Israt Jahan Razia

Israt Jahan Razia Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Israt Jahan Razia, Digital creator, Narayanganj.

� আইডিয়া থেকে কনটেন্ট — আমি তৈরি করি গল্প �
� ভিডিও • � ভয়েস • � আইডিয়া
� সৃজনশীলতা যার নেশা, কনটেন্ট যার ভাষা
� কল্যাবরেশন/প্রোমো: ইনবক্স করুন
� বাংলাদেশ |

21/09/2025
19/09/2025

আমেরিকার স্কুল থেকে বলে দেয়া হয়, বাচ্চারা যে কাজটা নিজে করতে পারবে সেটা বাবা মা করে যেন না দেয় ফলাফল they are confident. আর আমি সাগর দেখতে গেলে মা বলে সাগরে নাইমো না, তাহলে গেছি কেন? বালি দেখতে?

19/09/2025

রাতের বেলা মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছিলাম । কথা প্রসঙ্গে মা বলে উঠলেন আগামীকাল তার ডক্টরের এপয়েন্টমেন্ট আছে বিকাল তিনটায়। কোন ডক্টর জিজ্ঞেস করাতে যা জানতে পারলাম তিনি আমাদের পরের ব্লকটাতেই বসেন তাই মাকে বললাম তোমরা বরং সকালেই চলে আসো এখানে দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে একেবারে ডাক্তার দেখিয়ে চলে যাবে। মা যদিও আসতে চাচ্ছিল না কিন্তু ঢাকা শহরের জ্যামের কথা চিন্তা করে রাজি হলো ।

রাতে রাজিব ফিরতেই কথাটা বললাম সে কিছু বললো না, ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে গেল।

বের হবার পরে আমি এক কাপ চা ওর হাতে দিয়ে বললাম,

- আচ্ছা শোনো ঘরে বাজার তো কিছুই নেই আর কাল ছুটির দিন একটু বাজার করে নিয়ে এসো। এমনিতেও তোমার যেতেই হতো।

মাথা নাড়িয়ে রাজিব খেলা দেখতে লাগলো।

সকাল আটটার দিকে ওকে আমি ডেকে তুললাম।

-কি হয়েছে এত সকালে ডাকাডাকি করছ কেন?
-তোমাকে না বললাম আজকে বাবা-মা আসবে। দুপুরে তো আমার এখানেই খাবে। একটু বাজারে যাও, ফ্রিজে কিছু নেই আর এমনিতেও তোমার পকেটে গত এক সপ্তাহ ধরে আমি লিস্ট ফেলে রেখেছি।
-দেখো রুপা আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে আমি আরেকটু ঘুমাবো।

আমি ঠিক আছে বলে ঘরের অন্যান্য কাজ করতে লাগলাম।
ঘন্টাখানেক পরে এসে আবার ডাকলাম নাস্তা রেডি করে ।
সে উঠে ফ্রেশ হলো এবং নাস্তা খেলো তারপর গিয়ে গেম খেলতে বসে গেল আমি যখন আবার বাজারের কথা বলতে গেলাম প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে প্রায় ধমক দিয়ে রাজিব আমাকে বললো,
- তোমাকে না বললাম আমার শরীর খারাপ লাগছে। আমি যাব না আর বাবা-মা তোমার আসবে আমার না।

আমি পুরোপুরি শকড। আমি নিজেই বের হতাম কিন্তু আমার চৌদ্দ মাস বয়সী ছোট্ট রিমুকে নিয়ে এই রোদের মধ্যে বের হওয়াটা সম্ভব না। রাজিব কোন দিকেই খেয়াল রাখে না। রিমুর খেয়াল সে রাখতে পারবে না। কখনোই সে বাচ্চার কোন টেককেয়ার করেনি শুধুমাত্র টাকা দিয়ে খালাস হয়ে গেছে। আমার প্রচন্ড কান্না পেল।

