে এগোয়, তবে সেটা উন্নয়ন নয়—ভবিষ্যৎ ধ্বংসের পরিকল্পনা
জাস্ট ট্রানজিশন কেবল জ্বালানি পরিবর্তনের কথা বলে না, এটি বলে সংকট থেকে উত্তরণ হোক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে।
তাই, উন্নয়নের নামে যদি আমরা আরেকটি বিষবৃক্ষ জন্ম দিই, তবে এই পৃথিবীকে সবুজ বলা যাবে না — বলা যাবে বিষাক্ত সবুজ।
📣 আমাদের দাবি:
নবায়নযোগ্য শক্তি চাই, কিন্তু সীসামুক্ত, স্বাস্থ্যবান এবং মানবিক পথে।
               
 .