বাবা-মা এলেন সাড়ে এগারোটার দিকে। রাজিব তখনো গেম খেলছে। সে একটা সালাম পর্যন্ত দিল না। মা নিজেই উল্টো জিজ্ঞেস করলেন,
- বাবা কেমন আছো তুমি?
চোখ তুলে তাকিয়ে একটু হাসলো আর কিছু না আবার চোখ দুটো মোবাইলের দিকে।

দুপুরে বাবা মাকে আমি শুধু আলু ভাজি আর ডিম দিয়ে খাইয়েছিলাম। চোখে পানি চলে এসেছিল এতদিন পর আমার বাবা-মা এসেছে আর এই তাদের আপ্যায়ন। তারা অবশ্য খুব দ্রুতই বের হয়ে গেল।

আমি ছাদে চলে গেলাম, খুব খারাপ লাগছিল।

রান্না করতে গিয়ে অসাবধানে হঠাৎ গরম তেল এসে হাতের উপর পড়তেই আমি চিৎকার করে উঠলাম। রাজিব উঠে এলো।

-কি হয়েছে? আমি তখন সিঙ্কে হাত দিয়ে কল ছেড়ে রেখেছি। জায়গাটা লাল হয়ে গেছে কিছুক্ষণ পরেই হয়তো ফোসকা পড়বে। পুড়িয়েছো তো হাত আরো করো অসাবধানে কাজ। বলে রাজিব গটগট করে হেঁটে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে গেলাম আমার হাতের এতটা জায়গা পুড়ে গেছে দেখেও রাজিবের কিচ্ছু যায় আসেনা?

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাজিব আমাকে ফোন করে বললো,

- এই শোনো বাবা-মা চলে এসেছে কাছাকাছি প্রায় তোমাকে বলতে ভুলে গেছিলাম। আমি অফিস থেকে চলে আসছি, ভালোভাবে আয়োজন করো। আমি লাইন কেটে দিলাম।

রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রায় একসাথেই সবাই উপস্থিত হলো। আমি সালাম দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলাম।

-আরে এই রুপা, পানি শরবত কিছু দাও বলতে বলতে রাজিব ঘরে এলো।
- আমার খুব মাথা ব্যথা করছে রাজিব তুমি দাও গিয়ে। সে চিৎকার করতেই যাবে কিন্তু কিছু না বলে চলে গেল হয়তো সিনক্রিয়েট করতে চায়নি।

কিছুক্ষণ পর এসে বললো,
- ওনারা জার্নি করে এসেছেন, দ্রুত যাও, টেবিল সাজিয়ে ফেলো, খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুক ।
-তোমাকে বললাম না আমার মাথা ব্যথা করছে। আমি কিছু রান্না করিনি।
-এসব কি বলছো! রান্না করোনি মানে?
-এত কথা বোলো না তো, বললাম তো আমার মাথা ব্যথা করছে।
দাঁত কিরমির করে সেদিন রাজিব বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে তার বাবা মাকে খাইয়েছিল। রাতে সে ঝগড়া করার মুডেই ছিল কিন্তু আমি ঘুমের ভান করতে করতে একসময় সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

কিছুদিন পর রাজিবের ছোট্ট একটা বাইক এক্সিডেন্ট হল অবশ্য নিজে হেঁটেই বাড়িতে এলো। হাতের কিছুটা অংশ কেটে গেছে।
সেখান থেকে রক্ত পড়ছে।

-আরে রুপা টাওয়েল বা অন্য কিছু নিয়ে আসো দেখো কিভাবে রক্ত পড়ছে।
-অসাবধানে বাইক চালালে এমনই হবে যাও টাওয়েল খুঁজে নাও।

আমি ঘরে এসে মুভি দেখতে লাগলাম। সে কোন রকম ভাবে রক্ত বন্ধ করে এইবার মোটামুটি ঝগড়ার প্রিপারেশন নিয়েই আমার কাছে এলো।

-এই পেয়েছোটা কি তুমি?
রাজিব আরো অনেক কিছু বলতে যাচ্ছিল আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম,
-তুমি একটু ভেবে দেখো তো ঠিক একই রকম ঘটনা আমার সাথে ঘটেছে কিনা ? তুমি যদি করতে পারো আমি কেন পারবো না? আমি তোমার সাথে ঝগড়া করার মুডে নেই।
-তাই বলে তুমি...
-হ্যাঁ আমি সবই করতে পারি। যদি সংসার করতে হয় তাহলে একে অন্যকে রেসপেক্ট দিতে হবে, ভালবাসতে হবে, কেয়ার করতে হবে,দুজনের পরিবারের প্রতি দুজনের সমান টান থাকতে হবে তা না হলে সংসার টিকে না। আমি একা তো কয়েক বছর চেষ্টা করলাম কিন্তু তোমার দিক থেকে পজিটিভ ফিডব্যাক কখনো পাই নি। রাজিব মাথা নিচু করে চলে গেল।

সংসারের ছোট ছেলে হওয়াতে বরাবরই সে দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে অথবা তাকে শেখানো হয়নি কিভাবে দায়িত্ব নিতে হয়।
পরের দুই তিন দিন একটু গম্ভীরভাবে কেটে গেল।
আমার সাথে সেইসব বিষয়ে আর তর্ক করেনি, কোন ঝগড়াঝাটিও হয়নি।

এক শুক্রবার দুপুরে বললাম,
-তুমি একটু রিমুকে রাখো তো আমি ভালো করে গোসল করবো। সপ্তাহে একটা দিনই সময় পাই অন্যান্য দিন তো কাকের মত গোসল করি।
রাজিব আচ্ছা বলে রিমুকে কোলে নিলো।
আমি গোসল করতে চলে গেলাম। আধঘন্টা পর গোসল থেকে বের হয়ে রাজিবকে জিজ্ঞেস করলাম,
- রিমু কোথায়?
-খেলছো হয়তো এদিক-সেদিক কোথাও। সে খুব তাচ্ছিল্য ভরা স্বরে বলে নিজের মোবাইলে নিউজ পড়ছে।

আমি সারা বাড়ি জুড়ে আমার ছোট্ট সোনামণিকে খুঁজতে লাগলাম। না সে কোথাও নেই, কি আশ্চর্য!

-রাজিব এই রাজিব রিমুকে তো পাচ্ছি না। কোন সাড়া নেই আমি প্রায় চিৎকার করে উঠলাম গলায় আকুতের সুর। রাজিব তুমি শুনতে পাচ্ছো আমি রিমুকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
-কি বলো? এবার সে উঠে এলো নিজেও খুঁজতে লাগলো।

আমরা দুজনেই রিমু রিমু বলে প্রত্যেকটা ঘর চেক করতে লাগলাম।আমাদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে পাশের ফ্ল্যাটের আসাদ ভাই আর ভাবী চলে এসেছেন।

আমার উদ্ভ্রান্ত অবস্থা দেখে ভাবী আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
- কি হয়েছে?
-আমার রিমুকে পাচ্ছি না কাঁদতে কাঁদতে বললাম আমি।

ভাবী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ মনে পড়ে যাবার ভঙ্গিতে বললেন,
- দরজা তো খোলা ছিল, এই যে আমরা ঢুকে এলাম।
-তার মানে!

আমরা দ্রুত বের হয়ে এলাম। খুব বেশি দূর খুঁজতে হলো না। আমার ছোট্ট রিমু সিঁড়ির নিচে পড়ে আছে। ছোট বাচ্চা হয়তো সিঁড়ি দিয়ে খেলতে খেলতে নামতে চেয়েছিল। মাথা থেকে রক্তের স্রোত ভেসে যাচ্ছে।

রাজিব ঠাস করে আমাকে একটা থাপ্পর মারলো তারপর বলে উঠলো,
- দরজা খোলা রেখেছিলি কেন তুই? তারপর ছুটে গেল রিমুর কাছে।

সবাই মিলে তাকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার জানালো এখানে আনার আগেই আমার রিমু বেহেস্তে চলে গেছে। রাজিব আবার আমাকে মারতে হাত তোলায় আসাদ ভাই তার হাত ধরে ফেললেন। উনি আমার চুলে ভেজা তোয়ালে দেখেই বুঝতে পেরেছেন যে আমি শাওয়ারে ছিলাম।

-ভাবী তো গোসলে ছিলেন আর বাচ্চাটা উনি আপনাকে ছাড়া কারো কাছে নিশ্চয়ই দিয়ে যাননি, আপনি কি করছিলেন?
পাশ থেকে ভাবী বলে উঠলেন,
- নিজের বাচ্চার দায়িত্ব নিজের রাখতে পারেন না? মা কি গোসল করবে না, খাবে,না ঘুমাবে না, সব দায়িত্ব শুধু মায়ের? আপনি নিশ্চয়ই মোবাইল ল্যাপটপে মুখ গুঁজে পড়ে ছিলেন এখন এখানে বড় বড় কথা বলছেন আর গায়ে হাত তুলতে চাইছেন আপনাকে পুলিশে দেওয়া উচিত।

আমি নিথর হয়ে বসে আছি।

কেটে গেছে প্রায় দুই মাস, আমি এখন নিজের বাসায়। হ্যাঁ আমার বাবার বাড়িই আমার নিজের বাড়ি। ওই বাড়ি থেকে আমাকে নিতে আমার শশুর,শাশুড়ি, ভাসুর, রাজিব সবাই এসেছে কিন্তু এসে তারা সারপ্রাইজ হলো কারণ আমি তাদের হাতে একটা ডিভোর্স পেপার এগিয়ে দিলাম। বাবা-মা আমার পাশেই বসে ছিলেন। বড় ভাবী একটা হাত দিয়ে আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছেন, যেন পৃথিবীর সমস্ত অশুভ শক্তি থেকে রক্ষার প্রচেষ্টা। তাই বোধহয় আমি এত কথা বলতে পারলাম।
-আপনারা ছেলেকে দায়িত্ব নিতে শেখান নি এবং সে নিজেও কখনো নিজ থেকে শেখার চেষ্টা করেনি। এই জীবনে তার দ্বারা সেটা আর সম্ভব না। তার কারণে আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি। এবং সেই ব্লেইমটাও সে আমাকে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমার সামনে একটা গোটা জীবন পড়ে আছে। এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন কোন পুরুষ মানুষের সঙ্গে কোন মেয়েই থাকতে চাইবে না, আমিও না। আমি তাকে বহুবার বহুভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কথা বলে, আলোচনা করে, কর্মের মাধ্যমে কিন্তু লাভ হয়নি, হবেও না। আপনারা আসতে পারেন।

তারা বের হয়ে গেলে ভাবী আমাকে জাপটে ধরলেন। ভাইয়া মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন। আমি কেঁদে ভেঙে পড়লাম ভাবীর বুকে। একটাই জীবন এই ছোট্ট জীবনে এত কষ্ট কেন? আমার রিমু কি আর ফিরবে কখনো অন্য কোন রূপে, অন্য কোনভাবে আমার কাছে। আমি হু হু করে কেঁদে উঠলাম।

#দায়িত্ব
কলমে: সুবর্না শারমিন নিশী

18/09/2025

দেবর গুলো বিয়ের পরে বুঝতে পারে - তার মায়ে'র আসলেই দো"ষ আছে 🤭বিয়ের আগেতো সব দোষ হয় বড় ভাবির🤔

দ্বিতীয় স্ত্রী সিগ্ধাকে নিয়ে মহা সুখে আছে বজলু চৌধুরী। তার কাছে মনে হয় জীবনটা রঙিন করে দিয়েছে সিগ্ধা। স্নিগ্ধা যা বল...
18/09/2025

দ্বিতীয় স্ত্রী সিগ্ধাকে নিয়ে মহা সুখে আছে বজলু চৌধুরী। তার কাছে মনে হয় জীবনটা রঙিন করে দিয়েছে সিগ্ধা। স্নিগ্ধা যা বলে সব কিছু অক্ষরে অক্ষরে পালন করে সে। ওর পছন্দ অপছন্দের দিকে সব সময় বিশেষ নজর রাখে বজলু। মনে মনে সে খুব আফসোসও করে তার বয়সটার জন্য, তার মনে হয় ইস্ বয়সটা যদি কম করা যেতো কোনভাবে! অথবা কেন যৌবনকালে স্নিগ্ধার মতো মেয়ের সাথে তার পরিচয় হলোনা! তার তো টাকার অভাব নেই, বয়স কমানোর কোন উপায় থাকলে নিশ্চয়ই সেটা করতো বজলু। স্নিগ্ধা আয়নার সামনে বসে সেই কখন থেকে সাজগোজ করছে, বজলুর তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে, স্নিগ্ধা একের পর এক দিচ্ছে আইলাইনার, আইশ্যাডো, লিপস্টিক, ফাউন্ডেশন আরো কত কি! এই কয়দিনে অনেক কিছুর নাম জেনে গেছে বজলু।

তবে বয়সের ভাবনায় এসে তার মনে পড়ে এক সময় সেও তো কম বয়সী ছিলো, বিয়ে করেছিলো সে ছাব্বিশে, প্রথম স্ত্রী সাবিহার বয়স ছিলো তখন উনিশ। সময়টা তখন সুখেই কেটেছে, তবে সেই সুখ কি আর সুখ? কোথাও যেতে বললে কাজের দোহাই দিতো সাবিহা, বাজে টাকা খরচ হবে বলতো, খুব হিসেবি ছিলো সে। আসলেই তখন কাজের লোক রাখা, বাড়তি খরচ করার সামর্থ্য ছিলো না বজলুর। নতুন ব্যবসা, মূলধন বাড়ানো সেই সব নিয়ে বজলুর চিন্তা দেখে সাবিহা এক টাকাও অযথা খরচ হতে দিতো না। তবে বজলু সেই সব মানে না তার মতে সাবিহা কখনো তাকে খুশি করার চেষ্টা করেনি, সব ছিলো ওর বাহানা, কোন প্রেমিকের কথা ভাবতো কে জানে? তার পিছে পিছে কত কি করে বেরিয়েছে অথচ তাকে দেখলেই তার কত ক্লান্তি আর ঘুম! যাক সেই সব কথা, এই সব মনে করে এখনকার সুন্দর সময়টা নষ্ট করতে চায় না বজলু। স্নিগ্ধাকে নিয়ে ডিনারে যাবে, সে রেডি হয়ে বসে আছে আধ ঘণ্টা ক্রশ করে গেছে কিন্তু সিগ্ধার রেডি হওয়া শেষ হচ্ছে না।

অথচ সাবিহার সময় ধৈর্য বলতে কিছুই ছিলোনা তার। একদিন এক আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াতে যাওয়ার সময় বজলু রেডি হয়ে দাঁড়াতেই হাঁক দিতে লাগলো, এত দেরি হয় কেন সাবিহার, অস্থির হয়ে ঘড়ি দেখছিলো, সাবিহা পাঁচ মিনিটের মাথায় দৌড়াতে দৌড়াতে এসেছিলো। রিকশায় বসে ওর দিকে তাকিয়ে বজলুর মনে হয়েছিলো, ওর শাড়িটা বড্ড বেমানান, একদম সিম্পল। একটা ভালো শাড়ি কিনতে বলেছিলো সে কিন্তু সাবিহার ঐ এক কথা একটা শাড়ি কিনলে এই মাসে সংসার খরচে টান পড়বে তার উপর গিফটও তো কিনতে হলো। একটু সাজার জন্যও সময় নেই তার! সাবিহাকে দেখে খুব রাগ লাগছিলো তখন।

স্নিগ্ধা ড্রেস ঠিক করতে করতে বলতে লাগলো ঐ ড্রেসটা নিলেই হতো এটার চাইতে মাত্র পাঁচ হাজার বেশি ছিলো, এখন এটা পরে ভালো লাগছে না, আমাকেই মনে হয় সব চাইতে বিশ্রী দেখা যাবে।
বজলু বলে উঠলো, একদমই না, তুমি তো এমনিতেই সুন্দর এখন আরো সুন্দর লাগছে। চল তাড়াতাড়ি।
রাস্তায় স্নিগ্ধা বার বার ঐ ড্রেসের কথা বলছিলো দেখে বজলু বললো সমস্যা নেই কাল গিয়ে ওটাও কিনে নিও।

স্নিগ্ধার এত খাবার অর্ডার করা দেখে বজলু বুঝতে পারলো না এত খাবার তারা কিভাবে খাবে। একটু পরেই ক্লিয়ার হলো ব্যাপারটা। স্নিগ্ধা বললো এত মজার খাবার ছোট ভাই বোন দু'টো খেতে পারবেনা এই ভেবে ওর নিজের ভালোভাবে খাওয়া হবেনা তাই অতিরিক্ত খাবারগুলো প্যাক করে ওদের বাড়িতে দিয়ে যাবে।
বজলুর খারাপ লাগলো এই ব্যাপারটা, দুইজনে যেই টাকায় খাওয়া হতো সেখানে তিনগুণ টাকা বেশি লাগছে! আর অর্ডার দেয়ার আগে বজলুকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করলোনা স্নিগ্ধা! খাওয়া শেষে স্নিগ্ধাদের বাড়িতে গেলে বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে। একটু কষ্টই হলো বজলুর মুখটাতে হাসি ঝুলিয়ে রাখতে। এখন যদি বজলুর মুখ ভার দেখে উল্টো স্নিগ্ধা গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।

অথচ সাবিহা কত চেষ্টা করে বজলুর রাগ ভাঙাতো। সে রেগে যাবে এমন কোন কাজ সে পারত পক্ষে করতোনা। কাঁটা চামচ নাড়াচাড়া করতে করতে খুব মনে পড়ছে সাবিহার মুখটা। অথচ বেঁচে থাকতে ভালো করে তাকাতোও না বজলু। সাবিহার জীবন কেটেছে সংসারের টানাপোড়েনে, এর পরে যখন একটু স্বচ্ছলতার মুখ দেখা শুরু হলো তখন সাবিহা শুরু করলো সংসার গুছানো, সংসারের জিনিস কেনাকাটা, সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ততা আর নামাজ- রোজা। এ ছাড়া কোন দুনিয়া তার গড়ে উঠেনি।

স্নিগ্ধা খলখলিয়ে হেসে উঠলো, সে কি বলেছে বজলুর কানে ঢুকেনি সে কথা, হাত বাড়িয়ে বজলুর হাতটা ধরে বললো, তুমি রাগ করনিতো আমি বাড়ির জন্য অতিরিক্ত খাবার অর্ডার দিয়েছি বলে?

বজলু একদম গলে যায়। গদগদ হয়ে বলে-
–আরে না, রাগ করবো কেন?

স্নিগ্ধাদের বাড়িতে খুব ঘন ঘনই যেতে হয়, ওর বায়না ফেলতে পারে না বজলু। প্রথম দিকের কয়েক দিন জামাই আদর পেয়েছে। এখন শুধু কথা দিয়ে চিড়ে ভেজায় শশুর। নিজের বয়সী শশুরকে সন্মান দেখাতে গিয়ে গলে পড়ে বজলু। শত হলেও শশুর তো। কথা বলতে বলতে ফজলুর তন্দ্রার মতো আসে।
সাবিহার বাবার বাড়ির ডাইনিং টেবিলে ভর্তি নানা রকম খাবার দেখতে পায় বজলু। সাবিহার মা জামাই আদরের কোন অপূর্ণতা যেন না থাকে প্রত্যেকবার তটস্থ থাকে। বজলু তবুও দোষ খুঁজে বের করতে চেষ্টা করে, কিসে ঝাল বেশি, লবণ কম। খুঁজে পায়না, শাশুড়ির রান্না আসলেই খুব ভালো। সে হঠাৎ বলে, আম্মা আপনার মেয়েকে তো রান্না শেখাতে পারেননি, ওর রান্না মুখে দেয়া যায়না। মা মেয়ের মুখের দিকে তাকায়, সাবিহার মুখ অপমানে লাল হয়ে উঠে। মা আমতা আমতা করে বলে, ওর রান্নার হাত তো ভালো এখন তাহলে কি হলো! এই সাবিহা কিরে মনোযোগ দিয়ে রান্না করিসনা?
শশুর বাড়িতে আসার সময় দুই রকমের ফল নিয়েছে, সাবিহা বলার পরেও মিষ্টি কিনেনি বজলু। খাওয়ার পর দই মিষ্টি দেয়া হয় বজলুকে, শশুর মনে হয় কিনে এনেছে তার জন্য। বজলু মনে মনে খুশি হয়। মিষ্টি মুখের কাছে নিতেই নিচে পড়ে যায়,
বজলুর শরীরটা ঝাকুনি দিয়ে উঠে, চোখ মেলে বোঝার চেষ্টা করে সে কোথায়। এত বছর আগের স্মৃতি স্বপ্নে ফিরে এলো বুঝতে একটু সময় লাগলো। স্নিগ্ধা তার গায়ে ঝাঁকুনি দিয়ে বলতে থাকে বসে বসেই ঘুমিয়ে গেছ? স্নিগ্ধার ছোটবোন হেসে কুটিকুটি হয়ে যায়। যেন বসে বসে ঘুমের দৃশ্য সে আর কোনদিন দেখেনি। বজলু রাগ হয় কিন্তু প্রকাশ করেনা।
স্নিগ্ধার মা থেকে যেতে বললে, স্নিগ্ধা জানায় এখানে তো এসি নেই , এসি ছাড়া ঘুম আসবেনা তার। স্নিগ্ধা আদুরে গলায় বলে, এখানে একটা এসি লাগিয়ে দাও না, তাহলে এখানে এসে থাকতে কষ্ট হবেনা।
বজলুর অবাক হয়ে তাকানো দেখে, স্নিগ্ধা বলে, কম দামের হলেই হবে। তুমি আমি এসে থাকবো মাঝে মধ্যে। তুমি তো এখানে কখনো থাকো না, এসি লাগালে সমস্যা হবেনা থাকতে।

বজলু জানে এই বায়না না মেটালের স্নিগ্ধা রাগ করে কথা বলবে না, অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাবেন। তাই এই আবদারও মেটাতে হবে।
বজলুর ইদানিং খুব একা লাগে, হয়তো ভয়ও লাগে। স্নিগ্ধাকে বিয়ে করার আগে তার এক বন্ধু পরামর্শ দিয়েছিলো, মোটামুটি মানানসই বয়সের কাউকে বিয়ে করতে, এত কম বয়সী মেয়ে কি বজলুর শেষ বয়সের নিঃসঙ্গতা কাটাতে পড়ে থাকবে তার স্বভাবসুলতা ত্যাগ করে? বয়স তো অনেক বড় একটা ব্যাপার। বয়সের প্রত্যেক ধাপ ভিন্ন আর এর চাহিদাও সম্পূর্ণ আলাদা। তাই যখন যেই ধাপে যে চাহিদাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত তা না করে অন্য কিছুকে গুরুত্ব দিলে বিরোধ তো বাধবেই।
তখন বজলু এই পরামর্শকে কানে নেয়ার মতো, এর গুরুত্ব বোঝার মতো অবস্থায়ই ছিলোনা, সে ছিলো মোহগ্রস্ত। সে ভেবেছে সবাই তার খারাপ চাইছে। তার টাকা আছে বলেই যা ইচ্ছা করতে পারে, এই টাকার জন্যই তো এত কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে করতে পারছে আর এই পারাটাকে বন্ধু হিংসা করছে।
বজলু বারান্দায় বসে বসে ভাবছে তবে কি ভুল হলো? স্নিগ্ধাকে ঘরে থাকতে, একটু তার সঙ্গে সময় কাটাতে বলাই যায়না এখন। খুব বেশি দিন হয়তো সে বজলুর সঙ্গে থাকবেও না। সে স্নিগ্ধার প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে সন্তানদের ঠকিয়ে সম্পদের বড় অংশ স্নিগ্ধাকে দিয়েছে।
স্নিগ্ধার ব্যাংক ব্যালেন্স, গহনা বেশ ভারী হয়ে উঠেছে সেই সাথে সাভারে জায়গা,গুড়ানে ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটে অবশ্য স্নিগ্ধার বাবা মা, ভাই বোন থাকতে শুরু করেছে।
বজলুর ছেলে মেয়ের সাথে যোগাযোগ একদম বন্ধই বলা চলে। ওরা আর তাদের বাবার সাথে কথা বলতেও স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না। মাঝেমাঝে সন্তানদের সাথে কথা বলতে খুব করে মন চায় কিন্তু কি বলবে ভেবে ভেবে আর কল দেয়া হয় না। স্নিগ্ধাও খুব ব্যস্ত থাকে ওর আত্মীয় স্বজন, শপিং নিয়ে। কিছু বললেই রাগ দেখায়, চলে যাওয়ার কথা বলে।

বজলুর এখন সব সময় মনে পড়ে সাবিহার কথা। কি বোকা একটা মেয়ে ছিলো সে।
কখনো নিজের কোন শখ পূরণ করেনি। নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী একটা দামী শাড়ি কিনেনি, দামী রেস্টুরেন্ট খায়নি, দূরে কোথাও বেড়াতে যায়নি। সংসারের প্রথম জীবনে টাকা কমের কারণে, সুন্দর করে সংসার পরিচালনা করতে কোন শখ মেটাতে পারেনি আর যখন টাকা হলো তখন হয়তো তার কোন শখ অবশিষ্টই ছিলোনা।
সংসারের কাজ কাজ করে, স্বামী সন্তানদের প্রয়োজন মেটাতেই ব্যস্ত থাকতো সারাক্ষণ। নিজের জন্য সময় বলতে তার কিছুই ছিলোনা। সাবিহার প্রতি কি বজলু কখনো আলাদা গুরুত্ব, যত্ন বা ভালোবাসা দেখিয়েছে? সাবিনার প্রতি কি অবহেলা পাহাড়সম ছিলোনা? সে মনে করতো তাকে ছাড়া এই সংসার চলবেনা, স্বামীর সমস্যা হবে, সন্তানদের কষ্ট হবে, তার সংসার ভেসে যাবে!
অথচ সব কিছু চলছে, খুব ভালো ভাবেই চলছে। সন্তানরা মাকে হয়তো মাঝে মধ্যে মনে করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর স্বামী এতদিন পরে শেষ বেলায় এসে বুঝে তার গুরুত্ব, শুধু এতটুকুই।

©

Address

Narayanganj
1400

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Israt Jahan Razia posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share